৬১টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের জন্য আবেদন পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের সংশোধনীর গেজেট পেলেই সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শুরু করবে সাংবিধানিক এই সংস্থা।

আজ বুধবার বিকেলে ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

ইসি বলে আসছিল, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের একটি ধারায় মুদ্রণত্রুটি আছে। যে কারণে ইসি চাইলেও নতুন করে বড় আকারে সীমানায় পরিবর্তন আনতে পারবে না, শুধু কোনো প্রশাসনিক পরিবর্তন থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। তাই ইসি এখানে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছিল। গতকাল মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদ ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ–২০২৫’–এর অনুমোদন দেয়। তবে এখনো গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।

ইসি সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত ৬১টি সংসদীয় আসনের বিষয়ে ৪০৫টি আবেদন এসেছে। একেকটি আসনে একাধিক আবেদনও আছে। গেজেট পেলে তাঁরা কাজ শুরু করবেন। যত দ্রুত সম্ভব, আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।

অতীতে দেখা গেছে, প্রথমে নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করে। এরপর খসড়া নিয়ে কারও দাবি বা আপত্তি থাকলে তা নিয়ে ইসিতে আবেদন করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়। এরপর শুনানি করে সীমানা পুনর্নির্ধারণ চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু এবার ইসি বলছে, ৬১টি আসনে পরিবর্তনের আবেদন এসেছে। তাহলে কি ইসি শুধু এসব আবেদনের ভিত্তিতে ৬১টি আসনে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, এই ৬১টি আসন ইসির প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ। একটি আসনে পরিবর্তন আনতে গেলে হয়তো পাশের আসনেও পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য সংখ্যাটি বলা যাচ্ছে না। ৬১টি আসনের আবেদনের সূত্র থেকেই কাজটি শুরু হবে। আবার সব আবেদন হয়তো যৌক্তিক নয়। পর্যালোচনার পরে এটি বলা যাবে।

ইসি সচিব বলেন, পদ্ধতিগত পর্যালোচনার ক্ষেত্রে আইনে যেভাবে আছে, সেভাবেই করা হবে। আইনে একটা কাঠামো দেওয়া আছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত একটি নতুন আইনের খসড়া প্রস্তাব করেছে। তাদের প্রস্তাব নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যদি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তখন কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘যদি’র ওপর তাঁর কিছু বলার সুযোগ নেই। যদি হয়, তখন সে ‘যদি’ অনুযায়ী হবে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, যাঁরা আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদন করেছেন, তাঁদের আবেদন করার জন্য ইসি অনুরোধ করেনি। নতুন করে কেউ যদি আবেদন করতে চান, করতে পারবেন। ইসি আবেদনের কোনো সময়সীমা দেয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব আইন র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ঢাবি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে

বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ব্রিটিশরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল তাঁবেদার ও অনুগত নাগরিক তৈরি করা। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথাগত জ্ঞান আহরণের কেন্দ্র না থেকে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। তবে সে গৌরব এখন ম্লান হয়ে গেছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে, স্মৃতিতে শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেন, একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রকম ভূমিকা পালনের দৃষ্টান্ত বিশ্বে বিরল। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যে পতাকা ওড়ানো হয়েছে, সেটা আর কখনো নামেনি।

বইটির মুখবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির এই অধ্যাপক বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান আহরণ, সৃষ্টি ও বিতরণ। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান আহরণের প্রথাগত কেন্দ্র হিসেবে না থেকে ইতিহাসের ভাঙা–গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে তার রাজনৈতিক ভূমিকাও পালন করেছে। জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সেটার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশদের উদ্দেশ্যকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিং নিয়ে ভিন্নমত জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা সেটা ভিন্নভাবে করতে হবে। এখন র‍্যাঙ্কিং নিয়ে আওয়াজ ওঠে। গণপরিসরে যখন আলাপ ওঠে তখন বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে গবেষণা ও প্রকাশনা না হওয়াকে দায়ী করা হয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, পৃথিবীর কটা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে, স্মৃতিতে বইটির প্রথম প্রবন্ধ ‘অন্ধকারে আলো, আলোতে অন্ধকার’ শিরোনামের একটা পুরো জীবনদর্শনের সন্ধান মেলে জানিয়ে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার সবকিছু ব্যক্ত করেন সাংঘাতিক যুক্তির মধ্য দিয়ে। ওনার লেখা যখন শেষ করি, তখন মনে হয়, আমি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ভ্রমণ শেষ করেছি।’

উপাচার্যদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে দোষারোপ করছি না। কিন্তু উপাচার্যদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সৃজনশীলতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে মূল দায়িত্ব, সেটা পালনে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।’

লেখক ও অনুবাদক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, ‘প্রথম প্রবন্ধটা বইটার সুর তৈরি করে দিয়েছে। স্যার সবকিছুকে ক্রিটিক্যালি দেখেন। যেমন সিপাহি বিদ্রোহ নিয়ে স্যারের পর্যবেক্ষণ। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দু–তিন মাস পরে সিপাহি বিদ্রোহ হয়। স্যার তাঁর বইয়ে বলছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চমার্গীয় ব্যাপার। সিপাহিরা হচ্ছেন কৃষকের সন্তান।’

খ্যাতিমান নাট্যকার খায়রুল আলম সবুজ বলেন, ‘স্যারের লেখা যখন পড়ি, সেটা অন্তর ছুঁয়ে যায়।’

বিভিন্ন সময়ের লেখাগুলোকে একত্র করে বইটা লেখা জানিয়ে শিক্ষক ও লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের যে চেহারা ছিল, আগের যে গৌরব ছিল, সেগুলো ম্লান হয়ে গেছে, এটা খুবই সত্য কথা এবং সে জন্য যে কেবল বিশ্ববিদ্যালয় দায়ী, সেটা নয়। মূল পরিবেশ, গোটা সমাজের যে পরিবেশ, তাকে বিবেচনা করতে হবে। গোটা ব্যবস্থাটাই এমন পুঁজিবাদী একটা ব্যবস্থা, যেখানে মানুষ আত্মস্বার্থ ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।

বেঙ্গলবুকসের জ্যেষ্ঠ কনটেন্ট ডেভেলপার তৌহিদ ইমামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও হিউম্যানিটিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আজিম। আরও বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক কাজী সামিও শীশ।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বেঙ্গলবুকসের প্রকল্প প্রধান আজহার ফরহাদ। এরপর মঞ্চে অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বেঙ্গলবুকসের প্রকাশক মাহমুদুল হাসানের বক্তব্যের পর বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ