চাঁপাইনবাবগঞ্জে আলাদা দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। 

রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকার সোনারমোড় ও সদর উপজেলার আমনুরা বাইপাস এলাকায় দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। 

এ তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রৃাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মতিউর রহমান।

নিহতরা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকার বেলেপুকুর মহল্লার সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাবিকুন নাহার (২০) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের উজ্জলটোলা গ্রামের মো.

আলফাজ উদ্দিনের ছেলে ইসমাইল হোসেন (৩৫)।

ওসি মতিউর রহমান জানান, জেলা শহরের সোনারমোড় জেলা আদর্শ স্কুলের সামনে শিবগঞ্জের দিক থেকে আসা একটি ট্রাক পিছন হতে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন চালক চালক ইসমাইল হোসেন। 

এসময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। রাজশাহীতে নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান।

অন্যদিকে সদর উপজেলার আমনুরা বাইপাস এলাকায় প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাবিকুন নাহার (২০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অপর একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মো. মতিউর রহমান বলেন, “সদর উপজেলায় আলাদা দুটি দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। সোনার মোড়ের দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে। দুটি ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”

ঢাকা/শিয়াম/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ সদর উপজ ল দ র ঘটন ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

তাজরীন ট্র্যাজেডি ১৩ বছর: আক্ষেপ নিয়ে বেঁচে আছেন শ্রমিকরা

দেশের পোশাক খাতের অগ্নি দুর্ঘটনার ভয়াল স্মৃতির নাম তাজরীন ট্র্যাজেডি। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর, অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতো সেদিন সকালে কাজে যোগ দিয়েছিলেন আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানার হাজারো শ্রমিক। সন্ধ্যায় হঠাৎ ভবনের আটতলায় আগুনের সূত্রপাত। মূহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। জীবন বাঁচাতে কেউ কেউ লাফিয়ে পড়েন। তবে, অনেকেই হন পুড়ে অঙ্গার। ওই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১১৭ জন শ্রমিক। আহত হন দুইশর বেশি মানুষ।

বেঁচে ফেরা অনেকেই আর ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। এখনো পুনর্বাসিত না হওয়ায় আক্ষেপ তাদের। ওই ঘটনার ১৩ বছর পূর্তি আজ। সেই দৃশ্য মনে পড়লে আঁতকে ওঠেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

‘এমন দৃশ্য জীবনে দেখিনি’
সন্ধ্যার দিকে লাগা সেই আগুনের ঘটনা আজও মনে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেদিন বাড়িতে ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ কামরুল হাসান। 

তিনি বলেন, “প্রায় ১৫ বছর ধরে আমি এখানে থাকি। ঘটনা যখন ঘটে, আমি পাশেই ছিলাম। আমার ঘরও পুড়ে যায়। কিছুই বের করতে পারিনি। বহু দুর্ঘটনা দেখছি। এত বড় দুর্ঘটনা জীবনে দেখিনি। কী যে হাহাকার মানুষের। তাদের সহায়তা করার কিছু ছিল না। মানুষ বাঁচার জন্য কত কিছু করল তবে, বাঁচতে পারেনি। তারা কাজ করছিল।” 

এই ব্যক্তি বলেন, “আগুন লাগল সন্ধ্যার দিকে। মানুষ লাফিয়ে পড়েছে ওয়ালের ওপর, রডের ওপর। বাঁচার কি আকুতি। কাকুতিমিনতি করেছে। সারা রাত ধরে সেই আগুন জ্বলছিল। অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ সারা রাত ছিল।” 

অপর প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম বলেন, “আগুনের কথা শুনে তো দৌঁড়ে ঘটনাস্থলে যাই। দেখি, দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। তাপ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশেও। ভবনটি থেকে অনেকেই চালের ওপর লাফিয়ে পড়েছিলেন। অনেকেই পুড়ে মারা যান। সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে।”

আগুনের লেলিহান শিখা আজও ভুক্তভোগীদের চোখে ভাসে
সেদিনের আগুনের লেলিহান শিখা আজও ভয়াবহ হয়ে চোখে ফেরে ভুক্তভোগী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কাছে। আহত শ্রমিকরা অনেকে সাময়িক সহযোগিতা পেলেও পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসিত হতে না পারায় তাদের জীবনে নেমে এসেছে বেঁচেও মৃত্যু কামনার মতো যন্ত্রণা।

পোড়া শরীর, পঙ্গু দেহ নিয়ে জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। জীবিকা নির্বাহে অনেকেই শুরু করেছেন নতুন পেশা। শ্রমিকদের চাওয়া, এ স্থানে নতুন কারখানা চালু করা হোক। তাদের দাবি, আহত শ্রমিকদের বাসস্থান অথবা কোনো কর্মসংস্থানের উদ্যোগ যেন গ্রহণ করে প্রশাসন।

সবিতা রানি। তাজরিনের সুইং অপারেটর ছিলেন। ভালো বেতন পেতেন। ঘটনার দিন তৃতীয় তলায় ছিলেন। সন্ধ্যায় কারখানার ফায়ার এ্যালার্ম শুনে ভয় ঢোকে তার ভেতর। একসময় আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে তার পুরো ফ্লোরে। এরপর অনেকের সঙ্গে তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন।

সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সবিতা রানিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে শুরু হয় তার অনিশ্চিত জীবনের পথচলা।

সবিতা রানি জানান, দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে পেটের দায়ে কাজে ফিরতে চেয়েছিলেন। তবে, কারখানায় কাজ করার মতো শারীরিক ক্ষমতা হারিয়েছেন ততদিনে। অনেক কারখানায় ঘুরে কাজ না পেয়ে আহত শ্রমিকদের কয়জনকে নিয়ে কারখানা শুরু করেছিলেন, তবে পুঁজির অভাবে সেটা সম্ভব হয়নি।

এই নারী শ্রমিক বলেন, “অনেক কষ্টে একটা সেলাই মেশিন কিনে বাসায় টুকটাক কাজ করছি। আমার দিন খুব কষ্টে যাচ্ছে। ভারী কোনো কাজ করতে পারি না। ব্যথার যন্ত্রণায় প্রতিদিন রাতে কান্না করে ঘুমাই। পরিবারের ওপর বোঝা হয়ে গেছি। এ জীবন থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।”

তিনি আরো বলেন, “দুর্ঘটনার পর সরকার তাদের যে সাহায্য করেছে, তা চিকিৎসার পেছনেই শেষ হয়ে গেছে। আমরা সাহায্য চাই না, ক্ষতিপূরণ চাই। আমরা যাতে ভালোভাবে, সুস্থভাবে চলতে পারি সরকার ও বিজিএমইএ যেন এ ধরণের ব্যবস্থা করে। সরকার আশ্বাস দিয়েছে, বাস্তবায়ন করলে তাও একটু বাঁচতে পারব। যারা মরে গেছে, তারাই বেঁচে গেছেন। আমরা যারা বেঁচে আছি, দেহটা ধুঁকে ধুঁকে শেষ। ১৩ বছর চলে গেল, এখনো কিছু পেলাম না।”

সীমা আক্তার নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “তাজরীন গার্মেন্টসের জায়গাটি ১৩ বছর ধরে ফেলে রেখেছে। এটি হয় চালু করুক, না হয় আমাদের থাকার জায়গা করে দিক। আমরা তো কাজ করতে পারছি না। আমরা কোনো সহযোগিতা পাইনি। কিছু টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে কিছুই হয়নি। আমাদের কি বাঁচার অধিকার নেই। নতুন সরকারের কাছে আশা, তারা আমাদের দিকে তাকাবে। আমাদের দাবি পূরণ করবে।” 

তিনি বলেন, “নভেম্বর এলে ডাকাডাকি করে অনেকে। তবে, কিছুই পাই না। ঘর ভাড়া ও দোকানে থাকা বাকির টাকা দিতে পারি না, ওষুধের টাকা নেই। আগুনের ঘটনায় জীবনটাই শেষ হয়ে গেছে।”

নিহতের পরিবারকে সহায়তা, আহতদের চিকিৎসার দাবি শ্রমিক নেতাদের
আহত হয়ে এক দিকে শারীরিকভাবে অক্ষম, অন্যদিকে কর্মহীনতায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া শ্রমিকদের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন শ্রমিক নেতারা। তারাঅগিকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, “২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর নিশ্চিতপুরে অবস্থিত তোবা গ্রুপের গার্মেন্টস কারখানা তাজরিন ফ্যাশন লিমিটেডের মালিক দেলোয়ারের পরিকল্পিত লাগানো আগুনে ১১৪ শ্রমিক নিহত হন। বহু শ্রমিক আহত হয়ে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ এখনো দেওয়া হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানা মালিক দেলোয়ারসহ দায়ী ব্যক্তিদের বিচার হয়নি।”

তিনি বলেন, “বিগত সরকার শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারখানা মালিক দেলোয়ারসহ দায়ী ব্যাক্তিদের বিচার নিশ্চিত করেনি, বরং দলীয় পদ-পদবী দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। বর্তমান সরকার শ্রমিকদের বারবার আশ্বাস দিয়ে আসছেন, কিন্তু আশ্বাস বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ দেখছি না। সবাই শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।”

বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের (বিজিএসএফ) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অরবিন্দু বেপারী (বিন্দু) বলেন, “২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডে আগুন লাগে। মালিকপক্ষ সুপরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটায়। আজ পর্যন্ত মৃত শ্রমিকদের স্বজনরা ক্ষতিপূরণ পাননি। আহত শ্রমিকরা সুচিকিৎসা পায়নি। সহযোগিতা পায়নি। এখানে হত্যাকাণ্ড ঘটালেও আগের সরকার মালিককে নামমাত্র গ্রেপ্তার করে, তারপর তিন জামিন পান। এরপর তিনি আওয়ামী মৎসজীবী লীগের সভাপতি হয়ে দাপট দেখিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই, আগের সরকারের আমলে শ্রমিক হত্যার বিচার হয়নি, এই সরকার তদন্ত করে শ্রমিক হত্যার বিচার করবে।”

তিনি বলেন, ‘তাজরীন ফ্যাশনের যে পরিত্যক্ত জমি রয়েছে, সেখানে সরকারি অর্থায়নে একটি শ্রমজীবী হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। এর মাধ্যমে সরকার শ্রমিকদের বিনামূল্যে সুচিকিৎসা দিতে পারবে।”

অগ্নি দুর্ঘটনায় এত বছরে ক্ষতিপূরণ ও বিচার না পাওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের অবহেলাকেও দায়ী করছেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি তাদের।

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ