ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বলেছে, ‘সম্প্রতি টিএসসিতে একটি প্রদর্শনীতে কিছু ছবিকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। একাত্তর এ জাতির চেতনার কেন্দ্রবিন্দু, যা নিয়ে প্রশ্ন রেখে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার স্বপ্ন যেকোনো দলের জন্যই আত্মঘাতী হবে। একই সঙ্গে নতুন বাংলাদেশে কেউ যদি মব তৈরি করে মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের স্বাধীনতাকে হরণ করতে চায়, তাহলে জুলাই জনতা তা সংঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সমসাময়িক পরিস্থিতি, ডাকসু নির্বাচন ও প্যানেল ঘোষণা বিষয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ক্যাম্পাসের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে অন্যতম প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। তা ছাড়া ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, ডাকসু সচল থাকলে ক্যাম্পাসে পেশিশক্তির আস্ফালন এবং অপরাধপ্রবণতা বন্ধ হবে, তৈরি হবে সহাবস্থানমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ। ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশপ্রেমী জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পরে বিষয়টি জাতির কাছে এখন আরও বেশি স্পষ্ট।

আবু বকর বলেন, ‘ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি টিএসসিতে একটি প্রদর্শনীতে কিছু ছবিকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। একাত্তর এ জাতির চেতনার কেন্দ্রবিন্দু, যেটা নিয়ে প্রশ্ন রেখে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার স্বপ্ন যেকোনো দলের জন্যই আত্মঘাতী হবে।’

ক্যাম্পাস রাজনীতি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ মাধ্যম হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু ডাকসুকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে পুঁজিবাদী আস্ফালন এবং যে টাকার ছড়াছড়ি চলছে, তা আমরা সন্দেহের চোখে দেখছি। কেউ কেউ তাদের নিজস্ব প্রস্তুতির ঘাটতি কিংবা জনসমর্থনের অভাবে এবং পরাজিত হওয়ার ভয়ে ডাকসু আয়োজনকে স্বাগত জানাচ্ছে না।’

পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা:

সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য ডাকসু পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেন শেখ মাহবুবুর রহমান। তিনি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল।

ভিপি পদে ঘোষণা করা হয় ইয়াছিন আরাফাতের নাম, যিনি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি। জিএস পদে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আহসান মারজান এবং এজিএস পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়।

এ ছাড়া অন্যন্য পদে প্রার্থী হবেন আবু বকর (শিক্ষা ও গবেষণা), মোহাম্মদ আলী (ইসলামিক স্টাডিজ), আ.

রহমান মাহফুজ (ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ), ‎জুরাইয়া আক্তার (মলিকুলার সায়েন্স), ইলিয়াস তালুকদার (আইবি), মুঈনুল ইসলাম (ইসলামের ইতিহাস), ‎ইয়াসিন আরাফাত (সমাজবিজ্ঞান), ইমরান হোসাইন (ব্যাংকিং), ইসমাইল হোসাইন (ইসলামের ইতিহাস), সাব্বির আহমেদ (ইতিহাস), মানসুরুল হক শান্ত (ফিন্যান্স), মোসা. হাবিবা (ভাষাবিজ্ঞান), শাহরিয়ার জাবির (আইন), ওমর ফারুক (ইসলামিক স্টাডিজ), আফজাল হোসাইন সিয়াম (আরবি), নূরুল জান্নাত মান্না (আরবি), ইকরামুল কবির (ইসলামিক স্টাডিজ), মোহাম্মদ রিয়াদ (ওএসএল), আরিয়ান মাহমুদ রাসেল (ইসলামিক স্টাডিজ), রেজাউল করিম (আরবি), এরফান মোহাম্মদ (জার্নালিজম), জাকিয়া মুন (প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন), আবদুর রহিম (ইসমামিক স্টাডিজ), আবদুর রহমান মাহফুজ (ইসলামিক স্টাডিজ)।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতেও আলোচনার সুযোগ আছে মনে করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলে আমরা নারী শিক্ষার্থীদের হলে বৈদ্যুতিক পাখা অথবা শীতাতপনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, রেজিস্ট্রার অফিসকে ডিজিটালাইজড করা; নিরাপদ, বৈষম্যহীন ও সহনশীল শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত, শতভাগ আবাসনসুবিধা ও আবাসনের মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, গবেষণাভিত্তিক স্কলারশিপ ও ল্যাব–সুবিধা বৃদ্ধি, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও স্মার্ট ক্লাসরুমের ব্যবস্থা, অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা সিস্টেম এবং তৎপরবর্তী কার্যক্রমগুলোকে আরও উন্নত ও সহজীকরণ, বিভাগ ও হল পর্যায়ে দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে ছাত্র-অভিযোগ সেল গঠন, মেডিকেল ব্যবস্থাকে উন্নত করার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তায় হেল্পলাইন ও কাউন্সেলিং সেবা চালু, ক্যারিয়ার গাইডেন্স, ইন্টার্নশিপ ও স্কিল ট্রেনিং নিশ্চিত, প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাথাপিছু ব্যয়কে যথাযথ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজে লাগানো এবং সব ছাত্রসংগঠনের রাজনৈতিক সহাবস্থান ও গঠনমূলক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা করাসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি গণমুখী ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে প্রশাসনকে বাধ্য করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম ক স ট ড জ পর স থ ত ম হ ম মদ র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে মসজিদের ইমামদের সঙ্গে ডেসকোর মতবিনিময়

সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটির মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো)। এর মাধ্যমে বিদ্যুতের অপচয় রোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকার মহাখালীর একটি কনভেনশন হলে আজ বৃহস্পতিবার এই সভার আয়োজন করা হয়।

ডেসকো থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় অংশ নিয়ে ডেসকোর চেয়ারম্যান ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষের (পিপিপি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপনাদের মতো ৫০০ মানুষকে জানানো মানে, আপনার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় ৫ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছানো।’

ডেসকোর চেয়ারম্যান বলেন, মসজিদের ইমাম, খতিব সাহেবদের সমাজের ওপর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। শুক্রবারে খুতবার সময় বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিয়ে সামাজিক সচেতনতামূলক কথা বলা হলে মানুষ তা আমলে নিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে উৎসাহিত ও সচেতন হবেন। তিনি আরও বলেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে প্রচুর ভর্তুকি দিচ্ছে। অথচ প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, হাসপাতাল এমন অনেক জরুরি কাজে অর্থ প্রয়োজন। বিদ্যুৎ অপচয় না করলে সরকারের খরচ কমবে, যা অন্যান্য জরুরি কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।

মতবিনিময় সভায় মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং বিভিন্ন মসজিদ কমিটির প্রতিনিধিরা মতামত ব্যক্ত করেন। বনানী সেন্ট্রাল জামে মসজিদের ইমাম মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ধরনের আয়োজন এই প্রথম। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি। রূপনগর আবাসিক এলাকার মসজিদের ইমাম মো. জাহিদুল ইসলাম এ আয়োজনের প্রশংসা করেন। উত্তরা পশ্চিম তুরাগ এলাকার এক মসজিদের প্রতিনিধি বিদ্যুৎ বিল কমানোর সুপারিশ করেন।

আমন্ত্রিত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ। তিনি পবিত্র কোরআন শরিফের একটি আয়াত তরজমা করে সবাইকে অপচয় থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানান। তিনি সবাইকে সচেতন হতে এবং নিজ নিজ এলাকার বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে উৎসাহী করার জন্য অনুরোধ করেন। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়গুলো প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ