ফেনী জেলার ব্যস্ততম আঞ্চলিক মহাসড়ক ফেনী-বিলোনিয়া সড়ক। ফুলগাজীসহ আশপাশের উপজেলার মানুষদের বিলোনিয়া স্থলবন্দরে যাওয়া-আসার একমাত্র মাধ্যম হলো এ সড়ক। অবশেষে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি দুই লেনে উন্নীত হচ্ছে। এতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বাণিজ্য বাড়বে।
জানা গেছে, বর্তমানে সড়কটির প্রস্থ ৫ দশমিক ৫০ মিটার (১৮ ফুট)। উভয় পাশে ৪ দশমিক ৮০ মিটার করে বাড়ানো হচ্ছে। এতে মোট প্রস্থ হবে ১০ দশমিক ৩০ মিটার (প্রায় ৩৪ ফুট)। তিনটি লটে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এর মধ্যে দুটি লটের কাজ  পেয়েছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ও একটি পেয়েছে মাইশা কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। তবে এখনও কাজ শুরু করেনি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং।
কাজ চলছে, দুর্ভোগও বাড়ছে: ফেনী শহরের টেকনিক্যাল মোড় থেকে কাজ শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয়েছে ফুলগাজী বাজারের উত্তর প্রান্ত থেকে। ইতোমধ্যে মুন্সীরহাট থেকে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজ পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশে কাজ চলছে। ফুলগাজী বাজারের একটি অংশে রিজিড পেভমেন্ট সম্পন্ন হওয়ায় সড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
তবে বিভিন্ন অংশে একসঙ্গে কাজ চলায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। বৈদ্যুতিক পিলার ও গাছ অপসারণ না করেই সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। ফলে কাজের গতি ধীর হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই দুর্ঘটনাপ্রবণ। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, সংকীর্ণতা ও সংস্কারের অভাবে গত এক বছরে অন্তত ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গত মে মাসে আনন্দপুরে, জুনে গাইনবাড়িতে এবং এপ্রিল মাসে ফুলগাজীর কলাবাগানে একজন নিহত হন। এসব দুর্ঘটনার পর সড়ক প্রশস্ত করার দাবি জোরালো হয়।
ভূমি অধিগ্রহণে অনিশ্চয়তা, ক্ষোভ: ফেনী-বিলোনিয়া সড়কের দুই পাশে রয়েছে কমপক্ষে ১০টি বাজার। রয়েছে অসংখ্য দোকান, ভবন, নাল জমি। কিন্তু এখনও ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়নি। মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এখনও কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। ফলে তারা কিছুটা চিন্তিত।
ফুলগাজী বাজারের আবদুল আজিজ, কাজী আরাফা মঞ্জিলের মালিক আব্দুল জলিল বলেন, ‘সড়ক বড় করা হলে আমার ভবনের সামনের পিলার ভাঙা লাগতে পারে, তথন তো আমার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।’ দোকান মালিক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার দোকানের অর্ধেকই চলে যাবে। আমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’ ফুলগাজী বাজারের ব্যবসায়ী মিলন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার ছয়তলা ভবনের বড় অংশ ভেঙে পড়তে পারে। কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনও কোনো নোটিশ পাইনি।’ ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে জায়গা ছেড়ে স্থাপনা তৈরি করেননি কেন? এই প্রশ্নের জবাবে অবশ্য তারা চুপ ছিলেন।
আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলেজের প্রভাষক জহিরুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘সড়ক প্রশস্ত হচ্ছে, আমাদের 


দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে চলেছে। তবে প্রতিবছর ফুলগাজী বাজার অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। তাই পুরো বাজারে রিজিড পেভমেন্ট (কনক্রিট ঢালাই) করলে বন্যার পানি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।’
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : ফেনী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ‘ফেনী-বিলোনিয়া সড়ক স্ট্যান্ডার্ড টু লেনে উন্নীত হচ্ছে। এটি সময়সাপেক্ষ কাজ। ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক প রশস ত

এছাড়াও পড়ুন:

১০ বছরে সড়কে ধুয়েমুছে সাফ ৪ হাজার কোটি টাকা

চট্টগ্রামের ‘লাইফ লাইন’খ্যাত পোর্ট কানেকটিং সড়ক (পিসি রোড)। ২০২২ সালের নভেম্বরে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার ও উন্নয়নকাজ শেষ করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এক বছর না যেতেই সড়কটিতে গর্ত তৈরি হয়। এখন অনেকাংশে সড়কটি যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরের চার হাজারের বেশি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। শুধু এটি নয়, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই চট্টগ্রাম নগরের অধিকাংশ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কগুলো সংস্কারে গত এক দশকে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। প্রতিবছর সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারে গড়ে ৪০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রতিবছরই বর্ষার বৃষ্টিতে ৪০০ কোটি টাকার কাজ ধুয়েমুছে গেছে। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা বলছেন, ভারী বর্ষণ ও ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়ক নষ্ট হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের কাজ ও পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় এক মৌসুমেই সড়ক বেহাল হয়ে পড়ে। 
প্রতিবছর বর্ষা এলে নগরে জলাবদ্ধতা হয়। দফায় দফায় ডুবে যায় সড়ক। পানি নামার পর ভেসে উঠে সড়কের কঙ্কাল। ধুয়েমুছে যায় সড়কের বিটুমিন। সড়কে তৈরি হয় বড় বড় গর্ত। নুড়ি পাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে সড়ক। ঘটে দুর্ঘটনা। এসব গর্তে পড়ে অতীতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। চট্টগ্রাম নগরের সড়ক সংস্কারে গত ১০ বছরে অন্তত ছয়টি প্রকল্প নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এসব প্রকল্প ও নিজস্ব অর্থায়নে রাস্তা, ফুটপাত ও সংস্কারের কাজে ব্যয় করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়ক সংস্কারে ব্যয় করা হয়েছে ৭২৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া নগরের সড়কের উন্নয়নে আড়াই হাজার কোটি টাকা ও কভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্টের আওতায় ২৬৭ কোটি টাকার সংস্কারকাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ও করা হয়েছে। এত ব্যয়ের পরও সংস্কারের বছর না পেরুতেই সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়ে। চলতি বর্ষা মৌসুমে নগরের অন্তত ১০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরে সড়ক রয়েছে ১ হাজার ৪৪২ কিলোমিটার। জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে সড়ক ডুবে যায়। বিটুমিনের রাস্তায় পানি জমে থাকলে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। সড়ক যাতে টেকসই হয় এ জন্য সিসি ও ব্লক দিয়ে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিতে হবে।’ 
সরেজমিন দেখা যায়, নগরের পোর্ট কানেক্টিং সড়কের নিমতলা থেকে বড়পোল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। একদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্পের কাজ করছে সিডিএ। অন্যদিকে সুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ করছে ওয়াসা। এ জন্য সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। কাজ শেষে প্যাচওয়ার্ক করা হয়নি। ইটের খোয়া দিয়ে চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। ভারী যানবাহন চলাচল ও বৃষ্টিতে খোয়া উঠে গিয়ে সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। নগরের নিমতলা থেকে তালতলা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল বেশি। সড়কটিতে যাত্রীবাহী যানবাহনের পাশাপাশি বন্দরের পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, ট্রেইলার ও প্রাইমমুভার হেলেদুলে চলছে। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট ট্রেইলার উল্টে গিয়ে অটোরিকশার ওপর পড়ে। এতে তিনজন নিহত হন। সড়কটি সংস্কার ও উন্নয়ন শেষে ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এই এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি সড়কটি দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘সড়কটি সংস্কারের বছর না পেরুতেই নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর জোড়াতালির সংস্কার করা হয়েছিল। এখন ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কটির বেহাল দশা।’
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের শেখ মুজিব সড়কের বারিক বিল্ডিং ও রশিদ বিল্ডিং এলাকায়ও বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ সড়কটিও বন্দরের পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া নগরের বিমানবন্দর সড়কের সিইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, কাস্টমস ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে নাভিশ্বাস উঠছে যাত্রীদের। এছাড়াও নগরের মেরিনার্স সড়ক,  জামালখান সড়ক, শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়ক, সিডিএ অ্যাভিনিউ, শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক, আরাকান সড়ক, মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়ক, বায়েজিদ সড়ক, ঢাকা ট্রাঙ্ক (ডিটি) রোড, হালিশহর সড়ক, কাপাসগোলা সড়ক, স্ট্র্যান্ড রোড ও আলকরণ রোড বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসব সড়কের পিচ উঠে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত।
এছাড়া নগরের ফকির মোহাম্মদ সড়ক, কবির আহমদ সওদাগর সড়ক, আকমল আলী সড়ক, প্রাণহরি দাস সড়ক, হালিশহর আবাসিক এলাকার একাধিক সড়ক, শুলকবহরের আবদুল হামিদ সড়ক, নূর আহমদ সড়ক, জুবিলী সড়ক, আমবাগান সড়ক, প্রবর্তক মোড় থেকে দুই নম্বর গেট মোড়, সিডিএ অ্যাভিনিউ, কে বি আমান আলী সড়ক, ইশান মহাজন সড়কের অবস্থা বেহাল।
শুধু নগরের মূল সড়ক নয়, অলিগলির সড়কেরও বেহাল দশা। ওয়াসার পাইপ লাইন বসানোর জন্য দক্ষিণ কাট্টলীর প্রাণ হরিদাশ রোডে খোঁড়াখুড়ি করা হয়েছিল। সেটি আর সংস্কার করা হয়নি। এখন গাড়ি চলাচলতো দূরের কথা মানুষ চলাচলের উপযোগীও নেই সড়কটি। এই এলাকার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি হলে সড়কটি চাষের জমিতে পরিণত হয়। তখন কোন গাড়িও আসতে চায় না। কাদা মাড়িয়ে মানুষকে যাতায়াত করতে হয়।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, ‘ভারী বর্ষণের কারণে নগরের বেশ কিছু সড়কের অবস্থা খারাপ। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ওয়াসা এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সিডিএ বিভিন্ন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এসব কারণে কয়েকটি সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই মুহূর্তে বড় ধরনের সংস্কার করা যাচ্ছে না। আপাতত প্রাথমিকভাবে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে সংস্কার করে দেওয়া হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ বছরেও হলো না ৬৫০ মিটার সেতু
  • ‘এদেশে কেউ বিয়ে করতিও চায় না, দিতিও চায় না’
  • নির্বাচনে কোন দল কত ভোট পেতে পারে, জানালেন তরুণরা
  • আগামী নির্বাচনে ৩৮.৭৬% ভোট পেতে পারে বিএনপি
  • শিশু শিক্ষার্থীর লাশ: জিজ্ঞাসাবাদে এখনও কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ
  • আতশবাজি নিয়ে কটাক্ষের শিকার প্রিয়াঙ্কা
  • ১০ বছরে সড়কে ধুয়েমুছে সাফ ৪ হাজার কোটি টাকা
  • মৌলিক সংস্কার না হলে স্বৈরাচারী কাঠামো বিরাজমান থাকবে
  • করাচিতে পাঁচতলা ভবন ধসে নিহত ১৪