Prothomalo:
2025-11-09@19:52:07 GMT

তাঁর সঙ্গে যত স্মৃতি

Published: 6th, May 2025 GMT

আশির দশকের মাঝামাঝি সময়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সম্মেলন হবে। এর আগের রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব গেটে একটা ব্যানার লাগাচ্ছি। নিচে মই ধরে দাঁড়িয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি কর্নেল (অব.) কাজী নূর–উজ্জামান। বিকেল থেকে তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। মই, ব্যানার-পোস্টারের প্যাকেট, আঠার বালতি টেনে টেনে নিয়ে আসছেন। রাত তিনটার সময় গাড়ি চালিয়ে চানখাঁরপুল থেকে খাবার এনে আমাদের খাওয়ালেন।

আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন বলল, ‘একজন সেক্টর কমান্ডারকে দিয়ে মই-আঠার বালতি টানাচ্ছ! মাসুক, তোমরা কি জানো, এই কর্নেল সাহেব তিন দেশের হয়ে যুদ্ধ করেছেন?’

আমি জানি, তিনি ডা.

নায়লা জামান ও নৃত্যশিল্পী লুবনা মরিয়মের বাবা। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় চাকরিসূত্রে নায়লা আপাদের সঙ্গে পরিচয়। নায়লা আপার বর শহীদুল্লাহ খান বাদল। তাঁর অনেক পরিচয়। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বিচিত্রার সম্পাদক শাহাদত চৌধুরীর সহযোদ্ধা। রাশেদ খান মেননের ছোট ভাই। ডেইলি নিউজ ও উইকলি হলিডের প্রকাশক। কয়েক দিন আগেও নায়লা আপা ছিলেন শিশু হাসপাতালের বড় ডাক্তার।

আমরা বিচিত্রার কর্মীরা আশির দশকে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখেছি নায়লা আপার বাসায়। সেই সূত্রেই কর্নেল কাজী নূর–উজ্জামানকে খালু ডাকতাম। তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক সুলতানা জামানকে খালাম্মা ডেকেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন নারী ইমেরিটাস অধ্যাপকের একজন সুলতানা জামান। অটিস্টিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেছেন সারা জীবন। প্রতিবন্ধী ও মানসিক প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন নামে তাঁর একটা সংস্থা আছে। ফাউন্ডেশনের পোস্টার, ব্যানার প্রকাশনার কাজ করে দিয়েছি। সুলতানা জামানের ভাই বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম। প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর ফুফাতো ভাই।

এই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৮ মার্চ কর্নেল নূর–উজ্জামান ভারতে চলে যান। তাঁর স্ত্রী সুলতানা জামান সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ৭ নম্বর সেক্টরের মহদীপুরে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলেন। তাঁর ১৫ বছরের ছেলে নাদিম ওমর লালগোলায়, ৭ নম্বর সাবসেক্টরে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের অধীনে যুদ্ধ করেন। কর্নেল নূর–উজ্জামানের দুই মেয়ে লুবনা মরিয়ম ও নায়লা জামান এপ্রিলের শেষ দিকে ভারতে চলে যান। তখন লুবনা ও নায়লা ছিলেন প্রায় কিশোরী। বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থায় যোগ দেন তাঁরা। তাঁদের কাজ ছিল ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করা। মুক্তির গান চলচ্চিত্রে যে গানের দলটাকে দেখা যায়, সেখানে তাঁরা ছিলেন। কর্নেল নূর–উজ্জামান তখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৯ নম্বর সেক্টরের। স্ত্রী ও ছেলে ৭ নম্বর সেক্টরে। পুরো যুদ্ধের সময়টা পরিবারে কেউ কাউকে দেখেননি। তাঁদের মধ্যে কোনো যোগাযোগও ছিল না।

কর্নেল নূর–উজ্জামান পড়তেন কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে, রসায়নে। পড়ার সময় ব্রিটিশ ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বার্মা উপকূলের সুমাত্রায় যুদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হলে কাজী নূর–উজ্জামান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নবীন অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। আবার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ‘বীর উত্তম’ খেতাব পান। ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কৃতিত্ব গণমানুষের’, এই যুক্তিতে তিনি অবশ্য বীর উত্তম উপাধি গ্রহণ করেননি, কখনো ব্যবহার করেননি।

এরশাদের জমানায় আন্দোলন করতে গিয়ে জেল খেটেছিলেন। কাজী নূর–উজ্জামান নিয়মিত লেখালেখি করতেন পত্রপত্রিকায়। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে স্বদেশচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা। তিনি সাপ্তাহিক নয়া পদধ্বনি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এই পত্রিকার সূত্রে নূর–উজ্জামান খালুর সঙ্গে যোগাযোগ। সেক্টর কমান্ডার ফোরামের পোস্টার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পোস্টার, ফেস্টুন—অনেক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ হয়েছে।

তিনি ভক্সওয়াগন গাড়ি চালিয়ে আমার শাহজাহানপুরের বাসায় আসতেন। আমি অনেকবার তাঁর বেইলি রোডের আমিনাবাদ কলোনির বাসায় গিয়েছি।

২০১১ সালের ৬ মে ঢাকায় মৃত্যু হয় কাজী নূর–উজ্জামানের। প্রায়ই এই বীরের কথা মনে পড়ে। বীরকে সালাম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য দ ধ কর র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

প্রসূনের কাছে পরীমণির দুঃখ প্রকাশ

জন্মদিন উপলক্ষে টানা উৎসবের মেজাজে রয়েছেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণি। মালয়েশিয়া সফর শেষে ঢাকায় ফিরেই রাজধানীর পল্লবীতে সাংবাদিক ও সহকর্মীদের জন্য পার্টির আয়োজন করেন পরীমণি। দাওয়াত পেয়ে পার্টিতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানান লাক্স তারকা অভিনেত্রী প্রসূন আজাদ। 

গতকাল থেকে বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর চর্চা চললেও নীরব ছিলেন পরীমণি। অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন আলোচিত এই নায়িকা। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাতে তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন পরীমণি। 

আরো পড়ুন:

পরীমণির পার্টিতে গিয়ে প্রসূনের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতা

প্রশ্ন করবেন না, সব বলে দেব: পরীমণি

লেখার শুরুতে পরীমণি বলেন, “প্রিয় প্রসূন আজাদ, আপনি আমাকে নিয়ে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন যে, ‘আমি আমার লোক দেখানো পার্টিতে আপনাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে অপমান করেছি!’ আপনি এ-ও বলেছেন, ‘আমি আমার নাম রৌশন করতে টাকা দিয়ে কতগুলো সান্ডা সান্ডা পান্ডা লোক রাখি, তারা অনুষ্ঠানে আসা গেস্টদের জিজ্ঞেস করেন যে, তারা কারা!’ 

প্রসূনের কাছে প্রশ্ন রেখে পরীমণি বলেন, “আচ্ছা আপু, সত্যিই কি তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ছোট ফিল করানোর জন্য তোমাকে আমার একটা স্পেশাল ইভেন্টে ইনভাইট করব? কখনোই না বোন। তুমি নিজেও জানো আমি তোমাকে কতখানি পছন্দ করি। আমাদের কখনো দেখা হয়নি। তোমার একটা টিভি ইন্টারভিউ দেখে মুগ্ধ হয়ে আমি সাংবাদিক ইমু ভাইয়ের কাছ থেকে তোমার ফোন নাম্বার নিয়ে তোমাকে কল করেছিলাম। সেদিন কত কথা হলো আমাদের! তোমার মনে আছে, আমি তোমাকে প্রথম কী বলেছিলাম!” 

“বলেছিলাম, তুমি একজন পিওর সোল। সত্যিকারের একজন খাঁটি মানুষ তুমি। তোমার বাচ্চাদের নিয়ে তোমার এই জার্নি সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করে। তুমি একটা ইন্সপারেশন। তোমার খারাপ লেগেছে তুমি আমাকে একটা টেক্সট তো করতে পারতা আপু!” বলেন পরীমণি।

অনুষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যাপারে পরীমণি বলেন, “যাইহোক, আমার ওই অনুষ্ঠানে আমার হায়ার করা কোনো মানুষ ছিল না; যারা ছিলেন তারা ওই প্রতিষ্ঠানের ম‍্যানেজমেন্ট থেকে ছিলেন। তারা কাউকে অপমান বা অসম্মান করার জন্য অ‍্যাপয়েন ছিলেন না। তারা আমি এবং আমার সমস্ত গেস্টদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতেই গেটে ছিলেন। ভাবুন তো, ওনারা গেটে এই সিকিউরিটি না দিলে ওই জায়গায় কী জনসাধারণের ভীড় ঠেকানো যেত? না কি এত সুন্দর শৃঙ্খল পরিবেশে পুরো অনুষ্ঠানটা শেষ করতে পারতাম! তারা কেবল তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।”

দুঃখ প্রকাশ করে পরীমণি বলেন, “আপনি নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন, যারা ওই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তারা সবাই নিজ নিজ অবস্থানে কত বড় মানুষ। তারা কিন্তু কেউ ছোট ফিল করেননি। আপনি জানেন না হয়তো তাহলে, এই দেশের প্রচুর মানুষ এখনো আমার নাম জিজ্ঞেস করেন। এই তো সেদিন সিজেএফবির অনুষ্ঠানে আমাকে ইউরোর চেয়ারম্যান বললেন কি নাম তোমার? আমি তাতে মোটেও অবাক হইনি। বরং আমার ভালো লাগে আমার নাম বলতে। আমি পরীমণি। আমি খুবই দুঃখিত আপনার কাছে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কত টাকা আয় করেছে রাশমিকার নতুন সিনেমা?
  • নাটোরে যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ আটক ২০
  • জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মাথায় রেখে নকশায় গুরুত্ব প্রদান
  • মসজিদে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আটক ১
  • ‘মেরিনার কাজে প্রকৃত শিল্পীর অভিব্যক্তি দেখা যায়’
  • ভারতের নির্বাচনে ব্রাজিলের মডেল কীভাবে ‘২২ বার ভোট’ দিলেন
  • জাহানারার পাশে বাংলাদেশ, কিন্তু…
  • গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে লেমুর চুরির ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
  • আলব্যের কামুর দর্শন, চরিত্র ও পাঠক
  • প্রসূনের কাছে পরীমণির দুঃখ প্রকাশ