সেন্টমার্টিনের আগুনে ক্ষতি প্রায় ৬ কোটি টাকা, নিঃস্ব রিসোর্ট মালিকরা
Published: 15th, January 2025 GMT
সেন্টমার্টিন দ্বীপে অগ্নিকাণ্ডে তিনটি ইকো রিসোর্ট পুড়ে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রিসোর্ট মালিকদের বরাত দিয়ে প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
বুধবার সকালে সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা অজিত কুমার দাস এ বিষয়ে বলেন, সেন্টমার্টিনে শায়রী রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে পাশের আরও দুটি রিসোর্ট আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে গলাচিপার বিচ ভ্যালি এবং কিংশুক রিসোর্টের অধিকাংশ পুড়ে গেছে। আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। এসব রিসোর্টগুলো খুব সুন্দর এবং উন্নতমানের ছিল।
তিনি আরও বলেন, রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি- প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি টাকায় ক্ষতি হয়েছে। শায়রী রিসোর্ট থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবুও আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। এছাড়া পুড়ে যাওয়া রিসোর্টে থাকা পর্যটকদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে মধ্যরাতে দ্বীপের পশ্চিম সৈকতের গলাচিপা এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শায়রী, বিচ ভ্যালি ও কিংশুক রিসোর্ট পুড়ে যায়।
পুড়ে যাওয়া কিংশুক রিসোর্টের সহকারী পরিচালক সাইফুদ্দিন বাবর বলেন, হঠাৎ করে রাতে আগুন দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা হোটেলে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেই। ততক্ষণে আমাদের রিসোর্টের ১৫টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাঠ-বাঁশ এবং ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আমাদের রিসোর্টটি। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া আমাদের ব্যবসা লোকসানে পড়েছে।
রিসোর্ট বিচ ভ্যালির মালিক মো.
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপে বিভিন্ন কারণে ব্যবসায়ীরা খুব বিপদে রয়েছেন। তার ওপর আগুনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আমাদের একটা টিম সেখানে পৌঁছেছে। আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তায় করা যায়, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাব লঙ্ঘনের অভিযোগে দুই আয়োজক গ্রেপ্তার
ইরানের কিশ দ্বীপে এক দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাব ছাড়া নারীদের অংশ নেওয়ার ছবি প্রকাশের পর দুজন আয়োজককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার দেশটির বিচার বিভাগ এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশটির অতি রক্ষণশীলদের সমালোচনা বেড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক হিজাব আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ ব্যর্থ হচ্ছে। পশ্চিমা প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কায় এসব সমালোচনা আরও জোরালো হয়েছে।
গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০২২ সালে দেশব্যাপী বিক্ষোভের পর থেকে ইরানে অনেক নারী হিজাব আইন লঙ্ঘন করে চলেছেন। গত সপ্তাহে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার দপ্তর জুনে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হিজাববিহীন এক নারীর ছবি প্রকাশ করে সমালোচনার মুখে পড়ে।
দৌড় প্রতিযোগিতায় হিজাববিহীন নারীদের অংশ নেওয়ার ছবিগুলো শুক্রবারের। এতে দেখা যায়, অনেক নারী হিজাব ছাড়া দৌড়ে অংশ নেন। ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে হিজাব বাধ্যতামূলক করে ইরান।
বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৌড় প্রতিযোগিতার দুই প্রধান আয়োজককে পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া দুজনের মধ্যে একজন কিশ মুক্তাঞ্চলের কর্মকর্তা। অন্যজন প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, কিশ দ্বীপের এ দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন।
এর আগে ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছিল, দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজকদের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রসিকিউটরের বরাতে মিজানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের প্রচলিত আইনকানুন, ধর্মীয় ও সামাজিক নীতি এবং পেশাগত নীতিমালা মানার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগেই (আয়োজকদের) সতর্ক করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানটি এমনভাবে আয়োজন করা হয়েছে, যা সামাজিক শালীনতা লঙ্ঘন করেছে।’
ইরানের ‘তাসনিম’ ও ‘ফার্স’-এর মতো রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যমগুলো এ দৌড় প্রতিযোগিতাকে আগেই অশালীন এবং ইসলামি আইনের প্রতি অসম্মানজনক উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছিল।
ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লব হয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত শাহ সরকার উৎখাত হয়। নতুন প্রতিষ্ঠিত ইসলামি প্রজাতন্ত্র নারীদের পোশাকে কড়াকড়ি আরোপ করে আইন পাস করে। শুরুতেই এ আইনের বিরুদ্ধে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল।
ইরানের বর্তমান আইন অনুযায়ী, জনপরিসরে নারীদের মাথার চুল ঢেকে রাখা এবং শালীন ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাধ্যতামূলক।
২০২২ সালে যথাযথভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে রাজধানী তেহরান থেকে মাশা আমিনি নামের এক কুর্দি নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নীতি পুলিশের হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে দেশটিতে কয়েক মাস টানা বিক্ষোভ হয়। এতে পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কয়েক শ বিক্ষোভকারী নিহত হন। গ্রেপ্তার হন কয়েক হাজার। এরপর হিজাব আইন মানার ক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে শৈথিল্য দেখা যায়।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইরানের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে হিজাব আইন প্রয়োগের ব্যর্থতার অভিযোগ আনে। পরে দেশটির প্রধান বিচারপতি গোলাম হোসেন মোহসেনি এজেই হিজাব আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
ইরানের পার্লামেন্ট হিজাব আইন লঙ্ঘনকারী নারীদের কঠোর শাস্তির আদেশসংবলিত একটি আইন পাস করে। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সরকার তা অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানায়।
২০২৩ সালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শিরাজ শহরের এক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে নারীরা হিজাব ছাড়া অংশ নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ওই বছরের মে মাসে দেশটির অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের প্রধান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।