বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দিন সম্পন্ন
Published: 11th, July 2025 GMT
তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দিন শেষ হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যত বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে, সে সব বিষয় উপস্থাপন ও যুক্তি-তর্ক হয়েছে। বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশ মোটামুটিভাবে একমত হয়েছে। কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) ওয়াশিংটন সময় সকাল ৯টায় তৃতীয় দিনের আলোচনা শুরু হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই তথ্য জানিয়েছে।
দ্বিতীয় দিনের আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন একান্তে বৈঠক করেছেন ইউএস ট্রেড রিপ্রেন্টেটিভ অ্যাম্বাসাডর জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে।
গ্রিয়ার ট্রাম্প প্রশাসনে মন্ত্রী পদমর্যাদার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার সঙ্গে শুল্ক বিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানির পরিমাণও বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। শুল্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নায্যতা প্রত্যাশা করে। পরিবেশ যেন বাংলাদেশের জন্যে প্রতিযোগিতামূলক থাকে। গ্রিয়ার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। সরাসরি আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব ড.
ঢাকা/হাসান/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রামদা হাতে আলোচনায় এসে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে রামদা হাতে আলোচনায় এসেছিলেন। পাঁচ মাসের মাথায় নগরীর দৌলতপুরে নিজ বাড়ির সামনে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছেন। একাধিক গুলির পর তাঁর পায়ের রগও কেটে দেওয়া হয়। নিহতের নাম মাহবুবুর রহমান মোল্লা।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে এই হত্যাকাণ্ডের পর খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও মিছিল করেন।
নিহত মাহবুবুর রহমান মোল্লা দৌলতপুর থানা যুবদলের সহসভাপতি ছিলেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে-বিপক্ষে সংঘর্ষে শতাধিক ছাত্র ও স্থানীয় মানুষ আহত হন। কুয়েট ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সেদিন ছাত্রদলের সংঘর্ষ বাধে। ছাত্রদলের পক্ষে স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা এতে যোগ দেন। যদিও ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরে দাবি করেছিল তারা ওই দিনের সংঘর্ষে যুক্ত ছিল না। ওই সংঘর্ষের সময় রামদা হাতে মাহবুবুর রহমানের একটি ছবি সামাজিক ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওই রাতেই তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে তিনি নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে মহেশ্বরপাশা নিজ বাড়ির সামনে সদ্য কেনা প্রাইভেটকার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুব। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে আসা তিন ব্যক্তি মাহবুবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। মাহবুব দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন তারা পেছন থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। একটি গুলি মাহবুবের মাথায় এবং একাধিক গুলি তাঁর বুক, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাগে। গুলি খেয়ে তিনি রাস্তার পাশে পড়ে যান। তখন দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল থেমে নেমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাঁর পায়ের রগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যায়।
ওই সময় মসজিদে জুমার নামাজ চলায় সড়কে তেমন লোকজন ছিল না। সুরতহাল রিপোর্টে তাঁর শরীরে ৯টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। মাহবুবের দুই স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছে।
গতকাল মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে উৎসুক মানুষের ভিড়। পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডি সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছেন। বাড়ির প্রধান ফটক ও দেয়ালে একাধিক গুলির চিহ্ন। ঘটনাস্থল থেকে সাতটি গুলির খোসা উদ্ধারের কথা জানিয়েছে সিআইডি।
বাড়ির ভেতরে মাহবুবের দুই মেয়ে, বোন ও দ্বিতীয় স্ত্রী আহাজারি করছিলেন। নিহতের একমাত্র বোন শান্তা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘দলের জন্য কত কষ্ট করেছে। গুলি খাইছে, পলায় বেড়াইছে। এখন ভালো সময়ে আমার ভাই চলে গেলে।’
প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক বলেন, ‘মাহবুবের সঙ্গে তিনিও গাড়ি পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় তিনজন মোটরসাইকেলে আসে। একজনের মাথায় হেলমেট ছিল। তারা নেমেই গুলি শুরু করে। মাহবুব ভাই বাড়ির দিকে দৌড় দেন। গুলির শব্দে আমি মাথা উঁচু করলে আমাকে লক্ষ্য করেও গুলি করে। তখন আমি দৌড়ে পালিয়ে যাই।’
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, ‘যুবকরা মোটরসাইকেল চালিয়ে তেলিগাতির দিকে চলে গেছে। তথ্য পেয়ে আমরা ওই এলাকায় অভিযান শুরু করি। আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ তিনি বলেন, মাহবুবের বিরুদ্ধে মাদকসহ আটটি মামলা ছিল। বিষয়গুলো মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে।
আলোচনায় নানা বিষয়
পুলিশ সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, মহেশ্বরপাশা, তেলিগাতিসহ আশপাশের এলাকায় চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেশি। মাহবুব দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তবে ৫ আগস্টের পর এলাকায় বেপরোয়া আচরণ, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ও জমি বিক্রির সিন্ডকেট নিয়ন্ত্রণে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আলোচনা আছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিএনপির একাংশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর, গত বছরের আগস্ট মাসে বিএল কলেজ সড়কে বিএনপি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা এবং কুয়েটে রামদা হাতে অংশ নেওয়ার বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে আলোচনা চলছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ কয়েকটি বিষয় মাথায় নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।’
বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির নিবেদিত কর্মী ছিলেন মাহবুব। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বদলে যান তিনি। কুয়েটের ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ মাহবুবকে গ্রেপ্তার করেনি। ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে– এমন ইঙ্গিত করে ফেসবুকে প্রচারণাও চালাচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘খুলনায় একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে। পুলিশ কোনো প্রতিকার করতে পারছে না। আগের হত্যার ঘটনায় পদক্ষেপ নিলে মাহবুবকে খুন হতে হতো না। আমরা অবলিম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং খুলনা পুলিশে বড় রদবদলের দাবি জানাচ্ছি।’