বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভে দিনভর উত্তাল গাজীপুর
Published: 9th, February 2025 GMT
সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গাজীপুর। সেখানে হামলায় আহত সাতজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার দিনভর জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। হামলায় জড়িতদের আওয়ামী লীগের লোক দাবি করে তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আলটিমেটাম দিয়েছে তারা। এদিকে সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে সেখানে বৈষম্যবিরোধীদের একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংগঠনের নেতাকর্মীর ভাষ্য, এর আগে শুক্রবার রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ধীরাশ্রম এলাকায় আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে লুটপাটের খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা তা বন্ধ করতে যান। এর পর সেখানে তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন। এ ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই রাতেই ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনার পর রাতেই প্রতিবাদ জানিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। শনিবারও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ী সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা যান। তাদের অবস্থানের কারণে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম কর্মসূচিতে যোগ দেন।
সারজিস বলেন, খুনি হাসিনা, খুনি জাহাঙ্গীরের দোসররা গাজীপুরে যদি আবার উৎপাত করতে চায়, ছাত্র-জনতা তাদের আর ছাড় দেবে না। শুক্রবার আমাদের অনেক সহযোদ্ধাকে তারা রক্তাক্ত করেছে। আমাদের সহযোদ্ধাদের তারা জীবননাশের হুমকি দিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, যে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে আপনাদের ওই সরকারে বসিয়েছে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে? যে পুলিশ প্রশাসন নতুন করে ওই চেয়ারগুলোতে বসিয়েছে, সেই পুলিশ প্রশাসন কেন বাংলা সিনেমার মতো ঘটনা ঘটার পর রাজপথে আসে? তিনি আরও বলেন, খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনও গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এই সন্ত্রাসীরা এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার যোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার, স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়, পুলিশ যদি আজকে (শনিবার) রাতের মধ্যে শুক্রবারের হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারে, তাহলে আমাদের তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যান গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান। এ সময় তিনি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। পরে হাসনাত ও সারজিসের উপস্থিতিতে ছাত্র-জনতার উদ্দেশে নাজমুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতের ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। হামলাকারী কাউকে ছাড়া হবে না। যেসব পুলিশ রেসপন্স করতে দেরি করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘আমি শুনেছি, আমার ওসি (সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান) দুই ঘণ্টা পর আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমি এখানে দাঁড়িয়ে বললাম, তাঁকে সাসপেন্ড (বরখাস্ত) করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দমনের জন্য অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করা হবে।’
মহানগর পুলিশের কমিশনার হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিকেল ৫টার দিকে মিছিল করতে করতে ফিরে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের কয়েকজন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘটনার বিষয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় শহরের জোড়পুকুরপাড়ের দিক থেকে মোটরসাইকেলে করে এসে এক ব্যক্তি গুলি করে পালিয়ে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য মোবাশ্বের হোসেনের ডান হাতে একটি গুলি লাগে। সংগঠনের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গুলি ছুড়েছে।
মহানগর সদর থানার ডিউটি অফিসার এএসআই সামিউল ইসলাম বলেন, একজন মোটরসাইকেল আরোহী এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। আহত শিক্ষার্থীকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে গুলি ছোড়ার ঘটনার পর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে রাজবাড়ী সড়কে যৌথ বাহিনী তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে।
আহতদের মাথায় গুরুতর জখম
গাজীপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে মারধরে আহত সাতজনের চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাদের মাথায় ধারালো অস্ত্রের গুরুতর জখম রয়েছে। এ ছাড়া হাত-পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একজনের মাথায় অস্ত্রোপচার শেষে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। অন্যজনের মাথায় আঘাত গুরুতর। স্মৃতি হারানোর শঙ্কা রয়েছে।
গতকাল বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.
আহত সবাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র। ঢামেকে চিকিৎসাধীন অন্য পাঁচজন হলেন– ইয়াকুব (২৪), শুভ শাহরিয়ার (১৬), গৌরভ ঘোষ (২২), আবদুর রহমান ইমন (২০) ও সাব্বির খান হিমেল (২২)।
হাসপাতালে হামলায় আহত কাজী ওমর হামজা বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে ফাঁদে ফেলে আমাদের ওপরে হামলা করা হয়েছে। শুক্রবার গাজীপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিস উদ্বোধন শেষে আমরা বাসার উদ্দেশে বের হওয়ার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একটি পরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। রিসিভ করলে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বল হয়, মোজাম্মেল হকের বাসায় হামলা হচ্ছে। আমরা প্রতিরোধের জন্য একসঙ্গে প্রায় ৪০ জন সেখানে যখন গেলাম, তখন পাঁচজন শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে আমাদের দ্বিতীয় তলায় যেতে বলল। তারা নিচেই ছিল। আমরা দ্বিতীয় তলায় গেলে আটকে রেখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো শুরু করে।
চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, গাজীপুরে হামলার প্রতিবাদে গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদ ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ’ শিরোনামে আয়োজিত এই কর্মসূচি শুরু হয় বিকেলে। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার গায়েবানা জানাজাও পড়া হয়। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ বলেন, হামলা ও হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ সবার বিচার করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জে প্রতিবাদ সমাবেশ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে নারায়ণগঞ্জেও। গতকাল বিকেলে চাষাঢ়ায় জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শুরুর আগে শহীদ মিনারের দেয়ালে আঁকা মুক্তিযুদ্ধের গ্রাফিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির মুখমণ্ডল ইট দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। পরে লাল রং দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি ঢেকে দেয় বিক্ষুব্ধরা। এ সময় বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক নীরব হাসানসহ অনেকে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম জ ম ম ল হক র ব ন র য়ণগঞ জ ম ছ ল কর ঘটন র প র রহম ন র ঘটন য় ত কর ম কর ম র আম দ র আওয় ম অবস থ এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
কমিউনিষ্ট পার্টির হাফিজের বিরুদ্ধে ইসমাইলের সংবাদ সম্মেলন
নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে হুমকি ও মে দিবসের সমাবেশ বানচাল করার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং ১০ টি শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় জোট, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির অন্যতম শ্রমিক নেতা এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল এগারোটায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শ্রমিক নেতা এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল অভিযোগ তুলে বলেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন দীর্ঘ ২০ বছর যাবত শ্রমিকদের ন্যায় সংঘত অধিকার আদায়ে দক্ষতা ও সুনামের সংগে দায়িত্ব শীল ভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে।
ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মহান মে দিবস ও আমাদের শ্রমিক ফেডারেশনের সপ্তম জেলা সম্মেলন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের চাষাড়া শহীদ মিনারে স্থান বরাদ্দের জনা যথানিয়মে আবেদন করিলে সিটি করোপরেশন লিখিতভাবে ১ মে, বৃহস্পতিবার, বিকাল ৪ টা হতে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করে এবং আমরা নির্ধারিত ফি প্রদান করি।
তিনি বলেন, অতঃপর বিশিষ্ট কুট ব্যবসায়ী, পাথর ব্যবসায়ী ও কন্ট্রাকটার এবং কমিউনিস্ট পার্টি, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি পদে থাকা মোঃ হাফিজ সে বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, গত ১৫ বছর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন তার কথায় চলেছে।
তার ক্ষমতা জোড়ে সমাবেশের স্থান বাতিল করে দিবে। আমাদের জেলার সম্মেলন তিনি অনুষ্ঠিত হতে দিবেন না। আমাদের শ্রমিক সম্মেলন বানচাল করে দিবেন। আমাদের জেলা সম্মেলন হতে দিবেন না।
অতঃপর আমরা এবিষয়ে তার সংগে একাধিক বার যোগাযোগ করিলে সে নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক জোটের নাম ভাঙ্গিয়ে বলে শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক জোটের প্রোগাম করবে।
আমরা সাংস্কৃতিক জোটের সম্মানিত নেতৃবৃন্দের সংগে আলাপ করিয়া জানিতে পাড়ি সাংস্কৃতিক জোট এই ধরনের কোন প্রোগামের ঘোষনা দেয় নাই বা তাহারা সিটি কর্পোরেশনে এই জন্য কোন আবেদন করেন নাই। মোঃ হাফিজ এই বিষয়ে মিথ্যা প্রচারনা চালাচ্ছে।
আমাদের ধারনা সে আমাদের শ্রমিক সম্মেলন বানচাল করিয়া উদ্দেশ্যমূলক ভাবে নারায়ণগঞ্জ শহরের শান্তি শৃংক্ষলা অবনতি ঘাটাইতে পারে। এবং সে এখনো একই স্থান বিনা অনুমোদিত সময়ে পোস্টার দিয়া প্রচার চালাইতেছে।
উল্লেখ্য, তাহার এই কর্মকান্ড স্থগিত করার জন্য কমিউনিস্ট পার্টিসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে অবগত করিলেও তাহার কর্মকান্ড স্থগিত করে নাই। যার কারনে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় একটি জিডি এন্ট্রি করি, জিডি এন্ট্রি নং-১৫৩৯।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি নাজমূল হাসান নান্নু, জেলা কমিটির সভাপতি এফ এম আবু সাঈদসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।