‘দ্য হিন্দু’র সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবেদন ভিত্তিহীন: প্রেস উইং
Published: 6th, May 2025 GMT
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ভারতীয় দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত আট মাসে বাংলাদেশের ৬৪০ জন সাংবাদিককে টার্গেট করেছে। এ দাবিকে ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের সরকার।
মঙ্গলবার (৬ মে) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ‘সিএ প্রেস উই ফ্যাক্টস’ থেকে এক পোস্টে বলা হয়, রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপের (আরআরএজি) বরাতে ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত রিপোর্টে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বাংলাদেশের ৬৪০ সাংবাদিককে হয়রানি অভিযোগ অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা তথ্য।
আরো পড়ুন:
নাটোরের প্রবীণ সাংবাদিক নবীউর রহমান মারা গেছেন
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাংবাদিক গ্রেপ্তার
এতে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জনগণ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নিপীড়নমূলক ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে সরিয়ে দেয়, তখন সরকার ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকরা চাপের মুখে পড়েন। তবে তা কোনোভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি।’
পোস্টে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলা হয়, ‘বরং বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের করা কিছু আইন বর্তমানে সংশোধন করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার কখনও সাংবাদিকদের টার্গেট করেনি।’
প্রেস উইং আরো জানায়, ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ও তার প্রেস সচিব, ঢাকায় এএফপির সাবেক ব্যুরো চিফ বহু বছর ধরে মুক্ত গণমাধ্যমের প্রবক্তা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’
বিবৃতিতে আরআরএজি প্রধান সুহাস চাকমাকে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সংগঠনটি বাংলাদেশ বিষয়ে বারবার মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টসে সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়িয়েছিল আরআরএজি। দেশীয় গণমাধ্যম তিনটি ঘটনায় ৪ জনের প্রাণহানির কথা নিশ্চিত করে। কিন্তু সংগঠনটি ৯ জন আদিবাসী নিহতের খবর প্রচার করে।
বিবৃতিতে প্রেস উইং জানায়, ‘পরে নিউজ-৯ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি ফের তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নেরও আহ্বান জানান সুহাস চাকমা।’
এরপর আরআরএজির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশি মাইনরিটিস (এইচআরসিবিএম) মৃতের সংখ্যা ৬৭ জন বলে দাবি করে। যদিও পরে তা ডিসমিস ল্যাবের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ফ্রম ফোর টু এ হানড্রেড’ এ ভুল প্রমাণিত হয়।
এই ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জার্মানভিত্তিক ডয়চে ভেলের সাংবাদিক তাসমিয়া আহমেদ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি অধ্যাপক ইউনূসের অধীনে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেন। কিছুদিন আগে ছাত্র আন্দোলনকারীদেরও ‘সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এই আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক।
প্রেস উইং আরো জানায়, ‘গেল মার্চ মাসে আরআরএজি জাতিসংঘে অভিযোগ করে, অধ্যাপক ইউনূস ধর্মীয় সহিংসতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সঙ্গে ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাগুলোকেও তাদের তথ্য যাচাইয়ের কাজে বাধা দিচ্ছে।’
এতে আরো বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান নিপীড়নের বিপক্ষে। জনগণের সঙ্গে মিলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া বৈষম্যমূলক নীতির অবসান করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ নির্মাণে কাজ করছে।’
ঢাকা/হাসান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র আওয় ম ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার
বাংলাদেশে জনগণের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত জরুরি হলেও এখানে পেশা হিসেবে নার্সদের অমর্যাদাসম্পন্ন একটা অবস্থানে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘নার্সদের ডাক্তারি ব্যবস্থার অধীন একটা পেশা হিসেবে যে দেখা হয়, আমরা মনে করি এটা ভুল। এখান থেকে মুক্ত হতে হবে। নার্স সেবাটা স্বাস্থ্যসেবার একটা মৌলিক দিক। ফলে তাঁদের স্বাধীনভাবে এই পেশাকে চর্চা করবার সুযোগ–সুবিধা দিতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ও স্বাস্থ্য আন্দোলন। স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার।
সরকার স্বাস্থ্যকে এখন আর জনগণের অধিকার হিসেবে স্বীকার করছে না বলে অভিযোগ করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্যকে অধিকার নয়, বাজারজাত পণ্য বানানো হয়েছে। টাকা থাকলে চিকিৎসা পাবেন, টাকা না থাকলে নয়।’
নার্সদের স্বাধীন পেশাগত চর্চা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন ও মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সদেরকে ডাক্তারদের হুকুমমতো চলতে হবে—এই ধারণা ভাঙতে হবে। স্বাস্থ্য মানে শুধু প্রেসক্রিপশন নয়, প্রতিরোধও একটি বড় দিক। নার্সদের মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে জনগণ প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সিং স্বাস্থ্যসেবার এক মৌলিক দিক। কিন্তু আমাদের সমাজে চিকিৎসাকে ডাক্তারিকরণ বা মেডিক্যালাইজেশন করা হয়েছে। অনেক রোগে ডাক্তার কিংবা ওষুধের প্রয়োজনই হয় না। এ জায়গায় নার্সরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম। এক মাসের মধ্যে নার্সিং কমিশন গঠনের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন বিএনএর সহসভাপতি মাহমুদ হোসেন তমাল। এতে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপারসন জরিনা খাতুন, সহসভাপতি মনির হোসেন ভূঁইয়া এবং সংগঠনের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী।