এ বছর প্রিমিয়ার লিগের সময় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। গত মার্চে খেলার মাঠে তাঁর অসুস্থ হয়ে পড়ার ৬ মাস পর আবারও ক্রিকেটে ফিরছেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক ও ওপেনার।

আসন্ন এনসিএল টি–টোয়েন্টিতে চট্টগ্রামের হয়ে খেলার আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি দল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আকরাম খান, সম্পর্কে যিনি তামিমের চাচা।

হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহও। তবে মুশফিকুর রহিম এখনো টেস্ট খেলছেন। তামিমের সঙ্গে এনসিএল টি–টোয়েন্টিতে খেলবেন এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও।

এনসিএল টি–টোয়েন্টির গত আসরে তামিম ৪টি ও মুশফিক ২টি ম্যাচ খেললেও ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। তামিম চট্টগ্রামে খেললেও মুশফিক নিজের বিভাগ রাজশাহীর বদলে সিলেটের হয়ে খেলার ইচ্ছার কথা নির্বাচকদের জানিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ কোন দলে খেলবেন, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।

তামিম, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক তিন জনই এবার এনসিএল টি–টোয়েন্টিতে খেলবেন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় আকাশ থেকে ত্রাণ নয়, ধোঁকা ফেলা হচ্ছে

গত সপ্তাহে আমি বা আমরা গাজার প্রাণকেন্দ্র আজ-জাওয়াইদার কাছে আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলতে দেখেছি। কিন্তু আমি বা আমার কোনো প্রতিবেশী তা কুড়াতে যাওয়ার সাহস পাইনি। কারণ, আমরা জানি, ওগুলো মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই লড়াই শুরু হবে। আকাশ থেকে পড়া ত্রাণ যদি কোনোভাবে প্রকৃত ক্ষুধার্ত মানুষের হাতে পড়েও, কিন্তু শেষ পর্যন্ত লুটেরাদের হাত থেকে তাঁরা রেহাই পাবেন না।

প্রায় প্রতিবারই একই দৃশ্য ঘটে। বিমান থেকে বাক্সগুলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। আগে থেকেই সশস্ত্র গ্যাংগুলো মাটিতে অপেক্ষা করে থাকে, যাতে জোর করে এই ত্রাণ দখল করা যায়। যিনি আগে পৌঁছান বা যে আগে গুলি চালান, তিনিই খাবার নিয়ে চলে যান। কিন্তু যাঁদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তাঁরা কখনো পান না। পরে আমরা দেখি সেই ‘সাহায্যের বাক্সগুলো’ দেইর আল-বালাহর বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ভেতরের জিনিসগুলো আগুনের দামে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুনগাজায় ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র আসলে ইসরায়েলের মারণকল২৮ জুলাই ২০২৫

সম্প্রতি আমার ছোট ভাই বিস্কুট খেতে চাইছিল। আমি বাজারে একটি ত্রাণের প্যাকেট থেকে আসা বিস্কুট দেখলাম এবং দোকানিকে বিস্কুটের দাম জিজ্ঞাসা করলাম। জানলাম, এক পিস বিস্কুটের দাম ২০ শেকেল (৫ ডলার)। এই দামে সে বিস্কুট আমাদের পক্ষে কেনা সম্ভব ছিল না।

আকাশ থেকে ফেলা এই ত্রাণ শুধু ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের পেট ভরাতে ব্যর্থ হয় না, তাঁদের হত্যা পর্যন্ত করে। এ সপ্তাহে আকাশ থেকে ফেলা একটি প্যালেট বাস্তুচ্যুত মানুষের একটি তাঁবুতে গিয়ে পড়ে এবং তাতে আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের চিকিৎসক উদাই আল-কুরআন নিহত হন। এক সপ্তাহ আগে আরেকটি প্যালেট উত্তর গাজায় তাঁবুতে গিয়ে পড়লে ১১ জন আহত হন।

গত বছরও এয়ারড্রপে মানুষ মারা গেছেন। গাজা সিটির শাতি শরণার্থীশিবিরে একটি প্যালেটের প্যারাস্যুট না খোলায় পাঁচজন নিহত হন; সমুদ্রে পড়া ত্রাণের প্যাকেট আনতে গিয়ে ১২ জন ডুবে মারা যান; ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি করে এয়ারড্রপের স্থানে যাওয়ার সময় ৬ জন নিহত হন।

বিশ্বের সাধারণ মানুষ হয়তো মনে করতে পারেন, এভাবে আকাশ থেকে খাবার ফেলে ফিলিস্তিনিদের ক্ষুধা মেটাতে কিছু করা হচ্ছে, কিন্তু গাজার ভেতরে এই এয়ারড্রপগুলোকে কেউ বাস্তব সমাধান বা মানবিক উদ্যোগ মনে করেন না।

আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার ধারণাটি এসেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছ থেকে। তিনি বিশ্বের দেশগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় গাজায় ত্রাণ দেওয়ার আহ্বান জানান। অনেক দেশ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ এই ত্রাণকাজে যোগও দিয়েছে।

কিন্তু নেতানিয়াহু খুব ভালো করেই জানেন, আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণ ফিলিস্তিনিদের না খেয়ে থাকা অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে না। এ কারণেই তিনি গাজার স্থলপথের ক্রসিং খুলে না দিয়ে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে নিয়মিত ও ন্যায়সংগতভাবে সাহায্য বিতরণের জন্য আকাশপথ বেছে নিতে বলেছেন।

বিশ্বের সাধারণ মানুষ হয়তো মনে করতে পারেন, এভাবে আকাশ থেকে খাবার ফেলে ফিলিস্তিনিদের ক্ষুধা মেটাতে কিছু করা হচ্ছে, কিন্তু গাজার ভেতরে এই এয়ারড্রপগুলোকে কেউ বাস্তব সমাধান বা মানবিক উদ্যোগ মনে করেন না।

আরও পড়ুনইসরায়েল কেন গাজায় অস্ত্রধারী গুন্ডা পোষে ১১ জুন ২০২৫

আমরা এগুলোকে কেবল একটি প্রচারণা হিসেবেই দেখি। আসলে এটি ইসরায়েলের চলমান অপরাধকে আড়াল করার একটা উপায়। এখানে হাজারো ট্রাককে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে আর ক্যামেরার সামনে কয়েকটি বাক্স আকাশ থেকে ফেলা হচ্ছে। এটি আসলে ক্ষুধা দীর্ঘায়িত করার কৌশল এবং একই সঙ্গে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর উপায়।

এভাবেই দুর্ভিক্ষ দ্রুত প্রকট হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সেখানে ক্ষুধায় মারা গেছেন ১৮০ জনের বেশি মানুষ, তাঁদের মধ্যে ৯২টি শিশুও রয়েছে।

শুধু গাজায় নয়, অন্য স্থানেও এয়ারড্রপকে অকার্যকর ও বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে আকাশ থেকে ত্রাণের প্যাকেটের আদলে ক্লাস্টার বোমা ফেলা হয়েছিল। শিশুরা খাবার ভেবে দৌড়ে গিয়ে সেগুলো হাতে নিতেই বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিল। সিরিয়াতেও অবরুদ্ধ এলাকায় আকাশ থেকে ফেলা ত্রাণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বা আইএসের দখলে থাকা এলাকায় পড়েছিল। ফলে ক্ষুধার্ত মানুষেরা কিছুই পাননি।

আরও পড়ুনইসরায়েল এখনো বুঝতে পারছে না, তারা যুদ্ধে হেরে গেছে১৯ মে ২০২৫

‘প্যারাস্যুট দিয়ে মানবতা’ আসলে একটি অজুহাত। এটি দিয়ে বিশ্ব তার লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করছে এবং ক্ষুধায় মৃত্যুকে চুপচাপ দেখে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে আড়াল করছে। যাঁরা চুপ করে থাকছেন, যাঁরা এই হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন করার মতো করে কথা বলছেন, যাঁরা হত্যাকারী আর ভিকটিমকে একইভাবে দেখছেন, তাঁরা সবাই এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

মোহাম্মদ আল তাবান গাজার একজন ফিলিস্তিনি লেখক ও স্বেচ্ছাসেবক

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ