সুইডেনে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপ, আছে আইইএলটিএসের বিকল্প
Published: 24th, June 2025 GMT
ইউরোপের অন্যতম দেশ সুইডেন বছরের পর বছর ধরে নাগরিকদের কাঙ্ক্ষিত আর্থসামাজিক অবস্থা নিশ্চিত করে আসছে। বিশ্বখ্যাত সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের এ আশ্রয়স্থলে ক্যারিয়ার গঠন হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে স্বপ্নতুল্য। চলুন, শেনজেনভুক্ত দেশ সুইডেনে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, অধ্যয়ন খরচ এবং স্কলারশিপ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রম শেনজেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রধান ভাষা সুইডিশ হলেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ানদের প্রতি ১০ জনের ৯ জনই সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলেন। পড়াশোনাসহ নিত্য জীবনযাত্রা এবং চাকরি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের অন্যতম গন্তব্য সুইডেন।
আরও পড়ুনচীনে উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপের সঙ্গে আছে পড়ার শেষে চাকরি ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ২৬ আগস্ট ২০২৪সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী পরিবেশগত দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিরাপদ দেশ সুইডেন। পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় দূষণমুক্ত দেশগুলোর তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা এই দেশটির দূষণ সূচক মাত্র ১৭ দশমিক ৭। এ ছাড়া বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ভ্রমণবান্ধব দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ ১০-এর মধ্যে রয়েছে এই নর্ডিক দেশটি।
পড়াশোনার জন্য সুইডেন যাত্রার আরও একটি প্রধান কারণ হচ্ছে স্টুডেন্ট নোবেল নাইটক্যাপ। এ অনুষ্ঠানে বিশ্বের একাডেমিক সুপারস্টারদের সন্নিবেশ ঘটে। এই ভূখণ্ডে নোবেল পুরস্কারকে কেন্দ্র করে চলে নানা আয়োজন। বিশেষ করে স্টকহোমে পুরো একটি সপ্তাহ উদ্যাপন করা হয় নোবেলকে ঘিরে।
শত শত স্টার্টআপ কোম্পানির স্বর্গরাজ্য সুইডেনকে বলা হয় ইউরোপের সিলিকন ভ্যালি। ক্যালিফোর্নিয়ার পর স্টকহোমই হচ্ছে দ্বিতীয় শহর, যেখানে সর্বাধিক সফল কোম্পানিগুলোর গোড়াপত্তন হয়েছে।
ইউরোপীয় দেশটির আরও যে বিষয়টি বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে, তা হলো, কর্ম ও জীবনের মধ্যে এক আশ্চর্য ভারসাম্য। এখানে প্রতিটি চাকরিতেই রয়েছে যথেষ্ট শিথিলতা। প্রয়োজন অনুযায়ী শিফটিং এবং প্যাটার্নিটি বা ম্যাটার্নিটি লিভসহ বিভিন্ন উপলক্ষে সাময়িক ছুটির নীতি। এখানে মূলত কর্মীদের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতা পাওয়ার জন্য তাদের চাপমুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পুরো দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ কর্মচারী খুব দীর্ঘ সময় ধরে বা ওভারটাইম কাজ করে।
সেরা বিশ্ববিদ্যালয় কোনগুলো: কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, লুন্ড ইউনিভার্সিটি, উপসালা ইউনিভার্সিটি, স্টকহোম ইউনিভার্সিটি, চালমার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব গোথেনবার্গ, ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট, লিনকোপিং ইউনিভার্সিটি, উমিয়া ইউনিভার্সিটি ও হাল্মস্ট্যাড ইউনিভার্সিটি।
সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলো: প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ব্যবসা ও অর্থনীতি, সাংবাদিকতা, যোগাযোগ ও তথ্য, লাইফ সায়েন্সেস অ্যান্ড মেডিসিন, ডিজাইন অ্যান্ড আর্কিটেকচার।
আবেদনের উপায়-
সাধারণত ফল ও স্প্রিং সেমিস্টারে ভর্তির কার্যক্রম চালু করে সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফল সেমিস্টার আগস্টের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে শুরু হয়। এই মৌসুমে আবেদনের জন্য সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রোগ্রাম চালু থাকে। আবেদন গ্রহণ অব্যাহত থাকে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। ফলে যে প্রোগ্রামগুলো বাদ পড়ে যায়, সেগুলোয় ভর্তির আবেদন নেওয়া হয় স্প্রিং সেমিস্টারে। এ মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে চলে পরের বছরের আগস্ট পর্যন্ত।
কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সামার সেমিস্টারেও ভর্তি নেওয়া হয়। তাই উত্তম হচ্ছে প্রথমে বিষয় পছন্দ করে তার জন্য উপযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করে তার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট চেক করা। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবেদনের ব্যাপারে ফল সেমিস্টারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কেননা আবেদনের জন্য যথেষ্ট বিকল্প কোর্স পাওয়ার সুযোগ তো আছেই! তা ছাড়া এ সময়ে আবেদন করা হলে অধ্যয়ন ফি প্রদান, প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রেরণ, রেসিডেন্স পার্মিটের আবেদন এবং আবাসন খোঁজার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যেকোনো প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য একটি সাধারণ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের (universityadmissions.
আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-
স্নাতক প্রোগ্রামে আবেদন করলে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার সনদ
স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য ৪ বা অনার্সসহ ৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রির সনদ
ইংরেজি ভাষা দক্ষতার স্কোর: আইইএলটিএস (একাডেমিক) মোট স্কোর ৬ দশমিক ৫ (কোনো বিভাগে ৫ দশমিক ৫-এর কম পাওয়া যাবে না) টোয়েফল ইন্টারনেটভিত্তিক স্কোর ২০ (০ থেকে ৩০ স্কেলে) এবং মোট স্কোর ৯০। শিক্ষার্থীর স্নাতকের ৪ বছর ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলে অথবা উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে থাকলে আলাদা করে আইইএলটিএস বা টোয়েফলের দরকার হবে না। এ ক্ষেত্রে মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন বা এমওআই প্রদর্শন করতে হবে।
একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
সিভি বা পোর্টফোলিও
স্টেটমেন্ট অব পার্পাস
লেটার অব মোটিভেশন
লেটার অব রিকমেন্ডেশন
আবেদন ফি পরিশোধের রশিদ: ৯০০ ক্রোনা বা ১০ হাজার ৫৫৭ টাকা (১ সুইডিশ ক্রোনা = ১১ দশমিক ৭৩ বাংলাদেশি টাকা)
প্রথম আলো ফাইল ছবিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট শ বব দ য ল ব শ বব দ য র জন য দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
মিয়ানমার সংঘাতের আঞ্চলিক প্রভাব যাচাইয়ে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন জার্মানির সংসদ সদস্য
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের আঞ্চলিক প্রভাব যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ সফর করেছেন জার্মানির গ্রিন পার্টির সংসদ সদস্য বরিস মিজাতোভিচ। চার দিনের এই সফরের সময় তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
বুধবার ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জার্মানির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগের গ্রিন পার্টির সদস্য বরিস মিজাতোভিচ ২৬ থেকে ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জ্বালানি প্রকল্প, বিশেষ করে এই অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। বরিস মিজাতোভিচ মিয়ানমারের সংঘাতের আঞ্চলিক প্রভাব যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। যার লক্ষ্য ছিল এই বিষয়গুলোকে আন্তর্জাতিক আলোচনার সূচিতে ফিরিয়ে আনা। এই লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশ সফর শেষে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই ভ্রমণ করেন।
বাংলাদেশ সফরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা, সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থা, পরিবেশজনিত উদ্বেগ, কর্মপরিবেশ এবং শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলো নিয়ে বরিস মিজাতোভিচ আলোচনা করেন।
বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে সফরকালে মিজাতোভিচ শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সরবরাহ শৃঙ্খল সম্পর্কিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি উপসাগরীয় অঞ্চলে শ্রম অভিবাসন এবং কর্মপরিবেশ নিয়েও আলোচনা করেন তাঁরা। এ ছাড়া বৈঠকে জাহাজভাঙার চ্যালেঞ্জ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।
এ ছাড়া বরিস মিজাতোভিচ বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে জিআইজেড আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত সম্পর্কে অবগত হন এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মপরিবেশ উন্নত করার সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরের সময় বরিস মিজাতোভিচ কক্সবাজারে যান।
সেখানে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেন এবং এ অঞ্চলে মানবিক চ্যালেঞ্জ এবং চলমান ত্রাণ কার্যক্রম আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই সফর মানবাধিকার, কর্মপরিবেশ এবং মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে সংলাপ, বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।