নদী ইজারা দিলো মসজিদ কমিটি, শঙ্কায় জেলেরা
Published: 4th, October 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গোহালা নদী। প্রায় ২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীটির আড়াই কিলোমিটার এলাকা ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা শতাধিক জেলে জীবিকা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার উধুনিয়া বাজারে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। নদীটির একটি শাখা থেকে শতাধিক মৎস্যজীবী মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেই নদীতে স্থানীয় একটি মসজিদ কমিটি ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় ইজারা দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার উধুনিয়া বাজার জামে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে নদী ইজারার দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। দরপত্রে ৩৫ হাজার টাকা থেকে দর উঠতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত উধুনিয়া গ্রামের ইউসুফ আলী মোল্লা ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় নদীটি ইজারা নেন।
মসজিদ কমিটির নিয়ম অনুযায়ী, বাংলা আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ইজারা দেওয়া আড়াই কিলোমিটার অংশে ইজারাদার ছাড়া কেউ মাছ ধরতে পারবেন না। ফলে স্থানীয় জেলেদের জীবিকার তাগিদে ইজারাদারের কাছে টাকা দিয়ে মাছ ধরতে হবে।
উধুনিয়া গ্রামের জেলে শংকর, আলিফ, আব্দুল মান্নান ফকিরসহ একাধিক মৎস্যজীবীরা জানান, এই নদীতে কেউ ১০ বছর ধরে, কেউ ১৫ বছর আবার কেউ বা গত ৪০ বছর ধরে বিনা খরচে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু এ বছর ইজারাদারকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা জমা দিয়েই মাছ ধরতে হবে। এত টাকা দিয়ে মাছ ধরা আমাদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে যাবে। এলাকায় শতাধিক পেশাদার ও অপেশাদার মৎস্যজীবী রয়েছেন, সকলের অবস্থাই একই রকম।
স্থানীয় দোকানদার সোহেল রানা বলেন, “মসজিদ কমিটি ইজারার জন্য মাইকিং করেছিল। পরে উধুনিয়া বাজার এলাকায় সবার উপস্থিতিতে দরপত্র অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমিও উপস্থিত ছিলাম।”
ইজারা গ্রহীতা ইউসুফ আলী মোল্লা বলেন, “অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আমি সর্বোচ্চ দর ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় আড়াই কিলোমিটার গোহালা নদীর ইজারা পেয়েছি। মসজিদ কমিটি ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতেই এটি সম্পন্ন হয়েছে।”
উধুনিয়া জামে মসজিদের সহ-সভাপতি হাজি আব্দুল হামিদ বলেন, “মসজিদের উন্নয়নের তহবিলের জন্য নদীটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারা নেওয়ার পর অন্য কেউ মাছ ধরতে পারবে না। নদীতে মাছ ধরতে হলে ইজারাদারকে টাকা দিতে হবে মৎস্যজীবীদের।”
উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, “নদীতে মাছ ধরার জন্য কোনো মসজিদ কমিটির ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এধরনে কাজ যারা করেছে তারা ঠিক করেননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা রিমা বলেন, “সরকারি জলমহাল নিয়ম অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে ইজারা দেওয়া হয়। কেউ চাইলেই নদী ইজারা দিতে পারে না।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, “গোহালা নদী সরকারি সম্পদ। কোনো ব্যক্তি বা কমিটি নদী ইজারা দিতে পারে না। যদি কেউ দিয়ে থাকেন, খোঁজ খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
ঢাকা/অদিত্য/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইজ র দ র উপস থ ত ম ছ ধরত দরপত র উপজ ল মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কেনাকাটায় অনলাইনে দরপত্র বাধ্যতামূলক
সরকারি কেনাকাটায় সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারি ক্রয়নীতিতে (পিপিএ) বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ক্রয়নীতিতে সব ধরনের সরকারি কেনাকাটায় অনলাইনে দরপত্র আবেদন (ই–জিপি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত রোববার নতুন এই বিধিমালা গেজেট হিসেবে প্রকাশ করে কার্যকর করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ বা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৬ সালে প্রকাশিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্টে (পিপিএ) আনা সংশোধনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে নতুন পিপিআর ২০২৫ তৈরি করা হয়। এখন থেকে সরকারি কেনাকাটায় সংশোধিত পিপিএ ২০০৬ ও নতুন পিপিআর ২০২৫ দুটিই কার্যকর হবে।
আরও কী কী পরিবর্তন এসেছে
নতুন সরকারি ক্রয়নীতিতে ১৫৪টি বিধি ও ২১টি তফসিল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন বিধিমালায় অভ্যন্তরীণ কেনাকাটায় ১০ শতাংশ মূল্যসীমা বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত উপকারভোগীর (বেনিফিশিয়ারি ওনারশিপ) তথ্য প্রকাশ বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারি ক্রয়ে টেকসই কেনাকাটা করতে হবে। সরকারি প্রতিটি কেনাকাটায় কৌশলগত পরিকল্পনা প্রস্তুত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নতুন বিধিমালায় আরও বলা হয়, ভৌত সেবাকে স্বতন্ত্র প্রকিউরমেন্ট ক্যাটাগরি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ ছাড়া কাঠামো চুক্তি (ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট) দর–কষাকষির ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে হবে। যেকোনো কেনাকাটার পরিকল্পনা বাতিলের জন্য একটি ডেবারমেন্ট বোর্ড (বাতিল করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত বোর্ড) প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়া সম্পদ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত স্পষ্ট বিধান তৈরি করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন বিধিমালা তৈরি করতে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এ খাতের অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ও আলোচনা করে। আলোচনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বড় ক্রয়কারী সংস্থা, দরদাতা, সাংবাদিক, নারী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ১২টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী পুরোনো বিধিমালায় সংশোধন না এনে সম্পূর্ণ নতুন পিপিআর করার মত দেন।
বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলেন, নতুন বিধিমালা দেশের সরকারি কেনাকাটা সংস্কারের ইতিহাসে মাইলফলক।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মো. কামাল উদ্দিন বলেন, নতুন এই বিধিমালা সরকারি কেনাকাটার প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।