ফরিদপুরে বাজারে আগুন, পুড়ে গেল ১৭টি দোকান
Published: 19th, October 2025 GMT
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের কাদিরদী বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৭টি দোকান পুড়ে গেছে। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নাম-ঠিকানা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত সোয়া ১০টার দিকে কাদিরদী বাজারের মাছবাজার–সংলগ্ন বাচ্চু মোল্লার মার্কেটের নাসির দরজির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের উৎপত্তি।
আগুনে বাচ্চু মোল্লার মার্কেট, পাশের আজিজ মোল্লার মার্কেটসহ চারটি মার্কেটের মনিহারি দোকান, ওষুধের দোকান, টেইলার্স, বীজ ভান্ডার, জুতার দোকান, রেস্টুরেন্টসহ অন্তত ১৭টি দোকান সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছে।
প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে আগুনের তীব্রতা বেশি হওয়ায় তাঁরা ব্যর্থ হন। পরে খবর পেয়ে প্রথমে মধুখালী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পরে বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে যোগ দেন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা স্থানীয় মানুষের সহায়তায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগুন লাগার প্রায় এক ঘণ্টা পর প্রথমে মধুখালী ফায়ার সার্ভিস এবং পরে বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বুলবুল হোসেন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, নাসির দরজির দোকান থেকে শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আগুনে ১৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে। এতে কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস খবর পাওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসে। তারপরও তারা না এলে বাজারের আরও বড় অংশ পুড়ে যেত।
বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন লিডার খালেক শেখ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই মধুখালী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলেন। আমরা পৌঁছানোর পর দুই ইউনিট একযোগে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় আগুন নেভাতে সক্ষম হই।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ক্ষতবিক্ষত সড়ক, কালভার্টে সাঁকো বানিয়ে চলাচল
ইটের খোয়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চারদিকে। বিধ্বস্ত সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কোনো চিহ্ন নেই। সড়কের বহু স্থান ভেঙে মিশে গেছে পাশের জমির সঙ্গে। পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৩০ ফুট দীর্ঘ একটি কালভার্ট। সেখানে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে পারাপার করছেন মানুষজন।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে মদুনা জঙ্গল সড়কের এমন দশা। গত জুলাই মাসের শুরুর দিকে তীব্র বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢল ও হালদা নদীর স্রোতে সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাকা সড়ক পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। তিন মাস আগেও ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন। চলত ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, অটোরিকশা সবই।
সড়কটি চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া এবং উড়কিরচর ইউনিয়নকে যুক্ত করেছে। নোয়াপাড়া, উড়কিরচর ও হাটহাজারীর মদুনাঘাটের মানুষজন এই সড়ক ব্যবহার করতেন। সড়কটি বিধ্বস্ত হওয়ার তিন মাস পার হলেও সংস্কার হয়নি। কালভার্টটিও পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ওই এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভাঙা সড়ক দিয়ে কোনো রকমে হেঁটে চলাচল করেন গ্রামের শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষজন। তবে কালভার্ট ভাঙা থাকায় ওই পথে গাছ ফেলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো। গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার টানা দুদিন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে ভাঙা কালভার্টে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে পারাপারের উপযোগী করেছেন স্থানীয় গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা।
নোয়াপাড়া, উড়কিরচর ও হাটহাজারীর মদুনাঘাটের মানুষজন এই সড়ক ব্যবহার করতেন। সড়কটি বিধ্বস্ত হওয়ার তিন মাস পার হলেও সংস্কার হয়নি। কালভার্টটিও পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়ক দিয়ে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী মানুষসহ গ্রামবাসী যাতায়াত করছেন। অসমান খোয়া ছড়ানো সড়কে হেঁটে চলাচলও কষ্টকর। সড়কে কথা হয় মুহাম্মদ ইব্রাহিম নামের স্থানীয় একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভীষণ কষ্টে আছি। বাঁশের সাঁকো দিয়ে শিশু, নারী ও বয়স্করা চলাচল করতে ভয় পান। রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। একরকম অবরুদ্ধ হয়ে বসবাস করছি আমরা।’
স্বেচ্ছাশ্রমে কালভার্টে বাঁশের সাঁকো বানানোর কাজে অংশ নেন গাউসিয়া কমিটির তানভীর আলম ও মুহাম্মদ জাবেদ। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, গাউসিয়া কমিটির ২৫ সদস্য দুই দিন কাজ করে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। দীর্ঘ তিন মাস এই সড়কে চলাচল বন্ধ ছিল। নিরুপায় হয়ে নিজেরাই সাঁকো তৈরির কাজে হাত দেন। তাঁদের কাজে গ্রামের মানুষও বাঁশ, গাছ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
সড়কের এই দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী একাধিকবার বিক্ষোভও করেছেন। গত ৩ অক্টোবর দুপুরে কয়েক শ গ্রামবাসী সড়ক সংস্কার ও ভাঙা কালভার্টে সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেন। তাঁরা বলেছেন, সরকার ১৫ বছরে সড়ক ও সেতুর উন্নয়নে তাঁদের এলাকায় কিছু করেনি।
আমরা ভীষণ কষ্টে আছি। বাঁশের সাঁকো দিয়ে শিশু, নারী ও বয়স্করা চলাচল করতে ভয় পান। রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। একরকম অবরুদ্ধ হয়ে বসবাস করছি আমরা।মুহাম্মদ ইব্রাহিম, স্থানীয় বাসিন্দানোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, মদুনা জঙ্গল উপজেলার সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এলাকা। এখানকার সড়কটি উড়কিরচর ইউনিয়ন ও নোয়াপাড়া ইউনিয়নকে যুক্ত করেছে। এটি দ্রুত সংস্কার হওয়া জরুরি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সড়কে আরসিসি ঢালাইসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়েছি। তবে বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই মদুনা জঙ্গল সড়কও সংস্কার হয়নি।’