ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দুই গ্রামের দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৬ দিন ধরে বন্ধ স্থানীয় বাজারের অন্তত ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাদের। অনেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে পড়েছেন বিপাকে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক গ্রাম দিয়ে অন্য গ্রামের মানুষদের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেতে দেওয়া হচ্ছে না বাজারে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে মালামাল।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইলে মহাসড়ক থেকে সরলেন আন্দোলনকারীরা, যান চলাচল স্বাভাবিক 

ক্যান্সার আক্রান্ত ছরোয়ারের পাশে উপজেলা প্রশাসন

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বন্যাগাড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী ২০ জন ব্যবসায়ী পরিস্থিত থেকে উত্তোরণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কোনো সুরাহা পাননি তারা।

লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, আটলংকা বাজারের পাশে চিকনাই নদীর ধারে অবস্থিত ঈদগাহ মাঠ নিয়ে বন্যা গাড়ি ও আটলংকা গ্রামের মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে গত ২ অক্টোবর দুই গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। ঘটনার পর থেকে দুই গ্রামবাসীর দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। আটলংকা বাজারে রয়েছে বন্যাগাড়ি গ্রামের অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন থেকে তাদের সেই সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। 

বন্যাগাড়ি গ্রামের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আটলংকা গ্রামের মানুষ তাদের বাজারে যেতে দিচ্ছে না। দোকান খুলতে দিচ্ছে না। 

মামুন টেইলার্সের মালিক আল মামুন বলেন, “ঈদগাহ মাঠ নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে, ঠিক আছে। এ কারণে আমরা বাজারে ব্যবসা করতে পারব না কেন?  আমাদের দোকান খুলতে দিচ্ছে না আটলংকা গ্রামের মানুষ। ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে এখন ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছি না। বিগত ১৬ দিন ধরে দোকান বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে খুব হতাশায় দিন কাটাচ্ছি।”

মুদি দোকানদার হাবিবুল্লাহ বলেন, “১৬ দিন ধরে দোকান বন্ধ থাকায় আমার দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। এই ক্ষতি কে পুষিয়ে দেবে? ব্যবসা করতে না পারলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। দোকান খুলতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে।” 

পল্লী চিকিৎসক আব্দুল করিম বলেন, “দোকান বন্ধ থাকায় আমি ওষুধপত্র নিয়ে রোগী দেখতে পাচ্ছি না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এভাবে তো চলতে পারে না। গ্রামের রোগীরাও কষ্ট পাচ্ছেন।” 

রড-সিমেন্ট-ঢেউটিন ব্যবসায়ী ফজলুল হক ও ওয়ার্কসপ মালিক রুবেল হোসেন জানান, অনেকগুলো টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। এ সপ্তাহে আমাদের কিস্তি আছে। কীভাবে কিস্তি দেব, সেই চিন্তায় আমরা দিশেহারা। ব্যবসা করতে না পারায় আমরা পরিবার নিয়ে খুব দীনহীন অবস্থা পার করছি। অসুস্থ মানুষ চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে পারছি না। 

অভিযোগের বিষয়ে আটলংকা গ্রামের বাসিন্দা হারেস আলী বলেন, “বন্যাগাড়ি গ্রামের মানুষ রাস্তা অবরোধ করে রাখছে। ওই রাস্তা দিয়ে আটলংকা গ্রামের কেউ গেলে তাকে হেনস্তা করা হচ্ছে। নারীরা তাদের বাচ্চাদের মাদরাসায় ভাত দিতে গেলে তারা নানাভাবে হয়রানি করে। এখন গ্রামের প্রধানরা আছেন, তারা যেটা করার সেটা করবেন।” 

আটলংকা গ্রামের বাসিন্দা বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ মাহমুদুল আলম মাহমুদ বলেন, “গ্রামের মুরব্বিরা আছেন, গ্রাম প্রধানরা আছেন, সবাইকে ডেকে নিয়ে বসে আলোচনা করে দেখি কি করা যায়।”

এ বিষয়ে চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনজুরুল আলম বলেন, “উভয়পক্ষ কে নিয়ে বসে আলোচনা করেছি। দুই পক্ষের ইতিবাচক মনোভাব পাওয়া গেছে। আটলংকা গ্রামের মানুষ বন্যাগাড়ি দিয়ে চলাচল করবে। আবার বন্যাগাড়ি গ্রামের মানুষও আটলংকা বাজারে যাবে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলবে। আশা করছি দুই-একদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।” 

ইউএনও মুসা নাছের চৌধুরী বলেন, “আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে এর আগেও বসেছি। আবার বসে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।”

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউএনও অভ য গ ঈদগ হ ম ঠ ন য ন বন ধ থ ক পর ব র ন দ বন দ ব বন য গ আটল ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিসি-ইউএনওর সামনে হামলা–ভাঙচুর

বরিশালের মুলাদীতে একটি সেতুর নাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়।

আজ শনিবার সকালে মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। অনুষ্ঠানের জন্য সেখানে উপস্থিত জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সামনেই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা সেতুর নামফলক, সভামঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং অনুষ্ঠানস্থলে বিছানো লালগালিচা তুলে নিয়ে যান। পরে মুলাদী ও পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শী কাচিচর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম, ইউএনও মো. গোলাম সরওয়ার, মুলাদী থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত হন। সকাল ১০টার দিকে নাজিরপুর ও রামারপোল গ্রামের লোকজন সেতুর পূর্ব পাশ থেকে ‘উদ্বোধন মানি না’ স্লোগান দিতে দিতে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। এরপর জেলা প্রশাসকসহ কর্মকর্তাদের সামনেই নামফলক, মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।

স্থানীয় সূত্রের ভাষ্য, সেতুটির পূর্বনির্ধারিত নাম ছিল ‘নাজিরপুর–রামারপোল সৌহার্দ্য সেতু’। স্থানীয় লোকজনের মতামত উপেক্ষা করে নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ নামে উদ্বোধনের চেষ্টা করা হচ্ছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সঙ্গে নাজিরপুর এলাকার যোগাযোগ উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর ‘নাজিরপুর–রামারপোল সৌহার্দ্য সেতু’ নামে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর চলতি বছর মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়। তবে সংযোগ সড়কের কাজ অসম্পূর্ণ থাকা অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সেতুটির নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ রাখা হয় এবং ৬ ডিসেম্বর উদ্বোধনের দিন নির্ধারণ করা হয়।

মুলাদী থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কিছু লোকের হামলা ও ভাঙচুরের কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে গেছে।

মুলাদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. গোলাম সরওয়ার বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সেতুটির নাম পরিবর্তন করে ‘৩৬ জুলাই সেতু’ নামে উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে নাম পরিবর্তন নিয়ে স্থানীয়রা আগেই আপত্তি জানিয়ে অভিযোগ দিয়েছিলেন, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দরে নতুন ইউএনও শিবানী সরকারের যোগদান
  • রাজবাড়ীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কবরস্থানে দুর্বৃত্তদের আগুন
  • বরিশালে সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিসি-ইউএনওর সামনে হামলা–ভাঙচুর