স্ত্রী সন্তান রেখে স্কুল শিক্ষিকাকে নিয়ে পালালেন শ্রমিকদল নেতা
Published: 19th, October 2025 GMT
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক এস.এম. রাজু হোসেনকে ঘিরে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ফেলে এই রাজনীতিবিদ সম্প্রতি এক বিবাহিতা স্কুলশিক্ষিকার সঙ্গে পরকিয়ার সম্পর্কের সূত্র ধরে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে দুই পরিবারের তিনটি শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন রাজু হোসেন। একজন দায়িত্বশীল দলের নেতা হয়ে তার এমন আচরণে স্থানীয়ভাবে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
২০০৬ সালে তেওতা বাছেট এলাকার আয়নাল হোসেনের ছেলে মো.
প্রায় তিন বছর আগে তাদের পরকীয়া সম্পর্ক ফাঁস হয় বলে অভিযোগ করেন শামিম। তিনি বণেন, “স্ত্রীর আচরণে সন্দেহ হলে আমি নজরদারি শুরু করি। এরপর রাজুর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ হাতে পাই। ঝামেলা তৈরি হলেও তারা গোপনে সম্পর্ক চালিয়ে যায়।”
সম্প্রতি সানজিদা কলাগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে উথলি এলাকায় রাজুর সহায়তায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে স্বামীর বাড়ি থেকে গহনা, নগদ টাকা ও আসবাবপত্র নিয়ে যান। স্থানীয়রা এক পর্যায়ে তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং রাজুকে গণপিটুনি দেয়।
শামিম অভিযোগ করেন, “সানজিদা বাড়ি ফিরে আসার কথা বলে আমার কাছ থেকে আরো সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয়। পরে জুন মাসে আমাকে তালাক পাঠায়। এখন আমার সন্তানকে নিয়ে সে রাজুর সঙ্গে পালিয়েছে।”
এদিকে রাজুর স্ত্রী মোসা. আইরিন আক্তারও শিবালয় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রায় ১৭ বছর আগে রাজু হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, “রাজুকে আমার পিতার ব্যবসার দায়িত্ব দিলে সে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। পরে পরকীয়ায় জড়িয়ে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। সম্প্রতি দৌলতপুরের সানজিদা নামে এক নারীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে।”
তিনি আরো বলেন, “রাজু আমার দেওয়া স্বর্ণালংকার, জমি, গরু, মোটরসাইকেল ও ফেরিঘাটের শেয়ার দখলে রেখেছে। এখন সে আমাদের কোনো খোঁজ নেয় না, ভরণপোষণও দেয় না।”
এ বিষয়ে জানতে শ্রমিক দল নেতা এস.এম. রাজু হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি আব্দুর কাদের বলেন, “ঘটনাটি আমি এখনো জানি না। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/চন্দন/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেবল গাজা ইস্যুতে সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারা সন্ত্রাসী এবং বিখ্যাত আইন লঙ্ঘনকারী ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। গাজা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইন প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক ও অবিশ্বাস্যভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (আইএইচএল) লঙ্ঘন, পরবর্তী দিনগুলোতে এর প্রয়োগ ও অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলে।”
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) তুরস্কের চাংকিরি কারাতেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স হলের রেক্টরেট ভবনে ‘গাজা কনফ্লিক্ট: এ ডাইং ডিক্লারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ল’ (গাজা সংঘাত: আন্তর্জাতিক আইনের মৃত্যুকালীন জবানবন্দী) শীর্ষক শিরোনামে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
‘সাজিদ হত্যার ৯০তম দিন, এরপর কি আমি?’
ইবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, রেহায় পায়নি রোগীরা
তিনি অক্টোবরে গাজার সীমান্ত এলাকায় হামাসের আক্রমণের বৈধতা, গাজার উপর ইসরায়েলের আক্রমণ এবং এর বৈশিষ্ট্য, ইসরায়েলের আক্রমণ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরায়েলের আচরণ নিয়ে আলোচনা করেন।
উপাচার্য বলেন, “১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের একটি চক্রান্তের ফলে ইসরায়েল অবৈধভাবে জন্মগ্রহণকারী একটি রাষ্ট্র। গাজা সংঘাতে ইসরায়েলের আচরণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের অভূতপূর্ব লঙ্ঘন। ২০২৩ সাল থেকে গাজা সংঘাতে ইসরায়েলের আচরণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ভিত্তি ধ্বংস করে দিয়েছে।”
আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও ফৌজদারি আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণকে বৈধ দাবি করে তিনি বলেন, “গাজা উপত্যকা একটি দখলকৃত অঞ্চল এবং এর জনগণ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের অধিকারী (বিখ্যাত ফিলিস্তিনের প্রাচীর মামলায় আইসিজে-র উপদেষ্টা মতামত)। হামাসের আক্রমণ দখলদার ইসরাইলের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে ছিল এবং তাই জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদের অধীনে ‘আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগে’ বলা যেতে পারে। স্থায়ী দখলদারিত্ব আত্মরক্ষার অধিকারের চিরস্থায়ী চরিত্রের জন্ম দেয়।”
এ ক্ষেত্রে ইসরাইলের আচরণ মূল্যায়নে তিনি বলেন, “গাজার উপর ইসরাইলের আক্রমণ আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগে পাল্টা আক্রমণ বা আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয় না। কারণ ইসরাইল দখলদার শক্তি। আইসিজের মতামত হল- আন্তর্জাতিক আইনে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার ৫১ অনুচ্ছেদের অধিকার নেই। এটি জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ ২(৪) লঙ্ঘন করে একটি নতুন আক্রমণ।”
উপাচার্য বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (আইএইচএল) অনুসারে ইসরায়েলের আক্রমণ নিষিদ্ধ শ্রেণীর কর্মকাণ্ডের আওতায় পড়ে। এতে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে আক্রমণ, নির্বিচারে আক্রমণ, বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর (বাসস্থান, বাজার, দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য) বিরুদ্ধে আক্রমণ, মানবিক সাহায্যের উপর স্বেচ্ছাচারী বিধিনিষেধের মাধ্যমে অনাহারকে যুদ্ধের উপায় হিসেবে ব্যবহার করা, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য জিনিসপত্র ধ্বংস করা, মানবাধিকার কর্মীদের উপর আক্রমণ, সুরক্ষিত ব্যক্তিদের, সাংবাদিকদের হত্যা, নির্যাতন, নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা, বিশ্বাসঘাতক যুদ্ধ, সম্মিলিত শাস্তি, যুদ্ধবন্দীদের হত্যা, ঘোড়া-বিধ্বংসী যুদ্ধ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও যুদ্ধে সন্ত্রাস ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন (আইএইচএল) লঙ্ঘনের শামিল।”
অনুষ্ঠান শেষে সফরের বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি খুবই অবাক হয়েছি যে বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৭ সালে শুরু হয়েছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যেই এটি আশ্চর্যজনকভাবে এগিয়েছে। বিশাল ও অটল প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কতদূর এগিয়ে যেতে পারে। এটিই তার বাস্তব উদাহরণ। এটি বেশ আশ্চর্যজনক যে, এই সময়ের মধ্যে আপনি আপনার শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছেন এবং আপনার দেশের বাইরে থেকে অনেক শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করেছেন।”
ইবি উপাচার্য তুরস্কের চাংকিরি কারাতেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরাসমাস+ কেএ১৭১ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট মবিলিটি প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণভিত্তিক ভ্রমণে অংশ নেন। ইরাসমাস সমন্বয় অফিস থেকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্রে উপাচার্যকে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ভ্রমণে অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী