এরিক মারিয়া রেমার্ক যুদ্ধবিরোধী অমর কণ্ঠস্বর
Published: 22nd, June 2025 GMT
আমরা আর তরুণ নই। ঝড়ের বেগে পৃথিবীকে দখল করতে চাই না আর। পালাচ্ছি আমরা। পালাচ্ছি নিজেদের কাছ থেকে, নিজেদের জীবনের কাছ থেকে। বয়স ছিল আঠারো, ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম জীবন ও পৃথিবীকে, তারপরও সেই জীবন ও পৃথিবীকেই গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিতে হলো আমাদের।—অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট
১৯৩০ সালের ৫ ডিসেম্বর। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত এক হলিউডি চলচ্চিত্র দেখার জন্য বার্লিনের মোজার্ট হলে ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য দর্শক। কিন্তু ছবি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই নাৎসি পার্টির সমর্থক দেড় শ তরুণ এসে ঢুকল হলে, তাদের নেতৃত্বে জোসেফ গোয়েবলস, ৩৩ বছর বয়সী উগ্রবাদী এক হিটলার সমর্থক। ইহুদিবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে হলের ভেতর দুর্গন্ধ ছড়ানো স্টিংক বোমা নিক্ষেপ করল তারা, শুঁকলেই হাঁচি আসে এমন পাউডার ছড়াল, সিনেমা হলে ছেড়ে দিল সাদা ইঁদুর। রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড বাধল প্রেক্ষাগৃহের ভেতর, সিনেমা দেখা বাদ দিয়ে পালিয়ে বাঁচল দর্শকেরা। যে চলচ্চিত্রটি নিয়ে গোয়েবলস ও তাঁর দলবলের এত আপত্তি তার নাম ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। এরিক মারিয়া রেমার্ক নামে নবীন এক ঔপন্যাসিকের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি, প্রকাশের পরই যা ঝড় তুলেছিল জার্মানিসহ বাকি বিশ্বে।
১৮৯৮-এর ২২ জুন ওস্নাব্রুক নামে পশ্চিম জার্মানির ছোট এক শহরে জন্ম এরিক মারিয়া রেমার্কের। জন্মনাম এরিক পল রেমার্ক। পিটার ফ্রাঞ্জ রেমার্ক ও আনা মারিয়ার চার সন্তানের তৃতীয়জন। মায়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে তরুণ বয়সেই নিজের নাম বদলে ‘এরিক মারিয়া’ করে নেন রেমার্ক। ১৯১৬ সালে স্কুলের পড়ালেখা শেষ করেই যোগ দেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। পশ্চিম রণাঙ্গনে কাটান কিছুদিন, যেখানে যুদ্ধের ভয়াবহ বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এক মাসে পাঁচবার আহত হয়েছিলেন, শেষবার ইপ্রেসের তৃতীয় যুদ্ধের সময়। সেখানেই এক সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় প্রথম কলম তুলে নেন হাতে, লিখতে শুরু করেন যুদ্ধদিনের অভিজ্ঞতার কথা। যুদ্ধের কষ্ট ও বিষণ্ণতা ভুলে থাকার জন্য লেখালেখি একধরনের থেরাপি হিসেবে কাজ করল। যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা, নানা রকমের পেশায় হাত পাকান। একটি ক্রীড়া সাময়িকীর সম্পাদনাও করেন। ১৯২৭ সালে সেই সাময়িকীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য স্টেশন ইন দ্য হরাইজন’। তারপর হাত দিলেন সেই বইটিতে, যেটি ইতিহাসে অমর করে রাখবে তাঁকে: ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’—পশ্চিম রণাঙ্গন নিশ্চুপ। উপন্যাসের গল্প তরুণ সৈনিক পল বোমারের জবানিতে বলা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে বোমার ও তার সহযোদ্ধাদের পাঠানো হয় পশ্চিম রণাঙ্গনে—সুইজারল্যান্ডের সীমান্ত থেকে উত্তর সাগর পর্যন্ত প্রায় চার শ মাইল দীর্ঘ এক এলাকা। যুদ্ধের নারকীয় বীভৎসতার সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটে সেখানে। উপন্যাসের সূচনা যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে দূরে, নিরুদ্বিগ্ন এক পরিবেশে যেখানে ভরপেট স্যুপ গিলে ধূমপানের ফাঁকে হালকা আলাপে মেতেছে বোমার ও তার সহযোদ্ধারা। তারপর নির্বিকারভাবে লেখক বর্ণনা করেন সেনাদের রাঁধুনি কীভাবে নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫০ জনের জন্য রান্না করেছে, যদিও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে এসেছে মাত্র ৮০ জন। এরপর ধীরে ধীরে পাঠককে যুদ্ধের রক্তাক্ত বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রেমার্ক। বোমার উপলব্ধি করে, ‘বীরত্বের জন্য তৈরি করা হচ্ছে তাদের, যেভাবে তৈরি করা হয় সার্কাসের ঘোড়াদের।’ মৃত্যুর চিহ্ন কীভাবে তাদের ভেতর থেকে বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে টের পায় সে: ‘অনুভূতিহীন মৃত মানুষ আমরা, কোনো এক ভয়ংকর জাদুবলে যারা এখনো দৌড়ায় আর মানুষ মারে।’ বোমার ভাবে, ‘স্রেফ ২০ বছর বয়স আমার, অথচ সন্দেহ ও মৃত্যু ছাড়া জীবন সম্বন্ধে আর কিছুই জানি না।’ বোমায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারানো, খাবারের খোঁজে সৈন্যদের আবর্জনা ঘাঁটা, বিষাক্ত গ্যাস আর বোমার আঘাতে অসংখ্য তরুণ প্রাণের বিনাশ—চাঁছাছোলা ভঙ্গিতে তুলে ধরেন লেখক। বোমারের সহযোদ্ধাদের বেশির ভাগই আত্মাহুতি দেয় যুদ্ধে। যুদ্ধবিরতির ঠিক আগে, খুব শান্ত আর নিরুপদ্রব এক দিনে মৃত্যু হয় তার নিজেরও, বইয়ের শেষ কটা বাক্য বর্ণনা করা হয় নামপুরুষে: ‘১৯১৮-এর অক্টোবরে মৃত্যু হয় পলের। গোটা রণাঙ্গন সেদিন এত শান্ত আর স্থির ছিল যে সেনা প্রতিবেদনে কেবল একটি বাক্য লেখা হয়: পশ্চিম রণাঙ্গন নিশ্চুপ। সামনের দিকে ঝুঁকে এমনভাবে মাটিতে পড়েছিল সে, যেন ঘুমাচ্ছে। শরীরটাকে ওলটানোর পর চেহারা দেখে মনে হলো খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি তাকে। শান্ত সমাহিত এক ভাব চেহারায়, যেন অবশেষে মৃত্যু এসেছে এ জন্য খুশি সে।’
বিশ্বযুদ্ধের বিষাক্ত প্রতিক্রিয়ায় ক্লান্ত, বিপর্যস্ত মানুষ বইটির মধ্যে খুঁজে পেল একধরনের নিদান, যুদ্ধের নৃশংসতা ও অমানবিকতার বিষয়ে নতুন করে যা সচেতন করে তোলে তাদের। প্রকাশের প্রথম দিনই সবগুলো কপি শেষ হয়ে যায়। প্রথম কয়েক সপ্তাহে বিক্রি হয় ১০ হাজার কপি, বছরশেষে যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। বর্হিবিশ্বেও পায় অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা। ব্রিটেন ও ফ্রান্সে বিক্রি হয় ছয় লাখ কপি, যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখ। ইউনিভার্সাল পিকচার বইয়ের চলচ্চিত্র-স্বত্ত্ব কিনে নেয় ৪০ হাজার ডলার দিয়ে, অল্পদিনের মধ্যেই মুক্তি পায় ছবিটি।
যে কারণে যুদ্ধের ভয়াবহতায় বীতশ্রদ্ধ মানুষ বইটিকে দুহাত মেলে গ্রহণ করেছিল ঠিক সেই কারণে এর বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হলো যুদ্ধবাজ নাৎসিরা। সিনেমাটি মুক্তির কিছুদিন আগেই জাতীয় নির্বাচনে ৬৪ লাখ ভোট টেনে গোটা জাতিকে চমকে দিয়েছিল তারা, জার্মান পার্লামেন্টে ১০৭ আসন নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে। হিটলার ও নাৎসিরা মনে করত নিজেদের দুর্বলতার কারণে নয়, ইহুদি-মার্ক্সিস্ট ষড়যন্ত্রেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ। এজন্যই শান্তিবাদী এ বই এমন চক্ষুশূল ছিল তাদের। বইটির বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগল তারা, নানা জায়গায় বিক্ষোভ হলো বই ও তার লেখকের বিরুদ্ধে, পোড়ানো হলো অজস্র কপি। গোয়েবলসের নেতৃত্বে বইয়ের বিরুদ্ধে চলল ধ্বংসের উৎসব, গোয়েবলসের চোখে যা ছিল ‘জার্মান আত্মার পরিশোধন’।
১৯৩৩-এর ৩১ জানুয়ারি চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ নিলেন হিটলার, সেদিনও বার্লিনেই ছিলেন রেমার্ক। মেরে ফেলার জন্য তাঁকে নাৎসিরা খুঁজছে, এ তথ্য পেয়ে রাতের আঁধারে বার্লিন ছাড়লেন। চলে গেলেন সুইজারল্যান্ডে। বছর না ঘুরতেই জার্মানিতে ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ নিষিদ্ধ করা হলো। ইতোমধ্যে রেমার্ক লিখে ফেলেছেন বইটির দুই সিকুয়েল ‘দ্য রোড ব্লক’ ও ‘থ্রি কমরেডস’। ওদিকে নাৎসিদের দাপটে সুইজারল্যান্ডেও তাঁর থাকা অনিরাপদ হয়ে উঠল। ১৯৩৯-এ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেন রেমার্ক। এখানে শুরু হলো তাঁর জীবনের আরেক অধ্যায়। এ অধ্যায় প্রথম অধ্যায়ের পুরো বিপরীত, যেখানে কোনো শঙ্কা নেই, নেই বিপদের ভয়। এ অধ্যায় প্রেম, উপভোগ্যতা আর অর্জনের। লেখক হিসেবে তো বটেই, প্রেমিক হিসেবেও রেমার্ক ছিলেন দুর্দান্ত। অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী জুটা ইলসে জাম্বোনাকে বিয়ে করেছিলেন ১৯৩০ সালে, মাঝখানে একবার বিবাহ বিচ্ছেদের পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন জুটাকে, কিন্তু কখনোই বিশ্বস্ত ছিলেন না তার প্রতি। একের পর এক প্রেমিকা পাল্টেছেন। বারমেইড ও পতিতা থেকে শুরু করে গ্রেটা গার্বো, হেডি লামার, লুইসে রেইনার, মরিন ও’ সুলিভান, মার্লিন ডিয়েট্রিচের মতো হলিউডি সেলিব্রিটিরাও বাদ যাননি।
এরই মধ্যে শুরু হয় মানবেতিহাসের নৃশংসতম ধ্বংসযজ্ঞ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। দেশে দেশে চলতে থাকে হিটলারের খুনে বাহিনীর তাণ্ডব। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা রেমার্ককে এই তাণ্ডব স্পর্শ না করলেও তাঁর পরিবারের ওপর দিয়ে বয়ে যায় প্রবল ঝড়। তাঁর শ্যালকের ঠাঁই হয় বন্দিশিবিরে, তাঁর সৎমা আত্মহত্যা করেন। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর পরিণতি হয় রেমার্কের ছোট বোন এলফ্রিডের। ড্রেসডেন শহরের বাসিন্দা এলফ্রিডেকে তাঁর বাড়িওয়ালি ধরিয়ে দেয় গেস্টাপোদের হাতে। অভিযোগ ছিল ‘পরাজয়বাদী চিন্তাভাবনা’ ও ‘সামরিক বাহিনির বিরুদ্ধে নাশকতা’। সাজানো বিচারে মৃত্যুদণ্ড হয় তাঁর, শিরশ্ছেদ করা হয় গিলোটিনে। পুরো ব্যাপারটিই যে একটা প্রহসন ছিল তা প্রমাণিত হয় এলফ্রিডের প্রতি এক বিচারকের উক্তিতে: ‘তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছি, যেহেতু তোমার ভাইকে ধরতে পারছি না। ভাইয়ের অপরাধের মূল্য চুকাতে হবে তোমাকে।’
স্বদেশে পরিস্থিতি যা-ই থাক, বিশ্বজুড়ে রেমার্কের খ্যাতি তখন তুঙ্গে। সেরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো লাইন দিচ্ছিল তাঁর বই প্রকাশের জন্য। কোলিয়ার-এর মতো বনেদী প্রকাশনা ধারাবাহিকভাবে ছাপাচ্ছিল তাঁর লেখা। হলিউডেও তাঁর বই অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ বাড়ছিল ব্যাপকভাবে। যুক্তরাষ্ট্রের এমাথা থেকে ওমাথা ক্রমাগত সফরের ফাঁকে দুহাতে লিখে যাচ্ছিলেন রেমার্ক। স্বদেশের সঙ্গে নির্বাসিত মানুষের সম্পর্ক এবং নতুন জীবনে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়াস—এই ছিল তাঁর এ সময়কার লেখালেখির প্রধান অনুষঙ্গ, যেন নিজের জীবনকে আঁতশকাচের নিচে ফেলে আত্ম-অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন। ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন রেমার্ক। ‘অফিস অব দ্য স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেস’ (আজকের সিআইএ-র পূর্বসুরি)-এর সঙ্গে মিলে বিশ্লেষণী একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন যাতে যুদ্ধ-পরবর্তী জার্মানির জন্য সমন্বিত পুনর্শিক্ষায়ন কর্মসূচির রূপরেখা দাঁড় করানো হয়। রেমার্ক মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, জার্মান জাতির সামগ্রিক পুনর্বাসনের জন্য যুদ্ধকালীন নাৎসি বর্বরতার খোলামেলা বিবরণ ও সমরবাদের বিপদ সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করা একান্ত প্রয়োজন।
যুদ্ধশেষেও নাৎসিবাদের বিপদ বিষয়ে লেখালেখি চালিয়ে যান রেমার্ক। নাৎসিবাদের ভয়াবহতা, গণহত্যা, কনসেন্ট্রেশেন ক্যাম্পের বীভৎস বাস্তবতা ও নাৎসি বর্বরতার প্রতি সাধারণ জার্মানদের নীরব সমর্থনের বিবরণী রেমার্কের মতো সাহসিকতার সাথে আর কেউ লিখেননি বা লিখতে পারেননি। ‘স্পার্ক অব লাইফ’ ও ‘আ টাইম টু লাভ অ্যান্ড আ টাইম টু ডাই’-এর মতো উপন্যাসগুলোতে এই বাস্তবতার কথা বলেছেন নিঃসঙ্কোচে। বোন এলফ্রিডের আত্মদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছিলেন ‘স্পার্ক অব লাইফ’ উপন্যাসটি। বিশ্বাসঘাতকতা করে এলফ্রিডেকে যারা গেস্টাপোদের হাতে তুলে দিয়েছিল তারা যাতে আইনের হাত থেকে বাঁচতে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন রেমার্ক। ন্যুরেমবার্গ আদালতের খ্যাতনামা মার্কিন কৌঁসুলি রবার্ট কেম্পনার এক্ষেত্রে সাহায্য করেছিলেন তাঁকে।
১৯৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন তিনি। ততদিনে স্বদেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে তাঁর ওপর থেকে। জার্মানদের বইয়ের তাকে আবার শোভা পাচ্ছে রেমার্কের অসাধারণ সৃষ্টিগুলো। ‘আর্ক অব ট্রায়াম্ফ’ লিখেছিলেন ১৯৪৫ সালে, ফ্রান্সে নির্বাসিত এক জার্মান শল্যচিকিৎসকের জীবন নিয়ে, বেআইনিভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যে দিন গুজরান করে। জীবন সম্বন্ধে সব আশা ছেড়েই দিয়েছিল সে, তবু নিতান্তই অপ্রত্যাশিতভাবে, একদিন প্রেম এল জীবনে। ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’-এর পর এ বইটিই সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগিয়েছিল পাঠকদের মধ্যে। তারপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে প্রকাশিত হলো ‘স্পার্ক অব লাইফ’, এবং একে একে ‘আ টাইম টু লাভ অ্যান্ড আ টাইম টু ডাই’, ‘দ্য ব্ল্যাক ওবেলিস্ক’, ‘হ্যাভেন হ্যাজ নো ফেভারিটস’, ‘দ্য নাইট ইন লিসবন’, ‘শ্যাডোজ ইন প্যারাডাইস’।
১৯৫৮ সালে জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেত্রী পলেট গর্ডাডকে বিয়ে করেন রেমার্ক। জীবনের বাকি দিনগুলো কাটে সুইজারল্যান্ডে গার্হস্থ্য প্রশান্তির মধ্যে। ত্রিশ বছর বয়সে ‘অল কোয়ায়েট অন ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’-এর মাধ্যমে যে তারকাখ্যাতি পান বাকি জীবন নক্ষত্রগতিতে বেড়েছিল সেটি। সমালোচক ও সাধারণ পাঠক উভয়ের কাছেই ছিলেন সমান সমাদৃত। দুই বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ বাস্তবতার কথা রাখঢাক না করেই তুলে ধরেছিলেন সাধারণ মানুষের সামনে, যা হৃদয় স্পর্শ করেছিল তাদের। এ কারণে মৃত্যুর এত বছর পরও তাঁর নামটি পাঠকমহলে এতটা জনপ্রিয়। সংখ্যার বিচারে তাঁর রচনাসম্ভার যথেষ্ট সমৃদ্ধ হলেও সাহিত্যিক হিসেবে রেমার্কের খ্যাতি প্রায় পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’-এর ওপর। বইটি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ফ্রাঙ্ক আর্নেস্ট হিল লিখেছিলেন, ‘যেকোনো সংবেদনশীল পাঠকের ওপর প্রবল প্রভাব ফেলতে বাধ্য বইটি।’ জোসেফ উড ক্রাচ-এর পর্যবেক্ষণ, ‘একধরনের সরল ভঙ্গিতে সাদাসিধেভাবে গল্প বলে যান রেমার্ক। এ সরলতা কম অভিজ্ঞতা থাকার কারণে নয়, বড্ড বেশি অভিজ্ঞতার কারণে।’ বইটি সম্বন্ধে রেমার্ক নিজেই বলেছিলেন সবচেয়ে সত্য কথাটি, ‘কোনো অভিযোগ নয় এ বইটি, স্বীকারোক্তি নয়, রোমাঞ্চকর অভিযান তো নয়-ই, যেহেতু মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানো মানুষগুলোর কাছে মৃত্যু কখনোই কোনো অভিযান নয়। একটি প্রজন্মের মানুষের কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে বইটিতে, যুদ্ধের গোলাবারুদকে এড়াতে পারলেও যুদ্ধের কারণে যারা ধ্বংস হয়ে গেছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র এর ক ম র য় চলচ চ ত র ব স তবত র গ য় বলস উপন য স র ক অব কর ছ ল প রক শ র জ বন র জন য বইয় র র ওপর প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের সাবেক ডিসির ‘নারী কেলেঙ্কারি’ ঘটনা তদন্তে কমিটি
শরীয়তপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ‘নারী কেলেঙ্কারির’ অভিযোগ ওঠার পর এই ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকার। রবিবার (২২ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (শৃঙ্খলা-২ অধিশাখা) ডা. মো. নূরুল হক এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রতিনিধিকে (যুগ্মসচিব পদমার্যদার নিচে নয়) সদস্য সচিব করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শরীয়তপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন শৃঙ্খলা পরিপন্থী আচরণের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বর্ণিত বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবেন।
২০২৪ সালের নভেম্বরে জেলা প্রশাসক হিসেবে শরীয়তপুরে যোগদান করেন মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। গত ১৯ জুন রাতে তার সঙ্গে এক নারীর একটি আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ ও চারটি আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরের দিন আশরাফ উদ্দিন ওই নারীর উদ্দেশে আবেগঘন কিছু কথা বলছেন, এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করেছে সরকার।
ঢাকা/আকাশ/রাজীব