খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিইসি বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জাহিদুর রহমানকে নির্যাতন করার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতসহ চার দফা দাবি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে জাস্টিস ফর কুটেটিয়ানস এর ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করা হয়।

জানা গেছে, কুয়েটের সিইসি বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো.

জাহিদুর রহমানকে নির্যাতন করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং ৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় বিশ্ববিদ্যায় প্রশাসন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

দাবিগুলো হলো- যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা জাহিদুরের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; অন্য যেসব শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের দায়েরকৃত অভিযোগ তদন্ত করে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জড়িতদের শাস্তি প্রদান করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহিদুরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মামলার জন্য আইনী সহায়তাসহ লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে লিখিত আশ্বাস দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী জাহিদুর রহমান তার ওপর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার পর থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মিথ্যা অভিযোগ এনে তৎকালীন রশিদ হল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাকে নির্মমভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে পুলিশ এসে আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করতে না চাইলেও জোরপূর্বক মিথ্যা অভিযোগে মামলা নেওয়ার জন্য পুলিশকে চাপ দেয় হল প্রশাসন, কুয়েট প্রশাসন ও ছাত্রলীগ।”

তিনি বলেন, “আমার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ থাকায় পুলিশ ঝুঁকি নিয়ে আমাকে থানায় নিতে অস্বীকার করে। কিন্তু কুয়েট প্রশাসন আমাকে কুয়েটের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজের প্রিজন সেলে ভর্তি করে দিয়ে আসে।”

তিনি আরো বলেন, “এরপর ১২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন কুয়েট প্রশাসন এ ঘটনার কোন তদন্ত না করে খানজাহানআলী থানায় মিথ্যা অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়। আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকলেও চিকিৎসার সুযোগ না দিয়েই ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে আমাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।”

ভুক্তভোগী জাহিদুর বলেন, “দুই পায়ে আঘাতের ব্যথা বেশি থাকায় পায়ে ভর করে হাঁটতে পারতাম না। এই পরিস্থিতিতে স্ক্রাচে ভর করে ৫১ দিন হাজতবাস করি। ৫১ দিন পর ২০২২ সালের ২ নভেম্বর আমার জামিন হয়। কিন্তু ক্যাম্পাসে ফিরে কুয়েট প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাইলেও তারা তা দিতে অস্বীকার করে। পরে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হুমকি ও হামলার ভয়ে আমি কুয়েট ছাড়তে বাধ্য হই। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর গত ১০ আগস্ট কুয়েটে আবার ফেরত আসি।”

ভুক্তভোগী জাহিদুর আরো বলেন, “১৭ সেপ্টেম্বর আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এ জুলুমের অভিযুক্তদের নামে কুয়েট প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ ও মানববন্ধন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েট প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ১০ জনকে কুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং তিন জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।”

ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অনেক অগ্রগতি, তবে কিছু জটিলতাও আছে

সংশোধিত শ্রম আইনে অনেক অগ্রগতি আছে। শ্রমিকের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে পরিধি বাড়ানো হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শ্রমিকের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এত দিন মধ্যম সারির কর্মীদের কোনো সুরক্ষা ছিল না। এ ছাড়া সংশোধিত আইনে গৃহশ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও তাঁদের পরিপূর্ণ সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। তবে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ পাবেন তাঁরা।

এ ছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন আবেদন সহজ করা হয়েছে। কত জন শ্রমিকের সম্মতি লাগবে, সেটি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। দর–কষাকষিতে ফেডারেশনগুলোর ভূমিকা আরও স্পষ্ট করা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য ভবিষ্য তহবিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একটি জাতীয় সামাজিক সংলাপ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি কর্তৃপক্ষ করার কথা বলা হয়েছে। এগুলো ইতিবাচক অগ্রগতি।

সংশোধনের পর কিছু ঘাটতি ও জটিলতা রয়ে গেছে। যেমন গৃহশ্রমিককে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকেরা এখনো আইনি সুরক্ষার বাইরে রয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত গাড়িচালক, আউটসোর্সিংকর্মী, দৈনিক ভিত্তিক কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা ও দর–কষাকষির জন্য সংগঠন করার অধিকার দেওয়া এখন সময়ের দাবি হয়ে পড়েছে।

এখন থেকে ন্যূনতম ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যাবে। এটি বড় কারখানাগুলোতে সুফল দিলেও ছোট কারখানার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করবে। কোনো কারখানায় ৫০ জন শ্রমিক থাকলে কমপক্ষে ২০ জন, অর্থাৎ ৪০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। কারখানার মোট শ্রমিক সংখ্যা ৩০ হলে ৬০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। যেহেতু দেশের অধিকাংশ কারখানা ছোট, সে কারণে এই জটিলতায় শ্রমিকের সুরক্ষা বিঘ্নিত হবে।

একটি কারখানায় পাঁচটি ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ প্রতিষ্ঠানে সমস্যা সৃষ্ট করবে না যদি সেখানে সংগঠন করার উপযুক্ত পরিবেশ থাকে। একটি ইউনিয়ন যদি কার্যকর হয়, তাহলে আর ইউনিয়ন হবে না। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কেউ যেন ইউনিয়ন করার প্রতিযোগিতায় না নামে, সেটি তদারকি করতে হবে।

জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের কোনো নির্দেশনা সংশোধিত শ্রম আইনে নেই। এটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তায় আরও কড়াকড়ি দরকার ছিল। সব মিলিয়ে বললে, আমরা এক ধাপ এগিয়েছি। আরও এগোতে হবে। তার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

সৈয়দ সুলতান উদ্দীন আহমেদ, সাবেক শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান

সম্পর্কিত নিবন্ধ