রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা নাজমুল হাসান (ছদ্মনাম) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সীমিত আয়ে প্রতি মাসেই টানাটানি করে সংসার চলে তাঁর। নাজমুলের সব সময়ের চিন্তা কী করে খরচ কমানো যায়। কিন্তু কাঁচাবাজারে ঢুকলেই যেন সব পরিকল্পনা উল্টে যায়। তাই চলতি মাসের শুরুতে নাজমুল ঠিক করলেন—এবার খরচ কমাবেন। পেরেছেনও।

এবার দেখা যাক, কীভাবে আপনিও খরচ কমাতে পারে। খরচ কমানোর কিছু কৌশল কেমন, তা জানা যাক।

১.

আগে পরিকল্পনা, তারপর বাজারে যাবেন
বাজারে যাওয়ার আগে একবার ফ্রিজ আর রান্নাঘর ঘুরে দেখুন—কোন জিনিস আছে, আর কোনটা ফুরিয়ে এসেছে। তারপর কেনাকাটার একটি সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করুন। তালিকা অনুযায়ী কিনলে অপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার প্রবণতা কমে যায়, ফলে বাজেটের মধ্যেই কেনাকাটা শেষ করা সম্ভব হয়।

২. বাজেট ঠিক করুন
প্রতি মাসে খাবারদাবারের জন্য নির্দিষ্ট বাজেট ঠিক করে নিন। খুব প্রয়োজন না হলে নির্ধারিত বাজেটেই থাকুন। কারণ, বাজেট ঠিক থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়, কোনটা এখন আর কোনটা পরে দরকার। এতে অজান্তেই খরচ নিয়ন্ত্রণে আসে। বাজেট নির্ধারণ করলে আরেকটি সুবিধা রয়েছে। নির্দিষ্ট দোকানে ওই বাজেটের মধ্যে পণ্য না পেলে আশপাশের দু-এক দোকান ঘুরে দেখা। অনেক সময় এই পদ্ধতি খরচ বাঁচাতে কার্যকর হয়।

৩. যখন যে পণ্যের মৌসুম, সেই পণ্য কেনা
বাজারে সাধারণত মৌসুমি পণ্যের সরবরাহ বেশি থাকে। মৌসুমে শাকসবজি, ফল, মাছের দাম তুলনামূলক কম থাকে এবং মানও ভালো থাকে। যেমন, শীতকালে ফুলকপি বা টমেটো, গ্রীষ্মে বরবটি বা পুঁইশাক—এগুলোতে বাজার সয়লাব থাকে। ফলে মৌসুম বুঝে পণ্য কিনলে বেশ অর্থ সাশ্রয় হয়।

৪. মাসের বাজারে রাখুন চাল, ডাল, তেল, মসলা
চাল, ডাল, তেল বা মসলা প্রভৃতি পণ্য পচনশীল না। অর্থাৎ এগুলো অনেক দিন বাসায় রাখা যায়। ফলে দীর্ঘস্থায়ী এসব পণ্য বড় প্যাকেট বা পাইকারি দরে কিনলে খরচ কমে যায়। তবে অতিরিক্ত কিনে ফেলে রাখলে মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
৫. দাম যাচাই করতে শিখুন
একই জিনিসের দাম দোকানভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আবার বাজারভেদেও পণ্যের দামে পার্থক্য থাকে। একটু খোঁজ নিলেই বুঝবেন কোথায় কাছাকাছি মানের তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। কিংবা আপনার বাজেটের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দাম সম্পর্কে আগেই ধারণা নেওয়া ভালো। সে অনুসারে দোকানে দর-কষাকষিও করা যায়।

৬. সকালে বাজারে যান, টাটকা পণ্য কিনুন
সকালে বাজারে গেলে পণ্য টাটকা থাকে। শুরুর দিকে অনেকে দাম সহনীয় রাখেন। পরে ক্রেতার আগ্রহ বুঝে দাম বাড়ান। তাই সময় থাকলে সকালে বাজার করুন। আবার দিনের শেষে কিছু বিক্রেতা পচনশীল জিনিস কম দামে বিক্রি করে দেন। আপনি যদি একটু সময় দিতে পারেন, তাহলে এই সময় বেছে বাজার করলে কিছুটা সাশ্রয় পাওয়া যায়।
৭. ছাড়ের অফার কাজে লাগান
সাধারণত বাজার কিংবা পাড়ার দোকানে এমন ছাড়ের সুযোগ থাকে না। কিন্তু শহর এলাকাগুলোয় এখন সুপারশপ রয়েছে। এ ছাড়া আছে অনলাইন বাজার, যেখানে অনেক সময় বিভিন্ন ছাড় বা ‘বাই ওয়ান, গেট ওয়ান’ ধরনের অফার চলে। এ সুবিধা কাজে লাগাতে পারেন।

মনে রাখবেন

অপচয় রোধে পরিমিত কেনাকাটা করবেন। টাটকা পণ্য সংরক্ষণ করতে না জানলে তা অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অজান্তেই তা আপনার বাড়তি খরচের কারণ হয়। তাই মাছ, মাংস বা সবজি ফ্রিজে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা শিখুন।

আবার প্রতিদিন কতটুকু সবজি বা মাছ খাওয়া হয়, সেটার একটা ধারণা রাখুন। অতিরিক্ত কিনে অপচয় করলে অর্থের অপচয়ও হয়। আবার বাজারে কয়েক দিন পরপরই এসব পণ্যের দাম ওঠানামা করে। তাই বেশি দামে বেশি কিনলে লোকসানই হবে। যতটা লাগে, ততটাই কেনার অভ্যাস তৈরি করুন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খরচ কম

এছাড়াও পড়ুন:

শাকসবজি, মাছ–মাংসের দাম বেশি, খরচ কমাবেন কীভাবে

রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা নাজমুল হাসান (ছদ্মনাম) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সীমিত আয়ে প্রতি মাসেই টানাটানি করে সংসার চলে তাঁর। নাজমুলের সব সময়ের চিন্তা কী করে খরচ কমানো যায়। কিন্তু কাঁচাবাজারে ঢুকলেই যেন সব পরিকল্পনা উল্টে যায়। তাই চলতি মাসের শুরুতে নাজমুল ঠিক করলেন—এবার খরচ কমাবেন। পেরেছেনও।

এবার দেখা যাক, কীভাবে আপনিও খরচ কমাতে পারে। খরচ কমানোর কিছু কৌশল কেমন, তা জানা যাক।

১. আগে পরিকল্পনা, তারপর বাজারে যাবেন
বাজারে যাওয়ার আগে একবার ফ্রিজ আর রান্নাঘর ঘুরে দেখুন—কোন জিনিস আছে, আর কোনটা ফুরিয়ে এসেছে। তারপর কেনাকাটার একটি সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করুন। তালিকা অনুযায়ী কিনলে অপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার প্রবণতা কমে যায়, ফলে বাজেটের মধ্যেই কেনাকাটা শেষ করা সম্ভব হয়।

২. বাজেট ঠিক করুন
প্রতি মাসে খাবারদাবারের জন্য নির্দিষ্ট বাজেট ঠিক করে নিন। খুব প্রয়োজন না হলে নির্ধারিত বাজেটেই থাকুন। কারণ, বাজেট ঠিক থাকলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়, কোনটা এখন আর কোনটা পরে দরকার। এতে অজান্তেই খরচ নিয়ন্ত্রণে আসে। বাজেট নির্ধারণ করলে আরেকটি সুবিধা রয়েছে। নির্দিষ্ট দোকানে ওই বাজেটের মধ্যে পণ্য না পেলে আশপাশের দু-এক দোকান ঘুরে দেখা। অনেক সময় এই পদ্ধতি খরচ বাঁচাতে কার্যকর হয়।

৩. যখন যে পণ্যের মৌসুম, সেই পণ্য কেনা
বাজারে সাধারণত মৌসুমি পণ্যের সরবরাহ বেশি থাকে। মৌসুমে শাকসবজি, ফল, মাছের দাম তুলনামূলক কম থাকে এবং মানও ভালো থাকে। যেমন, শীতকালে ফুলকপি বা টমেটো, গ্রীষ্মে বরবটি বা পুঁইশাক—এগুলোতে বাজার সয়লাব থাকে। ফলে মৌসুম বুঝে পণ্য কিনলে বেশ অর্থ সাশ্রয় হয়।

৪. মাসের বাজারে রাখুন চাল, ডাল, তেল, মসলা
চাল, ডাল, তেল বা মসলা প্রভৃতি পণ্য পচনশীল না। অর্থাৎ এগুলো অনেক দিন বাসায় রাখা যায়। ফলে দীর্ঘস্থায়ী এসব পণ্য বড় প্যাকেট বা পাইকারি দরে কিনলে খরচ কমে যায়। তবে অতিরিক্ত কিনে ফেলে রাখলে মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
৫. দাম যাচাই করতে শিখুন
একই জিনিসের দাম দোকানভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আবার বাজারভেদেও পণ্যের দামে পার্থক্য থাকে। একটু খোঁজ নিলেই বুঝবেন কোথায় কাছাকাছি মানের তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। কিংবা আপনার বাজেটের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দাম সম্পর্কে আগেই ধারণা নেওয়া ভালো। সে অনুসারে দোকানে দর-কষাকষিও করা যায়।

৬. সকালে বাজারে যান, টাটকা পণ্য কিনুন
সকালে বাজারে গেলে পণ্য টাটকা থাকে। শুরুর দিকে অনেকে দাম সহনীয় রাখেন। পরে ক্রেতার আগ্রহ বুঝে দাম বাড়ান। তাই সময় থাকলে সকালে বাজার করুন। আবার দিনের শেষে কিছু বিক্রেতা পচনশীল জিনিস কম দামে বিক্রি করে দেন। আপনি যদি একটু সময় দিতে পারেন, তাহলে এই সময় বেছে বাজার করলে কিছুটা সাশ্রয় পাওয়া যায়।
৭. ছাড়ের অফার কাজে লাগান
সাধারণত বাজার কিংবা পাড়ার দোকানে এমন ছাড়ের সুযোগ থাকে না। কিন্তু শহর এলাকাগুলোয় এখন সুপারশপ রয়েছে। এ ছাড়া আছে অনলাইন বাজার, যেখানে অনেক সময় বিভিন্ন ছাড় বা ‘বাই ওয়ান, গেট ওয়ান’ ধরনের অফার চলে। এ সুবিধা কাজে লাগাতে পারেন।

মনে রাখবেন

অপচয় রোধে পরিমিত কেনাকাটা করবেন। টাটকা পণ্য সংরক্ষণ করতে না জানলে তা অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অজান্তেই তা আপনার বাড়তি খরচের কারণ হয়। তাই মাছ, মাংস বা সবজি ফ্রিজে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা শিখুন।

আবার প্রতিদিন কতটুকু সবজি বা মাছ খাওয়া হয়, সেটার একটা ধারণা রাখুন। অতিরিক্ত কিনে অপচয় করলে অর্থের অপচয়ও হয়। আবার বাজারে কয়েক দিন পরপরই এসব পণ্যের দাম ওঠানামা করে। তাই বেশি দামে বেশি কিনলে লোকসানই হবে। যতটা লাগে, ততটাই কেনার অভ্যাস তৈরি করুন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ