কুয়েটে শিক্ষার্থী নির্যাতন: জড়িতদের শাস্তিসহ ৪ দাবি
Published: 4th, February 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিইসি বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জাহিদুর রহমানকে নির্যাতন করার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতসহ চার দফা দাবি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে জাস্টিস ফর কুটেটিয়ানস এর ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করা হয়।
জানা গেছে, কুয়েটের সিইসি বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো.
দাবিগুলো হলো- যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা জাহিদুরের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; অন্য যেসব শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের দায়েরকৃত অভিযোগ তদন্ত করে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জড়িতদের শাস্তি প্রদান করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহিদুরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মামলার জন্য আইনী সহায়তাসহ লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে লিখিত আশ্বাস দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী জাহিদুর রহমান তার ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার পর থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মিথ্যা অভিযোগ এনে তৎকালীন রশিদ হল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাকে নির্মমভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে পুলিশ এসে আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করতে না চাইলেও জোরপূর্বক মিথ্যা অভিযোগে মামলা নেওয়ার জন্য পুলিশকে চাপ দেয় হল প্রশাসন, কুয়েট প্রশাসন ও ছাত্রলীগ।”
তিনি বলেন, “আমার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ থাকায় পুলিশ ঝুঁকি নিয়ে আমাকে থানায় নিতে অস্বীকার করে। কিন্তু কুয়েট প্রশাসন আমাকে কুয়েটের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজের প্রিজন সেলে ভর্তি করে দিয়ে আসে।”
তিনি আরো বলেন, “এরপর ১২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন কুয়েট প্রশাসন এ ঘটনার কোন তদন্ত না করে খানজাহানআলী থানায় মিথ্যা অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়। আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকলেও চিকিৎসার সুযোগ না দিয়েই ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে আমাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।”
ভুক্তভোগী জাহিদুর বলেন, “দুই পায়ে আঘাতের ব্যথা বেশি থাকায় পায়ে ভর করে হাঁটতে পারতাম না। এই পরিস্থিতিতে স্ক্রাচে ভর করে ৫১ দিন হাজতবাস করি। ৫১ দিন পর ২০২২ সালের ২ নভেম্বর আমার জামিন হয়। কিন্তু ক্যাম্পাসে ফিরে কুয়েট প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাইলেও তারা তা দিতে অস্বীকার করে। পরে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হুমকি ও হামলার ভয়ে আমি কুয়েট ছাড়তে বাধ্য হই। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর গত ১০ আগস্ট কুয়েটে আবার ফেরত আসি।”
ভুক্তভোগী জাহিদুর আরো বলেন, “১৭ সেপ্টেম্বর আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এ জুলুমের অভিযুক্তদের নামে কুয়েট প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ ও মানববন্ধন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েট প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ১০ জনকে কুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং তিন জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।”
ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জাবিতে হলের নির্মাণ খরচের নথিপত্র চেয়ে প্রকল্প কার্যালয়ে তালা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নির্মিত ছয়টি আবাসিক হলের নির্মাণকাজের সব খরচের নথিপত্র দেওয়ার দাবিতে প্রকল্প কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রকল্প কার্যালয়ের ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন জাকসুর দুজন প্রতিনিধিসহ ছয়টি হলের সংসদের প্রতিনিধিরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পায় বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রকল্পের আওতায় ১০ তলাবিশিষ্ট ছয়টি হল নির্মাণ করা হয়। ২০২৩ সালে এসব হল উদ্বোধন করা হয়।
নির্মিত আবাসিক হলগুলো নিয়ে প্রকল্পের শুরু থেকেই ডিপিপি জালিয়াতি, তৎকালীন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে অর্থ প্রদান, অব্যবস্থাপনাসহ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।
সম্প্রতি ভূমিকম্পের পর নতুন হলগুলোর দেয়ালে ফাটল ও বিভিন্ন ফ্লোরে পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনায় নতুন করে দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হলের নির্মাণ খরচের নথিপত্র চেয়ে প্রকল্প কার্যালয়ে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ, হলভবনের নিরাপত্তা এবং শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রশ্নে কোনো তথ্য গোপন করা চলবে না। দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলের নির্মাণ খরচের নথিপত্র প্রকাশ করলে তবেই প্রকল্প অফিসের তালা খোলা হবে।
তাদের দাবি, প্রকল্পের সয়েল টেস্ট রিপোর্ট, স্ট্রকচারাল ডিজাইন, অথরিটি অ্যাপ্রুভাল শিট, আর্থিক হিসেব, ফেজ ওয়ানের ডিপিপি শিডিউল, কনস্ট্রাকশন শিডিউল, কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ডিটেইলস, তদারক কমিটির তালিকা, টেন্ডার দরপত্রের তথ্য পাবলিক করতে হবে।
এ বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হল সংসদের ভিপি সিফাতুল্লাহ বলেন, ‘‘সকাল থেকে বিক্ষোভ করলেও সাড়ে ৪ ঘণ্টা পরে পিডি দাবি শুনতে আসেন। এটা খুবই দুঃখজনক। ভূমিকম্প হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন। এখন পর্যন্ত তারা দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা যখন নির্মাণ খরচের নথিপত্রের জন্য এসেছি। তারা বিলম্ব করছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, প্রশাসন কিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’
ঢাকা/আহসান/রাজীব