অভিনয়ের প্রতি তটিনীর দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ
Published: 3rd, May 2025 GMT
কয়েক বছর আগে চরকির অ্যান্থলজি সিরিজ এই মুহূর্তের অংশ হিসেবে ‘কল্পনা’ নামে একটি ছোট ফিকশন বানাচ্ছিলাম। সেটার কেন্দ্রীয় চরিত্রে একজন তরুণ অভিনেত্রীর প্রয়োজন ছিল। অনেকের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপও হয়েছিল, কিন্তু কোনোভাবেই মনস্থির করতে পারছিলাম না। অবশেষে অনেকটাই নাটকীয়ভাবে তানজিম সাইয়ারা তটিনীকে চূড়ান্ত করি, সেটাও শুটিং শুরুর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে। অবশ্য তটিনীর সঙ্গে পরিচয় তারও আগে। রাজশাহীতে একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে তাঁকে প্রথম দেখি। তখনই মনে হয়েছিল, তাঁর মধ্যে অন্য রকম কিছু আছে—শুধু অভিনয় নয়, বরং একধরনের উপস্থিতি, আত্মস্থতা। পরে জয়া আর শারমিন সিনেমার ছোট্ট একটি দৃশ্যে তাঁকে অভিনয় করার প্রস্তাব দিই।
নিয়মিত বিজ্ঞাপন বানানোর ফলে ভালো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার খুব একটা সুযোগ হয়ে ওঠে না। একজন নির্মাতা হিসেবে এই ব্যাপারটা আমাকে পোড়ায়ও বটে। কিন্তু ছোট ফরম্যাট হলেও আমার কাছে পারফরম্যান্স সব সময় গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু আমার বেশির ভাগ কাজই গল্পকেন্দ্রিক। সে কারণেই ‘ইনস্টিঙ্কটিভ’ বা সহজাত কোনো প্রতিভা আমার চোখ এড়ায় না। প্রথম দু-তিনটি কাজেই তটিনীর স্পার্কটা অনুভব করি। মাত্র কয়েক বছর পর এখন তিনি দেশের পরিচিত মুখ, কাজের ভান্ডারও সমৃদ্ধ। নাটক, বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন অবিরাম।
তটিনী নাটক, বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন অবিরাম.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের দিনমজুর বাদশা মিয়া তাঁর এলাকায় ‘গাছের বন্ধু বাদশা’ নামে পরিচিত। এই পরিচয় কোনো সরকারি পদক বা ধনাঢ্য প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থেকে আসেনি; এসেছে বিগত ২০ বছর ধরে ৩০ হাজারের বেশি গাছ লাগিয়ে। তাঁর এ কাজ প্রমাণ করে, পরিবেশপ্রেম ও নিঃস্বার্থ সামাজিক দায়বদ্ধতা কোনো অর্থ বা ক্ষমতার মুখাপেক্ষী নয়, এটি গভীর মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
৭২ বছর বয়সী বাদশা মিয়ার স্লোগান—এক মুঠো ভাত নয়, এক মুঠো অক্সিজেন চাই। আজকের পরিবেশ সংকটের যুগে এক শক্তিশালী দার্শনিক বার্তা। বাদশা মিয়ার গাছ লাগানোর গল্পটি কেবল সবুজায়নের নয়, এটি এক পিতার গভীর আবেগের গল্প। ২০০৪ সালের এক বিকেলে, টাকার অভাবে সন্তানদের আমের আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর মতো গরিব প্রতিবেশীর সন্তানেরাও ফল কিনতে পারে না। সেই ব্যক্তিগত বেদনা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন—তিনি এমন কিছু করবেন, যা তাঁর নিজের ও দরিদ্র প্রতিবেশীদের সন্তানদের জন্য ফলের অধিকার নিশ্চিত করবে।
এই স্বপ্ন পূরণে বাদশা মিয়ার ত্যাগ ছিল হিমালয়সম। প্রাথমিক পুঁজি জোগাতে তিনি মেয়ের কানের সোনার রিং বিক্রি করে গাছের গোড়ায় খুঁটি দেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন, দিনমজুরি করে যা আয় করবেন, তার চার ভাগের এক ভাগ ব্যয় করবেন চারা লাগানো এবং পরিচর্যার পেছনে। একজন ভূমিহীন দিনমজুরের কাছে আয়ের এক-চতুর্থাংশ মানে জীবনধারণের সঙ্গে সরাসরি আপস করা। এই আত্মত্যাগই প্রমাণ করে, তাঁর কাছে এই গাছগুলো নিছক চারা নয়—গভীর মমতায় লালন করা এগুলো যেন তাঁর সন্তানের মতোই।
বাদশা মিয়ার কাজকে সমাজ প্রথম দিকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি। উল্টো গ্রামের কিছু মানুষ তাঁকে ‘পাগল’ বলে উপহাস করেছে। গাছের চারা লাগাতে গিয়ে তিনি মানুষের বাধা পেয়েছেন, তাঁর লাগানো গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং একপর্যায়ে তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সমাজের মানুষই এখন বাদশা মিয়ার দীর্ঘ ত্যাগ ও পরিশ্রমের সুফল ভোগ করছে।
বাদশা মিয়ার এই উদ্যোগ কেবল একটি স্থানীয় গল্প নয়, এটি সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি শিক্ষা। কোটি কোটি টাকার বন সৃজন প্রকল্প যেখানে অনেক সময় লোকদেখানো বা অপচয়ের শিকার হয়, সেখানে একজন দিনমজুর দেখিয়ে দিলেন, ভালোবাসা ও সদিচ্ছা থাকলে সামান্য সম্পদ দিয়েই পরিবেশবিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
উপজেলা প্রশাসন বাদশা মিয়াকে পুরস্কৃত করেছে, যা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, স্থানীয় বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ বাদশাকে গাছ লাগানোর কাজে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা করবে। বাদশা মিয়ারা আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রতি আমাদের অভিবাদন।