আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষাদণ্ডবিধি আইনের প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
Published: 23rd, June 2025 GMT
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ ষষ্ঠ পর্বে থাকছে দণ্ডবিধি আইন ১৮৬০ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসের গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলোর মধ্যে অন্যতম দণ্ডবিধি ১৮৬০ আইন। অপরাধের সংজ্ঞা, অপরাধ অনুসারে শাস্তির পরিমাণ এই আইনে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আইনজীবী হিসেবে পেশাগত জীবনেও আইনটি প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য আইনের তুলনায় দণ্ডবিধি আকারে বড় হওয়ায় বেশির ভাগ পরীক্ষার্থী ভয়ে থাকেন। তবে কৌশলী প্রস্তুতি নিতে পারলে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব।
দণ্ডবিধি ১৮৬০ থেকে লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন সাধারণত আসে। এর মধ্যে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। নম্বর থাকবে ১৫। শুরুতে দণ্ডবিধি আইন থেকে সংজ্ঞাগুলো পড়তে হবে। প্রায় প্রতিটি বড় প্রশ্নের হ্যান্ডেলেই সংজ্ঞা থেকে প্রশ্ন আসে। এবারের এমসিকিউ প্রশ্নের ধরন দেখে মনে হচ্ছে লিখিত পরীক্ষায় রচনামূলক প্রশ্ন বেশি আসবে। তবে পরীক্ষার্থীদের রচনামূলক প্রশ্নের পাশাপাশি সমস্যামূলক প্রশ্নের উত্তর লিখতে ও জানতে হবে।
দণ্ডবিধি আইনের শাস্তি অংশে ধারা ৫৩, ৬৩, ৬৫, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭৩, ৭৪; সাধারণ ব্যতিক্রম অংশ ধারা ৭৬-৮৯, ৯২-৯৪, ৯৬-১০৬; যৌথ দায় অংশে ধারা ৩৪-৩৮, ১০৭-১২০, ১২০এ-১২০বি; গণশান্তি পরিপন্থী অপরাধ অংশে ধারা ১৪১-১৪৪, ১৪৯, ১৪৬ ও ১৪৮, ১৫৯ ও ১৬০; মিথ্যা সাক্ষ্য অংশে ১৯১-১৯৫, ১৯৭, ২০১, ২১১, ২১২ ও ২১৬এ; দণ্ডনীয় নরহত্যা অংশে ধারা ২৯৯-৩০৯; আঘাত অংশে ধারা ৩১৯-৩২৬এ, ৩৩৮এ বেআইনি আটক এবং অবরোধ অংশে ধারা ৩৩৯-৩৪৪; অপহরণ ও অপবহান অংশে ধারা ৩৫৯-৩৬৩; ধর্ষণ অংশে ধারা ৩৭৫-৩৭৭; চুরি অংশে ৩৭৮-৩৮২; দস্যুতা এবং ডাকাতি অংশে ধারা ৩৯০, ৩৯২, ৩৯৩ এবং ৩৯১, ৩৯৫, ৩৯৬ ও ৩৯৯; অসাধুভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ অংশে ৪০৩, ৩০৭; অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ অংশে ধারা ৪০৫-৪০৯; চোরাই মাল গ্রহণ অংশে ধারা ৪১০-৪১৩; প্রতারণা অংশে ৪১৫, ৪১৭, ৪২০, ৪১৬, ৪১৯; বেআইনি অনুপ্রবেশ অংশে ধারা ৪৪১ ও ৪৪৭, ৪৪২ ও ৪৪৮, ৪৪৩ ও ৩৫৩, ৪৪৩ ও ৪৫৬, ৪৪৫ ও ৪৫৩, ৪৪৬ ও ৩৫৬; জালিয়াতি অংশে ধারা ৪৬৩-৪৬৫; মানহানি, অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন অংশ থেকে ধারা ৪৯৯, ৫০০, ৫০৩, ৫০৬, ৫১১ পড়তে হবে।
এ ছাড়া কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। যেমন অপরাধমূলক ধারাগুলো আলাদা করে পড়তে পারেন। কোন কোন অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের কথা আছে, সেগুলো একত্রে পড়তে পারেন। ছোট ছোট শাস্তির ধারাগুলো পড়তে হবে। যেমন অবৈধ সমাবেশ, মারামারি, অবৈধ বাধা, ভয় প্রদর্শন, আঘাতসহ বেশ কয়েকটি ধারা রয়েছে, যেগুলোর শাস্তি এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত। অনেক সময় ছোট ছোট শাস্তির ধারাগুলো নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে।
দণ্ডবিধি আইনে কাছাকাছি ধারণার বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। পরীক্ষায় এসব প্রশ্ন এলে পরীক্ষার্থীরা গুলিয়ে ফেলেন। যেমন সাধারণ অভিপ্রায় ও সাধারণ উদ্দেশ্য বলতে কী বোঝায়? দুষ্কর্মে সহায়তা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের পার্থক্য কী, অবৈধ বাধা এবং অবৈধ আটক কাকে বলে, ডাকাতি ও দস্যুতার মধ্যে মিল ও অমিল কোথায় এবং অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ ও সম্পত্তি আত্মসাৎ। এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে পরীক্ষার কক্ষে যেতে হবে। প্রতিবার এসব বিষয় থেকে বিভিন্নভাবে প্রশ্ন আসে।
আইনজীবী তালিকাভুক্ত লিখিত পরীক্ষায় দণ্ডবিধি থেকে ভালো নম্বর পেতে হলে কেস রেফারেন্স, উদাহরণ এবং আইনের সঠিক ধারার ব্যবহার করতে হবে। তবেই খাতা মূল্যায়নকারী আপনাকে যথাযথ মূল্যায়ন করবেন।
প্রশ্নটি হাতে পেয়েই উত্তর লেখা শুরু করবেন না। প্রশ্নের মধ্যে প্রশ্নকর্তা যে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন, সেটা বোঝার চেষ্টা করবেন। এরপর গঠনমূলকভাবে লিখবেন। সমস্যামূলক প্রশ্ন হলে আগে প্রশ্নে বর্ণিত ঘটনার আংশিক লিখবেন। পরে ওই ঘটনার সঙ্গে দণ্ডবিধির যে ধারাটি প্রাসঙ্গিক, সেটি লিখবেন। তৃতীয় ধাপে পরামর্শমূলক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেবেন। এই অংশে উচ্চ আদালতের কেস রেফারেন্স এবং উদাহরণ দিয়ে লিখবেন।
রচনামূলক প্রশ্নের উত্তরে শুরুতেই প্রশ্নের বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনের ধারা উল্লেখ করে লেখা শুরু করবেন। এতে খাতা মূল্যায়নকারী আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করবেন। অপর দিকে টিকা বা শর্ট নোট আকারে আসা প্রশ্নগুলোর উত্তরে সংজ্ঞা বা আইনের মূল বক্তব্য তুলে ধরবেন। এতে নিজস্ব মতামত বা পরামর্শ দেওয়ার দরকার নেই। এভাবে পরীক্ষায় লিখলে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। একটি বিষয় মনে রাখবেন, পাতার পর পাতা লিখলেই পাস নম্বর আসবে না, যদি না সেসব গঠনমূলক লেখা হয়। তবে আইনের ধারা সঠিক উল্লেখ করে লিখতে পারলে পাস করা সহজ হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ পর ক ষ র পর ক ষ য় প রস ত ত আইনজ ব ত র পর করব ন অপর ধ আইন র
এছাড়াও পড়ুন:
‘বিচারিক স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ নিয়ে সেমিনার রোববার, থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা
‘বিচারিক স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে রোববার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিকেল পৌনে ৫টায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সেমিনারের উদ্বোধন করবেন। সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লেলার। এরপর বিচার বিভাগ সংস্কারে প্রধান বিচারপতি ঘোষিত ‘রোডম্যাপ’র ওপর তথ্যচিত্র তুলে ধরা হবে।
এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন আইন উপদেষ্টা ড. অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
সেমিনারে বক্তব্য রাখবেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।