Prothomalo:
2025-08-08@06:44:26 GMT

কঠোর অবস্থানের বিকল্প নেই

Published: 8th, August 2025 GMT

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা একটি নতুন, ভালো বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই স্বপ্নের অংশ ছিল মানুষের চলাচলের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের অধিকার। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় এসে প্রশ্ন উঠছে, এই অধিকার কি রাস্তাঘাট বন্ধ করে দাবি আদায়ের?

সড়ক দখল করে কোনোভাবেই সমাবেশ করার সুযোগ থাকা উচিত নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ—এই অনিয়ন্ত্রিত সমাবেশগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সমাবেশ কোথায় হবে, কীভাবে হবে—সেই নির্দেশিকা বা শৃঙ্খলাটা গড়ে ওঠেনি। এর পেছনে দায়ী সরকারের সহনশীলতা (সরকার সহ্য করেছে)। সড়কে দাঁড়ালেই দাবি আদায় হয়, এমন ধারণাই বিশৃঙ্খলার সূচনা করেছে।

রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ করছে। অনেক সময় হয়তো অনুমতি ছাড়াই করছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত ছিল সবার জন্য সমান নীতিমালা করা। কোনো দলকে বাড়তি সুবিধা, আর কাউকে প্রতিহত করার চেষ্টা—এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ সমাবেশের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন৯০ দিনের ৩৬ দিনই রাস্তা আটকা ২০ মিনিট আগে

একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশে পুরো রাস্তা বন্ধ ছিল। সেগুনবাগিচায় সেদিন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এক নারী, সঙ্গে তাঁর ছোট সন্তান। তিনি অসহায়ের মতো বলছিলেন, ‘ক্ষমতার জন্য পলিটিক্যাল পার্টিগুলো আমাদের জিম্মি করছে।’ এই কথার ভেতরেই আসলে বহু মানুষের যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে।

খুব সাধারণ দাবিতেও এখন সড়ক আটকে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, সড়কে দাঁড়ালেই সরকার দাবি মেনেছে। তখন থেকেই একটা ভুল বার্তা চলে গেছে যে দাবি মানাতে হলে সড়ক বন্ধ করতে হবে। আবার সরকার বলেছিল, লিখিতভাবে জানালে দাবি বিবেচনা করা হবে। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, লিখিত দাবি অনেক সময় গুরুত্বই পায়নি। এর অর্থ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি আদায়ের কোনো নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এখনো নির্ধারিত নয়। এই অনিশ্চয়তা পরিবেশকে আরও অনিয়ন্ত্রিত করে তুলছে।

অধিকার মানে এই নয় যে যেখানে খুশি সেখানে দাঁড়িয়ে সমাবেশ করা যাবে। সমাবেশ নির্দিষ্ট স্থানে হবে, রাস্তায় মানুষের চলাচলের ওপর হস্তক্ষেপ না করে। এ জন্য বিকল্প জায়গার প্রয়োজন আছে।

ঢাকায় নির্ধারিত কিছু জায়গা থাকলেও তা খুব সীমিত। তাই এলাকাভিত্তিক কিছু নতুন স্থান চিহ্নিত করা দরকার, যেমন খোলা প্রাঙ্গণ, মাঠ এবং মাইনর (অগুরুত্বপূর্ণ) রাস্তা, যেগুলো বন্ধ করলেও বড় প্রভাব পড়ে না। এসব জায়গা নির্ধারণে অবশ্যই একটা সমন্বয় থাকতে হবে। মূল শর্ত হলো, রাষ্ট্রকে না জানিয়ে, যেখানে খুশি, যখন খুশি রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। এর জন্য সরকারের কঠোর অবস্থান ছাড়া বিকল্প নেই।

সমাবেশের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত, কিন্তু সেটা যেন অন্যের অধিকার হরণ না করে। রাষ্ট্রের উচিত আইনের শাসনের নীতি অনুযায়ী একদিকে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করা, অন্যদিকে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

আদিল মুহাম্মদ খান: সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র ব কল প র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মূল্য দিতে প্রস্তুত, তবু কৃষকস্বার্থে আপস নয়: নরেন্দ্র মোদি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের আবহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানালেন, দেশের কৃষকদের স্বার্থে কোনো আপস করবেন না। সে জন্য তাঁকে অনেক মূল্য দিতে হতে পারে। তিনি প্রস্তুত।

রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার ‘অপরাধে’ ভারতীয় পণ্য রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার রাতে ওই ‘জরিমানা’ ধার্যের কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প নিজেই। তার ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় সবচেয়ে বেশি—৫০ শতাংশ।

পরদিন আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে এক অনুষ্ঠানে মোদি ওই মন্তব্য করলেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, ব্যক্তিগতভাবে আমাকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। সে জন্য প্রস্তুতও আছি। কিন্তু কিছুতেই দেশের কৃষক, গোপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে কোনোরকম আপস করব না।’

বিশিষ্ট কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনের জন্মশতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আজ বৃহস্পতিবার মোদি ভাষণ দেন। সেখানেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ওই বার্তা দেন।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। আমেরিকা চায় ভারত কৃষিজাত পণ্য, দুধ ও দুগ্ধজাত পণের বাজার তাদের জন্য পুরোপুরি খুলে দিক, যাতে মার্কিন পণ্য অবাধে ব্যবসা করতে পারে। কিন্তু ভারত তাতে রাজি নয়। দুই দেশের এই টানাপোড়েনের মধ্যেই ট্রাম্প গতকাল বুধবার ভারতীয় রপ্তানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক (জরিমানাসহ) ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার তারই জবাব দিলেন মনে করা হচ্ছে।

কৃষিক্ষেত্র উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে ভারতীয় কৃষকদের প্রবল প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। তা যাতে না হয়, সে জন্য সরকারের ওপর কৃষকসমাজের চাপ আছে। সেই চাপ উপেক্ষা করা রাজনৈতিকভাবে কঠিন। প্রধানমন্ত্রী মোদিও তা জানেন। সে জন্যই তিনি স্বামীনাথন শতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মঞ্চ বেছে নেন।

মার্কিন দুগ্ধজাত পণ্যের বিরুদ্ধে ভারতীয় সমাজের আপত্তির একটা কারণ হলো ধর্মীয়। অনেকের বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের দুগ্ধজাত পণ্য ‘আমিষ’। সেখানকার খামারে নাকি গবাদিপশুগুলোকে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মাংস খাওয়ানো হয়। ‘মাংসাশী’ প্রাণীর দুধ থেকে তৈরি পণ্য ভারতের বাজারে বিক্রি হতে দিতে সরকারের আপত্তি আছে।

এ ছাড়া জিনগতভাবে পরিবর্তিত বা জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (জিএম) কৃষিপণ্যের আমদানিতেও ভারতের তীব্র আপত্তি। এ নিয়ে দুই দেশের আলোচনা এখনো পরিণতি লাভ করেনি। একইভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কৃষিজাত পণ্যের বাজার খুলে দিতে রাজি থাকলে ভারতের ওপর চাপানো শুল্কের পরিমাণ কমানো হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে এ নিয়ে পাঁচ দফা আলোচনা হলেও টানাপোড়েন এখনো অব্যাহত।

কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক। কৃষিক্ষেত্রে তিনিই আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁরই জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে কৃষিক্ষেত্র উন্মুক্ত না করার এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ।

গতকাল বুধবার অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ জরিমানা–শুল্ক চাপানোর কথা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের সরকারি সূত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদির চীন সফরের সম্ভাবনার কথা জানা যায়। আজ বৃহস্পতিবার মোদি জানালেন কৃষিক্ষেত্র সম্পর্কে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা। বন্ধু ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির দূরত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি চীনের আরও কাছে ভারত আসছে কি না, আপাতত তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর রাজনৈতিক জল্পনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ