বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ভারতীয় দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত আট মাসে বাংলাদেশের ৬৪০ জন সাংবাদিককে টার্গেট করেছে। এ দাবিকে ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের সরকার।

মঙ্গলবার (৬ মে) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ‘সিএ প্রেস উই ফ্যাক্টস’ থেকে এক পোস্টে বলা হয়, রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপের (আরআরএজি) বরাতে ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত রিপোর্টে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বাংলাদেশের ৬৪০ সাংবাদিককে হয়রানি অভিযোগ অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা তথ্য।

আরো পড়ুন:

নাটোরের প্রবীণ সাংবাদিক নবীউর রহমান মারা গেছেন

ধর্মীয় অনুভূতি‌তে আঘা‌তের অভিযোগে সাংবা‌দিক গ্রেপ্তার

এতে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশের জনগণ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নিপীড়নমূলক ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে সরিয়ে দেয়, তখন সরকার ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকরা চাপের মুখে পড়েন। তবে তা কোনোভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি।’

পোস্টে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলা হয়, ‘বরং বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের করা কিছু আইন বর্তমানে সংশোধন করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার কখনও সাংবাদিকদের টার্গেট করেনি।’

প্রেস উইং আরো জানায়, ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ও তার প্রেস সচিব, ঢাকায় এএফপির সাবেক ব্যুরো চিফ বহু বছর ধরে মুক্ত গণমাধ্যমের প্রবক্তা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’

বিবৃতিতে আরআরএজি প্রধান সুহাস চাকমাকে আওয়ামী লীগ ঘেঁষা বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সংগঠনটি বাংলাদেশ বিষয়ে বারবার মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টসে সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়িয়েছিল আরআরএজি। দেশীয় গণমাধ্যম তিনটি ঘটনায় ৪ জনের প্রাণহানির কথা নিশ্চিত করে। কিন্তু সংগঠনটি ৯ জন আদিবাসী নিহতের খবর প্রচার করে।

বিবৃতিতে প্রেস উইং জানায়, ‘পরে নিউজ-৯ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিষয়টি ফের তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নেরও আহ্বান জানান সুহাস চাকমা।’

এরপর আরআরএজির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশি মাইনরিটিস (এইচআরসিবিএম) মৃতের সংখ্যা ৬৭ জন বলে দাবি করে। যদিও পরে তা ডিসমিস ল্যাবের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘ফ্রম ফোর টু এ হানড্রেড’ এ ভুল প্রমাণিত হয়।

এই ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জার্মানভিত্তিক ডয়চে ভেলের সাংবাদিক তাসমিয়া আহমেদ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি অধ্যাপক ইউনূসের অধীনে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করেন। কিছুদিন আগে ছাত্র আন্দোলনকারীদেরও ‘সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন এই আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক।

প্রেস উইং আরো জানায়, ‘গেল মার্চ মাসে আরআরএজি জাতিসংঘে অভিযোগ করে, অধ্যাপক ইউনূস ধর্মীয় সহিংসতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সঙ্গে ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাগুলোকেও তাদের তথ্য যাচাইয়ের কাজে বাধা দিচ্ছে।’

এতে আরো বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান নিপীড়নের বিপক্ষে। জনগণের সঙ্গে মিলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া বৈষম্যমূলক নীতির অবসান করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ নির্মাণে কাজ করছে।’

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র আওয় ম ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

আবার জনগণের ভোটাধিকার হরণের ষড়যন্ত্র চলছে: জামায়াত

আবারও দেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণের পাঁয়তারা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জনগণের বিপরীতে দাঁড়াবেন না। আরেকটি এক-এগারোর ক্ষেত্র তৈরি করবেন না।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জামায়াতের এই নায়েবে আমির এ কথা বলেন। জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত।

আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘নির্বাচন যে তারিখে দিছে, এটা ঠিক আছে। আমরা তার আগেও নির্বাচন চাইছিলাম। ডিসেম্বর হলেও আমরা করতাম। মানুষ আশা করে, এবার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা ইলেকশন চাই, সিলেকশন চাই না।’

বিদেশের ডিজাইনে (ছকে) পরিকল্পিত নির্বাচনের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সমাবেশে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, দেশের মানুষ জীবন এবং রক্ত দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যেতে চায়, কিন্তু তার আগে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনের জন্য আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সরকারকে আলোচনা টেবিলে বসার জন্য আহ্বান জানান জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ তাহের। তিনি বলেন, ‘দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাবেন না। জনগণের বিপরীতে দাঁড়াবেন না। আরেকটি এক-এগারোর ক্ষেত্র তৈরি করবেন না।’

আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতিবিদেরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে সবাই মিলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে। অতীতের মতো অংশগ্রহণহীন নির্বাচন করলে এবার বাংলাদেশ টিকবে না, স্বাধীনতা টিকবে না।’

জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ তাহের বলেন, এই সরকারের প্রধান কাজ সংস্কার করা। তারা সংস্কারের জন্যই কমিশন তৈরি করেছে। সে কমিশনের সবাই ঐকমত্য হওয়ার পর সরকার বলে এটির আইনি ভিত্তি নেই। তাহলে সংস্কার হলো কোথায়? তিনি বলেন, যেসব বিষয় ঐকমত্য হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে আগামী নির্বাচন হতে হবে।

একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে আবদুল্লাহ তাহের বলেন, ‘দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তারা পিআরের পক্ষে। কিন্তু আপনারা যাঁরা বিরোধিতা করছেন, আপনাদের কি বিরোধিতা করার অধিকার আছে?’

জামায়াতের সহকারী সেক্রটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের আগেই দেখছি, কোনো কোনো দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে জিহ্বা কেটে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। আমরা লক্ষ করছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি ঘোষণা করছেন; কিন্তু এখনো জিহ্বা কেটে নেওয়ার কথা বলা এই সন্ত্রাসীকে কেন গ্রেপ্তার করতে পারেননি?’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, আবদুল হালিম, ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমির সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে বিজয়নগর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি কাকরাইল ও মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় নেতা-কর্মীদের হাতে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লাঙ্গল কাউকে দিতে চাইলেই আন্দোলন: জি এম কা‌দের
  • আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না: জি এম কাদের
  • আবার জনগণের ভোটাধিকার হরণের ষড়যন্ত্র চলছে: জামায়াত
  • গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত ও ঢালাও অভিযোগের প্রতিবাদ সম্পাদক পরিষদের
  • আমরা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
  • জনগণ প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তন চাইছে: তারেক রহমান
  • সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে: ফরহাদ মজহার
  • স্লোগাননির্ভর রাজনীতির যুগ শেষ: তারেক রহমান
  • ‘আমাদের অনুমতি ছাড়া ওই এলাকায় কেউ এমপি হতে পারেন না’
  • ১৬ বছরে যারা মজলুম ছিল, আজকে অনেকেই জালেম হয়ে উঠছে: নুরুল হক নুর