সুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা
Published: 6th, May 2025 GMT
সুরা হুমাজা (নিন্দাকারী) পবিত্র কোরআনের ১০৪তম সুরা। এই সুরা জানাচ্ছে যে দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে সামনে ও পেছনে নিন্দা করে। যে ধনগর্বে নিজেকে অমর মনে করে, তাকে হুতামা নরকে নিক্ষেপ করা হবে। স্তম্ভাকারে দীর্ঘায়িত অগ্নি তাদের অন্তঃকরণ পর্যন্ত পৌঁছাবে।
সুরা হুমাজার অর্থ আবার দেখে নিই
১. দুর্ভোগ প্রত্যেকের যে সামনে ও পেছনে লোকের নিন্দা করে, ২.
সুরা হুমাজার মূল কথা
এই সুরায় ৪টি পাপকাজের কথা বলা হয়েছে: সামনে নিন্দা করা, পেছনে নিন্দা করা, অর্থ জমা করা এবং তা গুনে গুনে রাখা, অর্থ চিরকাল থাকবে মনে করা, জনহিতকর কাজে ব্যয় না করা। এই সব কাজের জন্য মানুষকে হুতামায় নিক্ষিপ্ত হতে হবে। হুতামা হচ্ছে আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে; উঁচু স্তম্ভ পরিবেষ্টিত জাহান্নাম।
আরও পড়ুনভালো প্রতিবেশী আল্লাহর প্রিয়জন১৩ এপ্রিল ২০২৫শুরুতেই প্রথম আয়াতে ওয়াইল বলতে দুর্ভোগ বোঝায়। জাহান্নামের খুবই মন্দ একটা জায়গা। যারা সামনে ও পেছনে মানুষের দোষত্রুটি প্রকাশ করে তাদের ‘হুমাজাহ’ ও ‘লুমাজাহ’ বলা হয়। কখনো কখনো কণ্ঠস্বর নকল করে, শারীরিক বৈশিষ্ট্য নকল, ইশারা, ইঙ্গিতের মাধ্যমেও তারা তা প্রকাশ করে।
এরপর সম্পদের প্রতি লোভী মানুষের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যারা টাকাপয়সা বারবার গুনে দেখে, সেটা কত বাড়ছে। তারা অর্থ জমা করতে থাকে। যারা অন্যদের দোষ খুঁজে বেড়ায় এবং প্রচার করে বেড়ায় তারা মূলত নিজেরা ওই দোষমুক্ত নয়।
তৃতীয় আয়াতে বলা হচ্ছে, ভাবে যে তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে। অর্থের কথা চিন্তায় তারা মৃত্যুর কথা ভুলে থাকে।
চতুর্থ আয়াতে আল্লাহ বলছেন, কখনো না। তাকে তো ফেলা হবে হুতামায়। তারা নিজেদের দুনিয়ায় অনেক উচ্চমর্যাদার ভাবত। আখিরাতে নিক্ষিপ্ত হবে হুতামাতে।
পঞ্চম আয়াতে আল্লাহ জবাব দিলেন, হুতামা কী, তুমি কি তা জানো? ষষ্ঠ আয়াতে বলা হয়েছে, এ আল্লাহরই প্রজ্বলিত হুতাশন। মানে আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন। তারা যেমন সামনে নিন্দা করে, সম্পর্ককে অন্যের অবর্তমানে নিন্দা করে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিত, তাদের চূর্ণবিচূর্ণকারী আগুন দিয়ে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।
সপ্তম আয়াতে যা হৃৎপিণ্ডগুলোকে গ্রাস করবে। আল্লাহ তার সবচেয়ে কঠিন আগুন এবং জাহান্নামের সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দিয়ে তাদেরই কৃতকর্মের প্রতিফল দেবেন।
অষ্টম আয়াতে, তাদের জাহান্নামে আটকে রাখা হবে। শেষ আয়াতে আছে, অনেক উঁচু স্থান তারা দূর থেকে দরজা খোলার আশায় থাকবে, যার কারণে তাদের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুনঅলৌকিক উট১৩ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি, এখন কী করবে ভারত-ইসরায়েল
বহু দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য একের পর এক যুদ্ধের বৃত্তে ঢুকে পড়েছে। একের পর এক দেশ আক্রমণের শিকার হয়েছে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। সব দিক বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্য হয়ে উঠেছে বিশ্বশক্তিগুলোর যুদ্ধক্ষেত্র। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি নিয়ে তাদের উদ্বেগ কম, আগ্রহের জায়গা প্রাকৃতিক সম্পদ।
কাতারের দোহায় ইসরায়েলের হামলার পর উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর মধ্যে ‘মার্কিন নির্ভরযোগ্যতা’ নিয়ে ক্রমে সন্দেহ বাড়ছে। দ্য টাইমস অব ইসরায়েলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দোহায় হামলার আগে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। যদিও ট্রাম্প পরে তা অস্বীকার করেছেন।
আসল ব্যাপার হলো ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা উপভোগ করে। স্বাভাবিকভাবেই এ সন্ধিক্ষণে সবার নজর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রকল্পের দিকে। কারণ, ইসরায়েলের এই প্রকল্প খোলাখুলিভাবে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর ওপর হুমকি তৈরি করেছে।
আরও পড়ুনযুবরাজ সালমান এক দশকে যেভাবে সৌদি আরবকে পাল্টে দিলেন১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ফলে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক, রাজনীতিবিদ ও গণমাধ্যম বিশ্লেষকেরা ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে এবং সেটি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে আরব-মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে সৌদি আরব ও পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে। এ অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ইউরোপ এবং পাকিস্তানের চিরশত্রু ও বিকাশমান অর্থনৈতিক শক্তি ভারতকে হতবাক করেছে।
সম্প্রতি ভারত যখন ‘ইসরায়েলি ধাঁচের সম্প্রসারণবাদের’ ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ করে, তখন পাকিস্তান কার্যকরভাবে নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে। কয়েক বছর আগে প্রয়াত ব্রিটিশ সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক মন্তব্য করেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান সংঘাতে ইসরায়েল বড় ভূমিকা রাখছে।
এ বছরের শুরুতে তুরস্ক-পাকিস্তান-আজারবাইজানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তিটি মুসলিম দেশগুলোতে যে শঙ্কা বাড়ছে তারই প্রতিফলন।
পাকিস্তান-সৌদি আরব চুক্তি দিল্লি ও জেরুজালেমে সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হলেও ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ও ‘অখণ্ড ভারত’ প্রকল্পের কারণে বিশ্বশান্তি হুমকির মুখে পড়ার বিষয়ে কোনো উদ্বেগ দেখা যায় না।ইসরায়েল ও ভারতের জোট এবং তাদের ‘সম্প্রসারণবাদী’ নীতির কারণে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিকে আগ্রাসী পরিকল্পনা হিসেবে নয়; বরং প্ররোচনাহীন হামলার বিরুদ্ধে একটি আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে, ছয়টি মুসলিম দেশ বোমা হামলা চালিয়ে এবং মুসলমানদের হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বাস্তুচ্যুতি ও স্থায়ীভাবে পঙ্গু করার পর নেতানিয়াহু এখন অভিযোগ তুলছেন—বিশ্বে ইসরায়েল যে ক্রমে নিঃসঙ্গ হয়ে উঠছে, এর জন্য দায়ী চীন, বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘আমাদের অস্ত্রশিল্পকে আরও বিকশিত করতে হবে। আমরা একসঙ্গে এথেন্স ও সুপার স্পার্টা হব।’
আরও পড়ুনইসরায়েল-ভারত যেভাবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে চেয়েছিল২৬ জুন ২০২৫‘ফিফটি স্টেটস-ওয়ান ইসরায়েল’ শীর্ষক এক বিশাল সমাবেশে নেতানিয়াহু বলেন, ‘জীবনের মূল্য আইনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’। তাঁর এ বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে, সামনে আরও বড় যুদ্ধ অপেক্ষা করছে।
আসলে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রকল্পের লক্ষ্য হলো পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশের অংশবিশেষ দখল করে নেওয়া। এর মধ্যে রয়েছে মিসর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন ও সৌদি আরব। এটি স্বীকার করতেই হবে, এটি নিছক কল্পকাহিনি নয়; বরং ঠেকানো সম্ভব এমন এক বাস্তবতা।
সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধে আমি লিখেছিলাম, ইসরায়েল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মুসলিম দেশ ধ্বংস করছে। পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলকে নিঃশর্ত সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, মিসর, এমনকি আরও দূরে মধ্যপ্রাচ্যে ভূমি দখলের অভিযানকে সমর্থন করছে। ‘ইহুদি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে’ কিংবা ‘বিশ্বকে নিরাপদ করা’—এই যুক্তিকে সামনে আনা হচ্ছে। ইসরায়েলের এ মারাত্মক অভিযান কোথায় গিয়ে শেষ হবে? এরপর কোন দেশ—পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর নাকি সৌদি আরব?
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই দেশের নেতারা। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রিয়াদ