আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে দুই কিস্তির অর্থ ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার একসঙ্গে পাচ্ছে বাংলাদেশ। ২৬ জুন বাংলাদেশের হিসাবে এ অর্থ জমা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৩০ কোটি ডলার আমরা পাচ্ছি। আইএমএফের পর্ষদে আজ তা অনুমোদিত হয়েছে।’

সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ সময় রাতে হওয়া সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে। বৈঠকে ঋণ কর্মসূচির আওতায় থাকা তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে আইএমএফ।

২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ কর্মসূচি অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন হওয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

মোট ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) এবং বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম ঋণ পায়।

২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার বাংলাদেশ পেয়েছে। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৩১ কোটি ডলার। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। গতকাল দুই কিস্তির প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ার পর বাকি থাকবে ১২৯ কোটি ডলার, যা পাওয়া যাবে আরও দুই কিস্তিতে।

আজ যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে পাওয়ার প্রস্তাব অনুমোদিত হলো, তার মধ্যে চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই। কিন্তু গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। অতিরিক্ত বরফের কারণে প্রায় অচল হয়ে যায় তখনকার জনজীবন। মার্কিন প্রশাসনকে এ জন্য সতর্কবার্তা জারি করতে হয়। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।

পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। মার্চে বৈঠক হলেও বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচি প্রসঙ্গ আর সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদে ওঠেনি। এরই মধ্যে গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত আইএমএফের ব্রিফিংয়ে আইএমএফ জানায়নি যে বাংলাদেশ কোনো কিস্তি পাচ্ছে কি না। যদিও আগের দুবার ব্রিফিংয়েই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এরই মধ্যে শুরু হয় উভয় পক্ষের টানাপোড়েন। তবে আশা ছাড়েনি বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয়। যদিও তখন কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল বাংলাদেশে মুদ্রা বিনিময়ের হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চেয়ে আসছিল, রাজি হচ্ছিল না বাংলাদেশ।

এরপর গত মে মাসের শুরুর দিকে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশ কয়েকটি ভার্চু৵য়াল বৈঠক করে। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের দিক থেকে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। শেষ পর্যন্ত গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় এবং বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করে দেয় বাংলাদেশ। গত ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনেই, এ ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে বলে এখন রিজার্ভের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রস্তাবটি অনুমোদন না পেলে বড় একটা ধাক্কা আসত।’ ভবিষ্যতে জ্বালানি ভর্তুকি কমানো, ব্যাংক খাত সংস্কার এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি—এই তিন বিষয়ে বাংলাদেশকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন জাহিদ হোসেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইএমএফ র প রস ত ব অন ম দ ত র অর থ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সিএমজির সঙ্গে যৌথ পথচলায় আগ্রহী বাংলাদেশ বেতার

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম চায়না মিডিয়া গ্রুপ—সিএমজির সঙ্গে পারস্পরিক বিনিময়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বেতার।

বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে সিএমজি বাংলার ঢাকা ব্যুরো অফিস পরিদর্শনে এসে এমন আগ্রহ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের বেতারের মহাপরিচালক এ এস এম জাহিদ।

সিএমজি ও বাংলাদেশ বেতারের মধ্যে কীভাবে জয়-জয় সহযোগিতা বাড়াতে পারে সে লক্ষ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চীনা দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর লি শাও ফেং।

আরো পড়ুন:

সাহসী সাংবাদিক সম্মাননা পেয়েছেন বেরোবিসাসের ৫ সদস্য

ঢাকা পোস্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল ইসলাম

সিএমজির বাংলা বিভাগের পরিচালক ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী বাংলাদেশ বেতারের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের শ্রোতাদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য আমরা বাংলাদেশ বেতারের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।”

বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক এ এস এম জাহিদ বলেন, “আমরা সিএমজির সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারের জয়-জয় সহযোগিতার সম্পর্ক গড়তে পারি। চীনের মেডিকেল, শিক্ষা, পর্যটন, বিনিয়োগের নানা বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ আছে।”

এছাড়া চীনা ভাষা শেখার অনুষ্ঠান নিয়ে আগ্রহের কথাও জানান তিনি।

লি শাও ফেং বলেন, “চীন বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে দুই দেশের গণমাধ্যম একসঙ্গে কাজ করতে পারে।”

শুধু দুই সরকারের মধ্যে নয়, জনগণের মধ্যেও সম্পর্ক আরো গভীর করতে কাজ করার আগ্রহের কথা জানান তিনি।

বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আনোয়ার হোসেন মৃধা, প্রধান প্রকৌশলী মুনির আহমদ, উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) মো. শরিফুল কাদের এবং অর্থ ও প্রশাসক বিভাগের পরিচালক রুবাইয়াত শামীম চৌধুরী এবং সিএমজি বাংলার ঢাকা ব্যুরোর সংবাদকর্মীরা।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যাঁদের টানে দেশে ফিরলেন, তাঁদেরই কবরে শোয়ালেন বাহার
  • সিএমজির সঙ্গে যৌথ পথচলায় আগ্রহী বাংলাদেশ বেতার
  • কুয়াকাটা সৈকতে গোসলে নেমে পর্যটকের মৃত্যু