জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে ২৭টি। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। এখনো পলাতক ১৩২ জন।

আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে মারা গেছেন একজন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় থেকে গত ২৫ জুন মামলা ও গ্রেপ্তার–সংক্রান্ত এসব তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে তা মিস কেস বা বিবিধ মামলা হিসেবে ট্রাইব্যুনালে নথিভুক্ত হয়। এরপর তদন্ত সংস্থা ওই অভিযোগের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন এবং আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আকারে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে মিস কেস মামলায় রূপ নেয়। এরপর ফরমাল চার্জ গঠনের বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ গঠনের আদেশ দিলে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।

আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধের হুকুমদাতা শেখ হাসিনা ১২ মে ২০২৫চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুম-খুন-নির্যাতনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ এসেছে ৪২৯টি। এখন পর্যন্ত যে ২৭টি মামলা হয়েছে তার মধ্যে ২৪টি বিবিধ মামলা বা মিস কেস। আর তিনটি মিস কেস নিয়মিত মামলায় রূপ নিয়েছে।

সে হিসেবে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলাও রয়েছে। বাকি দুটির একটি রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলা। অন্য মামলাটি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা।

চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুম-খুন-নির্যাতনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ এসেছে ৪২৯টি। এখন পর্যন্ত যে ২৭টি মামলা হয়েছে তার মধ্যে ২৪টি বিবিধ মামলা বা মিস কেস। আর তিনটি মিস কেস নিয়মিত মামলায় রূপ নিয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ার বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনটি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। জুলাই মাসের মধ্যে আরও ৫-৭টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হতে পারে। এসব মামলার বিচার যদি শুরু হয় আর যদি আদালত চান, তাহলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অধিকাংশ ট্রায়ালের (বিচারের) পরিণতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গত বছরের ১ জুলাই আন্দোলন শুরু হয়। দ্রুতই এ আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং মানুষ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। একপর্যায়ে কোটা বাতিলের এ আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। টানা ৩৬ দিনের সেই গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকী আজ। এই গণ-অভ্যুত্থান দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়, যার বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। গণ-অভ্যুত্থানে ৮৩৪ জনের মৃত্যুর তথ্য সরকারি গেজেটে এখন পর্যন্ত উল্লেখ আছে।

আরও পড়ুনহাসিনা ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫তিনটি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। জুলাই মাসের মধ্যে আরও ৫-৭টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হতে পারে। এসব মামলার বিচার যদি শুরু হয় আর যদি আদালত চান, তাহলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অধিকাংশ ট্রায়ালের (বিচারের) পরিণতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়ার বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটরশেখ হাসিনার বিচার কোন পর্যায়েশেখ হাসিনা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফরম ল চ র জ তদন ত স স থ ম নবত ব র ধ ল র তদন ত র ঘটন য় ন পর য সরক র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে: প্রধান উপদেষ্টা

আগামী নির্বাচন ও গণভোটে শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এবারের নির্বাচন গতানুগতিক কোনো নির্বাচন নয়; বরং এটি দেশ রক্ষার নির্বাচন।  এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সদ্য পদায়নকৃত ৫০ জেলা প্রশাসকসহ ৬৪ জেলার প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

আরো পড়ুন:

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: প্রধান ‍উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল এবি পার্টি 

আগামী নির্বাচনকে শুধু পাঁচ বছরের সরকার গঠনের একটি নির্বাচন নয়; বরং গণভোট যুক্ত হওয়ায় এটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটা সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি নির্বাচন। জাতি বহু প্রহসনের নির্বাচন দেখেছে, সেই স্মৃতি ছাপিয়ে যেতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।”

“এটা গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচন; এই নির্বাচন গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণতা দেওয়ার নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতির জন্য নির্ধারিত হবে শতাব্দীর গতিপথ,” বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

এই নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কোনোভাবেই ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে এবং জেলা প্রশাসকরা থাকবেন ধাত্রীর ভূমিকায়।”

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনাদের যা যা জানা প্রয়োজন সব জেনে নেবেন। নির্বাচনকে একই সঙ্গে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ করতে হবে।”

তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে বিপুল সংখ্যক তরুণ ও নারী ভোটার রয়েছেন, যারা ভোট দেওয়ার উপযুক্ত হলেও গত ১৫ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি।”

তিনি আরো বলেন, “আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এরইমধ্যে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে গভীর উৎসাহ দেখাচ্ছেন। তাঁরা দেখতে চান কেমন নির্বাচন হচ্ছে—এটা নিয়ে তাঁদের গভীর আগ্রহ।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই নির্বাচনকে স্বার্থক করা গণঅভ্যুত্থানের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি। এই নির্বাচন একটি বিরাট অভিযান, এ অভিযানে আমাদের জিততেই হবে।”

তিনি বলেন, “স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে এ লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে।”

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা প্রফেসর আসিফ নজরুল।

অনুষ্ঠানে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক এবং বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ