ইরানে আক্রমণ করে ট্রাম্প বড় জুয়া খেললেন
Published: 23rd, June 2025 GMT
ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোয় হামলা চালিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বড় ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেন। একাধিক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মাথাব্যথার কারণ হয়েছিল ইরানের এই কর্মসূচি। এই আক্রমণের পর যা ঘটবে, সেটিই নির্ধারণ করবে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির ভবিষ্যৎ।
যদি ইরান অর্থবহ প্রতিশোধ নিতে না পারে, তাহলে ট্রাম্প দুই দিক দিয়ে লাভবান হবেন। দীর্ঘদিনের শত্রুর ওপর আঘাত হানা তো হবেই, সেই সঙ্গে চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে স্পষ্ট বার্তা পাঠানো হবে যে প্রয়োজনে তিনি সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না। কিন্তু ইরান যদি ট্রাম্পের শর্তে শান্তিচুক্তিতে না আসে? দীর্ঘ যুদ্ধের এক দরজা খুলে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা ইতিমধ্যে ট্রাম্পের সমর্থকদের কিছু অংশকে ক্ষুব্ধ করছে।
ট্রাম্প এক দশক আগে ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করে নিজের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলেছিলেন। সেই অবস্থান থেকে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হাঁটলেন। সে সময় তিনি প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে যুদ্ধের জন্য দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ অপচয় ও নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগ তুলেছিলেন। সবকিছু বদলে যায় রোববার।
আরও পড়ুনইরানের সঙ্গে যুদ্ধে নেতানিয়াহুকে চড়া মূল্য দিতে হবে ৫ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র ইরানের পাহাড়ের নিচে লুকানো পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলোয় দূরপাল্লার স্টিলথ বোমারু বিমানে শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে। হোয়াইট হাউস থেকে তিন মিনিটের এক ভাষণে ট্রাম্প এই অভিযানকে ‘অসাধারণ সামরিক সাফল্য’ বলে ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।’ ট্রাম্প স্পষ্ট হুমকি দেন, ‘আমরা শান্তি চাই। নয়তো গত আট দিনে যা ঘটেছে, ইরানের জন্য তার চেয়ে অনেক বড় এক অভূতপূর্ব বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখনো অনেক টার্গেট বাকি। শান্তি দ্রুত না এলে আমরা সেই টার্গেটগুলোয়ও নিখুঁতভাবে, দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে হামলা চালাব।’
কিন্তু ইরানের জনসংখ্যা ইরাকের দ্বিগুণ। বহু দশক ধরে সীমান্ত পেরিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছে তারা। যদি ইরান মার্কিন নাগরিক বা সেনাদের ওপর প্রতিশোধ নেয়, তাহলে সংঘাত দ্রুতই ছড়িয়ে পড়বে।
এই ঝুঁকির কারণেই ট্রাম্পের আগের কোনো প্রেসিডেন্ট ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলার পথে হাঁটেননি। মার্কিন সিনেটে সশস্ত্র বাহিনীবিষয়ক কমিটির ডেমোক্র্যাট শীর্ষ নেতা জ্যাক রিড বলেন, ‘ট্রাম্প এক বিশাল জুয়া খেলেছেন। এর ফল কী হবে, তা এখনো কেউ জানে না।’
ট্রাম্প বরাবরই যুদ্ধ ও শান্তির মধ্যে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার বাসনাও তাঁর খুব প্রবল। সেসবের কোনো পরোয়া না করে তিনি শক্তি প্রদর্শনের পথ বেছে নিয়েছেন। নিজে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেন, নিজেই তার উল্টো পথে হাঁটছেন তিনি।বারাক ওবামা ও জো বাইডেনও একই সংকটে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা হামলার পথে না গিয়ে কূটনৈতিক সমাধান খুঁজেছিলেন। যদিও সেই সময়ের ইরান এখনকার মতো দুর্বল ছিল না। সিরিয়া, লেবানন ও গাজায় ইরানের মিত্রদের পতনে তারা এখন অনেকটাই দুর্বল। ট্রাম্প বলেছেন, এ হামলার উদ্দেশ্য ইরানকে মার্কিন শর্তে চুক্তিতে বাধ্য করা।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, জবরদস্তিতে ইরান সহজে মাথা নোয়াবে না। ডিফেন্স প্রায়োরিটিজের মধ্যপ্রাচ্য কর্মসূচির পরিচালক রোজমেরি কেলানিক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি শাসন পরিবর্তন যুদ্ধের ঝুঁকিতে পড়েছে। হয়তো আরও বহু দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে জড়িয়ে থাকতে হবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির সিদ্ধান্ত না নিলেও এই হামলা তাদের সেই পথে ঠেলে দেবে।
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুদ্ধবাজির বিরুদ্ধে জনমতই একসময় ট্রাম্পকে ক্ষমতায় এনেছিল। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন ইরাক যুদ্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। সেই একই ধরনের যুদ্ধে আগবাড়িয়ে জড়ালেন ট্রাম্প, যার নিন্দা করে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। এখন তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে যে তাঁর বেছে নেওয়া পথ তাঁর পূর্বসূরিদের চেয়ে ভালো।
আরও পড়ুনইরানে হামলার পর এখন ট্রাম্পের সামনে যে তিন অনিশ্চয়তা২২ ঘণ্টা আগেএই বসন্তে ট্রাম্প তাঁর বন্ধু ও দূত স্টিভ উইটকফকে ইরানের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা করতে পাঠিয়েছিলেন। এতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু খুব অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে হামলার আগে জানিয়েছিল। হামলার পর ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু কথা বলেন। ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একটি ‘দল’। নেতানিয়াহু খুশি হয়ে বলেন, ‘আজ তাঁর নেতৃত্ব ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্য ও তার বাইরের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ তৈরি করবে।’
সমর্থকদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রাম্পকে সময় দিতে বলছেন ইরানকে। আবার কেউ খোলাখুলি বলছেন যে তিনি ভুল করেছেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ডানপন্থী মিত্র স্টিফেন ব্যানন ও চার্লি কার্ক ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ না করার জন্য ট্রাম্পকে সতর্ক করেছিলেন। তাঁরা সরাসরি ট্রাম্পকে সমালোচনা করেছেন আক্রমণের বিরোধিতা করে। ব্যানন বলেন, ‘অনেক মাগা (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) সমর্থক খুশি নন।’
অনেকে বলছেন, ‘আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে যুদ্ধ করবেন না।’ কার্ক বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণ অতীতে ভালো ফল দিয়েছে, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। কার্ক বলেন, ‘এটা কি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করেছে? আমরা জানি না।.
ট্রাম্প বরাবরই যুদ্ধ ও শান্তির মধ্যে দ্বিধা প্রকাশ করেছেন। নোবেল শান্তি পুরস্কার জেতার বাসনাও তাঁর খুব প্রবল। সেসবের কোনো পরোয়া না করে তিনি শক্তি প্রদর্শনের পথ বেছে নিয়েছেন। নিজে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেন, নিজেই তার উল্টো পথে হাঁটছেন তিনি।
মাইকেল বার্নবাউম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট–এর হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি
নাতালি অ্যালিসন দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট–এর হোয়াইট হাউস প্রতিবেদক
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ক ষমত য় র জন য কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মহাকাশে বিরল এক ছায়াপথ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
বাংলা চার সংখ্যার আদলে ভিন্ন আকৃতির একটি ছায়াপথের (গ্যালাক্সি) সন্ধান পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ভ্যান ডোক্কামের নেতৃত্বে এক দল বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীরা এই ছায়াপথকে অসীম বা ইনফিনিটি নামে অভিহিত করেন। তাঁদের ধারণা, দুটি ছায়াপথের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ফলে অদ্ভুত ৪ সংখ্যার মতো দেখতে ছায়াপথটি তৈরি হয়েছে। এর কেন্দ্রে আরও অসাধারণ কিছু লুকিয়ে থাকতে পারে।
পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও গবেষণার প্রধান ভ্যান ডোক্কাম বলেন, এটি দেখতে কেবল অদ্ভুতই নয়, এর সঙ্গে রয়েছে একটি অতিবৃহৎ কৃষ্ণগহ্বর। সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে পদার্থ তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কৃষ্ণগহ্বরটি ছায়াপথের দুটি নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত নয়, মাঝখানে অবস্থান করছে। দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারসে অদ্ভুত রকমের এই ছায়াপথের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
এমন কৃষ্ণগহ্বর কীভাবে জন্মগ্রহণ করে এবং কীভাবে তারা এত দ্রুত বিশাল আকার ধারণ করে, তা জানতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। কৃষ্ণগহ্বর সাধারণত ছায়াপথের কেন্দ্রের গভীরে দেখা যায়। নতুন কাঠামোতে দুটি একত্র ছায়াপথের কেন্দ্রের মধ্যে তৈরি হয়েছে কৃষ্ণগহ্বর। এমন কাঠামো বেশ অপ্রত্যাশিত।
নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই ছায়াপথের খোঁজ মিলেছে। এ ছাড়া হাওয়াইয়ের কেক অবজারভেটরি, চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরির আর্কাইভাল ডেটা ও ভেরি লার্জ অ্যারের আর্কাইভাল ডেটা ব্যবহার করে ঘন গ্যাসে বেষ্টিত একটি শক্তিশালী কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ মিলেছে সেখানে। নতুন এই আবিষ্কার জ্যোতির্বিদ্যার বিভ্রান্তিকর একটি রহস্য সমাধানে সহায়তা করবে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস