রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে খুব শিগগির দেখা করতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই সে কথা বলেছেন।

এদিনই মস্কোয় প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তাঁদের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প।

কিয়েভের একটি জ্যেষ্ঠ সূত্র বলেছে, পুতিন-উইটকফের বৈঠকের পর ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে এক ফোনালাপ হয়েছে। সেখানে ট্রাম্প-পুতিন সম্ভাব্য শীর্ষ বৈঠক নিয়ে কথা হয়। ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফিনল্যান্ডের নেতারাও একই ফোনালাপে অংশ নেন।

পরে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, তিনি কবে ইউক্রেন ও রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘খুব শিগগির একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।’

যদি ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে বৈঠক হয়, তবে সেটা হবে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া প্রথম শীর্ষ বৈঠক। ২০২১ সালের জুনে জেনেভায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পুতিনের বৈঠক হয়েছিল।

তবে পুতিনের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠক কোথায় হতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্প কিছু বলেননি।

ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে ওই বৈঠক হলে তবে সেটা হবে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া প্রথম শীর্ষ বৈঠক। ২০২১ সালের জুনে জেনেভায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পুতিনের বৈঠক হয়েছিল।

আরও পড়ুনউত্তেজনার মধ্যেই রাশিয়া যাচ্ছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত০৪ আগস্ট ২০২৫

ট্রাম্প-পুতিন সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন ব্যক্তিদের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএনের খবরে বলা হয়, ট্রাম্প আগামী সপ্তাহেই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করছেন। এরপর তিনি পুতিন ও জেলেনস্কিকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজন করতে চান।

ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির ফোনালাপের আগে দিনের শুরুতে মস্কোয় রুশ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন স্টিভ উইটকফ। ক্রেমলিন ওই আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ বলে বর্ণনা করেছে।

এ যুদ্ধের অবসান করতেই হবে, সবাই এ বিষয়ে একমত হয়েছে। আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করব।ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপে ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া সময়সীমাও শেষ হয়ে আসছে।

আরও পড়ুনপুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের দূত উইটকফের বৈঠকের পর কি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে১৯ ঘণ্টা আগে

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘বিশাল অগ্রগতি হয়েছে!’

পুতিন-উইটকফ বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউরোপের কয়েকজন মিত্রকে এ অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করেছেন বলেও জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, উইটকফ মস্কো থেকে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে ফিরে এসেছেন। এ প্রস্তাব নিয়ে ইউক্রেন এবং ওয়াশিংটন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে।

ট্রাম্প লেখেন, ‘এ যুদ্ধের অবসান করতেই হবে, সবাই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। আগামী দিন ও সপ্তাহগুলোতে আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করব।’

যদিও এর কয়েক মিনিট পরই একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, দুই দিনের মধ্যে (রাশিয়ার বিরুদ্ধে) দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, উইটকফ মস্কো থেকে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে ফিরে এসেছেন। ওই প্রস্তাব নিয়ে ইউক্রেন এবং ওয়াশিংটন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা: বিশ্ব কি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে০২ আগস্ট ২০২৫

তবে রুবিও কথা বলার সময় ট্রাম্প-পুতিন সম্ভাব্য বৈঠকের সময় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘অগণিত কাজ বাকি রয়েছে। এ জন্য কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।’

অগণিত কাজ বাকি রয়েছে। এ জন্য কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।মার্কো রুবিও, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময় বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হলেও এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি খবর নেই।

এ অবস্থায় সম্প্রতি রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে সময় বেঁধে দিয়েছেন ট্রাম্প। না হলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে রেখেছেন। আগামীকাল শুক্রবার ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হবে।

আরও পড়ুনরাশিয়ার কাছে ট্রাম্পের পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের ঝুঁকি আসলে কতটা০২ আগস্ট ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র প প রস ত ব ন য় ক ষমত য় ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমার সংঘাতের আঞ্চলিক প্রভাব যাচাইয়ে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন জার্মানির সংসদ সদস্য

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের আঞ্চলিক প্রভাব যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ সফর করেছেন জার্মানির গ্রিন পার্টির সংসদ সদস্য বরিস মিজাতোভিচ। চার দিনের এই সফরের সময় তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

বুধবার ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জার্মানির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগের গ্রিন পার্টির সদস্য বরিস মিজাতোভিচ ২৬ থেকে ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জ্বালানি প্রকল্প, বিশেষ করে এই অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। বরিস মিজাতোভিচ মিয়ানমারের সংঘাতের আঞ্চলিক প্রভাব যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। যার লক্ষ্য ছিল এই বিষয়গুলোকে আন্তর্জাতিক আলোচনার সূচিতে ফিরিয়ে আনা। এই লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশ সফর শেষে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই ভ্রমণ করেন।

বাংলাদেশ সফরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা, সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থা, পরিবেশজনিত উদ্বেগ, কর্মপরিবেশ এবং শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলো নিয়ে বরিস মিজাতোভিচ আলোচনা করেন।

বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে সফরকালে মিজাতোভিচ শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সরবরাহ শৃঙ্খল সম্পর্কিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি উপসাগরীয় অঞ্চলে শ্রম অভিবাসন এবং কর্মপরিবেশ নিয়েও আলোচনা করেন তাঁরা। এ ছাড়া বৈঠকে জাহাজভাঙার চ্যালেঞ্জ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।

এ ছাড়া বরিস মিজাতোভিচ বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে জিআইজেড আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত সম্পর্কে অবগত হন এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কর্মপরিবেশ উন্নত করার সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরের সময় বরিস মিজাতোভিচ কক্সবাজারে যান।

সেখানে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেন এবং এ অঞ্চলে মানবিক চ্যালেঞ্জ এবং চলমান ত্রাণ কার্যক্রম আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই সফর মানবাধিকার, কর্মপরিবেশ এবং মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে সংলাপ, বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ