ড. ইউনূসকে প্রধান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি
Published: 7th, August 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে প্রধান করে একটি প্রতিনিধিত্বশীল ও বিপ্লবী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি করেছে ইনকিলাব মঞ্চ।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।
তিনি বলেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে দিয়ে আপনি (ড.
আরো পড়ুন:
টিএসসিতে আবু সাঈদ-ওয়াসিমের স্ট্যাটাসে সাঈদীর ছবি প্রদর্শন শিবিরের
ডাকসুর প্যানেল ঘোষণা করল ইসলামী ছাত্র আন্দোলন
হাদি দাবি করেন, “যে সংবিধানের মধ্য দিয়ে বাকশাল ও বিচারিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেই সংবিধান বাতিল করে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের আলোকে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। সাতচল্লিশের ধারাবাহিকতা হলো একাত্তর, আর একাত্তরের চূড়ান্ত রূপ ২০২৪। এই তিনটি সময়কালকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র।”
সংবাদ সম্মেলনে শরীফ ওসমান হাদি একটি প্রতিনিধিত্বশীল স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, “কমিশনে ১০ জন সদস্য থাকলে এর মধ্যে বিরোধী দল থেকে দুইজন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক দুইজন, শহীদ পরিবার থেকে একজন, সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচজন এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের থেকে বাকি সদস্যরা আসতে পারেন। এতে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জনপ্রশাসনে একচ্ছত্র বিসিএস প্রশাসনের কর্তৃত্ব চলতে পারে না। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, পুলিশকে সংস্কার করতে হবে এবং অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। প্রশাসকরা যেন নিজেদের প্যারালাল রাষ্ট্র না ভাবে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”
হাদি বিচার বিভাগে সংস্কার এবং নির্বাচন কমিশনের বর্তমান কাঠামো ভেঙে দেওয়ারও দাবি জানিয়ে বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয়। এটি ভেঙে একটি নতুন কাঠামো গঠন করতে হবে। জুলাই সনদে সাতচল্লিশকে বাদ দিয়ে এবং শাহবাগ ঘরানার চিন্তা দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে। এর ফলে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দেওয়া হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে হাদি অভিযোগ করেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা গণহত্যার কথা বলা হয়নি। অথচ ৭ নভেম্বর, নব্বইয়ের অভ্যুত্থান—সব বলা হলো। এই রাজনৈতিক এড়িয়ে যাওয়া কেন? শাপলা ও পিলখানার শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আপনারা যে সরকারে আছেন, সেখানে থাকতে আপনাদের লজ্জা করে না?”
ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর বন্দুক কাঁধে না রেখে, আপনি এবার জুলাইয়ের বন্দুক হাতে নিন। সেই শক্তি দিয়ে দেশ পরিচালনা করুন।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন স সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জুমার দিনের করণীয় ও বর্জনীয়
জুমার দিন—মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ বরকতময় দিন।
এটি শুধু সাপ্তাহিক নামাজের দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সংহতি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান সুযোগ।
নবীজি (সা.) বলেছেন—“জুমার দিনই দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন, এবং এ দিনেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)
অতএব, জুমা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি ইসলামি সভ্যতার একটি কেন্দ্রবিন্দু।
এই দিনে কিছু কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, আবার কিছু কাজ থেকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫জুমার দিনের করণীয়১. গোসল করা
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর মসজিদে আসে, নীরবে খুতবা শোনে ও নামাজ পড়ে, তার এক জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)
জুমার দিনের এই গোসল বিশেষ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।
২. পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার
জুমার নামাজে যাওয়ার আগে মুসলমানকে সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে তোমাদের জন্য সুন্দর পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫২৪৮)
এটি সামাজিক মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতার প্রতীক।
৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া
জুমার নামাজে আগে পৌঁছানোর জন্য বড় ফজিলত রয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথম ঘণ্টায় জুমার জন্য যায়, সে যেন উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেলে গরু কোরবানি করল; তৃতীয় ঘণ্টায় গেলে ভেড়া কোরবানি করল; চতুর্থ ঘণ্টায় গেলে মুরগি কোরবানি করল; আর পঞ্চম ঘণ্টায় গেলে ডিম দান করল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮১)
অর্থাৎ, যত আগে যাবে, তত বেশি সওয়াব।
৪. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন তার সঙ্গীকে বলে ‘চুপ করো’, সে-ও অনর্থক কথা বলল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৪)
খুতবা চলাকালীন কথা বলা, ফোন ব্যবহার করা বা অমনোযোগ হওয়া নিষিদ্ধ।
৫. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা
জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৩৯২)
৬. দোয়া করা ও দরুদ পাঠ করা
জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন দোয়া কবুল হয়।
নবীজি (সা.) বলেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে কোনো মুসলমান নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)
অনেক আলেমের মতে, এই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
এছাড়া, জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার নির্দেশও এসেছে, “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)
আরও পড়ুনপ্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় আমল২২ আগস্ট ২০২৪জুমার দিনের বর্জনীয়১. জুমার নামাজ ত্যাগ করা
নবীজি (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, “যে ব্যক্তি অলসতা বা উদাসীনতার কারণে তিনটি জুমা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২)
অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে জুমা বাদ দেওয়া ইমানের জন্য ভয়ংকর বিপদ।
২. জুমা বাদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা
কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! যখন জুমার আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো।” (সুরা আল-জুমা, আয়াত: ৯)
জুমার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন কেনাকাটা বা অন্য ব্যস্ততা বড় গোনাহ।
৩. উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা
মসজিদে অন্যদের বিরক্ত করা, ফোনে কথা বলা, এমনকি নামাজের আগে অপ্রয়োজনে গল্প করা জুমার আদববিরোধী কাজ।
৪. খুতবার সময় চলাফেরা করা
খুতবা চলাকালে যেকোনো অযথা নড়াচড়া বা সামনে যাওয়া, নবীজি (সা.) বলেছেন, এতে “সওয়াব নষ্ট হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)
৫. নামাজ শেষে গাফেল থাকা
জুমার পরপরই নামাজ বা দোয়া না করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “যখন নামাজ শেষ হবে, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো, কিন্তু আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)
অর্থাৎ, কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু মনে যেন আল্লাহর স্মরণ থাকে।
জুমার দিনের তাৎপর্য
জুমা মুসলমানদের জন্য সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এদিনে মসজিদগুলোতে ধনী-গরিব, নেতা-জনতা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে একবার নামাজ আদায় করা সাত দিনের গোনাহ মাফের সমান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)
জুমার দিন আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি, সমাজের ঐক্য এবং আল্লাহর রহমত লাভের সোনালি সুযোগ।
এই দিনে গোসল, পরিষ্কার পোশাক, সময়মতো নামাজে যাওয়া, খুতবা শোনা, সূরা কাহফ পাঠ ও দোয়া করা—সবই মুসলিম জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায়।
অন্যদিকে অলসতা, ব্যবসা, ও অমনোযোগিতা আমাদের ইমানকে দুর্বল করে।
অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত জুমাকে কেবল ছুটির দিন নয়, বরং “আত্মার নবজাগরণের দিন” হিসেবে পালন করা।
আরও পড়ুনসাহাবিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর শেষ উপদেশ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫