‘ভাঙাচোরা রাস্তা হরি রইছে, কেউ দেইকবার নাই’
Published: 8th, August 2025 GMT
স্কুল থেকে ছেলেকে নিয়ে রিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন রোকেয়া বেগম। হঠাৎ সড়কের গর্তে ধপাস করে পড়ে রিকশার একটি চাকা। সড়কের ওপর উল্টে পড়তে গিয়ে কোনো রকমে রক্ষা পায় রিকশাটি। হুডের রড ধরে কোনোমতে নিজেকে সামলে নেন রোকেয়া। অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নোয়াখালী জেলার মাইজদী শহরের হাকিম কোয়ার্টার সড়কে ঘটে এ ঘটনা। রাস্তার খানাখন্দ দেখে রোকেয়া বেগম বলে ওঠেন, ‘রাস্তাগার এরুকুম দুরাবস্তা, বছরের হর বছর ভাঙাচোরা রাস্তা হরি রইছে, কেয় দেইকবার নাই। মানুষজন কীভাবে এই রাস্তাদি চলে?’
অবশ্য শুধু রোকেয়া বেগম নয়। তাঁর মতো প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের দুর্ভোগের শিকার মাইজদীর বাসিন্দারা। সড়ক ভাঙা থাকায় রিকশায় চড়তে গিয়ে ভোগান্তির পাশাপাশি গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই শহরের বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি উঠছে। এতে ভোগান্তি আরও কয়েক গুণ বাড়ছে।
হাসপাতাল রোডে সরকারি ২৫০ শয্যার হাসপাতালের পাশাপাশি অর্ধশতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী, সাধারণ মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই রাস্তায় চলাচল করে। অথচ এই রাস্তা পুরোপুরি ভাঙা।মো.সহিদুল ইসলাম, মধুসূদনপুর এলাকার বাসিন্দা
নোয়াখালী পৌরসভা সূত্র জানায়, পৌরসভাটির আওতায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ সড়কের অবস্থা বর্তমানে বেহাল। কিছু সড়ক আগে থেকেই ভাঙা ছিল। গত বছরের বন্যা ও এ বছরের জলাবদ্ধতায় সড়কগুলো আরও ভেঙেছে।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাইজদীর আল ফারুক একাডেমি সড়ক, কৃষ্ণরামপুর সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, সরকারি আবাসিক এলাকা সড়ক, জেলখানা সড়ক, পুলিশ লাইন সড়ক, ছাবিদ মিয়া সড়ক, সেন্ট্রাল রোড, আনসার ক্যাম্প সড়ক, নোয়াখালী উচ্চবিদ্যালয় সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব সড়কেই কোথাও ছোট গর্ত, কোথাও আবার রাস্তার ইটও খসে পড়ছে। রাস্তাঘাট এতটাই ভাঙা যে অনেক জায়গায় হেঁটে চলাও কঠিন।
নোয়াখালী পৌরসভার হাকিম কোয়ার্টার সড়ক। গতকাল বিকেলে তোলাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
মূল্য দিতে প্রস্তুত, তবু কৃষকস্বার্থে আপস নয়: নরেন্দ্র মোদি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের আবহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানালেন, দেশের কৃষকদের স্বার্থে কোনো আপস করবেন না। সে জন্য তাঁকে অনেক মূল্য দিতে হতে পারে। তিনি প্রস্তুত।
রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার ‘অপরাধে’ ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার রাতে ওই ‘জরিমানা’ ধার্যের কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প নিজেই। তার ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় সবচেয়ে বেশি—৫০ শতাংশ।
পরদিন আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে এক অনুষ্ঠানে মোদি ওই মন্তব্য করলেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, ব্যক্তিগতভাবে আমাকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। সে জন্য প্রস্তুতও আছি। কিন্তু কিছুতেই দেশের কৃষক, গোপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে কোনোরকম আপস করব না।’
বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনের জন্মশতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার মোদি ভাষণ দেন। সেখানেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ওই বার্তা দেন।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। আমেরিকা চায় ভারত কৃষিজাত পণ্য, দুধ ও দুগ্ধজাত পণের বাজার তাদের জন্য পুরোপুরি খুলে দিক, যাতে মার্কিন পণ্য অবাধে ব্যবসা করতে পারে। কিন্তু ভারত তাতে রাজি নয়। দুই দেশের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই ট্রাম্প গতকাল বুধবার ভারতীয় রপ্তানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক (জরিমানাসহ) ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তারই জবাব দিলেন মনে করা হচ্ছে।
কৃষিক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে ভারতীয় কৃষকদের প্রবল প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। তা যাতে না হয়, সে জন্য সরকারের ওপর কৃষকসমাজের চাপ আছে। সেই চাপ উপেক্ষা করা রাজনৈতিকভাবে কঠিন। প্রধানমন্ত্রী মোদিও তা জানেন। সে জন্যই তিনি স্বামীনাথন শতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মঞ্চ বেছে নেন।
মার্কিন দুগ্ধজাত পণ্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় সমাজের আপত্তির একটা কারণ হলো ধর্মীয়। অনেকের বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের দুগ্ধজাত পণ্য ‘আমিষ’। সেখানকার খামারে নাকি গবাদিপশুগুলোকে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মাংস খাওয়ানো হয়। ‘মাংসাশী’ প্রাণীর দুধ থেকে তৈরি পণ্য ভারতের বাজারে বিক্রি হতে দিতে সরকারের আপত্তি আছে।
এ ছাড়া জিনগতভাবে পরিবর্তিত বা জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) কৃষিপণ্যের আমদানিতেও ভারতের তীব্র আপত্তি। এ নিয়ে দুই দেশের আলোচনা এখনো পরিণতি লাভ করেনি। একইভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কৃষিজাত পণ্যের বাজার খুলে দিতে রাজি থাকলে ভারতের ওপর চাপানো শুল্কের পরিমাণ কমানো হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে পাঁচ দফা আলোচনা হলেও টানাপোড়েন এখনো অব্যাহত।
কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক। কৃষিক্ষেত্রে তিনিই আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁরই জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে কৃষিক্ষেত্র উন্মুক্ত না করার এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ।
গতকাল বুধবার অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা–শুল্ক চাপানোর কথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের সরকারি সূত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদির চীন সফরের সম্ভাবনার কথা জানা যায়। আজ বৃহস্পতিবার মোদি জানালেন কৃষিক্ষেত্র সম্পর্কে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা। বন্ধু ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির দূরত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি চীনের আরও কাছে ভারত আসছে কি না, আপাতত তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক জল্পনা।