আশির দশকের মাঝামাঝি সময়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সম্মেলন হবে। এর আগের রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব গেটে একটা ব্যানার লাগাচ্ছি। নিচে মই ধরে দাঁড়িয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি কর্নেল (অব.) কাজী নূর–উজ্জামান। বিকেল থেকে তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। মই, ব্যানার-পোস্টারের প্যাকেট, আঠার বালতি টেনে টেনে নিয়ে আসছেন। রাত তিনটার সময় গাড়ি চালিয়ে চানখাঁরপুল থেকে খাবার এনে আমাদের খাওয়ালেন।
আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন বলল, ‘একজন সেক্টর কমান্ডারকে দিয়ে মই-আঠার বালতি টানাচ্ছ! মাসুক, তোমরা কি জানো, এই কর্নেল সাহেব তিন দেশের হয়ে যুদ্ধ করেছেন?’
আমি জানি, তিনি ডা.
আমরা বিচিত্রার কর্মীরা আশির দশকে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখেছি নায়লা আপার বাসায়। সেই সূত্রেই কর্নেল কাজী নূর–উজ্জামানকে খালু ডাকতাম। তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক সুলতানা জামানকে খালাম্মা ডেকেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন নারী ইমেরিটাস অধ্যাপকের একজন সুলতানা জামান। অটিস্টিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেছেন সারা জীবন। প্রতিবন্ধী ও মানসিক প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন নামে তাঁর একটা সংস্থা আছে। ফাউন্ডেশনের পোস্টার, ব্যানার প্রকাশনার কাজ করে দিয়েছি। সুলতানা জামানের ভাই বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম। প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর ফুফাতো ভাই।
এই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৮ মার্চ কর্নেল নূর–উজ্জামান ভারতে চলে যান। তাঁর স্ত্রী সুলতানা জামান সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ৭ নম্বর সেক্টরের মহদীপুরে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলেন। তাঁর ১৫ বছরের ছেলে নাদিম ওমর লালগোলায়, ৭ নম্বর সাবসেক্টরে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের অধীনে যুদ্ধ করেন। কর্নেল নূর–উজ্জামানের দুই মেয়ে লুবনা মরিয়ম ও নায়লা জামান এপ্রিলের শেষ দিকে ভারতে চলে যান। তখন লুবনা ও নায়লা ছিলেন প্রায় কিশোরী। বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থায় যোগ দেন তাঁরা। তাঁদের কাজ ছিল ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করা। মুক্তির গান চলচ্চিত্রে যে গানের দলটাকে দেখা যায়, সেখানে তাঁরা ছিলেন। কর্নেল নূর–উজ্জামান তখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৯ নম্বর সেক্টরের। স্ত্রী ও ছেলে ৭ নম্বর সেক্টরে। পুরো যুদ্ধের সময়টা পরিবারে কেউ কাউকে দেখেননি। তাঁদের মধ্যে কোনো যোগাযোগও ছিল না।
কর্নেল নূর–উজ্জামান পড়তেন কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে, রসায়নে। পড়ার সময় ব্রিটিশ ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বার্মা উপকূলের সুমাত্রায় যুদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হলে কাজী নূর–উজ্জামান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নবীন অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। আবার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ‘বীর উত্তম’ খেতাব পান। ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কৃতিত্ব গণমানুষের’, এই যুক্তিতে তিনি অবশ্য বীর উত্তম উপাধি গ্রহণ করেননি, কখনো ব্যবহার করেননি।
এরশাদের জমানায় আন্দোলন করতে গিয়ে জেল খেটেছিলেন। কাজী নূর–উজ্জামান নিয়মিত লেখালেখি করতেন পত্রপত্রিকায়। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে স্বদেশচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা। তিনি সাপ্তাহিক নয়া পদধ্বনি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এই পত্রিকার সূত্রে নূর–উজ্জামান খালুর সঙ্গে যোগাযোগ। সেক্টর কমান্ডার ফোরামের পোস্টার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পোস্টার, ফেস্টুন—অনেক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ হয়েছে।
তিনি ভক্সওয়াগন গাড়ি চালিয়ে আমার শাহজাহানপুরের বাসায় আসতেন। আমি অনেকবার তাঁর বেইলি রোডের আমিনাবাদ কলোনির বাসায় গিয়েছি।
২০১১ সালের ৬ মে ঢাকায় মৃত্যু হয় কাজী নূর–উজ্জামানের। প্রায়ই এই বীরের কথা মনে পড়ে। বীরকে সালাম।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কন্যা ফাতিমাকে নবীজির ৫ উপদেশ
ইসলামে চারজন নারীকে নিখুঁত নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়: বিবি মরিয়ম, আসিয়া, খাদিজা (রা.) এবং ফাতিমা (রা.)। ফাতিমা ছিলেন নবীজির প্রিয় কন্যা। ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে তিনি ছিলেন শিশু। ধীরে ধীরে তিনি একজন কন্যা, স্ত্রী ও মা হিসেবে ইসলামের আদর্শ নারীর নিখুঁত উদাহরণ হয়ে আবির্ভূত হন।
নিখুঁত নারী হিসেবে ফাতিমা (রা.)ফাতিমা (রা.) ইসলামের মহান নারীদের একজন। তিনি তাঁর পিতার নবুওয়তের মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং নারীদের জন্য একটি আদর্শ রোল মডেল। কোরআনে নবী–পরিবারের পবিত্রতা সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান করো এবং জাহিলিয়া যুগের মতো প্রদর্শনী করো না...আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে, হে নবীর পরিবার, সব অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের পবিত্র ও নিষ্কলঙ্ক করতে।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৩৩)
শৈশব থেকেই তিনি তাঁর পিতামাতার ওপর কুরাইশদের নিপীড়ন ও অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছেন। এমনকি তিনি নিজেও কখনো কখনো কুরাইশদের উপহাসের শিকার হয়েছেন। শক্তিমান নারীতিনি যখন খুব ছোট, মাত্র পাঁচ বছর বয়স, তখন নবীজি (সা.) মক্কার হিরা গুহায় প্রথম ওহি পান। শৈশব থেকেই তিনি তাঁর পিতামাতার ওপর কুরাইশদের নিপীড়ন ও অত্যাচার প্রত্যক্ষ করেছেন। এমনকি তিনি নিজেও কখনো কখনো কুরাইশদের উপহাসের শিকার হয়েছেন। আজকের শিশুদের মতো যারা খেলার মাঠে উৎপীড়ন বা সামাজিক চাপের মুখোমুখি হয়, তেমনই ফাতিমা (রা.) শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক কষ্ট সহ্য করেছেন।
কাবায় নবীজি সিজদায় থাকা অবস্থায় একজন বিরোধী তাঁর ওপর ময়লা নিক্ষেপ করেছিল। কান্নাভেজা চোখে ফাতিমা (রা.) তাঁর পিতার শরীর পরিষ্কার করেন। নবীজি তাঁর প্রিয় কন্যাকে শান্ত করেন। (ইবনে হিশাম, আস-সিরাতুন নববিয়্যাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা, ২০০৪, খণ্ড ১, পৃ. ২৮৯)
শৈশবের কঠিনসব অভিজ্ঞতা তাকে নবীজির জীবনে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল।
আরও পড়ুনসাহাবি আবু উবাইদা (রা.)–র উপদেশ০৬ মার্চ ২০২৪বিবাহপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাঁকে আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়। এই বিবাহ মদিনায় অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ হিসেবে বর্ণিত। যদিও ফাতিমা (রা.) তাঁর বোনদের মধ্যে একমাত্র, যিনি কোনো ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিবাহ করেননি। নবীজি (সা.) এই বিবাহের পক্ষে ছিলেন; কারণ, তিনি জানতেন আলী (রা.) একজন ধর্মভীরু মুসলিম এবং তিনি ফাতিমা (রা.)-এর যত্ন নেবেন।
ফাতিমা (রা.) বিবাহিত জীবনে সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর স্বামীকে পরিবারের জন্য রিজিক সংগ্রহে সহায়তা করতেন। কঠোর পরিস্থিতিতেও তিনি হাসান ও হুসাইন নামে দুই পুত্রসন্তানের মা হন। তিনি একজন স্নেহময়ী কন্যা, অনুগত স্ত্রী ও যত্নশীল মা ছিলেন। তিনি জীবনের কষ্ট সহ্য করেছেন কোনো অভিযোগ ছাড়াই। আজকের নারীদের মধ্যে কতজন এমনটি করতে পারেন?
ফাতিমার মতো কন্যা গড়ে তোলাআধুনিক সংস্কৃতি প্রায়ই নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপর জোর দেয়। কিন্তু ইসলাম শেখায় যে অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। মুসলিম নারীরা দরিদ্রদের সাহায্য করে, স্বামীর বোঝা কমায়, সন্তানদের বিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলে, পিতামাতাকে ভালোবাসে এবং তাদের ক্যারিয়ার, শখ বা আগ্রহের মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করে। তাদের প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
পৃথিবীর নারীদের মধ্যে তোমাদের অনুসরণের জন্য মারিয়াম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া যথেষ্ট।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৭৮আজকের মুসলিম কন্যারা কি ফাতিমা (রা.)-এর আচরণ ও ইমানের কাছাকাছি বড় হচ্ছে? তিনি শৈশবে নিপীড়ন ও সহিংসতার মুখোমুখি হয়েও ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী নারী হয়ে উঠেছিলেন।
নবীজি বলেছেন: ‘পৃথিবীর নারীদের মধ্যে তোমাদের অনুসরণের জন্য মারিয়াম বিনতে ইমরান, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া যথেষ্ট।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৭৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪,০৯০)
তিনি আরও বলেছেন, ‘ফাতিমা জান্নাতের নারীদের প্রধান।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)
আরও পড়ুনরাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ৩০ জুলাই ২০২৫তাকে দেওয়া নবীজির উপদেশনবীজি (সা.) বিভিন্ন সময়ে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন, যা প্রত্যেক আদর্শ বাবার জন্য স্মরণে রাখা কর্তব্য।
১. কষ্টসহিষ্ণু হতে বলা
আলী (রা.) বলেন, একবার নবীজির কাছে এসে ফাতিমা গৃহকর্মের কষ্টের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে তিনি হাতে জাঁতা দিয়ে শস্য পিষতে পিষতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এবং গৃহকর্মে সাহায্যের জন্য একজন খাদেম চান।
নবীজি তখন তাঁকে কোনো দাস না দিয়ে একটি বিশেষ আমল শিখিয়ে দেন, যা তাঁর জন্য দাসের চেয়েও উত্তম। তিনি বলেন, ‘তোমাকে কি এমন কিছু শিখিয়ে দেব না, যা তোমার জন্য দাসের চেয়েও উত্তম? যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলবে। এটি তোমার জন্য দাসের চেয়েও উত্তম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,১১৩, ৫,৩৬১, ৬,৩১৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭২৭)
২. আল্লাহভীরু হতে বলা
নবীজি তার প্রিয় কন্যাকে বলেছেন, ‘হে ফাতিমা, আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর নির্দেশ পালন করো।’ এই উপদেশ তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি প্রায়ই বলতেন। এমনকি তিনি বলেছেন, ‘আমি ফাতিমাকে তার প্রভুর (আল্লাহর) বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ থেকে রক্ষা করতে পারব না যদি সে তাকওয়া (খোদাভীতি) অবলম্বন না করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,৪৩৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,০৬৩)
৩. ধৈর্য ও সন্তুষ্টির উপদেশ
ফাতিমা (রা.)-এর জীবন ছিল অত্যন্ত সাধারণ এবং তিনি প্রায়ই দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করতেন। নবীজি তাঁকে ধৈর্য ধরতে ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে উপদেশ দিয়েছেন। ফাতিমা (রা.) যখন তাঁর দারিদ্র্য ও কষ্টের কথা উল্লেখ করেন, নবীজি তাঁকে বলেন, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে তুমি জান্নাতের নারীদের সরদার হবে?’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৭৮১)
ফাতিমা, তুমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ এটি তোমার পাপ মোচন করবে এবং তোমাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করবে।মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৬২২৪. আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
নবীজি ফাতিমা (রা.)-কে প্রায়ই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, ‘ফাতিমা, তুমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ এটি তোমার পাপ মোচন করবে এবং তোমাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৬,৬২২)
তিনি তাঁকে শিখিয়েছেন যে জিকির ও নামাজ মানুষের হৃদয়কে শান্তি দেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক। একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে তিনি ফাতিমা (রা.)-কে বলেছেন, ‘তুমি নিয়মিত নামাজ আদায় করো এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করো।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ১,৩০৪)
৫. স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালন
হজরত ফাতিমা ও আলী (রা.)-এর পারিবারিক জীবন ছিল সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতার একটি আদর্শ। একটি বর্ণনায় এসেছে যে নবীজি তাঁদের ঘরে গিয়ে দেখতেন যে তারা একসঙ্গে গৃহকর্ম ভাগ করে নিয়েছেন। ফাতিমা ঘরের কাজ করতেন, আর আলী (রা.) বাইরের কাজে সহায়তা করতেন। নবীজি এই ব্যবস্থার প্রশংসা করেছেন।
তিনি ফাতিমা (রা.)-কে তাঁর স্বামী হজরত আলী (রা.)-এর প্রতি দায়িত্বশীল হতে উপদেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘সর্বোত্তম নারী সেই, যে তার স্বামীকে খুশি করে এবং তার আনুগত্য করে যখন সে তাকে ন্যায়সংগত কিছু আদেশ করে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৮৫৭; সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩,২৩১)
ফাতিমা (রা.) ছিলেন একজন স্নেহময়ী কন্যা, অনুগত স্ত্রী ও যত্নশীল মা, যিনি জীবনের কষ্ট সাহসের সঙ্গে সহ্য করেছেন। তিনি ইসলামের নিখুঁত নারীদের একজন এবং আধুনিক মুসলিম নারীদের জন্য একটি আদর্শ।
আরও পড়ুনজান্নাতে নারীদের সরদার হজরত ফাতিমা (রা.)০৮ জানুয়ারি ২০২৫