কমল হাসানের পায়ের ধুলোরও যোগ্য নন শাহরুখ: লিলিপুট
Published: 8th, August 2025 GMT
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। দর্শকদের মুঠো মুঠো ভালোবাসা কুড়ালেও ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কখনো পাননি। এ নিয়ে চাপা আক্ষেপ বয়ে বেড়াচ্ছিলেন। ৭১তম জাতীয় চলচ্চিত্রে পুরস্কার সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছে। ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের তালিকা প্রকাশের পর থেকে নানা ধরনের সমালোচনা চলছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। অনেকে শাহরুখ খানকে আক্রমণ করেও মন্তব্য করেছেন। এবার শাহরুখ খানকে নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বলিউড অভিনেতা লিলিপুট। কেবল তাই নয়, কমল হাসানের সঙ্গে তুলনা করে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন ৭৪ বছরের এই অভিনেতা।
কয়েক দিন আগে একটি পডকাস্টে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন লিলিপুট। এ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “যে অন্ধ নয়, সে অন্ধের অভিনয় করতে পারে। কিন্তু যে বামন নয়, সে কীভাবে একজন বামনের চরিত্রে অভিনয় করবে? কারণ বামনরাও স্বাভাবিক—তাদের হাতের নাড়াচড়া স্বাভাবিক, তারা হাসে, ভাবে—সব কিছু স্বাভাবিক মানুষের মতোই, শুধু তাদের চেহারাটা আলাদা। তাহলে আপনি এতে কীভাবে অভিনয় করবেন? আপনাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে ছোট করে দেখাতে হবে।”
আরো পড়ুন:
হুমা কুরেশির ভাই খুন
বলিউডের নয়া ‘ক্রাশ’ অনীত
শাহরুখ খানের সমালোচনা করে লিলিপুট বলেন, “আমরা জানি আপনি সুদর্শন, চমৎকার দেখতে—সেখানেই আমাদের ধারণা থমকে যায়। আমরা একজন বামনকে দেখছি না, বরং এমন একজন হিরোকে দেখছি যাকে ভিএফএক্স দিয়ে ছোট করে দেখানো হয়েছে। আপনার চিত্রনাট্য কী বলার চেষ্টা করছে?”
তামিল ভাষার ‘অপ্পু রাজা’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন কমল হাসান। বরেণ্য এই অভিনেতার সঙ্গে শাহরুখ খানের ‘জিরো’ সিনেমার তুলনা করেন লিলিপুট। এ সিনেমায় শাহরুখ একজন বামনের চরিত্রে অভিনয় করেন। পাশাপাশি শাহরুখ খান যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করেননি বলেও দাবি তার।
এ বিষয়ে লিলিপুট বলেন, “আপনি ‘অপ্পু রাজা’ এর বুদ্ধিমত্তা দেখেন। কমল হাসান একজন বামন ব্যক্তির শারীরিক বৈশিষ্ট্য খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। বামনদের শরীর কিছুটা বিকৃত থাকে, তাদের আঙুল ছোট হয়, একটু মোটা হয়, হাত, মুখ ও পা অন্যরকম হয়—তাহলে আপনি যখন সেই ধরনের প্রভাব ফেলতে পারছেন না, তখন কেন এমন একটা কাজ করলেন? কীভাবে ভাবলেন আপনি এর মাধ্যমে প্রভাব ফেলতে পারবেন?”
কমল হাসানকে অনুকরণ করেছেন শাহরুখ খান। এ দাবি করে লিলিপুট বলেন, “আপনি কমলজির অনুকরণ করেছেন। কিন্তু আপনি তার পায়ের ধুলোরও যোগ্য নন।”
আনন্দ এল রাই নির্মিত ‘জিরো’ সিনেমা ২০১৮ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মুক্তির পর দর্শক-সমালোচকদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পান। ২০০ কোটি রুপি বাজেটের এ সিনেমা বক্স অফিসে আয় করেছিল ১৯১.
‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শাহরুখ খান। এ সিনেমা ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এতে শাহরুখের বিপরীতে অভিনয় করেন দক্ষিণী সিনেমার লেডি সুপারস্টার নয়নতারা। এটি পরিচালনা করেন অ্যাটলি কুমার। বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলেছিল এটি।
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র জ ত য় চলচ চ ত র ত র প রস ক র একজন ব মন কমল হ স ন কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।
এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।
বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।
বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।