চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হাইভোল্টেজ সেমিফাইনালে গত রাতে ইন্টার মিলানের মুখোমুখি হয়েছিল বার্সেলোনা। সান সিরোর মাঠে ম্যাচটি ছিল উত্তেজনায় ঠাসা, কিন্তু ম্যাচ শেষেও আলোচনার কেন্দ্রে একজনই—রেফারি সিমোন মার্সিনিয়াক।

পোলিশ এই রেফারির 'রিয়াল মাদ্রিদ-প্রেম' নিয়ে আগে থেকেই সন্দেহ ছিল বার্সেলোনা শিবিরে। সামাজিক মাধ্যমে তার রিয়ালপ্রীতির নানা নজির ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ম্যাচে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যে কাতালানদের বিপক্ষে গেছে, তাতে রিয়াল-ঘেঁষা সেই অভিযোগ যেন আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।

সান সিরোর দ্বিতীয় লেগে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ৪-৩ ব্যবধানে হেরে ফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ বার্সেলোনার। দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে ইন্টার মিলান। তবে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে আচেরবির গোলের ঠিক আগেই স্পষ্ট ফাউল হলেও বাঁশি বাজাননি মার্সিনিয়াক। বার্সেলোনা ডিফেন্ডার জেরার্দ মার্তিনকে টেনে ফেলে দিয়ে বল কেড়ে নেন ডামফ্রিস, সেখান থেকেই আসে গোল।

ম্যাচ শেষে কোচ হ্যান্সি ফ্লিক বলেন, ‘ফলাফলে আমি হতাশ, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে নয়। কিন্তু রেফারির কিছু সিদ্ধান্ত ছিল বিস্ময়কর। ৫০-৫০ পরিস্থিতির প্রতিটিতেই সিদ্ধান্ত গেছে প্রতিপক্ষের পক্ষে। এটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আমি রেফারি নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না, তবে যা চোখের সামনে দেখেছি, তা বলা দরকার।’

নিজ দলের লড়াকু মানসিকতার প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, ‘এই দল নিয়ে আমি গর্বিত। আমরা শিখছি, ভবিষ্যতে আরও শক্ত হয়ে ফিরব।’

তবে সমালোচনার মাঝেও ইন্টারের খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব দিয়েছেন বার্সা কোচ, ‘ইন্টার ভালো দল, দারুণ স্ট্রাইকার আছে, রক্ষণেও শক্তিশালী। আমাদের জন্য এটা শেখার একটি ধাপ।’

এখন বার্সেলোনার নজর এল ক্লাসিকোর দিকে। আগামী রোববার রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ লিগ ম্যাচে মাঠে নামবে বার্সা। কোচ ফ্লিক বলেন, ‘এই দলটি এখন আয়নায় নিজের দিকে গর্ব নিয়ে তাকাতে পারবে। সামনে আমাদের আরেকটা যুদ্ধ।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইন ট র ম ল ন ইন ট র

এছাড়াও পড়ুন:

রোহিঙ্গাদের সিম দিতে চায় সরকার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বৈধভাবে সিম পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে তাদের অনেকের কাছেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভিন্ন মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সিম রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বেগ রয়েছে সরকারের। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বৈধভাবে সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই রোহিঙ্গাদের সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে।

মিয়ানমারে অত্যাচারের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের সিম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে সেখানে অবৈধভাবে দুই দেশেরই সিম ব্যবহার হচ্ছে। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরকেন্দ্রিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অবৈধভাবে দেশি অপারেটরের সিম ব্যবহার করে এবং মিয়ানমারের সিম ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার চিন্তা করে তৎকালীন সরকার। সে সময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটক সিম ব্যবহারের আলোচনা হয়েছিল। যদিও পরে বিষয়টি আর এগোয়নি।

এখন অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে। গত সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) চার মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিটিআরসি ও অপারেটর সূত্রমতে, ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার কথা। ওই তারিখের মধ্যে প্রাথমিকভাবে কিছু সিম দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।

যেভাবে সিম দেওয়ার ভাবনা

সিম বিক্রির বিদম্যান নীতি অনুযায়ী, ব্যক্তিকে শনাক্তকারী পরিচয়পত্র ও বায়োমেট্রিক প্রয়োজন হয়। যেহেতু রোহিঙ্গাদের সে ধরনের পরিচয়পত্র নেই, তাই তাদের সিম দেওয়ার জন্য বিকল্প উপায় ভাবা হচ্ছে। অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনায় বলা হয়, মোবাইল অপারেটররা রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ভিন্ন নম্বর সিরিজ রাখবে। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) কাছে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন নম্বর রয়েছে। যেটাকে সাধারণত ‘প্রোগ্রেস আইডি’ বলা হয়। সে আইডির বিপরীতে ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা সিম পাবেন। ইউএনএইচসিআর সরাসরি এই সিমগুলো পাবে।

সরকারের সঙ্গে চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনএইচসিআরের এই ডেটাবেজ সংরক্ষিত থাকবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ডেটা সেন্টারে। কিন্তু এই ডেটাবেজ বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ হতে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। সূত্র বলছে, যেহেতু সরকারের লক্ষ্য চলতি মাস, তাই সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অধীনে রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম ধাপে ২৫ আগস্টের মধ্যে ১০ হাজার নম্বর বরাদ্দ দেওয়ার আলোচনা হয়েছে।

অপারেটররা তিন ধরনের প্যাকেজ অফার করবে। এই প্যাকেজের খরচ ও সিমের দাম দেবে ইউএনএইচসিআর বা সরকার। নতুন সিম দেওয়ার পর বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যেসব অবৈধভাবে সিম চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দেবে সরকার।

তবে এসবই আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের শনাক্তকরণ একটি বিষয়। এটা নিশ্চিত না হলে সিম সেখানে দেওয়া যাবে না। সরকারের দিক থেকে এই পরিচয় নিশ্চিতকরণের বিষয়টি নিয়ে কথা চলছে।

অপারেটররা যা বলছে

রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানান গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৈধভাবে সিম বিক্রয়ের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই, যা বহু মানুষকে বৈধ উপায়ে সিম ক্রয়ের সুযোগ করে দেবে।’

তবে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বললেন ভিন্ন কথা। তাঁর কথায়, ‘নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সিম কর বাবদ অপারেটররা ইতিমধ্যে বড় অঙ্কের যে বিনিয়োগ এ খাতে করেছে, সেটি অকার্যকর হয়ে পড়বে।’

রোহিঙ্গাদের জন্য সিমের নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি সহজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সুযোগ প্রদান সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

রোহিঙ্গা শিবিরকে একটি বিশেষায়িত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন বলেন, এখানে মিয়ানমারের নেটওয়ার্কও সক্রিয়। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারকে বাইরের দেশের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন সিম দেওয়ার আগে আগেরগুলো জব্দ ও নথিভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ