এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর পর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় আদেশের চিঠি শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছায়। শরীয়তপুরের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জেলাজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতে একটি ভাড়া করা গাড়িতে শরীয়তপুর থেকে চলে যান আশরাফ উদ্দিন।

আজ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ শাখা থেকে তাঁকে (জেলা প্রশাসক) ওএসডি করার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার সারা দিন অফিস করার পর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক তাঁর বাংলোতে ফেরেন। এরপর রাতে তিনি একটি ভাড়া করা গাড়িতে শরীয়তপুর ছাড়েন।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক নারীর সঙ্গে তাঁকে নিয়ে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে দুই দিন ধরে একটা বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। আজ সন্ধ্যায় তাঁকে ওএসডি করার আদেশ এসেছে।

ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও নিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, ছবি ও ভিডিওতে থাকা নারী তাঁর আত্মীয়। পরিবারে যাতায়াতের কারণে তাঁদের সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রকাশ পাওয়া ছবি ও ভিডিও কিছু সত্য এবং কিছু মিথ্যা। ওই নারী গত বছর সেপ্টেম্বরে তাঁর স্বামীকে তালাক দেন।

ছবি ও ভিডিওগুলো শরীয়তপুরে আসার আগের দাবি করে আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওই নারী আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। আমি ডিসি হিসেবে পদায়নের পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নানাভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন। বিভিন্ন সময় ঘুমের ওষুধ ও নেশাদ্রব্য খাইয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে আমার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতেন। ব্ল্যাকমেল করে প্রতি মাসে টাকা হাতিয়ে নিতেন। পূবালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা দেওয়ার ডকুমেন্ট আছে। সর্বশেষ তিনি চাপ দিতে থাকেন, আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে হবে। নয়তো বড় অঙ্কের টাকা দিতে হবে। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় টাঙ্গাইলের কিছু সংবাদকর্মী ও আইনজীবীকে ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করেন। এ ছাড়া শরীয়তপুরের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে টাকা আদায় করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল ছবি জনসমক্ষে প্রকাশ করার অধিকার কেউ রাখেন না। এ কারণে ওই নারীর বিরুদ্ধে আমি আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারি।’

আরও পড়ুনশরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক নারীর ছবি ও ভিডিও নিয়ে আলোচনা৭ ঘণ্টা আগে

ভিডিওতে থাকা ওই নারীর বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকতেন। জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের বাসাও মিরপুর এলাকায়। স্বামীর সঙ্গে ওই নারীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি টাঙ্গাইলে বসবাস করছেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গতকাল কয়েক দফা ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা দিলেও তিনি উত্তর দেননি।

শরীয়তপুরের একজন সাংবাদিকের সঙ্গে ওই নারী যোগাযোগ করেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, আশরাফ উদ্দিন তাঁকে বিয়ের কথা বলে তাঁর সংসার ভেঙেছেন। এখন বিয়ে না করে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। ঘুমের ওষুধ খেয়ে, নেশা করে আত্মহত্যা করার ভয় দেখিয়ে তাঁর প্রতি তাঁকে (নারী) দুর্বল ও আসক্ত করেন। এক বছর ধরে তাঁদের সম্পর্ক চলছে। বিয়ের জন্য বললে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেবেন এমন হুমকিও দিয়েছেন।

আরও পড়ুনফেসবুকে নারীর ছবি, ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে টাকা নেন তাঁরা১৬ মার্চ ২০২৩

দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসক ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেন শরীয়তপুর জজ আদালতের একজন আইনজীবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতেন। আমি দুজনকেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম বিয়ে করার জন্য, কিন্তু ওই নারী রাজি হননি। তিনি সমঝোতার জন্য বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেছিলেন, যা পরিশোধের জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল ৩০ জুনের মধ্যে। ওটা নিয়েই আলোচনা চলছিল। তার মধ্যেই এমন ছবি ও ভিডিও মানুষের সামনে চলে এল।’

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে জেলা প্রশাসক হিসেবে শরীয়তপুরে যোগদান করেন ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাঁর সঙ্গে ওই নারীকে জড়িয়ে একটি আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ও চারটি আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার বিকেলে আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর উদ্দেশে আবেগঘন কিছু কথা বলছেন, এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল এক ন র র ওই ন র র র একজন র জন য ত কর ছ ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

হাতকড়াসহ নৌকা থে‌কে হাওরে ঝাঁপ দি‌য়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এক আওয়ামী লীগ নেতা হাতকড়াসহ নৌকা থেকে হাওরের পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়েছেন। আজ সোমবার বেলা ৩টায় উপজেলার বাগহাতা হাওরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পালিয়ে যাওয়া আবদুল মজিদ বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি উপজেলার বাগাহাতা গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বানিয়াচংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট গুলিতে প্রাণ হারান ৯ জন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার একজন আসামি আবদুল মজিদ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ প্রত্যন্ত ভাটি এলাকা কাগাপাশা ইউনিয়নের বাগাহাতা গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদকে গ্রেপ্তার করে। আজ সোমবার দুপুরে পুলিশ তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে একটি নৌকায় করে বানিয়াচং থানার উদ্দেশে রওনা হয়। তাঁদের নৌকা উপজেলার বাগাহাতা হাওরে দিয়ে আসার সময় আবদুল মজিদের স্বজন ও অনুসারীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে হাতকড়াসহ নৌকা থেকে হাওরের পানিতে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান আবদুল মজিদ। পরে খবর পেয়ে বানিয়াচং থেকে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালালেও তাঁর কোনো সন্ধান পাননি।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) প্রবাস কুমার সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল মজিদ উপজেলার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ৯ হত্যাকাণ্ডের মামলার একজন আসামি। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর থানায় নিয়ে আসার সময় তাঁর কিছু আত্মীয়স্বজন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এ সময় তিনি কৌশলে নৌকা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান। তাঁকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক দল কাজ করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভুল রেলস্টেশনে নামা তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় একজন গ্রেপ্তার
  • পাবনায় মসজিদের নির্মাণকাজ নিয়ে সংঘর্ষে আহত আরও একজনের মৃত্যু
  • গয়নার দোকান থেকে গুজবের বাজার—তামান্না অবশেষে মুখ খুললেন রাজ্জাক প্রসঙ্গে
  • আবুল হাসানকে নিয়ে নতুন গল্পগাছা ও পূর্বাপর
  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব
  • রক্তাক্ত ৪ আগস্ট: ফেনীতে গুলিতে ঝরে যায় ৭ তরুণের প্রাণ
  • হাতকড়াসহ নৌকা থে‌কে হাওরে ঝাঁপ দি‌য়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
  • আনন্দ মোহনের অধ্যক্ষকে ওএসডি, অভিযোগ—তিনি আওয়ামী লীগের ‘দোসর’
  • আনন্দমোহন কলেজের অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ ওএসডি