গান-কথায় কিংবদন্তি শিল্পী শফিকুন্নূরকে স্মরণ
Published: 5th, May 2025 GMT
‘সুজন বন্ধু রে, আরে ও বন্ধু, কোনবা দেশে থাকো’সহ অসংখ্য গানের জনপ্রিয় শিল্পী প্রয়াত মো. শফিকুন্নূরকে সিলেটে গান ও কথায় স্মরণ করা হয়েছে।
আজ সোমবার রাতে সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকার গ্রন্থবিপণি বাতিঘরে এ অনুষ্ঠান হয়েছে।
প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের উদ্যোগে রাত পৌনে আটটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। ‘বাবার স্মৃতি বাবার গান’ শীর্ষক এ আয়োজনে শফিকুন্নূরকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন প্রয়াত শিল্পীর বড় ছেলে জুবের আখতার। এ সময় তিনি তাঁর বাবার গাওয়া ও লেখা জনপ্রিয় বেশ কিছু গান পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ। শুরুতেই জুবের আখতারকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করেন গল্পকার জামান মাহবুব, নাট্যব্যক্তিত্ব মু.
জুবের আখতার তাঁর বাবার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘শাহ আবদুল করিম, কারি আমির উদ্দীন আহমদসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাধক-শিল্পীরা আমাদের বাড়িতে এসেছেন। হাওরাঞ্চলের অনেক মরমিকবিদের নিয়মিত উপস্থিতিতে আমাদের বাড়ি মুখর থাকত।’
অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সমর বিজয় সী শেখর, এমসি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর রায়, লেখক রণদীপম বসু ও মোশতাক চৌধুরী, কবি কাসমির রেজা, শিল্পী আলী নূর ও শামীম আহমদ, গবেষক পার্থ তালুকদার, কবি মালেকুল হক, অধ্যক্ষ নিয়াজ উদ্দিন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
আয়োজকেরা জানান, বাউলগানের পাশাপাশি মালজোড়া ও কেচ্ছাগানের জন্য শফিকুন্নূর জীবদ্দশায় ডাকসাইটে শিল্পী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর সুর ও দরাজ কণ্ঠের জাদুতে অনেক অপ্রচলিত পল্লিগান এখন অমরতা পেয়েছে। লোকগানে তিনি নিজেও পেয়েছেন কিংবদন্তির মর্যাদা। তাঁর লেখা প্রায় আড়াই শ গান এবং বেশকিছু কেচ্ছা রয়েছে। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামে ১৯৪৩ সালের ২৫ জুন শফিকুন্নূর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মারা যান ১৯৯৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে রঙতুলির আঁচড়ে সেজে উঠছে দেবী দুর্গা,
আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা, তারপরই শুরু হবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজাকে কেন্দ্র করে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও চলছে সাজসজ্জা আর প্রস্তুতির ব্যস্ততা।
প্রতিটি মণ্ডপে এখন বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ, কোথাও রঙতুলির ছোঁয়ায় রাঙানো হচ্ছে প্রতিমা, কোথাও চলছে আলোকসজ্জা ও প্যান্ডেল সাজানোর শেষ মুহূর্তের কাজ। একদিকে শিল্পীরা দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা নির্মাণে, অন্যদিকে আয়োজকরা তৎপর নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজে।
আগামী রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবী দুর্গাকে বরণ করার আনুষ্ঠানিকতা। পরবর্তী দিনগুলোতে একে একে অনুষ্ঠিত হবে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও মহা-নবমীর পূজা।
আর বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে এই মহা উৎসব। আনন্দ, ভক্তি আর মিলনমেলার আবহে বাঙালি হিন্দু সমাজে দুর্গাপূজা ইতোমধ্যেই বয়ে এনেছে উৎসবের রঙিন বার্তা।
সরজমিনে শহরের দেওভোগ আখড়া, পালপাড়া, উকিলপাড়া, সাহাপাড়া, আমলাপাড়া, নয়ামাটি, নিতাইগঞ্জের বলদেব জিউর আখড়া মন্দির, সাহাপাড়া মন্ডপে, মীনাবাজার গোপীনাথ জিউর আখড়া মন্দির, বঙ্গবিহারী, গলাচিপা মন্দির পূজামণ্ডপে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে জোরেসোরে।
শেষ মুহুর্তে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ স্থানে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। চলছে রঙতুলির আঁচড়।
এদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মন্দির কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন আনসার,পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, আর বেশি দিন বাকি নেই পূজার, আমরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। প্রতিমাগুলো নতুন করে রং ও তুলির আঁচড় দিয়ে সাজিয়ে তুলছি। পূর্বে সম্পূর্ণ প্রতিমা তৈরি করা থেকে সাজানো পর্যন্ত খরচ হত ৭০/৮০ হাজার টাকা। এখন সংশ্লিষ্ঠ মালামালের দাম বৃদ্ধি,শিল্পীদের পারিশ্রমিক বাড়ার কারণে খরচ প্রায় দিগুণ।
তবুও এই কাজ আমাদের করতেই হবে কারণ এটা আমাদের ধর্মীয় রীতিনীতি। শেষ মুহূর্তে দেবীকে পড়ানো হবে পোশাক-পরিচ্ছদসহ অন্যান্য আল্পনা।
নারায়ণগঞ্জ জেলাজুড়ে এবছর ২২৪টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গা উৎসব। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৯টি, বন্দরে ২৯টি, সোনারগাঁয়ে ৩৫টি, আড়াইহাজারে ৩৭টি এবং রূপগঞ্জে ৪৪টি মণ্ডপ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনের পক্ষে থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নারায়ণগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে ও পুলিশ প্রশাসন।
প্রশাসনের নজরদারির বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন বলেন, ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় থেকে শুরু করে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি আমাদের শহরের বিভিন্ন মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন, তাঁরা সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পুলিশ, র্যাব, কমিশনার,সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সবার সাথে আমাদের ইতোমধ্যে বৈঠক হয়েছে, ওনারা আমাদের মণ্ডপগুলোর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া যেকোনো ধরণের নাশকতা মোকাবেলায় আমাদের নিজস্ব সেচ্ছাসেবক দল প্রত্যেক মণ্ডপে নিয়োজিত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, দুর্গাপূজা শারদীয় উৎসব উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি, হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে মতবিনিময় সভা হয়েছে। তারাও সবাই আমাদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা আশা করি উৎসবের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতীক। পূজা উদযাপন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে রামকৃষ্ণ মিশনের পূজা মন্ডপ প্রদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, এবারের শারদীয় দুর্গাপূজায় কোন নিরাপত্তার ঝুকি নাই। বিগত সময়ের চেয়ে এবার আরো বেশী সম্প্রতির বন্ধন অটুট থাকবে এবং উৎসমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে দূর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের শংকা নাই। এই পূজাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সকল মন্ডপে সিসি ক্যামেরার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এবার পূজা উৎসবমুখর হবে। নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নাই। নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি সবসময়ই ছিলো। এবছর সম্প্রিতি আরও ভালো হয়েছে।
দেশে এবছর ৩৩ হাজার পূজামন্ডপ রয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে পূজা উদযাপন কমিটি ৭ জন করে ভলেন্টিয়ার নিয়োগ দিবে, আনসার সদস্য থাকবে ৮জন করে। এছাড়াও পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিরাশভার কাজে নিয়োজিত থাকবে।