মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের প্রধান প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার দাবি করেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওই হামলার পর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর চারপাশে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার কোনো স্পষ্ট প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

তাহলে তেহরানের ইউরেনিয়ামের মজুতের কী হলো? যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষতি আদতে কতটা করতে পেরেছে।

যুক্তরাষ্ট্র গত শনিবার দিবাগত রাতে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। সুপরিকল্পিত ওই অভিযানের মাধ্যমে দেশটি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযানের ফলে এমন এক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সংঘাত আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যখন গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলা অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল রোববার ভোরে টেলিভিশনে এক ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের হুমকি ঠেকানোর লক্ষ্যে এই হামলা চালানো হয়েছে।

হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল দেশটির নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা—যেখানে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন বা মজুত রাখা হয় বলে ইসরায়েলসহ পশ্চিমা বিশ্ব দাবি করছে।

পাল্টা হামলার বিরুদ্ধে তেহরানকে সতর্ক করে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আজ রাতেই আমি বিশ্বকে জানাতে পারি, এই হামলা ছিল ‘অসাধারণ এক সামরিক সাফল্য’। ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।’

ইসরায়েল ও ট্রাম্পের দাবি, ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।

যদিও ইরান বারবার জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাও (আইএইএ) ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা নিয়ে ইসরায়েলের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইসরায়েল অনেক দিন ধরেই বলছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র অর্জনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ইরানি কর্মকর্তারা এখনো বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি। হয়তো তাঁরা হামলার প্রভাব কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছেন।

এ দাবির পক্ষে স্পষ্ট কোনো প্রমাণ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, কূটনীতির সময় পেরিয়ে গেছে এবং তাঁর দেশের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এক সংবাদ সম্মেলনে আরাগচি আরও বলেন, ‘এই আগ্রাসনের যে বিপজ্জনক পরিণতি ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে, তার জন্য একমাত্র এবং সম্পূর্ণ দায় ওয়াশিংটনের যুদ্ধবাজ ও আইনের তোয়াক্কা না করা প্রশাসনের।’

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ইরানি কর্মকর্তারা এখনো বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি। হয়তো তাঁরা হামলার প্রভাব কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছেন।

টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার উপরাজনৈতিক পরিচালক হাসান আবেদিনি বলেন, ‘আগেই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা খালি করে ফেলা হয়েছিল। সেখানে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কারণ, উপকরণগুলো আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।’

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ক্ষেত্রে হামলা ইরানের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা দেখে নেওয়া যাক।

কোন কোন পারমাণবিক ক্ষেত্রে হামলা হয়েছে

গতকাল ট্রাম্প বলেছেন, পূর্ণমাত্রার বোমা বহর দিয়ে ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, ইরানি কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন যে ওই তিনটি স্থাপনাই হামলার শিকার হয়েছে।

১.

ফর্দো পারমাণবিক ক্ষেত্রে

ফর্দো একটি ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা ২০০৬ সাল থেকে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। রাজধানী তেহরানের উত্তরের কোম শহর থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার (৩০ মাইল) দূরে পাহাড়ের গভীরে নির্মিত এই স্থাপনাটি প্রাকৃতিকভাবে আড়ালে অবস্থান করছে। গতকালের হামলার প্রধান লক্ষ্যস্থল ছিল এই ফর্দো পারমাণবিক ক্ষেত্র।

হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কাইন গতকাল এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ফর্দোতে বিস্তৃত ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন এমওপিএস বা বাংকারবিধ্বংসী বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। বোমাগুলো বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

১৩ হাজার কেজি (২৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড) ওজনের জিবিইউ-৫৭ হলো সবচেয়ে শক্তিশালী বাংকারবিধ্বংসী বোমা, যা মাটির নিচে ৬০ মিটার (২০০ ফুট) পর্যন্ত প্রবেশ করতে সক্ষম এবং সেগুলোতে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ কেজি (৫ হাজার ৩০০ পাউন্ড) বিস্ফোরক উপাদান থাকে। পাশাপাশি, এই বোমারু বিমানগুলো রাডারে ধরা পড়া খুবই কঠিন।

কাইন আরও বলেন, কমপক্ষে দুটি পারমাণবিক স্থাপনায় মোট ১৪টি এমওপি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে।

এর আগে ১৩ জুন ইসরায়েল ফর্দোতে হামলা চালিয়ে পারমাণবিক ক্ষেত্রটির ওপরের অংশের ক্ষতি করেছে। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করেন, শুধু মার্কিন বাংকারবিধ্বংসী বোমাগুলোই ওই স্থাপনাটির ভেতরে প্রবেশ করতে সক্ষম।

যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমান

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইউর ন য় ম ইসর য় ল গতক ল আরও ব পরম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

তৃষ্ণার হ্যাটট্রিক, বাংলাদেশের ৮ গোলের জয়

অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ পূর্ব তিমুরকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। হ্যাটট্রিক করেছেন তৃষ্ণা রানী। একটি করে গোল করেন সিনহা জাহান শিখা, শান্তি মার্ডি, নবীরণ খাতুন, মুনকি আক্তার ও মোসাম্মত সাগরিকা। আগামী রোববার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

ভিয়েনতিয়েনের নিউ লাওস ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর প্রথম ১৫ মিনিট খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে গড়ে ওঠা একাধিক ভালো আক্রমণ নষ্ট করেছেন ফরোয়ার্ডরা। শেষ পর্যন্ত ২০ মিনিটে স্বপ্না রানীর কর্নার থেকে নিখুঁত হেডে লক্ষ্যভেদ করেন শিখা।

৩৩ মিনিটে অলিম্পিক গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন শান্তি মার্ডি। তাঁর নেওয়া কর্নার পূর্ব তিমুরের পোস্টে লেগে জালে চলে যায়। এর ঠিক তিন মিনিট পর আবার মার্ডির কর্নার, এবার চমৎকার হেডে গোল করেন নবীরণ খাতুন। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মোসাম্মত সাগরিকার বাড়ানো বল আলতো শটে জালে জড়িয়ে স্কোর ৪-০ করেন তৃষ্ণা রানী।

আরও পড়ুনশান্তি মার্ডির অলিম্পিক গোল, প্রথমার্ধে ৪-০ গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ ৫৬ মিনিট আগে

বিরতির পর লড়াই করা দূরে থাক, বাংলাদেশের আক্রমণ ঠেকিয়েই হয়রান পূর্ব তিমুর। ৫৭ মিনিটেই পঞ্চম গোল পেয়ে যায় পিটার বাটলারের দল। গোলমুখে জটলা থেকে নেওয়া শিখার শট রুখে দিলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি পূর্ব তিমুরের গোলকিপার হালিনা মার্চি। বক্সের মধ্যে বল পেয়ে ফিরতি শটে নিজের দ্বিতীয় ও দলের পঞ্চম গোল আদায় করে নেন তৃষ্ণা।

মেয়েদের গোল উদ্‌যাপন

সম্পর্কিত নিবন্ধ