থ্যালাসেমিয়া রোগটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। রক্ত পরিসঞ্চালন–নির্ভরশীল এবং রক্ত পরিসঞ্চালন অনির্ভরশীল। রক্ত পরিসঞ্চালন–নির্ভর থ্যালাসেমিয়ায় রোগীকে আজীবন প্রতি মাসে রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হয়। এই জ্বালা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাই থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ উত্তম পন্থা।
প্রতিরোধনারী-পুরুষ দুজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে তাঁদের যে সন্তান হবে, এর মধ্যে প্রতি চারজনের একজনের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ রোগের ঝুঁকি এড়াতে কিছু বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। মোটামুটি তিনটি উপায়ে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। দুজনই বাহক হলে তাঁদের মধ্যে বিয়ে রোধ করে পরবর্তী প্রজন্মের থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ সম্ভব।
স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে গর্ভাবস্থায় কিছু প্রিন্যাটাল স্ক্রিনিং করিয়ে নিন। গর্ভের সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে ঝুঁকি এড়াতে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ামুক্ত ভ্রূণ মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপন করা যায়।
থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসাতবে কি রক্ত পরিসঞ্চালনই এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা? মোটেই নয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর রক্তকণিকা ভেঙে যায়, অস্থিমজ্জায় সঠিকভাবে রক্ত তৈরি হতে পারে না। রক্তশূন্যতা হয়। আর এ রক্তশূন্যতার পেছনে রক্তের হিমোগ্লোবিনের আলফা ও নন–আলফা চেইনের ভারসাম্যহীনতা প্রধান কারণ। সুখবর হলো, বর্তমানে দক্ষ একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগীর এই চেইন ভারসাম্যহীনতা রোধ করা সম্ভব। ফলে রক্ত পরিসঞ্চালন–নির্ভর রোগীর একটি বড় অংশের এখন আর রক্ত পরিসঞ্চালনের দরকার পড়ে না।
থ্যালাসেমিয়া রোগীর ক্ষেত্রে রক্ত পরিসঞ্চালন হলো ‘ডাবল ব্লেডেড সোর্ড’-এর মতো। অপ্রয়োজনীয় রক্ত পরিসঞ্চালন আ্যলোইমিউনাইজেশন, শরীরে আয়রন জমা, হার্ট ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউর, বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, হরমোন রোগসহ আরও অনেক জটিল সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ব্যতীত অপ্রয়োজনে থ্যালাসেমিয়া রোগীর রক্ত পরিসঞ্চালন না করা ভালো।
আরও পড়ুনথ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে যা জরুরি১২ মে ২০২২রোগমুক্তিদুই উপায়ে এ রোগ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব।
১.
জিন থেরাপি: যা এখনো বাংলাদেশে শুরু হয়নি।
২. আ্যলোজেনিক স্টেমসেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট: এ পদ্ধতিতে থ্যালাসেমিয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্তি লাভ সম্ভব। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগে সফলভাবে অত্যন্ত কম খরচে অ্যালোজেনিক স্টেমসেল ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর রোগের অন্তর্নিহিত কারণ, জটিলতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরূপণ করে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এ রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, এমনকি নির্মূল করাও সম্ভব।
আরও পড়ুনআপনার পরিবারের কেউ থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করছেন না তো?১ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে