ফেনীতে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষার আগে চাকরি প্রার্থীর কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি পরিচয় দেওয়া নাহিদ রাব্বি ও চাকরি প্রার্থী আব্দুল কাদেরকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন এক চিকিৎসক। 

অভিযুক্ত নাহিদ কাগজে-কলমে সংগঠনের কেউ না বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেনী জেলা সংগঠক আবদুল্লাহ আল জুবায়ের।

শুক্রবার (২০ জুন) রাতে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা.

ইফতেখার হাসান ভূঁইয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বিষয়টি রবিবার (২২ জুন) নিশ্চিত করেন পরশুরাম থানার ওসি মো. নুরুল হাকিম।

আরো পড়ুন:

ফুলপুরে সড়কে ৮ জন নিহতের ঘটনায় মামলা

ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় সেই মা

মামলার অভিযোগে বলা হয়, সম্প্রতি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগের বিষয়ে নাহিদ রাব্বি নামে একজন চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ ঘটনার ২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে ঘুষ লেনদেনের কথা স্পষ্টভাবে উঠে আসে।

কল রেকর্ডে নাহিদকে বলতে শোনা যায়, “লিখিত পরীক্ষার আগে ৪ লাখ টাকা দিতে হবে, বাকি টাকা পরে।” চাকরিপ্রত্যাশী কাদের টাকা কম দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে নাহিদের জবাব ছিল, “১০ লাখ টাকা থেকে এক পয়সাও কম হবে না।”

এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্তদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেনী জেলা সংগঠক আবদুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, “অভিযুক্ত নাহিদ আমাদের সঙ্গে কাজ করলেও কাগজে-কলমে সংগঠনের কেউ না। এ কারণে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। তবে, তাকে এখন থেকে সবধরনের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা হবে।”

ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রুবাইয়াত বিন করিম বলেন, “দীর্ঘদিন পর স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কল রেকর্ডের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।”

ফেনীতে স্বাস্থ্য বিভাগের ১১৫টি শূন্য পদের বিপরীতে ১২ হাজার ৪৪৮ আবেদন জমা পড়ে। গত শুক্রবার প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ফলাফল প্রকাশ করা হয় শুক্রবার রাতে। 

ফলাফল প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক পরীক্ষার্থী। অনেকেই বলেন, ভোররাতে ফল প্রকাশ করা হয়েছে এবং ৭৫ নম্বর পেয়েও কেউ কেউ নির্বাচিত হননি। সিভিল সার্জন কার্যালয় দাবি করছে, ফলাফল মূল্যায়নে ওএমআর পদ্ধতির স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তাই হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. রুবাইয়াত বিন করিম বলেন, “লিখিত পরীক্ষায় যারা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন, কেবল তাদেরই তালিকায় রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য সহকারী পদের পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় ফল প্রকাশে দেরি হয়েছে।”

ঢাকা/সাহাব/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ র

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুষে চলে যায় বরাদ্দের অর্ধেক

সড়ক পাকাকরণের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। ঠিকাদার মোট বিলের ৮০ শতাংশ তুলে নিয়ে তিন বছর ধরে লাপাত্তা। এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ থমকে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। 
এ চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের। ইতোমধ্যে সড়কে বিছানো খোয়া উঠে গেছে। ধুলাবালি জমে সামান্য বৃষ্টিতে কাদাপানিতে একাকার সড়ক। 
এ বিষয়ে কথা বলতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলম হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কল রিসিভ করলেও তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কার্যাদেশ পাওয়ার মোট বরাদ্দের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রকৌশলী,  অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন জনকে দিতে হয়। কাজ চলাকালে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী সাইটে যান, তাদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাজিরা হিসাবে দিতে হয়। এভাবে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা চলে যায় ঘুষের পেছনে। যে টাকা থাকে, তা দিয়ে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেক ঠিকাদার কিছুদিন কাজ করার পর বরাদ্দের টাকা তুলে লাপাত্তা হয়ে যান। কর্তারা তাদের কীভাবে বিল ছাড় করেন, তারাই বলতে পারবেন। অবৈধ আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বীকার করেননি।
২০২১-২২ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ৩-এর আওতায় নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ মাজার থেকে রংমহল পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৬৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৪ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৬৬ লাখ ১১ হাজার ৮৯৯ টাকায় কার্যাদেশ পায় মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও তা শেষ হয়নি।
২০২১ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালিন সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ সড়ক পাকাকরণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর ঠিকাদার সড়কের উভয় পাশে মাটি খুঁড়ে বালু ফেলে খোয়া বিছিয়ে দেন। এর মধ্যে সড়কের কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু ঠিকাদার ৮০ শতাংশ কাজের বিল তুলে লাপাত্তা। তিন বছর ধরে সড়কটি বেহাল পড়ে আছে। 
সড়কের কাজ শেষ করতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিলেও 
সাড়া মেলেনি। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কার্যাদেশ বাতিল করেছে। এখন চলছে পুনঃদরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া। 
সড়কটি দিয়ে নওগাঁয় হজরত শাহ শরিফ জিন্দানী (র.)-এর মাজার, নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ, নওগাঁ ফাজিল মাদ্রাসা, নওগাঁ হাটবাজার, নওগাঁ সোনালী ব্যাংক, নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ অফিসে যাতায়াত করতে হয়। 
উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক সড়কটি পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদার প্যালাসাইডিং, সাববেজ, সেন্ট ফিলিং ও ডব্লিউবিএম করেছে। সে অনুযায়ী বিল পাঠিয়েছি। বাকি কাজ না করায় বেশ কয়েকবার তাগাদা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সাড়া না পাওয়ায় ঠিকাদারের চুক্তিপত্র বাতিল করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ