কলম্বোয় দ্বিতীয় টেস্ট থেকে ছিটকে পড়েছেন শ্রীলঙ্কার ডানহাতি পেসার মিলান রত্নায়েকে। পেটের পেশিতে চোট পেয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এ বোলার। তাঁর বদলি হিসেবে বাঁহাতি পেসার বিশ্ব ফার্নান্ডোকে দলে টেনেছে শ্রীলঙ্কা। বুধবার থেকে কলম্বোয় শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। গলে প্রথম টেস্টে ড্র করে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ।

আরও পড়ুনড্রেসিংরুমে ‘সেরকম’ ক্রিকেটারই দেখেন না নাজমুল২ ঘণ্টা আগে

দ্বিতীয় টেস্ট সামনে রেখে শ্রীলঙ্কা দলে আরও একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। পেস অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের জায়গায় ডাক পেয়েছেন ২২ বছর বয়সী স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার দুনিত ভেল্লালাগে। গলে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলেছেন ম্যাথুস।

গল টেস্টের দ্বিতীয় দিন সকালে মাঠ ছেড়ে গিয়েছিলেন মিলান। পরে ফিরে এসে বোলিং করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে মোট ৩ উইকেট নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে নেন ১ উইকেট। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসেও ব্যাট হাতে ভালো অবদান রাখেন রত্নায়েকে। সপ্তম উইকেটে কামিন্দু মেন্ডিসের সঙ্গে ৮৪ রানের জুটি গড়েন, যেখানে তাঁর অবদান ৮৩ বলে ৩৯।

আরও পড়ুনটেস্টে ৯৯ রানে আউট, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেখানে ব্যতিক্রম৩ ঘণ্টা আগে

কলম্বোর এসএসসি গ্রাউন্ডের পিচ গলের মতো অতটা স্পিন সহায়ক নয়। শ্রীলঙ্কা টিম ম্যানেজমেন্ট তাই কলম্বো টেস্টের দলে অতিরিক্ত একজন পেসার নিতে পারে। বিশ্ব ফার্নান্ডো, আসিতা ফার্নান্ডো, কাসুন রাজিতা ও অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ২৮ বছর বয়সী পেসার ইসিতা ভিজেসুন্দ্রাকে নিয়ে শ্রীলঙ্কা পেস আক্রমণ সাজাতে পারে বলে জানিয়েছে ইএসপিএনক্রিকইনফো।

কলম্বো টেস্টে শ্রীলঙ্কা স্কোয়াড: ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা (অধিনায়ক), পাতুম নিশাঙ্কা, ওশাদা ফার্নান্ডো, লাহিরু উদারা, দিনেশ চান্ডিমাল, কামিন্দু মেন্ডিস, কুশল মেন্ডিস, দুনিত ভেল্লালাগে, পাসিন্দু সুরিয়াবান্দারা, সোনাল দিনুশা, পবন রত্নায়েকে, প্রবাত জয়াসুরিয়া, থারিন্দু রত্নায়েকে, আকিলা ধনাঞ্জয়া, বিশ্ব ফার্নান্ডো, আসিতা ফার্নান্ডো, কাসুন রাজিতা ও ইসিতা ভিজেসুন্দ্রা।

একাদশে ম্যাথুসের জায়গায় সুযোগ পেতে পারেন ব্যাটসম্যান পাসিন্দু সুরিয়াবান্দারা কিংবা পবন রত্নায়েকে। দুজনেই সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দল ও ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করেছেন। শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের হয়ে ভালো করা ব্যাটসম্যান ওশাদা ফার্নান্ডোকেও বিবেচনায় নিতে পারেন নির্বাচকেরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কলম ব

এছাড়াও পড়ুন:

জুমার দিনের করণীয় ও বর্জনীয়

জুমার দিন—মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ বরকতময় দিন।

এটি শুধু সাপ্তাহিক নামাজের দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সংহতি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান সুযোগ।

নবীজি (সা.) বলেছেন—“জুমার দিনই দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন, এবং এ দিনেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)

অতএব, জুমা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি ইসলামি সভ্যতার একটি কেন্দ্রবিন্দু।

এই দিনে কিছু কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, আবার কিছু কাজ থেকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫জুমার দিনের করণীয়

১. গোসল করা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর মসজিদে আসে, নীরবে খুতবা শোনে ও নামাজ পড়ে, তার এক জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)

জুমার দিনের এই গোসল বিশেষ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

২. পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার

জুমার নামাজে যাওয়ার আগে মুসলমানকে সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে তোমাদের জন্য সুন্দর পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫২৪৮)

এটি সামাজিক মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতার প্রতীক।

৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া

জুমার নামাজে আগে পৌঁছানোর জন্য বড় ফজিলত রয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথম ঘণ্টায় জুমার জন্য যায়, সে যেন উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেলে গরু কোরবানি করল; তৃতীয় ঘণ্টায় গেলে ভেড়া কোরবানি করল; চতুর্থ ঘণ্টায় গেলে মুরগি কোরবানি করল; আর পঞ্চম ঘণ্টায় গেলে ডিম দান করল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮১)

অর্থাৎ, যত আগে যাবে, তত বেশি সওয়াব।

৪. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন তার সঙ্গীকে বলে ‘চুপ করো’, সে-ও অনর্থক কথা বলল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৪)

খুতবা চলাকালীন কথা বলা, ফোন ব্যবহার করা বা অমনোযোগ হওয়া নিষিদ্ধ।

৫. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা

জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৩৯২)

৬. দোয়া করা ও দরুদ পাঠ করা

জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন দোয়া কবুল হয়।

নবীজি (সা.) বলেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে কোনো মুসলমান নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)

অনেক আলেমের মতে, এই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

এছাড়া, জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার নির্দেশও এসেছে, “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)

আরও পড়ুনপ্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় আমল২২ আগস্ট ২০২৪জুমার দিনের বর্জনীয়

১. জুমার নামাজ ত্যাগ করা

নবীজি (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, “যে ব্যক্তি অলসতা বা উদাসীনতার কারণে তিনটি জুমা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২)

অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে জুমা বাদ দেওয়া ইমানের জন্য ভয়ংকর বিপদ।

২. জুমা বাদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা

কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! যখন জুমার আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো।” (সুরা আল-জুমা, আয়াত: ৯)

জুমার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন কেনাকাটা বা অন্য ব্যস্ততা বড় গোনাহ।

৩. উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা

মসজিদে অন্যদের বিরক্ত করা, ফোনে কথা বলা, এমনকি নামাজের আগে অপ্রয়োজনে গল্প করা জুমার আদববিরোধী কাজ।

৪. খুতবার সময় চলাফেরা করা

খুতবা চলাকালে যেকোনো অযথা নড়াচড়া বা সামনে যাওয়া, নবীজি (সা.) বলেছেন, এতে “সওয়াব নষ্ট হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)

৫. নামাজ শেষে গাফেল থাকা

জুমার পরপরই নামাজ বা দোয়া না করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “যখন নামাজ শেষ হবে, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো, কিন্তু আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)

অর্থাৎ, কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু মনে যেন আল্লাহর স্মরণ থাকে।

জুমার দিনের তাৎপর্য

জুমা মুসলমানদের জন্য সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এদিনে মসজিদগুলোতে ধনী-গরিব, নেতা-জনতা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে একবার নামাজ আদায় করা সাত দিনের গোনাহ মাফের সমান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)

জুমার দিন আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি, সমাজের ঐক্য এবং আল্লাহর রহমত লাভের সোনালি সুযোগ।

এই দিনে গোসল, পরিষ্কার পোশাক, সময়মতো নামাজে যাওয়া, খুতবা শোনা, সূরা কাহফ পাঠ ও দোয়া করা—সবই মুসলিম জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায়।

অন্যদিকে অলসতা, ব্যবসা, ও অমনোযোগিতা আমাদের ইমানকে দুর্বল করে।

অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত জুমাকে কেবল ছুটির দিন নয়, বরং “আত্মার নবজাগরণের দিন” হিসেবে পালন করা।

আরও পড়ুনসাহাবিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর শেষ উপদেশ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ