Prothomalo:
2025-10-19@08:01:36 GMT

এখন কি সোনা কেনার সময়

Published: 19th, October 2025 GMT

৮ অক্টোবর বিশ্বে প্রথমবারের মতো সোনার দাম চার হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। ১৭ অক্টোবর তা নতুন রেকর্ড গড়ে ৪ হাজার ২০০ ডলারে পৌঁছায়। বাংলাদেশে এখন এক ভরি সোনার দাম উঠেছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকায়। এটা দেশের মধ্যে সোনার দামের রেকর্ড। বিশ্বব্যাপী সোনার দর আরও বাড়বে বলেই সব মহল মনে করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক উদ্বেগ বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লালনের চিরপরিচিত মাজার ফিরে চাই

এক জাপানি গবেষক, লালন–ভক্ত মাসাহিকো তোগাওয়া। বারবার বাংলাদেশে এসেছেন লালন ফকিরের টানে। ছুটে গেছেন বারবার কুষ্টিয়ার আখড়ায়। লালন শাহের মাজার ঘেঁষে কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তব কাজ তাঁকে আহত করেছে। বিস্তর বাদ-প্রতিবাদের পর সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী সেই নির্মাণকাজ বন্ধের ঘোষণা দিলেন। কিন্তু মাসাহিকো গত ২৬ নভেম্বর আখড়া ঘুরে এসে প্রথম আলোকে জানালেন, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর নিজেই আমাদের জন্য লিখে দিয়েছেন নিচের নিবন্ধটি। ওপরে প্রকাশিত ছবিটিও ২৬ নভেম্বর তাঁরই তোলা।

জাপানের সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ববিদ হিসেবে বাউল সংগীতের ওপর গবেষণামূলক কাজের প্রয়োজনে বেশ কয়েকবারই আমি বাংলাদেশ সফর করেছি। এখানে এসেই ফকির লালন শাহের গান শুনে, তাঁর মাজারের কাছে গিয়ে আমি অভিভূত হয়ে পড়ি। তাঁর প্রতি জন্মেছে আমার প্রগাঢ় শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। লালন শাহের শিক্ষা থেকে আমি অনেক কিছু জেনেছি, শিখেছি। আমি তাঁর সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে কুষ্টিয়ার এক গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছি। লালন শাহের সংগীতের মায়াজালে আবদ্ধ হয়েই জাপানে বসে আমি রচনা করেছি বেশ কয়েকটি নিবন্ধ।

যে কেউই লালন শাহের কর্মকাণ্ডের সান্নিধ্যে এলেই তাঁর কবিতা, গান এবং ধর্মীয় চিন্তাচেতনায় বিস্মিত হবেন। বেশির ভাগ জাপানি মনে করেন, বাংলাদেশ হচ্ছে একটি দরিদ্র দেশ। যেখানে সব সময়ই লেগে থাকে বন্যা আর দুর্ভিক্ষ। সেতু এবং সড়ক নির্মাণে বিদেশি সাহায্য ছাড়া বুঝি গত্যন্তর নেই। কিন্তু আমার বন্ধুরাই লালনের কবিতা পড়ে বিস্মিত হয়েছেন। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির প্রতি তাঁদের জন্মেছে অকৃত্রিম শ্রদ্ধাবোধ।

আমি গত ২১ আগস্ট পরিদর্শন করেছি সেই খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বের মাজার। কুষ্টিয়ার সেই মাজারের পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে আমি ব্যথিত না হয়ে পারিনি। বাউল সংগীতের পথিকৃতের মাজার কত অবহেলিত! মাজারের পার্শ্ববর্তী দেয়াল ধ্বংসের পথে। আর অসংখ্য ট্রাক বিকট আওয়াজে মাজারের পাশ দিয়ে যাওয়া-আসা করছে। মাজারের আশপাশেই চলছে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ। সেখানকার বাউল ও ফকিরদের পক্ষে এ বেদনাদায়ক নির্মাণ দেখে যাওয়া ছাড়া কিছুই যেন আর করার নেই! কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ফিরে যথাসম্ভব অনেককেই নিজের যন্ত্রণার কথা জানিয়েছি।

লালন কমপেক্সের পরিকল্পনাকারীরা আমাকে জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ এবং বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার জন্যই এখানে ভবন নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু আমি লালন শাহের ভালোবাসায় সিক্ত একজন ভক্ত। বেশ অনেকবার মাজার ঘুরে আসা সত্ত্বেও কংক্রিটের সুদৃশ্য ভবনে থাকার একবারও প্রয়োজন পড়েনি আমার।মাসাহিকো তোগাওয়া

চলতি মাসে আবারও আমাকে বাংলাদেশে আসতে হলো। গত ২৬ নভেম্বর লালনের মাজারেও আমি গেলাম। কিন্তু সেখানে বিস্মিত হয়ে দেখলাম, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও মাজারের গা ঘেঁষে কমপেক্সের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়নি।

লালন কমপেক্সের পরিকল্পনাকারীরা আমাকে জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞ এবং বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার জন্যই এখানে ভবন নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু আমি লালন শাহের ভালোবাসায় সিক্ত একজন ভক্ত। বেশ অনেকবার মাজার ঘুরে আসা সত্ত্বেও কংক্রিটের সুদৃশ্য ভবনে থাকার একবারও প্রয়োজন পড়েনি আমার। মাজারের পাশে আমার দীক্ষাগুরু বাউলের বাড়িতেই আমি থাকি। মাটির ঘরের বারান্দায় বসে সাধারণ খাবার খাই। আমার গুরুর ছোট্ট কন্যা আমিনার কণ্ঠে লালন শাহের গান শুনি। একতারা বাজিয়ে আমি তাকে সঙ্গ দিই। মাটির ঘরের পরিবেশে যে সংগীত আমি উপভোগ করি, বিশাল মিলনায়তনে তা কখনোই উপভোগ্য হতো না।

লালনের মাজারের সেই পুরোনো চিরপরিচিত স্নিগ্ধ পরিবেশ আমি ফিরে চাই। সেখানেই আমি বারবার শুনতে চাই—

কেমন ন্যায় বিচারক খোদা
বল গো আমায়।
তাহা হলে ধনী-গরিব
কেন এ ভুবনে রয় \
ভালো-মন্দ সমান হলে
আমরা কেন পড়ি তলে
কেউ দালান কোঠার কোলে
শুয়ে আরাম পায় \
সেই আমরা মরণের পরে
যাব নাকি স্বর্গপুরে
কে মানিবে এসব হেরে
এই দুনিয়ার \
ভোগ করে ত্যাগ ভালো কথা
এ সংসারে কে করে তা
লালন বলে নাড়ি মাথা
আন্দাজে সবায় \

সম্পর্কিত নিবন্ধ