নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও, শরীয়তপুরের ডিসিকে ওএসডি
Published: 21st, June 2025 GMT
এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর পর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। শনিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় আদেশের চিঠি শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছায়। শরীয়তপুরের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে এক নারীর আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জেলাজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাতে একটি ভাড়া করা গাড়িতে শরীয়তপুর থেকে চলে যান আশরাফ উদ্দিন।
আজ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ শাখা থেকে তাঁকে (জেলা প্রশাসক) ওএসডি করার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার সারা দিন অফিস করার পর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক তাঁর বাংলোতে ফেরেন। এরপর রাতে তিনি একটি ভাড়া করা গাড়িতে শরীয়তপুর ছাড়েন।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক নারীর সঙ্গে তাঁকে নিয়ে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে দুই দিন ধরে একটা বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। আজ সন্ধ্যায় তাঁকে ওএসডি করার আদেশ এসেছে।
ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও নিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, ছবি ও ভিডিওতে থাকা নারী তাঁর আত্মীয়। পরিবারে যাতায়াতের কারণে তাঁদের সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রকাশ পাওয়া ছবি ও ভিডিও কিছু সত্য এবং কিছু মিথ্যা। ওই নারী গত বছর সেপ্টেম্বরে তাঁর স্বামীকে তালাক দেন।
ছবি ও ভিডিওগুলো শরীয়তপুরে আসার আগের দাবি করে আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওই নারী আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন। আমি ডিসি হিসেবে পদায়নের পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নানাভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন। বিভিন্ন সময় ঘুমের ওষুধ ও নেশাদ্রব্য খাইয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে আমার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতেন। ব্ল্যাকমেল করে প্রতি মাসে টাকা হাতিয়ে নিতেন। পূবালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা দেওয়ার ডকুমেন্ট আছে। সর্বশেষ তিনি চাপ দিতে থাকেন, আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে হবে। নয়তো বড় অঙ্কের টাকা দিতে হবে। ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় টাঙ্গাইলের কিছু সংবাদকর্মী ও আইনজীবীকে ছবি ও ভিডিও সরবরাহ করেন। এ ছাড়া শরীয়তপুরের এক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে টাকা আদায় করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল ছবি জনসমক্ষে প্রকাশ করার অধিকার কেউ রাখেন না। এ কারণে ওই নারীর বিরুদ্ধে আমি আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারি।’
আরও পড়ুনশরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে এক নারীর ছবি ও ভিডিও নিয়ে আলোচনা৭ ঘণ্টা আগেভিডিওতে থাকা ওই নারীর বাড়ি টাঙ্গাইলে। তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকতেন। জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের বাসাও মিরপুর এলাকায়। স্বামীর সঙ্গে ওই নারীর বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি টাঙ্গাইলে বসবাস করছেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গতকাল কয়েক দফা ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা দিলেও তিনি উত্তর দেননি।
শরীয়তপুরের একজন সাংবাদিকের সঙ্গে ওই নারী যোগাযোগ করেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, আশরাফ উদ্দিন তাঁকে বিয়ের কথা বলে তাঁর সংসার ভেঙেছেন। এখন বিয়ে না করে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। ঘুমের ওষুধ খেয়ে, নেশা করে আত্মহত্যা করার ভয় দেখিয়ে তাঁর প্রতি তাঁকে (নারী) দুর্বল ও আসক্ত করেন। এক বছর ধরে তাঁদের সম্পর্ক চলছে। বিয়ের জন্য বললে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেবেন এমন হুমকিও দিয়েছেন।
আরও পড়ুনফেসবুকে নারীর ছবি, ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে টাকা নেন তাঁরা১৬ মার্চ ২০২৩দুই মাস ধরে জেলা প্রশাসক ও ওই নারীর মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেন শরীয়তপুর জজ আদালতের একজন আইনজীবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতেন। আমি দুজনকেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম বিয়ে করার জন্য, কিন্তু ওই নারী রাজি হননি। তিনি সমঝোতার জন্য বড় অঙ্কের টাকা দাবি করেছিলেন, যা পরিশোধের জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল ৩০ জুনের মধ্যে। ওটা নিয়েই আলোচনা চলছিল। তার মধ্যেই এমন ছবি ও ভিডিও মানুষের সামনে চলে এল।’
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে জেলা প্রশাসক হিসেবে শরীয়তপুরে যোগদান করেন ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাঁর সঙ্গে ওই নারীকে জড়িয়ে একটি আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ও চারটি আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার বিকেলে আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর উদ্দেশে আবেগঘন কিছু কথা বলছেন, এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল এক ন র র ওই ন র র র একজন র জন য ত কর ছ ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’ না হয়ে প্রভাবমুক্ত হোক পুলিশ
ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা—এই প্রবণতা স্বাধীনতার পর থেকেই দেখা গেছে। যখন যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে কাজে লাগিয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের অনেক সদস্য রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়েছেন। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে দেশে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীন বা স্বায়ত্তশাসিত পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
‘পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা: নাগরিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনদের আলোচনায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত এই বৈঠকে আলোচকদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পুলিশের বর্তমান ও সাবেক আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজীবীসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ছিলেন। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ। তিনি বলেন, পুলিশের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করার জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত পুলিশ কমিশন প্রতিষ্ঠা করা উচিত। সাবেক ও বর্তমান বিচারপতি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৯-১১ সদস্যের এই কমিশন হতে পারে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, চীন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে এমন কমিশন আছে।
সাবেক এই অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৪০০ মানুষের বিপরীতে একজন পুলিশ থাকার কথা। বাংলাদেশে ৮৪৩ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এমনকি এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়েও বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। ভারতে ৬৬৭ জনের বিপরীতে একজন, পাকিস্তানে ৫৫২, থাইল্যান্ডে ২৯৭ এবং মালয়েশিয়ায় ৩১৩ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ সদস্য আছেন।
বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। তিনি বলেন, সব প্রতিষ্ঠানের আগে পুলিশ সংস্কার প্রয়োজন। রাষ্ট্রের উপস্থিতি প্রথমেই পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে শুরু হয়। অথচ যুগ যুগ ধরে পুলিশকে অপব্যবহার করা হয়েছে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় এই বাহিনীর যে ভূমিকা দেখা গেছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের কারণেই ঘটেছে। দেশ পরিচালনার অংশ না হয়ে পুলিশ দল চালানোর জন্য কাজ করেছে। তখন যে দল ক্ষমতাসীন ছিল, তারা মনে করত পুলিশ তাদের দলেরই একটি বর্ধিত অংশ।
মাহ্ফুজ আনাম বলেন, কাজের স্বাধীনতা দিতে হবে পুলিশকে। রাজনৈতিক কারণে পুলিশকে যেন অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা না যায়, সেই সংস্কার করতে হবে। এ জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে পুলিশকে ব্যবহারবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে যারাই সরকারের এসেছি, তারাই এই পুলিশকে বিনষ্ট করেছি। সবাই রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত বা শক্তিশালী করতে অথবা পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পুলিশকে ব্যবহার করেছি। এতে কমবেশি অসত্য কিছু নেই। কিন্তু পুলিশ ব্যবহৃত হয়েছে, এটাও সত্য। নিয়োগ থেকে শুরু করে পদোন্নতি পর্যন্ত সব জায়গায় যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে, সেই পুলিশ দিয়ে কী আশা করা যায়?’
জনমুখী পুলিশ করতে চাইলে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা দিতে হবে। বাহারুল আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শকবিএনপির এই নেতা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর যত মামলা হয়েছে এবং মব ক্রাইসিস হয়েছে, এই দুটো জিনিস এই সরকার এবং জনগণের সবচেয়ে বেশি ড্যামেজ করেছে। একটি মামলায় দুই হাজার, পাঁচ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলো নিয়েছে পুলিশ।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি, যারাই সরকারে যাক, তাদের মধ্যে যেন এমন বদ্ধমূল ধারণা না থেকে যে আগামীবার তারা বিরোধী দলে যাবে না। বিরোধী দলে যাওয়ার মানসিকতা থাকলে রাষ্ট্রে সুশাসন জারি হবে। তাহলেই পুলিশ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হবে না। প্রশাসন স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারবে।’
পুলিশকে নির্যাতকের ভূমিকায় মানুষ আর দেখতে চায় না বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মো. মোবারক হোসাইন। তিনি বলেন, জনবান্ধব করতে পুলিশকে নৈতিক প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের সময় পুলিশের কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্র থাকা উচিত নয় বলেও মনে করেন তিনি।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকারবৈঠকে হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, মামলার তদন্তে বিলম্বের অন্যতম কারণ ক্ষমতাসীনদের নির্দেশ পুলিশ পরিচালিত হয়। ধীরে চলার নির্দেশনা এলে পুলিশের তদন্তের গতিও কমে যায়। রাজনৈতিক প্রভাব ও হস্তক্ষেপের বাইরে আসতে হবে পুলিশকে। একই সঙ্গে পুলিশের নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার পাশাপাশি স্বচ্ছ হতে হবে।
স্বাধীন পুলিশ কমিশনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিরোধিতা করা হয়েছে বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে কোনো কিছুই কার্যত কাজে আসবে না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আরেকজন সদস্য ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিগত সময়ে পুলিশের মূল কর্তৃত্বের অধিকারী যাঁরা ছিলেন, তাঁরা এমন কোনো অপরাধ বাকি রাখেননি, যেটা অপরাধ বইয়ে নেই। এটা কেবল রাজনৈতিক কারণে হয়েছে—এমন ন্যায্যতা দেওয়ার সুযোগ নেই।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন শেষ সময় পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনে আলোচিত হয়নি। এর কারণ পরিষ্কার। রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক এবং পুলিশ নিজেই সেটি হতে দেয়নি। ক্ষমতাকে জবাবদিহির জায়গায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক শক্তি যেমন চায় না, তেমনি আমলাতন্ত্র এবং পুলিশও চায় না।
ক্ষমতা ধরে রাখার মানসিকতাপুলিশ সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি দরকার বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বৈঠকে বলেন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন পরিবর্তন করতে হবে। এই আইন পরিবর্তন হয় না ক্ষমতা ধরে রাখার মানসিকতা থেকে। যতগুলো পুলিশ কমিশন হয়েছে, এর মধ্যে এবারের কমিশন সবচেয়ে আশাহীন এবং অকার্যকর কমিশন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘আমরা ভালো হতে চাই’বৈঠকে পুলিশের বর্তমান আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘পুলিশের তরফ থেকে ২০০৬-০৭ সাল থেকেই বলছিলাম, আমাদের সংস্কার হোক। আমরা ভালো হতে চাই। প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করেন। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন পরিবর্তন করতে বলেছিলাম। কিন্তু ২০০৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের দেওয়া সেই প্রস্তাবনা ঘুমন্ত অবস্থাতেই আছে।’
বাহারুল আলম বলেন, জনমুখী পুলিশ করতে চাইলে কিছুটা স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা দিতে হবে। পুলিশকে মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। পুলিশ একটি স্বাধীন সংস্থার কাছে থাকুক। তিনি বলেন, মামলায় কাকে গ্রেপ্তার করা হবে, কার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে—সেটা যেন কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাপিয়ে দিতে না পারে। এই জায়গাটা পুলিশ চেয়েছে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পুলিশ অনেক কাজ সঠিকভাবে করতে পারছে না বলে বৈঠকে উল্লেখ করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মো. ছিবগাত উল্লাহ।
বৈঠকে বক্তব্য দেন সাবেক পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ ইকবাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিজওয়ানুল ইসলাম, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজির (প্রশাসন) দায়িত্বে থাকা কাজী মো. ফজলুল করিম, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও ফাহমিদা আক্তার, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন প্রমুখ।