চেকপোস্টে চলন্ত মোটরসাইকেলে পুলিশের ধাক্কা, পা হারালেন কনস্টেবল
Published: 23rd, June 2025 GMT
সংকেত অমান্য করে পালানোর চেষ্টা করা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে থামাতে গিয়েছিলেন সড়কে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য। এতে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশে থাকা অন্য এক পুলিশ সদস্যকে গিয়ে ধাক্কা দিলে তিনি ধীরগতির একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন। এতে থেঁতলে যায় ওই পুলিশ সদস্যের ডান পা। পরে হাসপাতালে তার পা কেটে ফেলতে হয়।
রোববার সকাল পৌনে ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলা অংশের চুনতির হাজী রাস্তার মাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, মহাসড়কের এক পাশে পুলিশের একটি দল দাঁড়িয়ে ছিল। সে সময় ধীর গতিতে একটি ট্রাক অতিক্রম করছিল, ট্রাকের পেছনে ছিল একটি মোটর সাইকেল। রাস্তার পাশে পানির বোতল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ সদস্য ট্রাকের পেছনে থাকা মোটর সাইকেলকে থামার সংকেত দেন। ওই সময় সাদা পোশাক পরা এক পুলিশ সদস্য দৌঁড়ে রাস্তার অপরপ্রান্তে যায় মোটর সাইকেলটি আটকাতে। কিন্তু মোটর সাইকেলটি সংকেত অমান্য করে দ্রুত চলে যায়। তার পেছনে থাকা আরেকটি একটি মোটর সাইকেল ছিল। পুলিশ সদস্যরা দ্বিতীয় মোটরসাইকেলটিকে থামার সংকেত দিল চালক মোটর সাইকেল নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় মোবাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ সদস্য দৌঁড়ে গিয়ে মোটর সাইকেলের পেছনে বসা যুবকে ধাক্কা দিলে মোটর সাইকেলটি ট্রাকের পাশে পড়ে যায়।তখন আগের মোটর সাইকেল ধরতে রাস্তার বিপরীতে যাওয়া পুলিশ সদস্য দৌঁড়ে এসে মোটর সাইকেল চালককে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলে পাশে থাকা ট্রাকের চাকার নিচে তিনি চাপা পড়েন। ভিডিওতে দেখা গেছে ট্রাকের নিচ থেকে আহত পুলিশ সদস্যকে বের করা হয়।
জানা গেছে, ট্রাকেরচাপায় পা হারানো পুলিশ সদস্যের নাম মো.
পুলিশ জানিয়েছে, চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনের সময় মোটরসাইকেল আটকাতে গিয়ে আলাউদ্দিন ট্রাকের নিচে পড়েন। তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে লোহাগাড়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসআই মো. শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে ট্রাক চালক-হেলপার ও দুই বাইক আরোহীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
আসামিরা হলেন- ট্রাকচালক মো. শহিদুল ইসলাম (২৬), ট্রাকচালকের সহযোগী আলী হায়দার (২০), মোটরসাইকেল চালক ওমর ফারুক তৌহিদ (২৩) এবং মোটরসাইকেল আরোহী মোঃ হাসান (২৪)। সোমবার সকালে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, রোববার রাত আটটার দিকে কনস্টেবল আলাউদ্দিনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার একটি পা গুরুতর জখম হয়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। রাতে অস্ত্রোপচার করে সেটি গোড়ালি থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) মো. তফিকুল আলম বলেন, মোটরসাইকেলে করে ইয়াবা পাচারের তথ্য পেয়ে আটকানোর জন্য লোহাগাড়া থানা পুলিশ মহাসড়কে চেকপোস্টে বসিয়ে তল্লাশি করছিল। সেখানে একটি মোটরসাইকেলকে থামার সংকেত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি সংকেত অমান্য করে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে চলে যায়। একই গতিতে পেছনে আরেকটি মোটরসাইকেল আসছিল। সেটিও সংকেত অমান্য করে চলে যাবার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা আটকানোর চেষ্টা করেন।তখন মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশে পড়ে যায়। অন্যদিকে একইদিক থেকে আসা একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন কনস্টেবল আলাউদ্দিন। ট্রাকটি অবশ্য দ্রুত গতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে থেমে যায়। ট্রাকের নিচ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। আরও তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, তবে আঘাত তেমন গুরুতর নয়।
লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আরিফুর রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটির ভিডিও দেখেছি। অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে। এর বাহিরে কিছু বলা সম্ভব নয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আহত এক প ল শ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ওজুর ফরজ কয়টি
ওজু ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মীয় কাজের জন্য পবিত্রতার পূর্বশর্ত। কোরআনে আল্লাহ ওজুর ফরজ কাজগুলো স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। তবে ওজু শুধু শারীরিক পবিত্রতাই নিশ্চিত করে না, বরং এটি মানুষের মনকে আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্য প্রস্তুত করে।
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ওজু করে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তার গুনাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়ে, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৫) আরেকটি হাদিসে আছে, ‘ওজু হলো ইমানের অর্ধেক।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৪৮৯)
ওজুর ফরজ কয়টিওজুর ফরজ চারটি, যা কোরআন (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬) এবং হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত। এগুলো হলো—
১. মুখমণ্ডল ধোয়া: পুরো মুখ, অর্থাৎ কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক পর্যন্ত এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত ধুয়ে ফেলা। এটি ওজুর প্রথম ফরজ।
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাতের হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ধোয়া, যাতে কোনো অংশ বাদ না যায়।
৩. মাথায় মাসেহ করা: মাথার সামনের অংশে ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করা। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই যথেষ্ট।
৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পায়ের পাতা থেকে টাখনু পর্যন্ত ধোয়া, যাতে আঙুলের ফাঁকসহ পুরো অংশ ভিজে।
আরও পড়ুনপবিত্রতায় অজু ও গোসলের বিকল্প তায়াম্মুম২৪ ডিসেম্বর ২০২১ওজুর ফরজের বিস্তারিত ব্যাখ্যাফরজগুলো সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক, কেননা, স্পষ্ট বিধান জানা না থাকায় অনেকের ভুল হয়ে যায়।
১. মুখমণ্ডল ধোয়া: মুখ ধোয়ার সময় কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। এর মধ্যে মুখের ভেতরে কুলি করা বা নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ফরজ নয়, তবে এগুলো সুন্নত। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় পুরো মুখমণ্ডল ধুয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাত ধোয়ার সময় হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। হানাফি মাজহাবে কনুই পর্যন্ত ধোয়া ফরজ এবং কনুইয়ের ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ওজু করার সময় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৬)
৩. মাথা মাসেহ করা: মাথায় মাসেহ করার জন্য ভেজা হাত দিয়ে মাথার সামনের অংশে মাসেহ করতে হবে। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই ফরজ আদায় হয়। শাফিই মাজহাবে পুরো মাথা মাসেহ করা ফরজ। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় দুই হাত ভিজিয়ে মাথায় মাসেহ করতেন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১১১)
৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পা ধোয়ার সময় পায়ের আঙুলের ফাঁক থেকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। টাখনুর ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যারা ওজুতে পা টাখনু পর্যন্ত না ধুয়ে বাদ দেয়, তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৫)
আরও পড়ুনঅজু করার নিয়ম কানুন১৯ ডিসেম্বর ২০২৩কয়েকটি পরামর্শওজু পালন করার জন্য ব্যবহারিক কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
সময় ব্যবস্থাপনা: ওজুতে সাধারণত দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে। নামাজের আগে পরিকল্পনা করে ওজুর জন্য সময় রাখা যায়।
পানি সংরক্ষণ: নবীজি (সা.) অল্প পানি দিয়ে ওজু করতেন। আধুনিক সময়ে পানির অপচয় এড়িয়ে ওজু করা পরিবেশের জন্যও উপকারী। একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) এক মুদ (প্রায় ৬২৫ মিলিলিটার) পানি দিয়ে ওজু করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০)
কর্মক্ষেত্রে ওজু: অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওজুর জন্য ওয়াশরুম বা নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করা যায়। অনেক মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে ওজুর ব্যবস্থা থাকে।
ওজুর ক্ষেত্রে সতর্কতাপূর্ণতা নিশ্চিত করা: ফরজ অংশগুলোর কোনোটি বাদ দেওয়া যাবে না। যেমন পায়ের আঙুলের ফাঁক বা কনুইয়ের কিছু অংশ বাদ দেওয়া হলে ওজু পূর্ণ হবে না।
ক্রম বজায় রাখা: হানাফি মাজহাবে ফরজ কাজগুলো ক্রমানুসারে করা ওয়াজিব।
পানির ব্যবহার: পানি অপচয় না করে সুন্নত অনুযায়ী অল্প পানি ব্যবহার করা।
নিয়ত: মনে মনে ওজুর নিয়ত করা সুন্নত, যা ওজুকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে।
(আল-ফিকহুল মুয়াসসার, মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, পৃষ্ঠা: ৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা: ২০১৫)
ওজুর ফরজগুলো পালনের মাধ্যমে মুমিন নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ওজু পালন করা সহজ হয়েছে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে ওজু করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইবাদতকে আরও পরিপূর্ণ করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
আরও পড়ুনঅজু ভাঙার কারণ: পবিত্রতা অর্জনে সতর্কতা১০ জুলাই ২০২৫