১৯ বছর আগে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর মহিলা কলেজসংলগ্ন অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ঘটেছিল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ট্রেন-বাস সংঘর্ষে প্রাণ হারান ৩৫ জন। বেদনাবিধুর দিনটি আজও ভোলেনি এলাকাবাসী। কিন্তু তাদের স্মরণে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। নির্মাণ হয়নি কোনো স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

আক্কেলপুরবাসীর ব্যানারে কর্মসূচি চলাকালে নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়রা ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেদিনের দুর্ঘটনায় নিহত আব্দুল হামিদ ভাসানীর ছেলে হামিদ খান জনি, আরমান হোসেন কানন, মিলন চৌধুরী, আক্কেলপুর শিক্ষার্থী পরিবারের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন সম্রাট, শিক্ষার্থী মেরিন হোসেন, অপূর্ব চৌধুরী আশ্বিন, শিক্ষার্থী, সমাজকর্মী ও নিহত-আহতদের স্বজনসহ অনেকে।

স্বজনরা বলেন, এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। ৩৫ জন মারা গেলেন। তাদের জন্য কিছুই করা হলো না। প্রতি বছর দিনটি আসে, যায়। কিন্তু যারা হারিয়ে গেছে, তাদের জন্য একটি পাথরের ফলকও তৈরি হয়নি। সরকার শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কাজ কিছুই করেনি। এটি শুধু অবহেলা নয়, নিহতদের অপমান।

স্থানীয় বাসিন্দা আরমান হোসেন কানন বলেন, প্রতিবার এই দিনটিতে শুধু ফেসবুকে পোস্ট হয়, আর কিছুই হয় না। অথচ জায়গাটি শুধু একটি দুর্ঘটনার স্থান নয়; এটি গণশোকের প্রতীক। ১৯ বছরে একটিবারও স্থানীয় এমপি বা রেল কর্তৃপক্ষ আসেননি। অনেক অবহেলা হয়েছে। আমরা এখন স্মৃতিস্তম্ভ চাই।

আক্কেলপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার কথা শুনেছি। নিহতদের স্বজন ও স্থানীয়রা লিখিত আবেদন করলে দ্রুত অর্থ বরাদ্দ দিয়ে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।

২০০৬ সালের ১১ জুলাই সকালে আক্কেলপুর মহিলা কলেজসংলগ্ন অরক্ষিত রেলগেট অতিক্রম করছিল খেয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস। এ সময় সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে মুহূর্তেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ২৫ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১০ জন মারা যান। আহত হন অন্তত ৩০ জন। সেদিন আক্কেলপুর কলেজ মাঠে একসঙ্গে ১১ জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পৌরসভা সাত দিনের শোক ঘোষণা করে।

‘আবেগ’ ‘অন্তিমে’ খুদে শিক্ষার্থীদের স্মরণ
২০১১ সালের ১১ জুলাই। ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নিহত হয় ৪৫ কোমলমতি শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল ৩৪ জন। আশপাশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরও সাতজন, একজন অভিভাবক ও দু’জন ফুটবলপ্রেমী দেশব্যাপী আলোচিত এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন।

সেই দিনের ভয়াবহ ঘটনাটি স্মরণ করে গতকাল শুক্রবার শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ ও ‘অন্তিম’-এ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমাইয়া আক্তার। আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয় এ আয়োজন করে।

প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তারের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস মোস্তফা আলম সরকার। শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন শিক্ষক সমীরণ বড়ুয়া, রতন কুমার দাস, আবুতোরাব এসএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার দাস, নিহত শিক্ষার্থী এমরান হোসেনের বাবা আবুল কাশেমসহ অন্য অতিথিরা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ম ত স তম ভ দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষ হাতে পরিচালনা  করছেন সদর ইউএনও জাফর সাদিক

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী শত ব্যস্ততার মধ্যেও দক্ষতার সঙ্গে একাই পরিচালনা করছেন সদর উপজেলার ২৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা।

একইসাথে বক্তাবলী ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।গত ১১ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইউএনও জাফর সাদিক অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। 

পূর্ববর্তী সভাপতিদের আমলে যে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও কোচিং নির্ভরতা ছিল, তা নির্মূল করে শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে নিরলস কাজ করছেন তিনি।

তিনি ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নীতিমালা-২০২৩’ বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ করেন। অনিয়ম তদন্তে গঠন করেন ভিন্ন ভিন্ন কমিটি। ফান্ডের অর্থ অপব্যবহার ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

পুনর্জন্ম পেয়েছে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়

পূর্বে সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠদের দ্বারা পরিচালিত পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নীতি, ৮ মাসের শিক্ষক বেতন বকেয়া, জমির রেজিস্ট্রি জটিলতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে গত বছর ১৫ আগস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।

ইউএনও জাফর সাদিক যোগদানের পর মাত্র ছয় মাসে ১৭টি সভা করে ফান্ড স্বচ্ছতা, শিক্ষক বেতন পরিশোধ, প্রভিডেন্ট ফান্ড ঋণ শোধ, জমির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেতৃত্ব দেন।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা সুলতানা বলেন, “স্যার দুইবার বিদ্যালয় পরিদর্শন করে বাস্তব পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন নিয়মিত বেতন হচ্ছে, ড্রেন নির্মাণ চলছে।”

দখলদার উচ্ছেদ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান

ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারীর আর্থিক অনিয়মের তদন্তে সরাসরি মাঠে নামেন ইউএনও। বিদ্যালয়ের ২০ শতক জমি দখলমুক্ত করে ইটের দেয়াল অপসারণের নির্দেশ দেন। ঘুষের মাধ্যমে দেয়া পুকুর ইজারাও বাতিল করেন।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আফরোজা বলেন, “ইউএনও স্যারের উদ্যোগে জমি উদ্ধার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনও প্রক্রিয়াধীন।”
বক্তাবলীর কানাইনগর সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি দখলমুক্ত করতেও সরাসরি পুলিশি সহায়তায় দখলদার উচ্ছেদ করেন ইউএনও।

শিক্ষা সফর ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নতুন প্রাণ

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষা সফর, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুনরায় চালু করে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছেন ইউএনও জাফর সাদিক। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা বেতনে ও অর্ধ-বেতনে পড়ার সুযোগও তৈরি করেছেন।

প্রশংসিত হচ্ছেন সর্বত্র

সদর উপজেলার ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগের সভাপতির দায়িত্বে থেকে ইউএনও জাফর সাদিক যে স্বচ্ছতা, দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন, তা এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছে। সচেতন মহলের মতে, যেখানে পূর্ববর্তী সভাপতিরা শিক্ষা ফান্ডের অর্থ আত্মসাতে ব্যস্ত ছিলেন, সেখানে কোনো আর্থিক সুবিধা ছাড়াই এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষভাবে পরিচালনা একজন প্রকৃত কর্মবীরের পরিচয় বহন করে।

ইউএনও নির্বাহী অফিসার জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি।

নিজ কাজের অতিরিক্ত এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকার যখন যে দায়িত্ব আমাকে অর্পণ করবেন সেটাকেই জনকল্যাণমুখী করে ভবিষ্যতেও কাজ করে যেতে চাই।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হিমাগার মালিকদের সিন্ডিকেট অসহায় আলু চাষি-ব্যবসায়ীরা
  • অদম্য লিতুন জিরার বাড়িতে ইউএনও
  • ইউএনও আসার খবরে কনে বদল, পালালেন বর
  • স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে মাটি ফেটে বের হচ্ছে দুর্গন্ধযুক্ত ধোঁয়া, কৌতূহলের পাশাপাশি শঙ্কা
  • এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে ‘স্ত্রী’র যত অভিযোগ
  • পদ্মার ভাঙনে হুমকির মুখে পাবনার নাজিরগঞ্জ ফেরিঘাট
  • ৩ নির্বাচনের কর্মকর্তাদের বাদ, বদলি হবেন সব ডিসি, ইউএনও: প্রেস সচিব
  • ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষ হাতে পরিচালনা  করছেন সদর ইউএনও জাফর সাদিক