সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে এত উচ্ছাস কেন
Published: 22nd, September 2025 GMT
কাতারে ইসরায়েলের বিমান হামলার আট দিন পর পাকিস্তান ও সৌদি আরব সরকার একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থরক্ষা ছাড়াও এ চুক্তির নিশ্চয়ই আঞ্চলিক অনেক তাৎপর্য আছে। কৌতূহলোদ্দীপকভাবে বাংলাদেশে এ চুক্তি নিয়ে বেশ উদ্দীপনা দেখা গেল। গুরুত্বপূর্ণ অনেকে এ নিয়ে খুশিতে মতামত রেখেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেসবে এমনও প্রত্যাশা ও আফসোস মিশে ছিল, এ রকম কোনো চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশও চাইলে নিজের ‘নিরাপত্তাঘাটতি’ পূরণ করতে পারে।
এসব মতামতের মধ্যে বিস্ময়কর যেটা দেখা গেল, ‘নিরাপত্তা’কে কেবল সামরিক বিষয় হিসেবে দেখা। যেন পাকিস্তান বা সৌদি আরবের জন্য নিরাপত্তা হুমকি কেবল সামরিকভাবেই আসছে। এক দেশ আরেক দেশের পাশে গোলাবারুদ বা বড় অঙ্কের প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে দাঁড়ালেই যেন সে নিরাপত্তাশঙ্কা দূর হবে। বাস্তবে ঘটনা কি তা–ই? পাকিস্তানের উদাহরণ নিয়ে আপাতত আলাপ করতে পারি আমরা। পাকিস্তানের নিরাপত্তাসংকট কোথায় কোথায় এবং সামরিক সরঞ্জাম তার কতটা সমাধান দিতে পারে?
কে কাকে সামরিক সাহায্যে সক্ষমপাকিস্তান বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ জনবহুল দেশ। ২৫ কোটি ছাড়িয়ে ২৬ কোটি ছুঁই ছুঁই করছে জনসংখ্যা। দেশটিতে প্রতিরক্ষাকাজে নিয়োজিত তিনটি প্রধান বাহিনীর সক্রিয় সদস্যসংখ্যা কমবেশি ছয় লাখ বলে অনুমান করা হয়। জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক সামর্থে৵র তুলনায় খুব ছোট নয় তার সশস্ত্র বাহিনী। এ বছর দেশটির প্রতিরক্ষা বাজেট গতবারের চেয়ে ২০ শতাংশ বাড়ল। সেটি এখন ৯ বিলিয়ন ডলার। তাদের হাতে দেড় শতাধিক পারমাণবিক বোমাও আছে। যে ৯ দেশ পারমাণবিক অস্ত্র থাকার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে, তার মধ্যে পাকিস্তানও আছে।
পারমাণবিক বোমা শত্রু থেকে বিশেষ নিরাপত্তা দেয় বলে কথিত আছে। তারপরও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী মনে করে, ভারতের দিক থেকে তাদের জন্য বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা হুমকি আছে। আট দশকের কম সময়ের মধ্যে উভয় দেশ চার দফা বড় ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। একই রকম যুদ্ধের শঙ্কা ভবিষ্যতেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রশ্ন হলো, ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যতের কোনো যুদ্ধে সৌদি আরব কি পাকিস্তানকে এমন কোনো সহায়তা দিতে পারে, যা শেষোক্ত দেশের নেই?
এসব প্রশ্নের উত্তরের শুরুতে আমরা স্মরণ করতে পারি, ভারতে বিজেপির আমলে মুসলমানদের করুণ অবস্থার মধে৵ই নরেন্দ্র মোদিকে সৌদি সরকার দেশটির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান দিয়েছিল। কেবল গত বছর সৌদি আরব ভারত থেকে ২২৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনেছে। দেশটিতে ভারতীয় আছেন প্রায় ২৭ লাখ। সৌদিদের দ্বিতীয় প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ ভারত। এ রকম আরও তথ্য-উপাত্ত দেওয়া যায়, যা ভারত-সৌদি আরব সম্পর্কের গভীরতার কথা জানায়।
অন্যদিকে বহুকাল ধরে সৌদি আরবের সামরিক জনবলকে পাকিস্তানই মুখ্যত প্রশিক্ষণ দেয়। সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা ও আকারে সৌদি আরবের চেয়ে তারা অনেক এগিয়ে। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ যুদ্ধে পাকিস্তানসহ অনেক শক্তির সহযোগিতা সত্ত্বেও সৌদিরা সিদ্ধান্তসূচক জয় পায়নি। তবে চাইলে সামরিক বাজেটে সৌদি আরব পাকিস্তানকে সহায়তা করতে পারে। ফলে চলতি সপ্তাহের প্রতিরক্ষা চুক্তি এই অর্থে পাকিস্তানের জন্য লাভজনক হতে পারে, যদি সৌদি আরব বড় অঙ্কের অর্থকড়ি দিয়ে সাহায্য করে।
এর বাইরে এ চুক্তি বরং ভবিষ্যতে সৌদি আরবের নিরাপত্তায় পাকিস্তানের বাড়তি ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়। আরব দেশগুলোতে ইসরায়েলের লাগামহীন আগ্রাসনের মুখে পারমাণবিক শক্তিধর একটি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে সৌদি আরব ভরসার পরিসর বরং কিছুটা বাড়াল। তবে এতে ইসরায়েলের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক খারাপেরও ঝুঁকি আছে। বিশেষ করে পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ছায়া বিস্তারের চেষ্টা করলে সেটি ইসরায়েল সহজভাবে না–ও নিতে পারে। প্রশ্ন হলো, পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যে সে রকম ভূমিকা রাখবে কি না? সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় আরেকটি প্রশ্ন হলো, এই চুক্তি কি তবে কেবল সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের স্বার্থে?
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সংকট কোথায়ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে পাকিস্তানের সামরিক বাজেট বাড়ানোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে; কিন্তু এটা ছাড়া পাকিস্তান যেসব নিরাপত্তাসংকটে রয়েছে, সেসবে সৌদি আরব বা অন্য কোনো দেশ আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে সামান্যই কোনো উপকার করতে পারে। যেমন পাকিস্তানের এ মুহূর্তে বড় একটি নিরাপত্তাসংকট হলো অভ্যন্তরীণ জনবিদ্রোহ। রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো দুটি ফ্রন্টে নিজ জনগণের দুই অংশের বিরুদ্ধে বড় ধরনের যুদ্ধে রয়েছে। একটি হলো বালুচদের বিরুদ্ধে, অপরটি তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপির বিরুদ্ধে।
দেশটির অন্তত দুটি প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে পা দিলেই যুদ্ধাবস্থা টের পাওয়া যায়। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র লে.
পাকিস্তান সরকার বহুবার বলেছে, টিটিপি ও বালুচ গেরিলারা তাঁদের জন্য প্রধান এক অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি। এই দুই প্রতিপক্ষকে সহায়তার জন্য পাকিস্তান সরকার যথাক্রমে আফগান তালেবান ও ভারত সরকারের মদদকে দায়ী করে।
প্রশ্ন হলো, এই দুই হুমকি মোকাবিলায় সৌদি আরব কি মাঠপর্যায়ে খুব কার্যকর কোনো সহায়তা করতে পারে ইসলামাবাদের শাসকদের? বাস্তবে কোনো দেশের এ রকম যুদ্ধ অন্য দেশ করে দিতে পারে না।
বালুচরা লড়ছেন তাঁদের এলাকার স্বায়ত্তশাসনের জন্য। অন্যদিকে টিটিপি লড়ছে তাদের অঞ্চলে শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নের জন্য। তারা পুরো পাকিস্তানেই ওই রকম আইনের শাসন চায়। শেষোক্ত দাবির জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। টিএলপিসহ (তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান) টিটিপির আদর্শের কাছাকাছি যেসব সংগঠন নির্বাচনে লড়ে, তাদের ভোট গত নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।
বালুচ সশস্ত্রতা কিংবা টিটিপি উভয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের রক্ষী দলগুলো বড় অনেক অভিযান পরিচালনা করেছে। উভয় অঞ্চলে প্রায় অঘোষিত সামরিক শাসন চলছে; কিন্তু সমস্যার তীব্রতা কমিয়ে আনায় উল্লেখযোগ্য সফলতা যে নেই, তা বিগত মাসগুলোর অভিযানের সংখ্যাগত ব্যাপকতা থেকে বোঝা যায়।
জন–অসন্তোষধর্মী এ ধরনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসংকটকে আমরা প্রথাগত চিন্তায় প্রতিরক্ষা সমস্যা আকারে দেখতে অভ্যস্ত নই; কিন্তু অভ্যন্তরীণ এ রকম জন-অসন্তোষ কী ধরনের প্রতিরক্ষা সর্বনাশ করতে পারে পাকিস্তানের বেলায় পূর্ব পাকিস্তানে ৫৪ বছর আগে সেটি দেখা গেছে। তাতে অবশ্য এ অঞ্চলের প্রতিরক্ষা চিন্তায় কোনো পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে হয় না। এখনো আমরা গোলাবারুদ ও সেসব কেনার ক্ষমতাকেই প্রতিরক্ষা শক্তি হিসেবে ভাবি। এর মধে৵ বালুচ ও টিটিপি বিচ্ছিন্নতাবাদের চেয়েও পাকিস্তানের জন্য আরেক বড় প্রতিরক্ষা সমস্যা তৈরি হয়েছে সম্প্রতি।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিরক্ষা চিন্তায় যে কারণে পরিবর্তন জরুরিকেবল এ বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বরে অতিবন্যায় এক হাজার মানুষ মারা গেছেন পাকিস্তানে। গৃহহীন হয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৬০ লাখ মানুষ। অতিবৃষ্টি এ অবস্থা তৈরি করেছে। এবারের বন্যার নতুন উপাদান হলো পাঞ্জাবের এমন সব এলাকাও আক্রান্ত, যা শস্যভান্ডার হিসেবে চিহ্নিত। ফলে অনিবার্যভাবে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে এ রকম দুর্যোগ বাড়ছে।
এসব বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংকটের কথাই মনে করায়। অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের (আইডিএমসি) তথ্য অনুসারে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের বার্ষিক বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা ৯ লাখ ১৫ হাজার। গ্লোবাল রিপোর্ট অন ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্টে বলা হয়েছে, গত বছর (২০২৪) অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শীর্ষে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান পঞ্চম।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ নিম্নভূমি থেকে প্রতিদিন দুই হাজার মানুষ রাজধানীতে আসেন। অনেক জায়গায় লবণাক্ততার কারণে জমির উৎপাদনক্ষমতা কমছে, জলাধারগুলো হচ্ছে ব্যবহারের অনুপযোগী। প্রশ্ন হলো, দক্ষিণে রূপসা, শিবসা ও পশুর নদ–নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধিকে বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করবে কি? বলা বাহুল্য, সে রকম কখনো শোনা যায়নি।
সীমান্তের ‘পুশ ইন’ সমস্যাকে আমরা যেভাবে দেখি, ভূখণ্ডের ভেতরে কোটি কোটি মানুষের নীরবে উদ্বাস্তু হওয়াকে সেভাবে দেখা হয় না। অনেকের কাছে এসব ‘এনজিওর এজেন্ডা’ বা ‘পরিবেশ সমস্যা’। অথচ প্রতিরক্ষা ধারণার মূলে থাকার কথা ভূখণ্ডভুক্ত সবার সুরক্ষার প্রশ্ন।
বিশ্বজুড়ে প্রতিরক্ষা চিন্তার সংস্কার হয় না মূলত সামরিক শিল্প ও তার কেনাকাটায় বাজেটে বরাদ্দের স্বার্থে। গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা বা অভ্যন্তরীণ জন–অসন্তোষকে প্রতিরক্ষা সমস্যা হিসেবে অগ্রাধিকার দিলে বাজেট বরাদ্দ ও রাষ্ট্রের প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে আমূল সংস্কার সাধন করতে হয়, যা ঐতিহাসিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত স্থানীয় কুলীনদের জন্য অস্বস্তির।সম্প্রতি গবেষণা সংস্থা পিপিআরসি জানায়, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে এবং সেটি জনসংখ্যার প্রায় ২৮ শতাংশ ছুঁয়েছে। দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের মতো সমস্যাগুলো যে পারমাণবিক বোমার চেয়ে কম ক্ষতিকর নয়, সেটি নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ও নেপালে দুটি হঠাৎ সৃষ্ট গণ–অভ্যুত্থান থেকে সবাই বুঝতে পারছেন। একই তালিকায় এসব দেশের স্থায়ী মহামারিরূপী সমস্যা দুর্নীতিকেও যুক্ত করা যায়।
বিশ্বব্যাংক তার নতুন মানদণ্ডে (৪ দশমিক ২ ডলার) বলছে, পাকিস্তানে দারিদ্র্যের হার ৪৪ শতাংশে পৌঁছেছে। সরকারি পুরোনো মানদণ্ডে এটা ২০ থেকে ২২ শতাংশের মতো। শেষোক্ত হিসাবও দেশটিতে পাঁচ-ছয় কোটি দরিদ্র মানুষের উপস্থিতির কথা জানায়, যা বহির্দেশীয় শত্রুর চেয়ে কম বিপজ্জনক নয়। এ রকম সমস্যাও প্রতিটি দেশকে অনেকাংশে একাই মোকাবিলা করতে হয়।
মুশকিল হলো নিরাপত্তা তাত্ত্বিকেরা এসব সমস্যাকে প্রতিরক্ষা সমস্যা আকারে দেখতে আজও মোটাদাগে প্রস্তুত নন। কেবল পাকিস্তানের বেলায় নয়, ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণের দেশগুলোতে প্রতিরক্ষা চিন্তায় পুরোনো প্রথাগত ভাবনাই ছায়া বিস্তার করে আছে। অভ্যন্তরীণভাবে ভিন্ন কারণেও যে একটি দেশ ও তার সমাজ ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে, সেটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও স্বীকার করা বা মেনে নেওয়া হয় না।
পরিবেশ বিপর্যয়, দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যা দুষ্টচক্রের মতো। একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত থাকে। এগুলোকে আগে নিরীহ ‘সামাজিক সমস্যা’ হিসেবে দেখা হলেও শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও বাংলাদেশের গত তিন-চার বছরের অভিজ্ঞতা আমাদের কী জানাচ্ছে? শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী থাকার পরও দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও বেকারজনিত গণ–অভ্যুত্থান থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও প্রশাসনকে বাঁচাতে পারেনি এসব দেশের প্রতিরক্ষা কাঠামো। এ রকম সমস্যার সমাধান না করে কেবল জল-স্থল-আকাশসীমা সামলিয়ে এসব দেশকে আগামী দিনে কি সুরক্ষিত রাখা যাবে?
ইমরান খানকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিলে পাকিস্তানে কী ঘটবে, সেটি দেশটির সমাজ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণকারী মাত্রই জানেন। ভারত তার প্রতিরক্ষা বাজেট ৭৯ বিলিয়ন ডলার করেও বহু বছর ধরে যে প্রধানতম ‘অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি’ মাওবাদ দমন করতে পারছে না, তারও কারণ প্রতিরক্ষা চিন্তার ভুল নির্দেশনা। ‘নকশাল’ তকমা দিয়ে সেখানে দরিদ্র আদিবাসীদের অনেক সময় হত্যাযোগ্য করে তোলা হয়।
প্রতিরক্ষা চিন্তায় দারিদ্র্যবিশ্বজুড়ে প্রতিরক্ষা চিন্তার সংস্কার হয় না মূলত সামরিক শিল্প ও তার কেনাকাটায় বাজেটে বরাদ্দের স্বার্থে। গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা বা অভ্যন্তরীণ জন–অসন্তোষকে প্রতিরক্ষা সমস্যা হিসেবে অগ্রাধিকার দিলে বাজেট বরাদ্দ ও রাষ্ট্রের প্রশাসনিক সংস্কৃতিতে আমূল সংস্কার সাধন করতে হয়, যা ঐতিহাসিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত স্থানীয় কুলীনদের জন্য অস্বস্তির। ফলে মান্ধাতার আমলের প্রতিরক্ষা চিন্তা দক্ষিণের দেশগুলোয় এখনো প্রভাব বিস্তার করে আছে। সে কারণে প্রচলিত ধাঁচের প্রতিরক্ষা চুক্তিকে আমরা একটি দেশের ‘প্রতিরক্ষা সংকটের’ চূড়ান্ত দাওয়াই ভাবি।
প্রতিরক্ষা চিন্তার এ রকম দারিদ্র্য বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল কাঠামোগত দুর্বলতা। এতে শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করার সময় জনগণের সঙ্গে কোনো সংলাপ চালানো হয় না। জনগণের প্রাত্যহিক জীবনের শত্রু-মিত্রের সঙ্গে কুলীন সমাজের শত্রু-মিত্র বিবেচনার সামান্যই সম্পর্ক থাকে এই অঞ্চলে।
জনগণের প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধ ও কুলীনদের কল্পিত যুদ্ধভাবনার মধ্যে স্থায়ী ব্যবধান যে ক্রমে বাড়ছে, সেটিই কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কা-নেপাল-বাংলাদেশকে এক দফা ঝাঁকুনি দিয়েছে। নিঃসন্দেহে সৌদি আরব এ ক্ষেত্রে টিটিপি বা বালুচ বা পাঁচ কোটি দরিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে পাকিস্তানের শাসকদের সামান্যই সহায়তা করতে সক্ষম। তাহলে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কেউ কেউ এই চুক্তিতে এত উচ্ছ্বসিত কেন?
আলতাফ পারভেজ গবেষক
* মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র ব হ ন ন র জন য দ র জন য ইসর য় ল জনগণ র বর দ দ পর ব শ দ শট ত দ শট র আরব র সরক র এ রকম সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অঝোরে বৃষ্টি, বিভিন্ন রাস্তায় পানি, ভোগান্তি
রাজধানী ঢাকায় আজ সোমবার সকাল থেকে ঝরেছে অঝোরে বৃষ্টি। সেই সঙ্গে ছিল বজ্রপাত। সকাল পৌনে ছয়টার দিকে বৃষ্টি নামে। সাতটা পর্যন্ত একটানা মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এতে ঢাকার বেশির ভাগ রাস্তায় পানি জমে গেছে। পথচারীরা পড়েছে ভোগান্তিতে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১২টা থেকে আজ সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ উত্তর বঙ্গোপসাগরের একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার কথা।