মাইন খুঁজে মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে ইঁদুরের বিশ্ব রেকর্ড
Published: 8th, April 2025 GMT
ইঁদুর সাধারণত ক্ষতিকর হিসেবেই পরিচিত। তবে ব্যতিক্রম রনিন। ঘ্রাণশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছে এই ইঁদুর। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কীভাবে? আসলে গন্ধ শুঁকে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা মাইন খুঁজে বের করে সেটি। এই কাজ করে ইতিমধ্যে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের খাতায় নামও লিখিয়েছে রনিন।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইঁদুর হিসেবে সবচেয়ে বেশি স্থলমাইন খুঁজে বের করে বিশ্ব রেকর্ড করেছে রনিন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ার সিয়েম রিপ এলাকার কাছের একটি অঞ্চলে ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০৯টি স্থলমাইন এবং অবিস্ফোরিত গোলা খুঁজে বের করেছে ইঁদুরটি।
পাঁচ বছর বয়সী রনিনের জন্ম তানজানিয়ায়। সাধারণ পোষা ইঁদুরের চেয়ে এটির আকার বেশ বড়—লম্বায় দুই ফুটের বেশি। আর ওজন ২ দশমিক ৬ পাউন্ড। এসব তথ্য জানিয়েছে বেলজিয়ামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এপিওপিও। বিভিন্ন প্রাণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকা তারা। ১০০টির বেশি ইঁদুরকে বিস্ফোরণ খুঁজে বের করার প্রশিক্ষণ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রনিন সেগুলোর একটি।
এপিওপিওর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ইঁদুরগুলো মাত্র ৩০ মিনিটে একটি টেনিস কোর্টের আয়তনের সমান এলাকায় স্থলমাইন খুঁজে বের করতে পারে। একই কাজ করতে মেটাল ডিটেক্টরের (ধাতব বস্তু শনাক্তকারী যন্ত্র) চার দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
রনিনের আগে সবচেয়ে বেশি স্থলমাইন খুঁজে বের করার রেকর্ড ছিল মাগাওয়া নামের আরেকটি ইঁদুরের। ওই ইঁদুরকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল এপিওপিও। সেটি পাঁচ বছরে ৭১টি স্থলমাইন ও ৩৮টি অবিস্ফোরিত গোলা খুঁজে বের করেছিল। ২০২২ সালের জানুয়ারি ইঁদুরটির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।
রনিন যে এলাকায় স্থলমাইন খুঁজে বের করে, সেটি কম্বোডিয়ার প্রেয়াহ ভিহেয়ার প্রদেশে অবস্থিত। বিংশ শতকে কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাতের পর এখনো প্রদেশটির মাটির নিচে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্থলমাইন রয়ে গেছে। এ ছাড়া ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় এ অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই গোলার অনেকগুলো এখনো অবিস্ফোরিত অবস্থায় সেখানে পাওয়া যায়। এপিওপিওর হিসাবে, কয়েক বছর ধরে তাদের মাইনমুক্ত করার প্রচেষ্টার পরও এখনো কম্বোডিয়ায় মাটির নিচে ৪০ থেকে ৬০ লাখ অবিস্ফোরিত মাইন রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অব স ফ র ত ব র কর ম ইন খ র কর ড
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫