সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন আফসানা জাহান (১৯)। জন্মদিনে সহপাঠীরা তাঁকে খাওয়াবেন, আনন্দ করবেন—এ পরিকল্পনা ছিল আগে থেকেই। তাই সকাল সকাল বাড়ি থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসে যান। সেখানে তাঁর জন্মদিন উদ্‌যাপন করেন সহপাঠীরা। নানা উপহার দেন তাঁকে। কিন্তু জন্মদিনের আনন্দ নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁর। সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হয়েছেন।

মেয়ের জন্মদিনের কথা তুলে বিলাপ করছিলেন বাবা দেলোয়ার হোসেন। বলছিলেন, ‘হায়রে মা, খইয়া গেলে জন্মদিনে লগের তারা (সহপাঠীরা) খাওয়াইত, আনন্দ করত। এরপর তাড়াতাড়ি বাড়িত আইবে। এমন আনন্দ করলে আর বাড়িত আইলে নারে মা, কিলা সহ্য খরতাম.

..।’

আফসানা জাহান ওরফে খুশি গতকাল বুধবার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর সঙ্গে একই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়ি ফিরছিলেন স্নেহা চক্রবর্তী (১৮) ও শফিকুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যক্তি। এই দুজনও একই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। স্নেহা চক্রবর্তী বুধবার সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সুবিপ্রবি) ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। সকালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবা বিপুল চক্রবর্তী মেয়েকে নিজে ক্যাম্পাসে নিয়ে যান। এরপর তাঁকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি করে একটি অটোরিকশায় তুলে দেন। কিন্তু ১০ মিনিটের মধ্যে পথেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন থেমে যায় স্নেহার। তাঁর গ্রামের বাড়ি শান্তিগঞ্জ উপজেলায় হলেও সুনামগঞ্জ শহরে থাকতেন।

আফসানা জাহানের বাড়ি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আরপিননগর এলাকায়। বাবা দেলোয়ার হোসেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য। মা নুরুন্নাহান গৃহিণী। তাঁদের দুই মেয়ের মধ্যে আফসানা ছোট। বড় মেয়ে নুশরাত জাহানের বিয়ে হয়েছে।

আফসানা জাহানের মামা সাইফুল আলম (ছদরুল) বলেন, আফসানা মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। সুনামগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ থেকে লেখাপড়া করে গত বছর সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এবার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলেন। প্রতিদিন শহর থেকে অটোরিকশা কিংবা লেগুনায় ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জে সুনামগঞ্জ টেক্সস্টাইল ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস অবস্থিত। ওই প্রতিষ্ঠানেই সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সুবিপ্রবি) অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে গত বছর থেকে পাঠদান শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই জেলা শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের ওই ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন।

গতকাল দুপুরে শান্তিগঞ্জ থেকে ফেরার পথে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেটগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় অটোরিকশার। সেখানেই তিনজন মারা যান। আহত হন আরও একজন ছাত্রী ও অটোরিকশার চালক।

সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী আফসানা জাহানের স্বজনদের আহাজারি। গত বুধবার বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক দ র ঘটন য় স ন মগঞ জ আনন দ সহপ ঠ আফস ন

এছাড়াও পড়ুন:

জুমার দিনের করণীয় ও বর্জনীয়

জুমার দিন—মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ বরকতময় দিন।

এটি শুধু সাপ্তাহিক নামাজের দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সংহতি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান সুযোগ।

নবীজি (সা.) বলেছেন—“জুমার দিনই দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন, এবং এ দিনেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)

অতএব, জুমা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি ইসলামি সভ্যতার একটি কেন্দ্রবিন্দু।

এই দিনে কিছু কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, আবার কিছু কাজ থেকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫জুমার দিনের করণীয়

১. গোসল করা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর মসজিদে আসে, নীরবে খুতবা শোনে ও নামাজ পড়ে, তার এক জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)

জুমার দিনের এই গোসল বিশেষ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

২. পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার

জুমার নামাজে যাওয়ার আগে মুসলমানকে সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে তোমাদের জন্য সুন্দর পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫২৪৮)

এটি সামাজিক মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতার প্রতীক।

৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া

জুমার নামাজে আগে পৌঁছানোর জন্য বড় ফজিলত রয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথম ঘণ্টায় জুমার জন্য যায়, সে যেন উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেলে গরু কোরবানি করল; তৃতীয় ঘণ্টায় গেলে ভেড়া কোরবানি করল; চতুর্থ ঘণ্টায় গেলে মুরগি কোরবানি করল; আর পঞ্চম ঘণ্টায় গেলে ডিম দান করল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮১)

অর্থাৎ, যত আগে যাবে, তত বেশি সওয়াব।

৪. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন তার সঙ্গীকে বলে ‘চুপ করো’, সে-ও অনর্থক কথা বলল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৪)

খুতবা চলাকালীন কথা বলা, ফোন ব্যবহার করা বা অমনোযোগ হওয়া নিষিদ্ধ।

৫. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা

জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৩৯২)

৬. দোয়া করা ও দরুদ পাঠ করা

জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন দোয়া কবুল হয়।

নবীজি (সা.) বলেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে কোনো মুসলমান নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)

অনেক আলেমের মতে, এই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।

এছাড়া, জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার নির্দেশও এসেছে, “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)

আরও পড়ুনপ্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় আমল২২ আগস্ট ২০২৪জুমার দিনের বর্জনীয়

১. জুমার নামাজ ত্যাগ করা

নবীজি (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, “যে ব্যক্তি অলসতা বা উদাসীনতার কারণে তিনটি জুমা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২)

অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে জুমা বাদ দেওয়া ইমানের জন্য ভয়ংকর বিপদ।

২. জুমা বাদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা

কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! যখন জুমার আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো।” (সুরা আল-জুমা, আয়াত: ৯)

জুমার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন কেনাকাটা বা অন্য ব্যস্ততা বড় গোনাহ।

৩. উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা

মসজিদে অন্যদের বিরক্ত করা, ফোনে কথা বলা, এমনকি নামাজের আগে অপ্রয়োজনে গল্প করা জুমার আদববিরোধী কাজ।

৪. খুতবার সময় চলাফেরা করা

খুতবা চলাকালে যেকোনো অযথা নড়াচড়া বা সামনে যাওয়া, নবীজি (সা.) বলেছেন, এতে “সওয়াব নষ্ট হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)

৫. নামাজ শেষে গাফেল থাকা

জুমার পরপরই নামাজ বা দোয়া না করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “যখন নামাজ শেষ হবে, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো, কিন্তু আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)

অর্থাৎ, কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু মনে যেন আল্লাহর স্মরণ থাকে।

জুমার দিনের তাৎপর্য

জুমা মুসলমানদের জন্য সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এদিনে মসজিদগুলোতে ধনী-গরিব, নেতা-জনতা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়।

নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে একবার নামাজ আদায় করা সাত দিনের গোনাহ মাফের সমান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)

জুমার দিন আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি, সমাজের ঐক্য এবং আল্লাহর রহমত লাভের সোনালি সুযোগ।

এই দিনে গোসল, পরিষ্কার পোশাক, সময়মতো নামাজে যাওয়া, খুতবা শোনা, সূরা কাহফ পাঠ ও দোয়া করা—সবই মুসলিম জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায়।

অন্যদিকে অলসতা, ব্যবসা, ও অমনোযোগিতা আমাদের ইমানকে দুর্বল করে।

অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত জুমাকে কেবল ছুটির দিন নয়, বরং “আত্মার নবজাগরণের দিন” হিসেবে পালন করা।

আরও পড়ুনসাহাবিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর শেষ উপদেশ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ