ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনের ১২ বছর করে কারাদণ্ড
Published: 15th, January 2025 GMT
ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনসহ ১৯ জনকে ১২ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী বেলাল হোসেন এ তথ্য জানান।
এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঠিক করেন।
সাজাপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন– ডেসটিনির পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.
আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন– ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল আমীন, ফারহা দিবা ও মোহাম্মদ হোসেন। জামিনে আছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুনুর রশিদ। ১৫ আসামি পলাতক রয়েছেন।
এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর দুদক ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ঠিক করেন।
এরও আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানীর কলাবাগান থানায় ২০১২ সালের ৩১ জুলাই মামলা দুটি করে। ২০১৪ সালের ৪ মে একটি মামলায় ১৯ জনের এবং অপর মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের শীর্ষ কর্মকর্তারা গাছ বিক্রির নামে ২,২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) হিসাবে ৫৬ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪০ টাকা এবং সরাসরি পাচার করা হয় আরও ২ লাখ ৬ হাজার মার্কিন ডলার।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১২ মে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এবং বেআইনিভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়। এছাড়া, হারুন অর রশীদসহ ৪৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জুতা রপ্তানি বেড়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের সুফল কিছুটা হলেও পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের জুতাশিল্প। বাড়তি ক্রয়াদেশ পাচ্ছে এই খাতের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। তাতে চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই–অক্টোবরে এই বাজারে চামড়ার জুতা রপ্তানি বেড়েছে ২১ শতাংশ। আর চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি আগের চেয়ে বেড়েছে তিন গুণ বা ১৯১ শতাংশ। সার্বিকভাবে জুতা রপ্তানি অবশ্য ৩২ শতাংশের মতো বেড়েছে।
জুতাশিল্পের একাধিক উদ্যোক্তা প্রথম আলোকে বলেন, নতুন মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশের জুতা ক্রয়ের আদেশ আসছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আছে, তারা দ্রুত ক্রয়াদেশ নিতে পারছে। তারা চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনসক্ষমতাও বাড়িয়েছে। তবে বড় আকারে ব্যবসা ধরার পাশাপাশি তা টেকসই করতে দেশেই জুতার কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ লাগবে। প্রয়োজনে সরকারকেও নীতিসহায়তা দিতে হবে। কারণ, প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার লিডটাইম (ক্রয়াদেশ থেকে শুরু করে পণ্য জাহাজীকরণ পর্যন্ত সময়) বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। তবে বাংলাদেশে খরচ একটু কম। শুধু এটি দিয়ে রপ্তানি বেশি বাড়ানো কঠিন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ৪২ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশি জুতার বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) হলেও এখন এক-তৃতীয়াংশ জুতার গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাজারটিতে জুলাই-অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের জুতা, যা গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ থেকে ১২ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের ১০ কোটি ডলারের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ জুতা রপ্তানি হয়, তার প্রায় পুরোটাই চামড়ার তৈরি। তবে পাল্টা শুল্কের সুযোগে চমক দেখাতে শুরু করেছে চামড়াবিহীন জুতা। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি তিন গুণের বেশি বেড়েছে। উচ্চ শুল্কের কারণে চীনের ক্রয়াদেশ সরতে থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
— বাংলাদেশের চামড়া খাতের রপ্তানি দীর্ঘদিন ধরেই ১ বিলিয়ন থেকে সোয়া ১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ঘুরপাক করছে। চীন থেকে ১-২ শতাংশ ক্রয়াদেশও যদি সরে আসে, তাহলে আমাদের জুতা রপ্তানি অনেক বেড়ে যাবে।—মো. নাসির খান, সহসভাপতি, এলএফএমইএবি।ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই–অক্টোবর চার মাসে ১ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ৫৪ লাখ ডলারের চেয়ে ১৯১ শতাংশ বেশি। সার্বিকভাবে জুতা রপ্তানি অবশ্য ৩২ শতাংশের মতো বেড়েছে।
চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এনপলি ফুটওয়্যার চলতি বছর থেকে দুটি মার্কিন কোম্পানির কাছে জুতা রপ্তানি করছে। দুটি শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ব্র্যান্ডের সঙ্গে ক্রয়াদেশ নিয়ে আলোচনা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হলেই ক্রয়াদেশ পাওয়ার আশা প্রতিষ্ঠানটির। বর্তমানে এনপলির কারখানায় দিনে ১৪ হাজার জোড়া জুতা উৎপাদিত হয়। তাদের পাওয়া বিক্রয় বা রপ্তানি আদেশের ১৫ শতাংশ মার্কিন কোম্পানির, যা এক বছর আগেও ছিল শূন্য।
এ বিষয়ে এনপলি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রিয়াদ মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন ক্রেতারা চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চীনের ওপর পাল্টা শুল্ক যা–ই হোক না কেন, নীতির পরিবর্তন খুব একটা হবে না। মার্কিন ব্র্যান্ডের ক্রয়াদেশ নিতে গেলে কারখানাগুলোকে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে সাহস পাবেন।
গত ৩১ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানির ওপর সংশোধিত পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করে, যা ৭ আগস্ট কার্যকর হয়। সংশোধিত হার অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্যে বাড়তি ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসেছে। ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে হারটি দাঁড়ায় ৫০ শতাংশ। আর ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পাল্টা শুল্কের হার ১৯ শতাংশ। শুরুতে চীনের পণ্যে অন্য দেশের চেয়ে কয়েক গুণ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়।
পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা রপ্তানিকারকেরা জানাচ্ছিলেন, কিছু মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান গত বছর থেকে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আবার পুরোনো ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ বাড়াচ্ছেন। ব্র্যান্ডভেদে কমপ্লায়েন্স ও মানভেদে জুতার নতুন ক্রেতা অন্তর্ভুক্ত করতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগে। সে কারণে ফলাফল কিছুটা দেরিতে পাওয়া যায়।
রপ্তানিকারকদের কথার সত্যতা রপ্তানি পরিসংখ্যানেও পাওয়া যায়। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সার্বিকভাবে জুতা রপ্তানি ২৪ শতাংশ বেড়ে ১১৯ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছিল। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৩১ কোটি ডলারের জুতা, যা এর আগের বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত অর্থবছরে ২৯ কোটি ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়েছিল, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১১ কোটি ডলার বা ৬১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে গত অর্থবছর প্রায় ২ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫১ শতাংশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৫৫ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ রপ্তানি ৮৬৫ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৪২ কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করেছে চীন। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি ছিল ২৫৩ কোটি ডলারের।
আরএফএল গ্রুপ শুরুতে ইইউর বাজারে জুতা রপ্তানি করত। বর্তমানে তাদের মোট জুতা রপ্তানির অর্ধেকই যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। ইতিমধ্যে বিশ্বখ্যাত খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড ওয়ালমার্টে জুতা রপ্তানি করেছে তারা। আগামী জানুয়ারিতে স্কেয়ার্সের জন্যও জুতা পাঠাবে তারা। গত অর্থবছরে মোট আড়াই কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি করেছে আরএফএল। বর্তমানে তারা চারটি কারখানায় জুতা উৎপাদন করছে। শিগগিরই কারখানার সংখ্যা আরেকটি বাড়বে।
এ নিয়ে আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আর এন পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক যা–ই হোক না কেন, যেসব ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে জুতা উৎপাদন করে স্বচ্ছন্দ পাবে, তারা থাকবে। আশা করছি, বাজারটিতে আমাদের রপ্তানি দিন দিন বাড়বে।’