জুতা রপ্তানিতে বড় বাধা বিদ্যমান বন্ড ব্যবস্থা
Published: 7th, August 2025 GMT
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর একটি হলো জুতা ও আনুষঙ্গিক পণ্য রপ্তানি। কিন্তু এই খাতের প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কাস্টমস বন্ডের বিদ্যমান ব্যবস্থা। সময়সাপেক্ষ, জটিল ও দুর্নীতিগ্রস্ত এই ব্যবস্থার কারণে রপ্তানিকারকেরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমাদের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, তাইওয়ানের মতো দেশে সহজ ও স্বচ্ছ নীতিমালার মাধ্যমে রপ্তানিতে অভাবনীয় অগ্রগতি এসেছে। সেখানে আমরা এখনো প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে আটকে রয়েছি।
বর্তমানে বন্ড লাইসেন্স পেতে একজন রপ্তানিকারককে ৩০টির বেশি সরকারি সংস্থা থেকে অনুমোদনের নথি সংগ্রহ করতে হয়। এরপর শুরু হয় ঘুষ-দুর্নীতির চক্র। বন্ড-সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কার্যক্রমে যেমন ইন বন্ড বা আউট বন্ড হিসাব, ইউডি বা ইউপি (আমদানি করা কাঁচামালের হিসাব ও তা আমদানির অনুমতি) অনুমোদন, প্রাপ্যতার খতিয়ান—এসব মেলাতে গিয়ে সময়, শ্রম ও অর্থের অপচয় হয়।
এক হিসাবে দেখা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জুতার কাঁচামাল ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণের আমদানি পর্যায়ে বছরে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা আদায় করে। সেখানে এই কাস্টমস বন্ডব্যবস্থা ধরে রাখতে প্রায় সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করে সরকার। কাস্টমসের দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্দরে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া বা জরিমানা দেয়। এ ছাড়া বন্ড অফিসে ঘুষ দিতে হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকার। অর্থাৎ ঘুষ দেওয়া, জরিমানা, ডকুমেন্টারি ম্যানেজমেন্ট ও বিলম্বিত জাহাজীকরণ—সব মিলিয়ে রপ্তানিকারকদের বছরে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি গুনতে হয়।
বিশ্ববাজারে ফুটওয়্যার রপ্তানি করে ভিয়েতনাম এখন বছরে আয় করছে প্রায় ২৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। অথচ বাংলাদেশ ১-২ বিলিয়নের ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়। কারণ, বন্ড-সিস্টেমে লিড টাইম অত্যন্ত দীর্ঘ ও প্রশাসনিক জটিলতা সীমাহীন। অথচ ভিয়েতনামে এই খাতের ৮০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর।
এই অবস্থায় আগামী পাঁচ বছরে এ খাতের রপ্তানি ২০ বিলিয়ন ডলারে নিতে হলে আমাদের এখনই কিছু গঠনমূলক সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, দুর্নীতিগ্রস্ত বন্ডব্যবস্থা পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। এর বদলে অন্যান্য দেশের মতো ২০-২৫ শতাংশ মূল্য সংযোজনভিত্তিক (ভ্যালু অ্যাডেড) ‘গ্রিন চ্যানেল’ চালু করা যেতে পারে। এতে নির্ধারিত এইচএস কোড এবং অনুমোদিত কাঁচামালের তালিকা অনুযায়ী পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। বছর শেষে আমদানি ও রপ্তানির তুলনা করলে বোঝা যাবে, কে কতটা মূল্য সংযোজন করতে পেরেছে।
দ্বিতীয়ত, ১ শতাংশ করহার চালু করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে রপ্তানিকারকেরা মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক-কর দিয়ে সহজে কাঁচামাল আমদানি করতে পারবেন। এতে সরকারের আয় বাড়বে, ঘুষও কমবে, এনবিআরের কাজও সহজ হবে; ব্যবসায়ীরাও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন।
তৃতীয়ত, আমদানিতে লাইসেন্স (নিবন্ধন) ও সনদ নেওয়া সহজ করা প্রয়োজন। একটি প্রতিষ্ঠানকে যেন ৫-৬টির বেশি নিবন্ধন না নিতে হয়, আর সেগুলোর মেয়াদ যেন প্রতিষ্ঠান চালু থাকা পর্যন্তই থাকে। বারবার নবায়নের ঝামেলা থাকলে ঘুষ ও হয়রানি বাড়ে। নবায়ন পদ্ধতি তুলে দিলে দুর্নীতিও কমবে।
চতুর্থত, সহজ শর্তে রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দেওয়া হলে ছোট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা সহজে বিদেশে পণ্য পাঠাতে পারবেন। বিশ্বে বর্তমানে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের অনলাইন জুতার বাজার রয়েছে। সহজে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ পেলে এই খাতে তরুণেরা অংশ নিতে পারবেন।
পঞ্চমত, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে দরকার আধুনিক পরিবেশ। যদি দুর্নীতি না থাকে, কাজ দ্রুত হয় ও সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে।
শেষ কথা, বাংলাদেশে চামড়াজাত পণ্য খাতে আমাদের প্রথম প্রজন্ম দক্ষতার সঙ্গে শিল্পের গোড়াপত্তন করেছে। বর্তমানে দ্বিতীয় প্রজন্ম বিশ্বমানের জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। সরকারের উচিত এদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। বন্ডের মতো জটিল ব্যবস্থা অব্যাহত রাখলে শুধু ফুটওয়্যার নয়, দেশের অন্য সম্ভাবনাময় খাতগুলোও ধ্বংসের পথে যাবে। ফলে এখনই এই খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার সময়।
লেখক: লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনেরও সহসভাপতি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ আমদ ন র প রব ন এই খ ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফাউন্ডেড স্কলারশিপ পেলেন বেরোবি শিক
বিশ্বের স্বনামধন্য চার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান মেহেদী।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মৃত মো. মোস্তাফিজার প্রধান ও কল্পনা দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি।
তিনি এসএসসিতে জিপিএ ৫.০০ ও এইচএসসি জিপিএ ৪.৫০ পেয়েছেন। প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন নিজ বিভাগেও। তিনি স্নাতকে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.৬৪ পেয়েছেন। পরে ৭ স্কোর পেয়ে আইইএলটিএস সম্পন্ন করেন তিনি। এ পর্যন্ত তার ১২টি গবেষণাপত্র বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে টিটিসি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ
পঞ্চগড়ে যুবক খুন: জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
এছাড়া আন্তর্জাতিক ও ন্যাশনাল সম্মেলনে পোস্টার উপস্থাপনা করেছেন চারবার। বেরোবি শিক্ষক অধ্যপক ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলামের গবেষণ সহকারী কর্মরত তিনি।
তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি, মালেশিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ তেরেঙ্গানু,থাইল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ থাম্মাসাত এবং টেস্ট টোকিও স্কলাশিপের অধীনে থাইলান্ডের ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফাউন্ডেড স্কলারশিপ পেয়েছেন। তবে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি জন্য ভর্তি হয়েছেন থাইল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ থাম্মাসাতের বায়োকেমিকেল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগে।
এ বিষয়ে মাহামুদুল হাসান বলেন, “আমি মুলত তৃতীয় বর্ষ থেকে গবেষণার কাজ শুরু করি। এত কঠিন পরিশ্রমের পর যখন সফলতা এসেছে, তখন তো সবাই খুশি থাকে। শুক্রবার যখন নামাজ পড়ে ল্যাপটপটা চেক করে দেখি আমার স্কলারশিপের মেইল আসছে। তখনকার অনুভূতি বলে প্রকাশ করার মতো না।”
বেরোবি শিক্ষক ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি খুবই খুশি। সে কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমিও তাকে সাহায্য করেছি। এর ফলে সেই স্কলারশিপ পেয়েছে।”
উপাচার্য ড. মো. শওকত আলী বলেন, “প্রথমে তাকে অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি এ রকম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ুক। এটা আমি প্রত্যাশা করি।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী