একাত্তর নিয়ে প্রশ্ন রেখে রাজনীতি করার স্বপ্ন যেকোনো দলের জন্যই আত্মঘাতী হবে: ইসলামী ছাত্র আন্দোলন
Published: 7th, August 2025 GMT
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বলেছে, ‘সম্প্রতি টিএসসিতে একটি প্রদর্শনীতে কিছু ছবিকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। একাত্তর এ জাতির চেতনার কেন্দ্রবিন্দু, যা নিয়ে প্রশ্ন রেখে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার স্বপ্ন যেকোনো দলের জন্যই আত্মঘাতী হবে। একই সঙ্গে নতুন বাংলাদেশে কেউ যদি মব তৈরি করে মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের স্বাধীনতাকে হরণ করতে চায়, তাহলে জুলাই জনতা তা সংঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করবে।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সমসাময়িক পরিস্থিতি, ডাকসু নির্বাচন ও প্যানেল ঘোষণা বিষয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ক্যাম্পাসের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিতে অন্যতম প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। তা ছাড়া ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, ডাকসু সচল থাকলে ক্যাম্পাসে পেশিশক্তির আস্ফালন এবং অপরাধপ্রবণতা বন্ধ হবে, তৈরি হবে সহাবস্থানমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ। ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশপ্রেমী জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পরে বিষয়টি জাতির কাছে এখন আরও বেশি স্পষ্ট।
আবু বকর বলেন, ‘ডাকসুর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি টিএসসিতে একটি প্রদর্শনীতে কিছু ছবিকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদেরকে বিস্মিত করেছে। একাত্তর এ জাতির চেতনার কেন্দ্রবিন্দু, যেটা নিয়ে প্রশ্ন রেখে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করার স্বপ্ন যেকোনো দলের জন্যই আত্মঘাতী হবে।’
ক্যাম্পাস রাজনীতি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের বলিষ্ঠ মাধ্যম হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু ডাকসুকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে পুঁজিবাদী আস্ফালন এবং যে টাকার ছড়াছড়ি চলছে, তা আমরা সন্দেহের চোখে দেখছি। কেউ কেউ তাদের নিজস্ব প্রস্তুতির ঘাটতি কিংবা জনসমর্থনের অভাবে এবং পরাজিত হওয়ার ভয়ে ডাকসু আয়োজনকে স্বাগত জানাচ্ছে না।’
পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা:
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য ডাকসু পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেন শেখ মাহবুবুর রহমান। তিনি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল।
ভিপি পদে ঘোষণা করা হয় ইয়াছিন আরাফাতের নাম, যিনি ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি। জিএস পদে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আহসান মারজান এবং এজিএস পদে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া অন্যন্য পদে প্রার্থী হবেন আবু বকর (শিক্ষা ও গবেষণা), মোহাম্মদ আলী (ইসলামিক স্টাডিজ), আ.
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করে শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতেও আলোচনার সুযোগ আছে মনে করে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলে আমরা নারী শিক্ষার্থীদের হলে বৈদ্যুতিক পাখা অথবা শীতাতপনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, রেজিস্ট্রার অফিসকে ডিজিটালাইজড করা; নিরাপদ, বৈষম্যহীন ও সহনশীল শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত, শতভাগ আবাসনসুবিধা ও আবাসনের মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, গবেষণাভিত্তিক স্কলারশিপ ও ল্যাব–সুবিধা বৃদ্ধি, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও স্মার্ট ক্লাসরুমের ব্যবস্থা, অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা সিস্টেম এবং তৎপরবর্তী কার্যক্রমগুলোকে আরও উন্নত ও সহজীকরণ, বিভাগ ও হল পর্যায়ে দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে ছাত্র-অভিযোগ সেল গঠন, মেডিকেল ব্যবস্থাকে উন্নত করার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তায় হেল্পলাইন ও কাউন্সেলিং সেবা চালু, ক্যারিয়ার গাইডেন্স, ইন্টার্নশিপ ও স্কিল ট্রেনিং নিশ্চিত, প্রতিটি শিক্ষার্থীর মাথাপিছু ব্যয়কে যথাযথ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজে লাগানো এবং সব ছাত্রসংগঠনের রাজনৈতিক সহাবস্থান ও গঠনমূলক ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা করাসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি গণমুখী ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে প্রশাসনকে বাধ্য করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম ক স ট ড জ পর স থ ত ম হ ম মদ র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে জকসু নির্বাচন চায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে করার দাবি জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতারা বলেন, বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহুল প্রতীক্ষিত জকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে একধরনের উত্তেজনা ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তফসিলে নির্বাচনের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং অনেকাংশে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট।
সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতারা অভিযোগ করেন, জকসু নির্বাচনের যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে, তা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। ডিসেম্বর বছরের শেষ মাস। এ সময় শিক্ষার্থীরা সারা বছরের একাডেমিক চাপ শেষে ছুটি কাটাতে বাড়ি যায়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ সময় ক্যাম্পাসে থাকে না। নির্বাচনের জন্য এমন সময় নির্ধারণের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে ভোটারদের অংশগ্রহণ সীমিত করা।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতারা আরও বলেন, ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করতে পারে। এমন সময়ে জকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ থাকতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীভ বলেন, ‘একটি সুস্থ ও সর্বোচ্চ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে থাকবে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর এটিই প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন, যা সংকটে জর্জরিত এই ক্যাম্পাসের ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা রাখে।’