Samakal:
2025-07-12@14:17:12 GMT

আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি অনেকের

Published: 12th, July 2025 GMT

আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি অনেকের

পয়ঃনিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি হলে কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায় উঠান। বেশির ভাগ টিউবওয়েল নষ্ট। চলাচলের রাস্তাগুলোও বেহাল। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। এ চিত্র সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের।

নানা সমস্যার কারণে সুবিধাভোগীদের অনেকেই প্রকল্পের ঘরে থাকতে চান না। স্ট্যাম্পে সই করে অন্যদের কাছে বেশ কয়েকটি বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে তিনটি প্রকল্পের পাঁচটি ঘর বিক্রির প্রমাণ মিলেছে। ত্রিশ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় এসব ঘর বিক্রি করা হয়েছে।

শ্যামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি হেলাল উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ঘর বিক্রির বিষয়টি জেনেছি। এর সত্যতাও পাওয়া গেছে। বাসিন্দারা গোপনে ঘর বিক্রি করেন। ক্রেতারা বসবাস করার পর আমরা জানতে পারি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে উপজেলার আট ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৫৬টি ঘর। এরমধ্যে দেশিগ্রাম ইউনিয়নের বড় মাঝদক্ষিণায় ৪৮টি, শ্যামপুরে ৩৫টি, তালম ইউনিয়নের গুল্টা এলাকার খ্রিষ্টান মিশনারি পাড়ায় ১৩টি, গুল্টা কলেজপাড়ায় ৬টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকিগুলো বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। 

শ্যামপুর ইউনিয়নে তিনটি, বড় মাঝদক্ষিণায় ১০ থেকে ১২টি ঘর, গুল্টা কলেজপাড়ায় ১৮ থেকে ২০টিসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে সুফলভোগীরা বসবাস করেন না। এসব ঘরে তালা ঝুলছে। ব্যতিক্রম দেখা গেছে, গুল্টা খ্রিষ্টান মিশনারি পাড়ায়। এ প্রকল্পে ১৩টির ঘরে বসবাস করছেন সুফলভোগীরা। 

৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় ঘর বিক্রি 
উত্তর শ্যামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশিগ্রাম ইউনিয়নের বলদীপাড়া গ্রামের নাজমা খাতুন একটি ঘর পেয়েছিলেন। সেই ঘর তিনি উত্তর শ্যামপুর গ্রামের সাগর হোসেনের কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা দেওঘর গ্রামের জবেদা খাতুন টাগড়া গ্রামের মো.

হবুর কাছে ৫০ হাজার টাকায় ও রেজিয়া খাতুন উত্তর শ্যামপুর গ্রামের সাইদুর রহমানের কাছে ৩০ হাজার টাকায় ঘর বিক্রি করেছেন। রেজিয়া খাতুনের ঘরে ক্রেতা সাইদুর রহমানের ভাই সাইফুল ইসলাম ব্রয়লার মুরগির খামার করেছেন। বিক্রি হওয়া অন্য দুটি ঘর তালাবদ্ধ করে করে রেখেছেন ক্রেতারা। 

এ প্রকল্পে ঘর সুফলভোগী হাড়িসোনা গ্রামের জহুরুল ইসলাম, দেশিগ্রামের শারমীন খাতুন, তাড়াশের ছানা, বুলবুলি খাতুনসহ ১০ থেকে ১২ জন তাদের জন্য বরাদ্দ ঘরে থাকেন না। দু’একজন কাজের সুবাদে ঢাকা বা অন্যত্র থাকলেও বেশির ভাগ বাসিন্দা আগের বাসস্থানেই রয়ে গেছেন। ঘর তালাবদ্ধ রেখে তারা বিক্রির পাঁয়তারা করছেন বলে জানা গেছে।

একই চিত্র দেখা গেছে বড় মাঝদক্ষিণা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এ প্রকল্পে বাসিন্দা তেঘরী গ্রামের ফয়েজ আলী ও কর্ণঘোষ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ১ লাখ টাকা করে তাদের নামের বরাদ্দের ঘর বিক্রি করেছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে ফয়েজ আলী ও আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা কথা বলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড় মাঝদক্ষিণা আশ্রয়ণের এক বাসিন্দা বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি হয়েছে। আপনারা খোঁজ নিলে তথ্য পাবেন।’

দেশিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসাক বলেন, ‘ঘর বিক্রি, ঘরে না থাকা বিষয়গুলো অনেকেই জানান। তবে লিখিতভাবে কেউ জানান না।’

কেন থাকেন না সুফলভোগীরা
প্রকল্পের সুফলভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে যারা প্রকল্পে বসবাস করছেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যায়। অনেক কষ্টে বসবাস করতে হয় তাদের। বেশির ভাগ সুপেয় পানির নলকূপ নষ্ট। কোনো কাজ না থাকায় ছেলেমেয়েদের মুখে দুমুঠো খাবার অনেক সময় জোটে না। এ কারণে অনেকেই ঘরে তালা দিয়ে চলে গেছেন শহরে কাজের সন্ধানে। এছাড়া তদবির, জনপ্রতিনিধিদের পছন্দের লোকজন বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সামর্থ্যবানরাও ঘর বরাদ্দ পান। সংগত কারণে তারা সেই ঘরে থাকেন না। বিক্রি করে দিয়ে চলে যান। এ সব তথ্য জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের কয়েকজন প্রকল্প সভাপতি।

শ্যামপুর প্রকল্পের বাসিন্দা মকবুল হোসেন জানান, এ প্রকল্পের সাতটি টিউবওয়েলের ৩টিই নষ্ট। নালাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো। আশ্রয়ণের ভেতরে ও বাইরে চলাচলের রাস্তা কাদামাটিতে একাকার। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। এ সব কারণেও অনেকে সরকারি ঘর বরাদ্দ পেলেও তাতে থাকতে চান না।

উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি ঘর বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তি নিজ সন্তান ছাড়া অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন না। তাড়াশে গোপনে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর বা টিপসইয়ের মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়া ঘর বিক্রি করছেন সুফলভোগীরা।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, ‘ঘর বিক্রির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এখন জানলাম। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এ প রকল প প রকল প র স ফলভ গ র র বর দ দ ঘর ব ক র বর দ দ প করছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

সোহাগ হত্যাকাণ্ড আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ করেছে: ব্যারিস্টার আনিস

পুরোনো ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা আই‌নের শাসন‌কে প্রশ্ন‌বিদ্ধ কর‌ছে ব‌লে মন্তব‌্য ক‌রে‌ছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো  চেয়ারম‌্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

দে‌শে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে শনিবার বিকালে গুলশানে জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‌তি‌নি এ কথা ব‌লেন।

ব‌্যা‌রিষ্টার আ‌নিস ব‌লেন, ‘‘রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনা নৃশংস, বর্বর, হৃদয়বিদারক। এই ঘটনায় পুরো দেশের মানুষ স্তব্ধ, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। আইনশৃঙ্খলা প‌রি‌স্থি‌তি কতটা খারাপ হ‌লে দিনদুপু‌রে এমন অমানবিক ঘটনা ঘট‌তে পা‌রে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানীতে একজন নিরীহ নাগরিককে এভা‌বে জীবন দিতে হবে— এটা কল্পনাতীত।’’

তি‌নি ব‌লেন, ‘‘শুধু পুরান ঢাকার হত্যাকাণ্ডই নয়, দে‌শে প্রতিনিয়ত এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড  ঘটছে। এমন অমানবিকতা, এমন হিংস্রতা আমাদের মানবিক মূল্যবোধ, সমাজের নৈতিকতা এবং আইনের শাসনকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’’

এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানি‌য়ে অবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জা‌নান ব‌্যা‌রিস্টার আ‌নিস।

সভায় দ‌লের কো চেয়ারম‌্যান এ‌বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘‘দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। যারা পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারা শুধু একজন মানুষকে হত্যা করেনি, তারা রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকেই রক্তাক্ত করেছে।’’

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে হত্যা, ধর্ষণ চাঁদাবাজি ডাকাতি ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে জা‌নি‌য়ে হাওলাদার ব‌লেন, ‘‘সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত ও  উদ্বিগ্ন। মানুষ‌কে শা‌ন্তি দিতে হ‌লে সরকার‌কে যে কোনো মূল্যে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করতে হবে।’’

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তর সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন  বাবলা, প্রেসি‌ডিয়াম সদস‌্য নাজমা আকতার, মহানগর উত্তরের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন পাঠান, আমানত হোসেন,, দক্ষিণের নেতা সারফুদ্দিন আহমেদ শিপু, মাসুক আহমেদসহ জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ