বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর একটি হলো জুতা ও আনুষঙ্গিক পণ্য রপ্তানি। কিন্তু এই খাতের প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কাস্টমস বন্ডের বিদ্যমান ব্যবস্থা। সময়সাপেক্ষ, জটিল ও দুর্নীতিগ্রস্ত এই ব্যবস্থার কারণে রপ্তানিকারকেরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমাদের প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, তাইওয়ানের মতো দেশে সহজ ও স্বচ্ছ নীতিমালার মাধ্যমে রপ্তানিতে অভাবনীয় অগ্রগতি এসেছে। সেখানে আমরা এখনো প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে আটকে রয়েছি। 

বর্তমানে বন্ড লাইসেন্স পেতে একজন রপ্তানিকারককে ৩০টির বেশি সরকারি সংস্থা থেকে অনুমোদনের নথি সংগ্রহ করতে হয়। এরপর শুরু হয় ঘুষ-দুর্নীতির চক্র। বন্ড-সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কার্যক্রমে যেমন ইন বন্ড বা আউট বন্ড হিসাব, ইউডি বা ইউপি (আমদানি করা কাঁচামালের হিসাব ও তা আমদানির অনুমতি) অনুমোদন, প্রাপ্যতার খতিয়ান—এসব মেলাতে গিয়ে সময়, শ্রম ও অর্থের অপচয় হয়।

এক হিসাবে দেখা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জুতার কাঁচামাল ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণের আমদানি পর্যায়ে বছরে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা আদায় করে। সেখানে এই কাস্টমস বন্ডব্যবস্থা ধরে রাখতে প্রায় সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করে সরকার। কাস্টমসের দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্দরে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া বা জরিমানা দেয়। এ ছাড়া বন্ড অফিসে ঘুষ দিতে হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকার। অর্থাৎ ঘুষ দেওয়া, জরিমানা, ডকুমেন্টারি ম্যানেজমেন্ট ও বিলম্বিত জাহাজীকরণ—সব মিলিয়ে রপ্তানিকারকদের বছরে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি গুনতে হয়।

বিশ্ববাজারে ফুটওয়্যার রপ্তানি করে ভিয়েতনাম এখন বছরে আয় করছে প্রায় ২৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। অথচ বাংলাদেশ ১-২ বিলিয়নের ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়। কারণ, বন্ড-সিস্টেমে লিড টাইম অত্যন্ত দীর্ঘ ও প্রশাসনিক জটিলতা সীমাহীন। অথচ ভিয়েতনামে এই খাতের ৮০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোর। 

এই অবস্থায় আগামী পাঁচ বছরে এ খাতের রপ্তানি ২০ বিলিয়ন ডলারে নিতে হলে আমাদের এখনই কিছু গঠনমূলক সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, দুর্নীতিগ্রস্ত বন্ডব্যবস্থা পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। এর বদলে অন্যান্য দেশের মতো ২০-২৫ শতাংশ মূল্য সংযোজনভিত্তিক (ভ্যালু অ্যাডেড) ‘গ্রিন চ্যানেল’ চালু করা যেতে পারে। এতে নির্ধারিত এইচএস কোড এবং অনুমোদিত কাঁচামালের তালিকা অনুযায়ী পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। বছর শেষে আমদানি ও রপ্তানির তুলনা করলে বোঝা যাবে, কে কতটা মূল্য সংযোজন করতে পেরেছে। 

দ্বিতীয়ত, ১ শতাংশ করহার চালু করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে রপ্তানিকারকেরা মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক-কর দিয়ে সহজে কাঁচামাল আমদানি করতে পারবেন। এতে সরকারের আয় বাড়বে, ঘুষও কমবে, এনবিআরের কাজও সহজ হবে; ব্যবসায়ীরাও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। 

তৃতীয়ত, আমদানিতে লাইসেন্স (নিবন্ধন) ও সনদ নেওয়া সহজ করা প্রয়োজন। একটি প্রতিষ্ঠানকে যেন ৫-৬টির বেশি নিবন্ধন না নিতে হয়, আর সেগুলোর মেয়াদ যেন প্রতিষ্ঠান চালু থাকা পর্যন্তই থাকে। বারবার নবায়নের ঝামেলা থাকলে ঘুষ ও হয়রানি বাড়ে। নবায়ন পদ্ধতি তুলে দিলে দুর্নীতিও কমবে।

চতুর্থত, সহজ শর্তে রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দেওয়া হলে ছোট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা সহজে বিদেশে পণ্য পাঠাতে পারবেন। বিশ্বে বর্তমানে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের অনলাইন জুতার বাজার রয়েছে। সহজে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ পেলে এই খাতে তরুণেরা অংশ নিতে পারবেন। 

পঞ্চমত, বিদেশি বিনিয়োগ আনতে দরকার আধুনিক পরিবেশ। যদি দুর্নীতি না থাকে, কাজ দ্রুত হয় ও সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। 

শেষ কথা, বাংলাদেশে চামড়াজাত পণ্য খাতে আমাদের প্রথম প্রজন্ম দক্ষতার সঙ্গে শিল্পের গোড়াপত্তন করেছে। বর্তমানে দ্বিতীয় প্রজন্ম বিশ্বমানের জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। সরকারের উচিত এদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখা। বন্ডের মতো জটিল ব্যবস্থা অব্যাহত রাখলে শুধু ফুটওয়্যার নয়, দেশের অন্য সম্ভাবনাময় খাতগুলোও ধ্বংসের পথে যাবে। ফলে এখনই এই খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার সময়।

লেখক: লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনেরও সহসভাপতি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ আমদ ন র প রব ন এই খ ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাগরে আরো লঘুচাপের শঙ্কা, ঢাকায় ৩ ঘণ্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি 

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর আরো একটি লঘুচাপ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। 

লঘুচাপের প্রভাবে ঢাকায় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত টানা ৩ ঘণ্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, রবিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, ভোর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টার লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে ঢাকার বি‌ভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে করে কর্মজীবী মানুষসহ সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। 

সাগরে সৃষ্টি বর্তমান লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা কম জানিয়ে তিনি বলেন, “এই লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ২৪ তারিখ যে লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, সেটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এতে বৃষ্টি বাড়বে কিনা সেটা পরবর্তীতে জানা যাবে।”

আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় ২৪ সেপ্টেম্বরের দিকে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি ঘণীভূত হতে পারে।

আজ খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজস্রহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। 

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজস্রহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। 

বুধবার রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজস্রহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। 

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজস্রহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এছাড়া, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজস্রহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে ফেনী ১১৬ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ময়মনসিংহ ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ