ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কোনো অনুমতি ছাড়াই রাজধানীর গেন্ডারিয়া এলাকার ধূপখোলা মাঠে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

সরকারি এ জমিটি দখল করে স্থানীয় ‘ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব’ এর উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়। আয়োজকরা এ মেলার কারণে সরকারি এ জায়গা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী জনসাধারণের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেলাটি গত ৬ এপ্রিল শুরু হয়। চলবে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত চলবে। বৈশাখী মেলা সাধারণত তিনদিনের বেশি হয় না। কিন্তু সেখানে টানা ১৩ দিন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজকরা জায়গার বিনিময়ে স্টল মালিকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফি আদায় করছেন। মেলার পুরো মাঠ দখলের কারণে ওই এলাকার বাসিন্দারা হাঁটাহাটি, ব্যায়াম এবং খেলাধুলার মতো দৈনন্দিন কার্যকলাপে অংশ নিতে পারছে না।

আরো পড়ুন:

দলীয় সিদ্ধান্ত পেলে মেয়র পদে শপথ: ইশরাক

প্রথম কার্যদিবস
বস্তিবাসী ও হরিজনদের প্রতিনিধির সঙ্গে সভা ডিএনসিসি প্রশাসকের

সরেজমিনে দেখা গেছে, শতাধিক স্টলে বিভিন্ন পণ্যে বিকিকিনি চলছে। পাশাপাশি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বেশ কয়েকটি রাইডও রয়েছে। ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব নামে একটি স্থানীয় স্পোর্টস ক্লাব এ মেলার আয়োজন করেছে। ক্লাবটির দাবি, মেলাটি তাদের কার্যক্রমের জন্য তহবিল সংগ্রহের একটি মাধ্যম।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা কাওসার বলেন, “এটি আমাদের একমাত্র খোলা মাঠ। প্রতিদিন শত শত মানুষ এখানে হাঁটতে, ব্যায়াম করতে এবং খেলতে আসে। এখন পুরো মাঠটি মেলার দখলে চলে গেছে। শিশুদের খেলার জায়গা নেই। রাতে শব্দ, উজ্জ্বল আলো এবং সাউন্ড সিস্টেম অসহনীয়। মাঠে এভাবে অননুমোদিত ব্যবহার ভবিষ্যতে আরো বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।”

স্থানীয় কিশোর সাদিব, সে মাঠে নিয়মিত ফুটবল খেলে। সে জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে সে খেলতে পারছে না। তাদের অনেকেই খেলা বন্ধ করে দিয়েছে। কোথাও খুব বেশি খোলা জায়গা নেই। এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হলে তারা কোথায় যাবে, প্রশ্ন সাদিবের।

প্রয়োজনীয় অনুমোদন সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লাবের সদস্য সচিব এবং ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর আব্দুল কাদের বলেন, “এ মাঠটি ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের, তাই মেলা আয়োজনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। আমরা বছরের পর বছর ধরে এখানে মেলা আয়োজন করে আসছি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এটি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা আবার এটি শুরু করেছি। আমরা ডিএমপি এবং সিটি কর্পোরেশন উভয়ের কাছে আবেদন করেছি। ডিএমপি আমাদের অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু ঈদের ছুটির কারণে সিটি কর্পোরেশন কোনো সাড়া দেয়নি।”

সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন ছাড়া মেলা আয়োজন করা বৈধ কিনা- এ প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে গেছেন। 

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) কায়সার মোহাম্মদ ফারাবী বলেন, “ধুপখোলা মাঠে মেলা আয়োজনের জন্য আমরা কোনো অনুমতি দেইনি। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” 

মেলার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, “জমি অনুমোদনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। আমরা কেবল নিরাপত্তার বিষয়টি দেখি। আয়োজকরা ডিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন করেন, নিরাপত্তার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, ভূমি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। যদি সিটি কর্পোরেশন মেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এসস স র জন য ড এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

ছবির নেশায় এক রাফিদ জীবনের ইতি

রেল লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের ভিডিও করার সময় উল্টো দিক থেকে আসা আরেক ট্রেনে কাটা পড়ে ইসতিয়াক আহমেদ রাফিদ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। 

শনিবার (৩ এপ্রিল) সকালে তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের আজগবি এলাকার সদাশিবপুর-হাজিপাড়ায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। 

এরআগে শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকেলে রাফিদ ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডে রেল লাইন এলাকায় রেল দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। তার বাবার নাম রেজাউল করিম। নিহত রাফিদ রাজশাহী সরকারি কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়তেন বাংলা বিভাগে। তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

নিহতের পরিবার জানায়, চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় গেছিলেন ফটোগ্রাফার ইশতিয়াক আহমেদ রাফিদ। পরীক্ষা শেষে উঠেছিলেন তার খালার বাসায়। শুক্রবার বিকেলে খালাতো ভাই ঢাকার কুর্মিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। এসময় রেল লাইনে দাঁড়িয়ে ভিডিও করার সময় অপরদিক থেকে আসা আরেক ট্রেনে কাটাপড়ে রাফিদের মৃত্যু হয়।

রাফিদের খালাত ভাই মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘রাফিদ ভাইয়া টঙ্গী থেকে কমলপুরগামী একটি ট্রেনের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করছিলেন। এমন সময় অন্য লাইনে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আরেক ট্রেনে কাটা পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’’

রাফিদ শিবগঞ্জ মডেল হাইস্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরে সে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ালেখা সম্পন্ন করেন। পরে তিনি রাজশাহী কলেজে স্নাতকের জন্য ভর্তি হন। শেষ পর্যন্ত সেখানেই অধ্যায়নরত ছিলেন। 

রাফিদের বাবা রেজাউল করিম সরকারি চাকরিজীবী। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর অফিসে কর্মরত। চাকরির সুবাদে তারা শিবগঞ্জ পৌরএলাকার দেওয়ান জাইগীর এলাকায় ভাড়া থাকতেন।

ভাড়া বাসার মালিক একেএস রোকন জানান, রাফিদ খুবই ভদ্র-শান্তশিষ্ট স্বভাবের একজন ছেলে। পড়ালেখায় যেমন মেধাবী ছিলেন। তার হাতের তোলা ছবিও খুবই চমৎকার। যে কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নাম বেশ পরিচিত।

শনিবার সকাল ৯টায় রাফিদকে দাফন করা হয় তার গ্রামের বাড়িতে। তার জানাজার নামাজে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত হন। 

জানাজায় নামাজের আগে তার বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘‘আমাদের এই মুহূর্তে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। এরমাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের উত্তম প্রতিদান দিবেন। আমার ছেলেকে ভালোবাসার জন্য তার কলেজ ও স্কুলের স্যারেরা জানাযায় অংশ নিয়েছেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন।’’

মেধাবী শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ রাফিদ রাফিদের মৃত্যুতে উপজেলা প্রশাসনসহ তার সহপাঠীরা শোক জানিয়েছেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ফটোগ্রাফি করতেন। ছবিতুলে বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন। রাফিদ মৃত্যুকালে বাবা-মা, বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ঢাকা/শিয়াম/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ