গুগলের এআই ওভারভিউ-সুবিধার কারণে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কি সত্যিই কমছে
Published: 7th, August 2025 GMT
গুগলের ‘এআই ওভারভিউ’-সুবিধায় সার্চ ফলাফলের ওপরের অংশেই এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি সংক্ষিপ্ত তথ্য দেখা যায়। ফলে কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ না করেই অনলাইন থেকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য জানতে পারেন ব্যবহারকারীরা। গত বছর এই সুবিধা চালুর পর থেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের অরগানিক ট্রাফিক কমে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ওয়েবসাইটের মালিক ও কনটেন্ট নির্মাতারা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে গুগল জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর এআই ওভারভিউ সার্চ–সুবিধার কারণে ওয়েবসাইটের ভিজিটর কমছে না। ব্যবহারকারীরা এখন আগের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে নির্দিষ্ট বিষয়ের গভীরে যেতে উৎসাহী হচ্ছেন বলেও দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় বলা হয়েছে, গুগল সার্চে ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে শীর্ষে যে এআই সারাংশ দেখানো হয়, সেখানে অনেকেই প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যান। ফলে তাঁরা আর মূল উৎস; অর্থাৎ ওয়েবসাইটে ক্লিক করে প্রবেশ করেন না। ফলে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলোর ট্রাফিক সংখ্যা কমছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে গুগলের সার্চ বিভাগের প্রধান লিজ রিড এক ব্লগ বার্তায় জানিয়েছেন, অনেক সময় ভুল পদ্ধতিতে তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। গুগলের নিজস্ব তথ্য বিশ্লেষণে এ ধরনের প্রবণতার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গুগল সার্চ থেকে ওয়েবসাইটে ক্লিকের হার গত বছরের তুলনায় প্রায় একই রয়েছে। কিছু ওয়েবসাইটে ভিজিটর বেড়েছে, আবার কিছু ওয়েবসাইটে কমেছে। সামগ্রিকভাবে ক্লিকের পরিমাণ স্থিতিশীল রয়েছে।
আরও পড়ুনগুগল সার্চে নতুন এআই সুবিধা২৭ জুলাই ২০২৫গুগলের এআই ওভারভিউ-সুবিধার কারণে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কমার অভিযোগ গুগল অস্বীকার করলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সম্প্রতি জানিয়েছে, এআই সার্চের প্রভাবে অনেক সংবাদমাধ্যম ওয়েব ট্রাফিক হারাচ্ছে। বিজনেস ইনসাইডার, ওয়াশিংটন পোস্ট ও হাফপোস্ট–এর মতো কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ট্রাফিক কমে যাওয়ায় কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া গুগলের অ্যালগরিদমে পরিবর্তনের ফলে অনেক স্বাধীন ও ছোট ওয়েবসাইট সার্চ র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে। এতে এসব ওয়েবসাইটে আগের মতো ভিজিটর পাওয়া যাচ্ছে না।
কিছু ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে রিড জানিয়েছেন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের আচরণ পরিবর্তনের কারণেই এমনটি হচ্ছে। তাঁর মতে, ব্যবহারকারীদের সার্চ অভ্যাসে পরিবর্তনের ফলে কিছু ওয়েবসাইটে ভিজিটর কমেছে, আবার কিছু সাইটে বেড়েছে। বিশেষ করে যেসব ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতানির্ভর আলোচনা, ভিডিও, পডকাস্ট রয়েছে—সেগুলো বেশি ট্রাফিক পাচ্ছে।
সূত্র: দ্য ভার্জ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট র ফ ক কম স ব ক র কর গ গল র
এছাড়াও পড়ুন:
জুমার দিনের করণীয় ও বর্জনীয়
জুমার দিন—মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ বরকতময় দিন।
এটি শুধু সাপ্তাহিক নামাজের দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সংহতি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান সুযোগ।
নবীজি (সা.) বলেছেন—“জুমার দিনই দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন, এবং এ দিনেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)
অতএব, জুমা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি ইসলামি সভ্যতার একটি কেন্দ্রবিন্দু।
এই দিনে কিছু কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, আবার কিছু কাজ থেকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫জুমার দিনের করণীয়১. গোসল করা
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর মসজিদে আসে, নীরবে খুতবা শোনে ও নামাজ পড়ে, তার এক জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)
জুমার দিনের এই গোসল বিশেষ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।
২. পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার
জুমার নামাজে যাওয়ার আগে মুসলমানকে সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে তোমাদের জন্য সুন্দর পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫২৪৮)
এটি সামাজিক মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতার প্রতীক।
৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া
জুমার নামাজে আগে পৌঁছানোর জন্য বড় ফজিলত রয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথম ঘণ্টায় জুমার জন্য যায়, সে যেন উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেলে গরু কোরবানি করল; তৃতীয় ঘণ্টায় গেলে ভেড়া কোরবানি করল; চতুর্থ ঘণ্টায় গেলে মুরগি কোরবানি করল; আর পঞ্চম ঘণ্টায় গেলে ডিম দান করল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮১)
অর্থাৎ, যত আগে যাবে, তত বেশি সওয়াব।
৪. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন তার সঙ্গীকে বলে ‘চুপ করো’, সে-ও অনর্থক কথা বলল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৪)
খুতবা চলাকালীন কথা বলা, ফোন ব্যবহার করা বা অমনোযোগ হওয়া নিষিদ্ধ।
৫. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা
জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৩৯২)
৬. দোয়া করা ও দরুদ পাঠ করা
জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন দোয়া কবুল হয়।
নবীজি (সা.) বলেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে কোনো মুসলমান নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)
অনেক আলেমের মতে, এই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
এছাড়া, জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার নির্দেশও এসেছে, “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)
আরও পড়ুনপ্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় আমল২২ আগস্ট ২০২৪জুমার দিনের বর্জনীয়১. জুমার নামাজ ত্যাগ করা
নবীজি (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, “যে ব্যক্তি অলসতা বা উদাসীনতার কারণে তিনটি জুমা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২)
অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে জুমা বাদ দেওয়া ইমানের জন্য ভয়ংকর বিপদ।
২. জুমা বাদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা
কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! যখন জুমার আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো।” (সুরা আল-জুমা, আয়াত: ৯)
জুমার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন কেনাকাটা বা অন্য ব্যস্ততা বড় গোনাহ।
৩. উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা
মসজিদে অন্যদের বিরক্ত করা, ফোনে কথা বলা, এমনকি নামাজের আগে অপ্রয়োজনে গল্প করা জুমার আদববিরোধী কাজ।
৪. খুতবার সময় চলাফেরা করা
খুতবা চলাকালে যেকোনো অযথা নড়াচড়া বা সামনে যাওয়া, নবীজি (সা.) বলেছেন, এতে “সওয়াব নষ্ট হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)
৫. নামাজ শেষে গাফেল থাকা
জুমার পরপরই নামাজ বা দোয়া না করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “যখন নামাজ শেষ হবে, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো, কিন্তু আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)
অর্থাৎ, কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু মনে যেন আল্লাহর স্মরণ থাকে।
জুমার দিনের তাৎপর্য
জুমা মুসলমানদের জন্য সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এদিনে মসজিদগুলোতে ধনী-গরিব, নেতা-জনতা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে একবার নামাজ আদায় করা সাত দিনের গোনাহ মাফের সমান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)
জুমার দিন আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি, সমাজের ঐক্য এবং আল্লাহর রহমত লাভের সোনালি সুযোগ।
এই দিনে গোসল, পরিষ্কার পোশাক, সময়মতো নামাজে যাওয়া, খুতবা শোনা, সূরা কাহফ পাঠ ও দোয়া করা—সবই মুসলিম জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায়।
অন্যদিকে অলসতা, ব্যবসা, ও অমনোযোগিতা আমাদের ইমানকে দুর্বল করে।
অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত জুমাকে কেবল ছুটির দিন নয়, বরং “আত্মার নবজাগরণের দিন” হিসেবে পালন করা।
আরও পড়ুনসাহাবিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর শেষ উপদেশ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫