সেন্টমার্টিন দ্বীপে অগ্নিকাণ্ডে তিনটি ইকো রিসোর্ট পুড়ে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রিসোর্ট মালিকদের বরাত দিয়ে প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

বুধবার সকালে সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা অজিত কুমার দাস এ বিষয়ে বলেন, সেন্টমার্টিনে শায়রী রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে পাশের আরও দুটি রিসোর্ট আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে গলাচিপার বিচ ভ্যালি এবং কিংশুক রিসোর্টের অধিকাংশ পুড়ে গেছে। আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। এসব রিসোর্টগুলো খুব সুন্দর এবং উন্নতমানের ছিল।

তিনি আরও বলেন, রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি- প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি টাকায় ক্ষতি হয়েছে। শায়রী রিসোর্ট থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবুও আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। এছাড়া পুড়ে যাওয়া রিসোর্টে থাকা পর্যটকদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে মধ্যরাতে দ্বীপের পশ্চিম সৈকতের গলাচিপা এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শায়রী, বিচ ভ্যালি ও কিংশুক রিসোর্ট পুড়ে যায়। 

পুড়ে যাওয়া কিংশুক রিসোর্টের সহকারী পরিচালক সাইফুদ্দিন বাবর বলেন, হঠাৎ করে রাতে আগুন দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা হোটেলে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেই। ততক্ষণে আমাদের রিসোর্টের ১৫টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাঠ-বাঁশ এবং ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আমাদের রিসোর্টটি। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া আমাদের ব্যবসা লোকসানে পড়েছে।

রিসোর্ট বিচ ভ্যালির মালিক মো.

সরোয়ার কামাল বলেন, আগুন আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। পুরো রিসোর্টটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনও মালামাল রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা কী করবো?

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপে বিভিন্ন কারণে ব্যবসায়ীরা খুব বিপদে রয়েছেন। তার ওপর আগুনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আমাদের একটা টিম সেখানে পৌঁছেছে। আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তায় করা যায়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল, উৎসবের আমেজ

শীত বিদায়ের আগে সমুদ্রের ঢেউ আর সূর্যাস্তের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসেছেন কক্সবাজারে। সপ্তাহিক ছুটির দিনে লাবণি, কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্ট পরিণত হয়েছে পর্যটকদের মিলনমেলায়। সৈকতের বালুচরে গাঁ ভাসিয়ে, গলা সমান পানিতে সাগরের উত্তাল ঢেউ উপভোগ করে কিংবা বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়ে আনন্দে মেতে উঠেছেন ভ্রমণপ্রেমীরা।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই সৈকতের প্রধান তিনটি পয়েন্টে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। কেউ সমুদ্রের নোনাজলে ডুব দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে, কেউবা বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে বসে ছবি তুলে ধরে রাখতে চাইছেন স্মৃতির পাতায়। বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক আর ঘোড়ার পিঠে চড়ে উত্তেজনার রোমাঞ্চ উপভোগ করছেন তরুণরা। শিশুদের কোলাহল, ঢেউয়ের গর্জন আর পর্যটকদের হাস্যরসে মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত।

সুনামগঞ্জ থেকে আসা তৌফিক হাসান বলেন, ‍‍‍‍“প্রথমবারের মতো পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। সৈকতের এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখে সত্যিই মুগ্ধ। কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অবশ্যই এখানে আসতে হবে।”

আরো পড়ুন:

সেন্টমার্টিনে পর্যটক বন্ধের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীদের হতাশা 

সাজেকে গাড়ি উল্টে ৬ পর্যটক আহত

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমনা পারভীন বলেন, “আমি ও আমার বন্ধুরা প্রতিবছর কক্সবাজারে ঘুরতে আসি। শীতের আমেজে সৈকতের ভিড় দেখে আমাদের খুব ভালো লাগে। বিচ বাইকে চড়ার অভিজ্ঞতাটা দারুণ ছিল। যানজট ও ব্যস্ততার শহর ভুলে এখানে এসে একেবারে ফ্রেশ লাগছে।”

শেরপুরের ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বলেন, “সাগরের ঢেউয়ে গা ভাসানোর অনুভূতি সবসময়ই অন্যরকম। আমি জীবনে পরিবার নিয়ে অনেকবার কক্সবাজার এসেছি, কিন্তু প্রতিবারই নতুন কিছু পাওয়ার অনুভূতি হয়। সৈকত ছাড়াও পাহাড় এবং দীর্ঘ মেরিনড্রাইভের সৌন্দর্য উপভোগ করেছি।”

গলা সমান পানিতে সাগরের উত্তাল ঢেউ উপভোগ করছেন ভ্রমণপ্রেমীরা

এদিকে, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিচকর্মী, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড সদস্যরা দিনভর সৈকতে কাজ করছেন। তারা পর্যটকদের সুবিধার্থে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন ও আবুল কালাম বলেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে রাতদিন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। কোনো পর্যটক হয়রানি হচ্ছে কি-না এবং গভীর পানিতে যাতে না নামেন সে ব্যাপারে খেয়াল রাখি। পর্যটকের সন্তুষ্টিই আমাদের লক্ষ্য।”

এদিকে, পর্যটকের এই বাড়তি ভিড়ে খুশি পর্যটন ব্যবসায়ীরা। হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন দোকানগুলোতে দেখা গেছে বাড়তি ব্যস্ততা।

হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, “আশা করছি বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেও এই পর্যটনপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে, যা কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করবে।”

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পর্যটন সেল) মো. তানভীর হোসেন বলেন, “পর্যটকদের উদ্দেশে কিছু বিশেষ নির্দেশনা- যেমন নিরাপত্তার স্বার্থে গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বিচকর্মী, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ডকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সৈকতের পরিবেশ সুন্দর রাখতে পর্যটকদের প্লাস্টিক ও আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে আহ্বান জানাচ্ছি।”

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাইক্কা বিল ঘুরে পর্যটক নিরুৎসাহিত করার কথা বললেন মৎস্য উপদেষ্টা
  • সাজেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়, রাত কেটেছে ক্লাবঘর-মসজিদে
  • সাজেকে হোটেলের কক্ষ না পেয়ে বারান্দা-ক্লাবঘরে রাত কাটালেন ৪০০ পর্যটক
  • কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল, উৎসবের আমেজ