মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) নিয়মিত মৌসুমের শেষ দিনে হ্যাটট্রিক করেছেন লিওনেল মেসি। আজ জিওডিস পার্কে ন্যাশভিলের বিপক্ষে ৩ গোল ও এক অ্যাসিস্ট করেছেন আর্জেন্টাইন তারকা। মেসির এমন নৈপুণ্যের ম্যাচে ন্যাশভিলকে ৫-২ গোলে হারিয়েছে ইন্টার মায়ামি।

হ্যাটট্রিকের মাধ্যমে মেসি ২০২৫ এমএলএস গোল্ডেন বুট পুরস্কারও নিশ্চিত করেছেন। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লিগটিতে যোগ দেওয়ার পর এবারই প্রথম সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার উঠছে তাঁর হাতে। ২৮ ম্যাচে ২৯ গোল করেছেন মেসি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এলএএফসির ডেনিস বুয়াঙ্কার গোল ২৪টি।

২০২৪ এমএলএসের নিয়মিত মৌসুমের শেষ দিনে নিউ ইংল্যান্ড রেভ্যুলুশনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন মেসি। আরেকটি মৌসুমের শেষ দিনে এবারের হ্যাটট্রিকের শুরুটা হয়েছে ৩৫তম মিনিটে। জর্দি আলবার কাছ থেকে বল পেয়ে ন্যাশভিলের কয়েকজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের মুখ থেকে নিচু শটে বল জালে পাঠান তিনি।

এর আট মিনিট পরই ন্যাশভিলকে সমতা এনে দেন স্যাম সারিজ। এমনকি প্রথমার্ধের যোগ করা ষষ্ঠ মিনিটে জ্যাকবল শাফেলবার্গ ন্যাশভিলকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়েও দেন।
বিরতির পর ৬৩তম মিনিটে মেসি পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে সমতা আনেন।

এরপর ৬৭ মিনিটে মায়ামির পক্ষে ব্যবধান ৩-২ করেন বাল্টাসার রদ্রিগেজ। ৮১তম মিনিটে আসে মেসির হ্যাটট্রিকের মুহূর্ত। বাঁ পায়ের শটে বক্সের মাঝ থেকে বল জালে পাঠিয়ে এমএলএসে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করেন তিনি।

ম্যাচের যোগ করা সময়ে তালেসকো সেগোভিয়ার গোলে মায়ামি ব্যবধান ৫-২-এ উন্নীত করে। এই গোলে অ্যাসিস্ট করেন মেসি। সব মিলিয়ে মৌসুমে ২৯ গোলের সঙ্গে মেসির অ্যাসিস্ট সংখ্যা ১৯টি। এমএলএসের এক মৌসুমে মোট ৪৮ গোলে অবদান রেখে মেসি এখন দ্বিতীয়। ৪৯ গোলে অবদান নিয়ে শীর্ষে কার্লোস ভেলা।

এ দিকে মেসির হ্যাটট্রিকে বড় জয়ের ম্যাচে ইস্টার্ন কনফারেন্সে পয়েন্ট তালিকায় তিনে থেকে নিয়মিত মৌসুম শেষ করে মায়ামি। ৩৪ ম্যাচে ৬৫ পয়েন্ট দলটির। সমান পয়েন্ট দুইয়ে থাকা সিনসিনাটিরও। ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ফিলাডেলফিয়া। নিয়মিত মৌসুমে তৃতীয় হওয়ায় এমএলএস প্লে-অফের প্রথম রাউন্ডে ঘরের মাঠে আবার ন্যাশভিলের মুখোমুখি হবে মায়ামি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মেসির জাদুকরী ছোঁয়ায় প্রথমবার মায়ামি চ্যাম্পিয়ন

যেন আকাশজোড়া নক্ষত্র পায়ের তলায় মেখে নেমেছিলেন লিওনেল মেসি। তার স্পর্শে ফুটবল যেন আবার নতুন করে আবিষ্কার করল নিজেকে। আর সেই নৈশ্বর্য ছুঁয়ে গেল ইন্টার মায়ামির ইতিহাসের উজ্জ্বলতম পাতাটি।

দু’দুটি গোলের আক্রমণ সাজানোয় কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ফুটবলের মহাকবি। তারই সৃষ্ট নৈপুণ্যের রেশ ধরে বাংলাদেশ সময় রবিবার (০৭ ডিসেম্বর) সকালে ভ্যাঙ্কুভার হোয়াইটক্যাপসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এমএলএস কাপ জিতে নিল মায়ামি। যেন স্বপ্নের চূড়া স্পর্শ করে ফেরা।

চেস স্টেডিয়ামের গ্যালারি সেই সকালেই ছিল জোয়ারে ভাসা সাগরের মতো- উত্তেজনায়, বিশ্বাসে, আর অপেক্ষায়। শুরু থেকেই মায়ামি খেলছিল আত্মবিশ্বাসী এক সুরে। রদ্রিগো ডি পলের ওভার দ্য টপ ডেলিভারি ধরে তাদেও আলেন্দের তীক্ষ্ণ ক্রস প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার এডিয়ের অকাম্পোর গায়ে লেগে জালে জড়ালে ম্যাচের শুরুতেই আলো ছড়ায় মায়ামি।

তবে পিছিয়ে পড়েও ভ্যাঙ্কুভার থেমে থাকেনি। বিরতির আগে গোলরক্ষক রকো রিওস নোভোর দুইটি বিদ্যুত্গতি সেভ না থাকলে ম্যাচের গল্প ভিন্নভাবে লেখা যেত। দ্বিতীয়ার্ধে বাড়তে থাকে উত্তাপ, বাড়তে থাকে রোমাঞ্চের ঢেউ। মেসির মাথা ছুঁয়ে যাওয়া বল অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে শ্বাস আটকে গিয়েছিল গ্যালারি জুড়ে। একই সময়ে আলি আহমেদের শট পোস্টে লেগে গোল হলে ম্যাচে ফিরে আসে কানাডিয়ান ক্লাবটি (১-১)।

এরপর সাব্বির শট পোস্টে লেগে বাইরে গেলে মায়ামি যেন ঝড় থামার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক জাহাজ- আবার শক্ত হলো, আবার স্থির হলো। আর ঠিক এখানেই জন্ম নিলো আরেকটি মায়াবী মুহূর্ত, মেসির নতুন স্ক্রিপ্ট।

ম্যাজিশিয়ানের স্পর্শে গড়া এক লেজার-পাস ডি পলকে বানিয়ে দিল গোলের সামনে নির্ভুল এক শিল্পী। ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে আবার লিড ফিরে পায় মায়ামি (২-১)। আর যোগ করা সময়ে (৯৬ মি.) যেন শেষ দৃশ্যের পর্দা নামার আগমুহূর্তে মেসি আরও একবার তৈরি করলেন বিস্ময়। তার তৈরি আক্রমণ থেকে আলেন্দের গোল নিশ্চিত করল মায়ামির প্রথম এমএলএস কাপ জয়।

গৌরবের আনন্দকে ছুঁয়ে গেল আবেগের স্রোত। বিদায় জানালেন স্প্যানিশ দুই কিংবদন্তি সার্জিও বুসকেটস এবং জর্দি আলবা। তাদের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে তুলতে যেন মেসি খেললেন হৃদয়ের সব আলো উজাড় করে।

এই জয়ের সঙ্গে মেসির ক্যারিয়ারে যোগ হলো আরও এক সোনালি পালক। এখন ২৬টি বড় ফাইনালের মধ্যে ১৮টিতেই শিরোপা তার হাতে। যেন মহাকালের কাছে লেখা আরেকটি অমোঘ সত্য। পুরো মৌসুম জুড়ে তিনি ছিলেন আগুনের মতো ধারাবাহিক; এমএলএসে সর্বোচ্চ ২৩টি অ্যাসিস্ট দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজেকে সর্বোচ্চ নির্মাতা হিসেবে। শেষ ছয়টি হোম ম্যাচে তার গোল–অবদান ১৫টি। যার মধ্যে ৬টি গোল ও ৯টি অ্যাসিস্ট।

ইন্টার মায়ামির ইতিহাস গড়ার রাতে আবারও প্রমাণ হলো- যখন আলো প্রয়োজন হয়, মেসি তখনই ফুটবলের আকাশে সূর্যের মতো ঝলসে ওঠেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফাইনালেও মেসি-ম্যাজিক, এমএলএস কাপের চ্যাম্পিয়ন মায়ামি
  • মেসির জাদুকরী ছোঁয়ায় প্রথমবার মায়ামি চ্যাম্পিয়ন