যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে হাইকমিশনার আবিদা ইসলামের আনুষ্ঠানিক পরিচয়পত্র পেশ
Published: 2nd, May 2025 GMT
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম বৃহস্পতিবার বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে আনুষ্ঠানিক পরিচয়পত্র পেশ করেছেন।
এদিন বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানের পর চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের কথা রাজা তৃতীয় চার্লসকে অবহিত করেন হাইকমিশনার। এ সময় হাইকমিশনার রাজা চার্লসকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানান।
হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের জনগণ গণতান্ত্রিক সংস্কারকে আলিঙ্গন করছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরও প্রসারিত হচ্ছে। হাইকমিশনার রাজা চার্লসকে জানান, যে তিনজন ছাত্রনেতাকে সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে একজন সম্প্রতি পদত্যাগ করে একটি নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন।
রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাজ্যের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাইকমিশনার। এ ছাড়া তিনি রোহিঙ্গা সংকটের নানা দিক তুলে ধরেন। রাজা চার্লস মনোযোগ দিয়ে তা শোনেন।
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য ও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত সম্পর্কে জানতে চান রাজা চার্লস। হাইকমিশনার বলেন, বৈশ্বিক কিছু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত স্থিতিশীল রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বার্ষিক ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয় বলে তাঁকে জানানো হয়।
এ সময় হাইকমিশনারের সাথে উপ–হাইকমিশনার হযরত আলী খান ও আরও কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। রীতি অনুযায়ী হাইকমিশনারের রাজার কাছে যাওয়া উপলক্ষে সেন্ট জেমসেস কোর্ট থেকে আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রা শুরু হয়। যেখান থেকে বাকিংহাম প্যালেসের কর্মকর্তারা হাইকমিশনারকে একটি উন্মুক্ত ঘোড়ার গাড়িতে করে প্রাসাদ পর্যন্ত নিয়ে যান।
প্রাসাদে পৌঁছানোর পর কাউন্টেস অব অ্যারান, লেডি মার্গারেট ডগলাস এবং বাকিংহাম প্যালেসের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাইকমিশনারকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান। প্রথা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ডিপ্লোম্যাটিক কোরের মার্শালের নেতৃত্বে হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন। এ সময় তাদের মধ্যে কুশল বিনিময়ের পর একটি অর্থবহ আলোচনা হয়।
রাজা চার্লস অধ্যাপক ইউনূসকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মৃতিচারণা করেন। তিনি জানান, একসময় তিনি বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন; কিন্তু রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রয়াণের কারণে তা সম্ভব হয়নি। সময়সূচি অনুকূল হলে বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
হাইকমিশনারের সঙ্গে রাজা চার্লসের আলোচনায় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় উঠে আসে। তিনি বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙনের মতো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অবস্থা তুলে ধরেন। জলবিদ্যুৎ বিষয়ে প্রশ্ন করলে হাইকমিশনার তাঁকে অবহিত করেন যে বাংলাদেশ নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক দায়বদ্ধতা প্রসঙ্গে হাইকমিশনার প্রধান দূষণকারী দেশগুলোর জবাবদিহি ও জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতি উন্নত রাষ্ট্রগুলোর প্রতিশ্রুতি রক্ষার ওপর জোর দেন। এ বিষয়ে রাজা চার্লস একমত পোষণ করে বলেন, ধনী দেশগুলোর আরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং বাস্তব সহায়তা দিতে হবে।
আনুষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান শেষে হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম তার দলে অন্তর্ভুক্ত হাইকমিশনের বাকি সদস্যের পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি তাঁদের সবার সঙ্গে আন্তরিকভাবে কথা বলেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে হাইকমিশনার রাজাকে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের একটি বিশেষ উপহার দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত ত য় চ র লস চ র লস র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
না’গঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের আড়াই কোটি টাকার অনুদান ও সঞ্চয়পত্র প্রদান
জুলাই গণঅভ্যত্থানে আহত ‘সি’ ক্যাটাগরির ২১২ জন জুলাই যোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রদত্ত আর্থিক অনুদানের চেক ও তিন শহীদ পরিবারের সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ আর্থিক অনুদানের চেক ও সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মানিত কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আহত জুলাই যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবার, শহিদ পরিবারের সদস্যগণ, ছাত্র প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।
এ সময় ৪ জন শহিদ পরিবারের সদস্যের প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘সি’ ক্যাটাগরির ২১২ জন যোদ্ধাকে এককালীন ১ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর সন্তানরা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। তাঁদের সাহসিকতা, আত্মত্যাগ ও অদম্য চেতনা আমাদের জাতি পুনর্গঠনের অনুপ্রেরণা। আমরা বিশ্বাস করি, এই যোদ্ধাদের সাহসিকতা দিয়েই গড়ে উঠবে একটি নতুন, উদ্ভাসিত বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন-অগ্রগতির যাত্রায় আমরা তরুণ সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী ও সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করি। সম্মিলিত প্রচেষ্টাই গড়ে তুলবে একটি সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল নারায়ণগঞ্জ।
এদিকে এ অনুষ্ঠানটি শুধু অনুদান বিতরণ নয়, বরং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মান জানানোর এক অনবদ্য প্রয়াস হয়ে উঠেছিল।