বাংলা চলচ্চিত্রের মার্শাল আর্ট কিং মাসুম পারভেজ রুবেল। পর্দায় কুংফু-কারাতের দুর্দান্ত কৌশল দেখিয়ে এনে দিয়েছেন নতুন ধারার অ্যাকশন সিনেমা। আজ ৩ মে, এই অ্যাকশন হিরোর জন্মদিনে চলুন এক নজরে জেনে নিই তার জীবনের অজানা গল্পগুলো।
ক্যারিয়ারের সূচনা ও উত্থান : ১৯৮৬ সালে ‘লড়াকু’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষেক। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় আড়াইশ সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যার প্রায় সবই সুপারহিট। শুধু অভিনয় নয়, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও সমান সফল। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বিচ্ছু বাহিনী’, ‘মায়ের জন্য যুদ্ধ’, ‘প্রবেশ নিষেধ’।
মার্শাল আর্ট ও অ্যাকশন কিং : রুবেল দুইবার জাতীয় কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জয় করেছেন। তিনি গড়েছেন নিজস্ব ফাইটিং গ্রুপ ‘দ্যা একশন ওয়ারিয়র্স’ এবং জনপ্রিয় করেছেন ‘ড্রাংকিং কংফু’, ‘উইপিং কংফু’সহ মার্শাল আর্ট কৌশল। তার হাত ধরেই বাংলা সিনেমায় অ্যাকশনের ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়।
গিনেস বুকে নাম লেখানোর স্বপ্ন : এখন পর্যন্ত ৯৭ জন নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন রুবেল। শিগগিরই এই সংখ্যা ১০০ পূর্ণ করে গিনেস বুকে নাম তোলার ইচ্ছা তার।
সহশিল্পী ও প্রিয় নায়িকারা : সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন পপি, মৌসুমী ও পূর্ণিমার সঙ্গে কাজ করতে। তবে তার ভাষায়, "স্পেশাল পপি। তার আগে ছিলো কবিতা।"
অভিনয়ের আগে প্লেব্যাক শিল্পী : নায়ক রুবেল ক্যারিয়ার শুরু করেন প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে। ‘জীবন নৌকা’ সিনেমায় বড় ভাই সোহেল রানার জন্য কণ্ঠ দিয়েছিলেন।
জাতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবেও সফল : ব্যাডমিন্টন, ফুটবল ও কারাতে— এই তিন খেলাতেই জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছেন রুবেল।
পারিবারিক জীবন ও সামাজিক ভূমিকা : রুবেলের স্ত্রী সুলতানা পারভেজ নীলা, একমাত্র পুত্র নিলয় পারভেজ। ফাইট ডিরেক্টর হিসেবে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি সমাজ সচেতনতায়ও ভূমিকা রাখেন। নারীদের আত্মরক্ষার জন্য কারাতে শেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "ধর্ষণ থেকে বাঁচতে নারীদের কারাতে শেখা উচিত। স্কুল-কলেজে কারাতে শিক্ষা নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।"
পুরস্কার ও সম্মাননা : জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মনোনয়ন না পেলেও দুইবার বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন — ২০০০ ও ২০০১ সালে।
শৈশব ও পারিবারিক পটভূমি : ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি বরিশালের গৌরনদীতে জন্ম। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা এই তারকার পিতা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। শৈশবেই সংস্কৃতিমনস্ক রুবেল অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আত্মীয়-সম্পর্ক : তার বড় ভাই মাসুদ পারভেজ, যিনি সোহেল রানা নামে খ্যাত। রুবেল ভাইয়ের প্রতি এতটাই শ্রদ্ধাশীল যে, কখনও সামনে বসেন না, বসলেও মেঝেতে। টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা তানিয়া আহমেদ তার ভাগ্নি।
নায়ক রুবেল শুধু রূপালি পর্দার নায়ক নন, বাস্তব জীবনেও একজন লড়াকু যোদ্ধা। অ্যাকশনের মঞ্চে যেমন দুর্দান্ত, তেমনি পরিবার, সমাজ আর সংস্কৃতির জন্যও নিবেদিত প্রাণ।
ঢাকা/রাহাত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য় কর ছ ন অ য কশন প রস ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জাপান ও ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে
অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) নতুন বাজারগুলোতে মোট ৬০৪ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শীর্ষ পাঁচ নতুন রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এই পাঁচ বাজারের মধ্যে জাপান ও ভারতে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, তা যথাক্রমে ১০ ও ১৭ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ। তবে রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশ থেকে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি এর আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। প্রচলিত সব বাজারেই অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে সবার শীর্ষে জাপান। চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে দেশটিতে ১১২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটিতে ১০৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ৭৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া তৃতীয় শীর্ষ অপ্রচলিত বাজার রাশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে গত জুলাই-মে সময়ে ৩১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে প্রতিবেশী ভারতে ৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে দেশটিতে ৫৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
ভারতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলেও বাজারটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশের রপ্তানিকারকেরা। এর কারণ হলো, গত মাসে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। সে অনুযায়ী শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন।
জানতে চাইলে স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত দিনের লিড টাইম ও কম পরিবহন খরচে আমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতে তৈরি পোশাক পাঠাতে পারতাম। বিধিনিষেধ আরোপের পর এখন সমুদ্রপথে রপ্তানি করতে ১৫-২১ দিন সময় লাগবে। মাসে তিনটি জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি নব সেবা বন্দরে যায়। বাকি জাহাজ কলম্বো ঘুরে যায়।
শোভন ইসলাম আরও বলেন, বিধিনিষেধের কারণে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছে। ভারতের যেসব আমদানিকারক ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন না, তাঁরা কারণ হিসেবে ভিসা জটিলতার কথা বলেন। সে দেশে পণ্য পাঠানোর খরচ বেড়েছে। ফলে সামনের দিনে এই বাজারে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমতে পারে।